Breaking News

তোমায় আমার প্রয়োজন | পর্ব -৭

– তুমিইইইইইই
– আ,,,আ,,আপ,,,আপনি
– তুমি আমার বউ
-………………
– আমি ভিক্ষা নেই না , তাই না
-……………..
– কি হলো কথা নেই কেন ভিক্ষা নাও না অথচ তাকেই বিয়ে করে বসলা , সীট ইয়ার কি করে বসলাম একে বিয়ে করলাম ভালোই হলো , খুব ভালো হলো আমার এমনিতেও তোমাকে প্রয়োজন ছিলো , এইবার বুঝবে ভিক্ষা কাকে বলে
– মা,,,,,মানে
– এইখান থেকে সরে দাড়াও , আর হ্যাঁ আমার সাথে কোন রকম ফাইযলামি করবা না একদম খবর করে ছেড়ে দেব
.
এইসব বলে তাওহীদ বারান্দায় চলে যায় । তনু রুম থেকেই দেখছে তাওহীদ ধুমছে সিগারেট টানছে । তনুর বুঝতে বাকি ছিল না যে সেইদিন সন্ধ্যার কথায় হয়তো তাওহীদ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে । ব্যাপার টা ক্লিয়ার করা দরকার । হঠাৎ করেই নজর যায় ফুলে সজ্জিত খাট টায় । সব ঠিক থাকলে হয়তো এখন….. । কিন্তু এ তো তনু , তনুর কপাল কি আর এত ভালো যে সব ভালো হবে । মলিন একটা হাসি দিয়ে শাড়ির আঁচল টা পেছন থেকে সামনে নিয়ে কাধ টা ঢেকে সামনে পা বাড়ায় তনু
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা তাওহীদ এর পাশে গিয়ে জায়গা করে নেয় তনু । তাওহীদ বুঝতে পারে যে তার পাশে তনু দাঁড়িয়ে আছে ।
.
– এখানে কি , বলেছিলাম না আমার ধারে কাছে যাতে না দেখি তাহলে….
– খবর করে ছেড়ে দেবেন তাই তো
– বুঝার পরেও এইদিকে কি , সরে যাও
– মাসের প্রথম ছিল একটা টিউশনি থেকে সেলারি পেয়েছিলাম , ডক্টর বলেছিল বাবার ভালো মন্দ খাওয়া দরকার । আমি শত কষ্টের মাঝে হলেও বাবার দিক টা অপূর্ণ রাখি নি কখনও যেমন টা তিনি রাখেন নি আমার জন্যে । সেইদিন সেলারি পেয়ে ফল কিনে যাচ্ছিলাম আর আপনার গাড়ি টা…………. আমার টাকার দরকার আছে কিন্তু কেউ আমায় অহেতুক টাকার গরম দেখালে আমার খারাপ লাগে । সেইদিন আপনিও টাকার গরম দেখিয়েছিলেন তাই আমিও ওমন টা বলেছিলাম , মাফ করবেন আমায়
.
অত্যন্ত শান্ত গলায় নম্র ভাবে কথা গুলো বলা শেষ করলো তনু । তাওহীদ কিছুক্ষণ পর পর তনুর মুখের দিকে তাকাচ্ছে । রাতের আঁধারের মাঝেও চাঁদ টা যেমন আলো দিয়ে জোছনা ছড়ায় তেমনি তনুকেও লাগছিলো । নাকে থাকা নোজ-পিন টা জ্বল জ্বল করছে । সব মিলিয়ে মায়া রাজ্যের মায়াবীনি ।
.
– চলুন , ঘুমাবেন না
– আমি লেট করে ঘুমাই , তুমি যাও
– হু
– ফুলের স্মেলে আমার ঘুম আসবে না বরং মাথা ধরে আছে
– ঠিক আছে আপনি এখানে বসেন আমি সব টা পরিষ্কার করে দিচ্ছি
– পারবা
– হ্যাঁ
.
তনু আশা করে নি তাওহীদ এটা বলবে , নিজের ফুল-সজ্জার খাট টা নিজের হাতেই পরিষ্কার করে দিল তনু । ঠিক এই সময়ে মোবাইল টা ভো ভো করা শুরু করে । মোবাইলটা হাতে নিয়ে হা হয়ে যায় তনু , তারাতারি বারান্দায় তাকিয়ে দেখে তাওহীদ এখনও বারান্দাতেই আছে , মোবাইল টার ফ্লাইট মুড টা অন করে সাইডে রেখে দেয় তনু ।
.
– পরিষ্কার হয়ে গেছে এখন আর মাথা ধরবে না
– যাও তুমি গিয়ে ঘুমাও
– হু
.
রাতে তেমন একটা ঘুম হয় নি তনুর । রাতে ছটফট করতে করতে শেষ রাতের দিকে চোখ টা লেগে যায় । আবার হঠাৎ করেই লাফ দিয়ে উঠে যায় তনু । বিছানার এক কোনায় ঘুমিয়ে ছিল সে । তড়িঘড়ি করে বারান্দার দিকে তাকায় , কিন্তু দরজা তো বন্ধ তাহলে সে কই । হুশ আসে বিছানাতেই তো থাকতে পারে , তাই পাশে তাকিয়ে দেখে মানুষ টা ঘুমিয়ে আছে ।
কিছুক্ষণ মন দিয়ে তাকিয়ে দেখছে তনু তাওহীদ কে । মানুষ টা দেখতে ততটা খারাপ না । তবে drugs নিতে নিতে কেমন একটা পানসে হয়ে গেছে । ঘুমিয়ে আছে বাচ্চাদের মত । এর সাথেই কাটাতে হবে বাকিটা জীবন । যদি নিয়তি তা না হতে দেয় তাহলে ?
.
নাহ এইসব হওয়ার আগে এনাকে তনুর ঠিক করতে হবে । drugs থেকে সড়াতে হবে । নরমাল মানুষের মত করতে হবে । অনেক কাজ হাতে তনুর । ভেঙে পড়লে হবে না তার ।
.
তনু উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় । নিচে অনেকেই আছে । তাওহীদের কাজিন রা সবাই আছে । খালা মামা মামি চাচা চাচি সবাই । সবাই নতুন বউ কে নিচে নামতে দেখে জোড়েই শব্দ করে ওঠে । আসলে কেউ ভাবে নি নতুন বউ এইভাবে নিচে আসবে তাও সকাল সকাল ।
.
তনু বড়দের সালাম দিলেন । তারপর শ্বশুরের কাছে গিয়ে পা ধরে সালাম করতে নিলে শ্বশুর ধরে ফেলে ।
.
– তোর স্থান পায়ে না রে মা , আমার বুকে
– ভাইজান একেবারে আমাদের মায়ের মত দেখতে আমাদের বউমা , তাই না ?
.
ফুফু শ্বাশুড়ির কথা শুনে একটু অবাক হয় তনু । সে নাকি অনেকটা তার দাদী-শ্বাশুড়ির মত দেখতে । এখন পাম দিল নাকি সত্যি বললো তাই ভাবছে তনু । এমন সময় তনুর শ্বাশুড়ি তনুর মাথায় হাত রেখে বলে ,
.
– তোকে তুমি তুমি বলতে পারবো না , তুই আমার ছেলের বউ না আমার মেয়ে । আমি বউ আনি নি আমি মেয়ে এনেছি
– হ্যাঁ গো নতুন বউ তোমার কপাল আসলেই ভালো এমন শ্বাশুড়ি শ্বশুড় পেয়েছো
.
এইদিকে চাচি খালার কথা শুনেও অবাক তনু । সবাই এত ভালো হবে আশা করে নি সে । অন্যদিকে মাইশা আর তার কাজিন রা মিলে তনুকে জেকে বসেছে । সবার সাথে কথা বলতে বলতে ১০ টা পার হয়ে গেছে । তনুর শ্বাশুড়ি তনুকে ডেকে নিয়ে গেলেন ,
.
– একটা সত্যি কথা বলবি মা
– জ্বি মা বলুন
– কাল রাতে সব ঠিকঠাক ছিল তো , মানে তাওহীদ কোন রকম খারাপ ব্যবহার করে নি তো ?
– নাহ মা , সব ঠিক ছিল
– সত্যি ?
– জ্বি মা সত্যি
– তাহলে এই নে , চা টা নিয়ে গিয়ে তাওহীদ কে জাগিয়ে দে আর বল ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে
– আচ্ছা
.
চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে সোজা উপরে চলে যায় তনু । আস্তে করে দরজা খুলে রুমের মধ্যে যায় তনু । তাওহীদ তখনও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে । তনু গিয়ে তাওহীদ এর বেডের কাছে থাকা ল্যাম্পসেড টেবিলের উপরে চায়ের কাপ টা রাখে । অনেক সংকোচ করে কয়েকবার ডাক দেয় ,
.
– এই যে শুনছেন
– এই যে , এই যে ,
– কিহহহ , কি হয়েছে টা কি , এত চিল্লাও কেন
– আমি তো চিল্লাই নাই , আমি তো আস্তেই…..
– চুপ একদম চুপ , কি ব্যাপার কি সকাল সকাল কি হয়েছে
– আসলে মা বলেছিল আপনাকে চা দিতে তাই ডেকেছিলাম , সরি
– নেক্সট টাইম আমি ঘুমালে খবরদার ডাকবে না
– জ্বি
– জ্বি না , মাথায় ঢুকিয়ে নাও , এই এক বিয়ে বিয়ে করে আমার সব শেষ হলো
.
বিয়ের পরদিন এই ব্যবহার টা তনু আশা করে নি তাওহীদের কাছ থেকে । লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে তনুর । এমন সময় দরজায় নক পড়ে
– কে
– ভাইয়া আমি মাইশা
– ওহ ভেতরে আয়
– ভাবি চলো
– কোথায় ?
– তোমাকে মা ডাকছে
– আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি
– আচ্ছা
.
– মা বলেছে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে , সময় মত চলে আসবেন
– যাও তুমি , আমার সময় মত আসবো
– জ্বি
.
আসলে ভাগ্যের কাছে সবাই বাধা থাকে । তনুও তেমন । বিয়ের পরদিন এমন ব্যবহার , এই লোকের সাথে থাকবে কিভাবে তনু । সামান্য ডেকে তোলাকে কেন্দ্র করে এইভাবে কথা বলা তাও সদ্য বিবাহিতা নতুন বউয়ের সাথে । আর তনু তো কষ্টের মাঝেই থাকা এক জীবন্ত লাশ মাত্র । তার সহ্য শক্তির ব্যাপার টা প্রখর , তাই কষ্ট হলেও তাকে দমিয়ে রাখার প্রসেস টা ভালোই রপ্ত আছে তনুর
.
শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বসে তনু , সেখানে আরো কয়েকজন আছে । সবাই ডাইনিং এ বসা । একটা বক্স হাতে ভেতর থেকে আসে মাইশা
.
– আম্মু এই নাও
– দে , দেখি তো মা আমার দিকে দেখ
– এইগুলা কি মা
– দেখতেই পাবি
.
বক্স টা খুলতেই তনু হা হয়ে আছে । বক্স টাতে অনেক গুলো স্বর্নের জিনিস । তনু এইগুলার দিকে একবার তাকায় আবার শ্বাশুড়ির দিকে একবার তাকায় । আর শ্বাশুড়ি গয়নার দিকে একবার তাকাচ্ছে আর বউয়ের দিকে একবার তাকাচ্ছে ,
– কি গো রাবেয়া , কি দেখছো ওমন করে
– আপা দেখছি এর মধ্যে কি কি আমার ঘরের লক্ষীর উপরে সুন্দর লাগবে
– তোমার লক্ষীর এইসব সোনা-দানা লাগবে নাকি সে তো নিজেই খাটি সোনা
– তা অবশ্য ঠিক বলছেন আপা
– এখন সুন্দর দেখে কিছু পড়াও বউ রে
– হ্যাঁ এই তো পেয়েছি , এই গুলাই পড়াবো
– মা শুনুন
– বল মা
– আমি এইগুলি পড়বো না
– কেন , পছন্দ হয় নাই ?
– অনেক সুন্দর , কিন্তু আমার এইগুলা পড়ার যোগ্যতা নেই মা , আর এইগুলা অনেক দামী গহনা
– এই মেয়ে খবরদার আর যাতে কখনো এইসব না শুনি তুই এখন এই বাড়ির বউ এই বাড়ির সব কিছুর প্রতি তোর ততটাই অধিকার আছে যতটা আমার তাওহীদ আর মাইশার আছে
– কিন্তু মা
– নতুন বউয়ের এত কথা বলতে হয় না চুপ করে থাক
.
তনুও আর কথা বেশি বাড়ালো না । সবাই খারাপ ভাবতে পারে ভেবে চুপ হয়ে যায় । শ্বাশুড়ি মোটা একটা চেইন , দুইটা রিং এক জোড়া ঝুমকো দুল আর এক জোড়া মোটা চুড়ি পড়িয়ে দিলেন তনুকে । এত কিছুর কিছুই প্রয়োজন ছিল না তনুর । এইসবে ওর অস্বস্তি হয় । তবুও শ্বাশুড়ির মন রাখতে পড়ে নিল ।
নাস্তার টেবিলে সবাই নাস্তা খাচ্ছে , তাওহীদ ও আছে সেখানে । তাওহীদের opposite side এ তনু বসা । বার বার
আড় চোখে মানুষ টার দিকে তাকাচ্ছে তনু , মানুষ টা কিন্তু দেখতে খারাপ না । কিন্তু আচরণ টা জানি কেমন । অবশ্য নেশাখোর রা বুঝি এমনি হয় । এদের কখন কি হয় কেউই বুঝে না । এতা ক্ষনে ভালো তো ক্ষনে খারাপ ।
.
রাতে রিসিপশনের পার্টি । তনুর বাড়ি থেকে সবাই আসবে । আর শহরে বড় বড় নামি দামী ব্যবসায়ীরা আসবেন । সেন্টারে বিরাট বড় আয়োজন করা হয়েছে ।
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে রুমে আসে তনু রুমে এসে দেখে তাওহীদ সাহেন ফোন নিয়ে পড়ে আছেন ।

তনু ভুল সময়ে চলে এলো না তো ? কিন্তু করবেই বা কি ,

সবাই যে যার মত কাজ করছে , কথা বলছে , আর তাছাড়া শ্বাশুড়ি মা নিজেই বললো রুমে চলে যেতে ,

বিকালে মাইশার সাথে পার্লারে যেতে হবে । কিন্তু এইখানে তো সিচুয়েশান অন্য রকম ।

আর সত্যি বলতে তাওহীদ কে এখন ভয় লাগে তনুর । সকালের ধমক টা আবার মনে পড়ে যায় তনুর ।

তাই আবার বের হয়ে যেতে নিচ্ছিলো আর ঠিক তখনই ,
.
– কোথায় যাচ্ছো মিসেস তাওহীদ
.
কথা টা শুনে থমকে যায় তনু । আর এক কদম ও সামনে যাচ্ছে না । আস্তে করে তাওহীদের দিকে ঘুরে দাড়ালো সে ।
.
– কি হলো , কোথায় যাচ্ছিলে
– না মানে মানে
– মানে মানে , আর কি মানে , রুমে এসেছিলে আবার চলেও যাচ্ছো
– নাহ মানে মা বললো রুমে চলে আসতে বিকালে মাইশার সাথে পার্লারে পাঠাবে
– ওহ , রাতে তো আবার পার্টি আছে , তা আজকেও আটা ময়দা মাখবে ?
– হেএএএ
– তা নয়তো কি তোমরা আর কিছু না পারো আটা ময়দা মাখতে পারো দারুন
– দেখুন আমি এইসব ইউজ করি না , শুধু বিয়ের জন্য পার্লারে যাচ্ছি ,

নয়তো আমি প্রয়োজন ছাড়া পার্লারে যাই না
– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে , এত হাইপার হতে হবে না
– হাইপার হলাম কোথায় ?
– এই তোমার ভার্চ্যুয়াল সাইটে একাউন্ট আছে ?
– নাহ , নেই
– কি বলো , বিশ্বাস হলো না
– ওহ ,
– সত্যি বলছো নাকি মিথ্যা বলছো
– যেইটা ধারণা করে নেন আপনি
– আমি ধারণা করলেই তো আর হবে না আমি এখন ধারণা করবো যে তোমার ১০ টা একাউন্ট আছে ,

এখন কি আদৌ তোমার ১০ টা একাউন্ট আছে ? সো আন্দাজে কথা আমি বলি না
– যাক ভালো
– কি ভালো
– কিছুই না
– বাড়িতে কল করছিলা ?
– হ্যাঁ কথা হয়েছে দুপুরের দিকে
– তা এখন কি রাত
– মানে ১২ টার দিকে কথা হয়েছিল
– আচ্ছা শুনো , রাতে পার্টিতে আমার ফ্রেন্ডস রা আসবে , সুন্দর করে কথা বলবা , আমার মান সম্মান যাতে ক্ষুন্ন না হয় , বিয়ে যখন করে ফেলছি দায় ভার তো নিতেই হবে
– আচ্ছা চেষ্টা করবো
– উহু চেষ্টা না , করতেই হবে
.
এটা বলে তাওহীদ রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর তনু সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে । হঠাৎ হাতে থাকা মোবাইল টায় আবার কল আসে । তনু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে , হঠাৎ করেই মাথা ঝিমিয়ে ওঠে তার , আবার কেন ফোন টা আসলো ?
.
.
.
চলবে…………….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com