Breaking News

তোমায় আমার প্রয়োজন | পর্ব - ৮

রাতে রিসিপশন পার্টি । সবাই এক এক করে সেন্টারে যাচ্ছে । মাহবুব সাহেবের সমস্ত বিজনেস পার্টনার সমস্ত ক্লাইন্ট এবং বন্ধু বান্ধবরা সবাই উপস্থিত হচ্ছেন একে একে । তাওহীদ কে ফরমালে দারুন লাগছে । আস্তে আস্তে তনুর বাড়ির লোকজন আসা শুরু হয়ে গেছে ।
.
তনু তখনও পার্লারে । তবে সাজাচ্ছে তনুর ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী , যাতে তাওহীদ বলতে না পারে আটা ময়দা মেখেছে । হঠাৎ মোবাইলে কল আসে তনুর । তাওহীদ কল দিয়েছে ,
.
– হ্যালো কই
– পার্লারেই আছি
– এখনো মাখা শেষ হয় নাই , মাইশা কোথায় , ওকে ফোন টা দাও
– মাইশা তোমার ভাইয়া কথা বলো
– হ্যাঁ হ্যালো ভাইয়া , কিরে
– কতক্ষণ লাগবে আর ?
– almost complete , একটু পরেই বের হবো
– আচ্ছা তারাতারি আয় আব্বু বার বার জিজ্ঞাসা করছে
– আচ্ছা
.
– বাহ আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে
– ধন্যবাদ
– ওয়াও ভাবি এত কম মেক-আপ কিন্তু দারুন লাগছে তোমাকে
– তুমিও তো কত কিউট
– হ্যাঁ হয়েছে হয়েছে , আর পাম দিও না
– চলো
– হ্যাঁ চলো
.
ননদ ভাবি মিলে গাড়ি নিয়ে পার্লারে যায় । গাড়িতে বসে তনুর অনেক কথাই মাথায় আসছে কিন্তু হিসাব মেলাতে পারছে না । কয়েকদিনের মধ্যেই এত কিছু হয়ে গেলো হঠাৎ হাতে থাকা ফোন টা vaibrate হতে শুরু করে । তনু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে । বাজতে বাজতে কল টাও কেটে যায় । আস্তে করে মোবাইল টা পার্সে রেখে দেয় তনু ।
.
সেন্টারে পৌঁছে তনুর পরিবার অবাক । অনেক বড় করে আয়োজন করেছে মাহবুব সাহেব । অনেক বড় বড় নামি দামী মানুষ আছে সেখানে । কিন্তু আরো অবাক করা কান্ড হচ্ছে কেউই তনুর পরিবারকে কোন অসম্মানজনক কথা বলে নি বরং অনেক সম্মান দিয়েছেন ।
তাওহীদ তনুর ভাই তনুর মামার সাথে ভালো ভাবেই কথা বলেছে ।
.
এমতাবস্থায় তনুর প্রবেশ ঘটে সেন্টারে । সবার নজর তনুর দিকে । মেরুন কালারের বেনারসি টায় দারুন মানিয়েছে তনুকে আর তার সাথে হালকা সাজ । একদম পারফেক্ট একটা বউ লাগছে তনুকে । সেন্টারে গিয়ে নিজের পরিবারকে দেখে চোখের পানি ছেড়ে দেয় তনু যা তাওহীদের চোখ আড়াল করে নি । এদিক সেদিক বাবা মা কে খুজছে তানু
.
– বড় মামা
– হ্যাঁ রে মা
– মা আসলো না
– তোর বাবা কে রেখে কিভাবে আসবে তাই থেকে গেল
– বাবা ভালো আছে তো ?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে , তুই গিয়ে বোস যা
.
মামার কথায় তনু গিয়ে স্টেজে বসে । তারপর এক এক করে সবাই এসে তনুর সাথে দেখা করে । তনুও সবার সাথে হাসি-মুখে সবার সাথে সাক্ষাৎ করে । এমন সময় তাওহীদ এর বন্ধুরা এসে হাজির হয় । এক এক করে সবাই কথা বলছে । হঠাৎ করেই রাফাতের আবির্ভাব ঘটে ।
.
– হেই তাওহীদ
– হ্যালো রাফাত হাউ আর ইউ ব্রো
– ফাইন , দুই-দিন ছিলাম না আর বিয়ে করে ফেললি
– ওকে সরি , হুট করেই হয়ে গেল , মিট মাই ওয়াইফ
– ইয়া সিউর
.
রাফাত হচ্ছে তাওহীদের আরেক ফ্রেন্ড । যেমন তাওহীদ তেমনি রাফাত । রাফাতেরও টাকা পয়সার অভাব নাই তবে এটাও সত্যি যে এটাও নেশাখোর মাতাল । রাফাতকে নিয়ে যায় তাওহীদ তনুর কাছে । রাফাত তনুর দিকে তাকিয়ে আছে । তনুও একটু বিব্রত বোধ করে রাফাতকে দেখে ।
.
– হ্যালো ভাবি
– আসসালামু আলাইকুম
– ওহ , ওয়ালাইকুম আসসালাম , ওকে থাকেন কেমন ? তাওহীদ ওই পাশে আয়
– হ্যাঁ চল
.
অনুষ্ঠান শেষে সবাই আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে । মাহবুব সাহেব তাওহীদ কে বলে তনুর সাথে তনুর বাড়িতে পাঠান । তাওহীদের প্রচুর মেজাজ গরম হচ্ছে তবুও চুপচাপ সহ্য করে যাচ্ছে সে ।
.
রাত ১২ টার পর বাসায় আসে সবাই । সুরিয়া বেগম সব রেডি করে রেখেছে নতুন জামাইর জন্য । কিন্তু মনে তার অনেক ভয় । ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকা ছেলে এমন ছোট ফ্ল্যাটে থাকবে কিভাবে ।
বাসায় ঢুকেই এদিক সেদিক তাকাচ্ছে তাওহীদ ।
.
কেনো জানি বাসায় ঢুকেই এক রকম অজানা শান্তি পেল তাওহীদ । এইদিকে তনু বাসায় এসে মা’কে জড়িয়ে ধরে । মেয়েকে দেখে মা’ও তার কেদে দেয় । মা মেয়ের এই দৃশ্য সবাই দেখলো ।
.
– মা , বাবা কই
– শুয়ে আছে , আর কিছুক্ষণ পর পর জিজ্ঞাসা করে তনু আসছে ?
– আমি বাবার সাথে দেখা করে আসি
– জামাইকেও নিয়ে যা
.
তাওহীদ সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে তার শ্বাশুড়ি মাকে । তাওহীদের চেহারা দেখে তনু অনেকটাই আন্দাজ করতে পারছে এই পরিবেশ টা তাওহীদ পছন্দ হচ্ছে না । তাই বুদ্ধি করে ছুটকি কে উদ্দেশ্য করে বলে
.
– ছুটকি ওনাকে রুমে নিয়ে যা আমি বাবার সাথে দেখা করে আসছি
– আচ্ছা দিদি , ভাইয়া আসেন
.
তনু সোজা বাবার ঘরে চলে যায় । আর ছুটকি তাওহীদকে নিয়ে তনুর রুমে আসে রুম টা খুব বেশি বড় না হলেও বেশ গোছালো । এক পাশে খাট পাশেই জানালা , তার অপর প্রান্তে পার্টেক্স এর ওয়ারড্রপ , একটা ড্রেসিং টেবিল আর একটা বুক সেলফ । খাটের পাশে থাকা ছোট টেবিল টায় একটা ছবির ফ্রেম । পূর্ব দিকে বারান্দা টাও বেশ বড় না । রুমে ঢুকেই সব এক পলকে দেখে নেয় তাওহীদ
.
– ভাইয়া আপনি ফ্রেশ হোন আপু এক্ষুনি চলে আসবে
– দাড়াও
– জ্বি
– তোমার নাম কি
– তনয়া , মাহজাবীন তনয়া সবাই ছুটকি বলেই ডাকে
– ওহ আচ্ছা , তনুশার নাম ও মে বি মাহজাবীন তনুশা , তাই না ?
– জ্বি , আব্বুই রেখেছিল
– ওহ
– আপনি ফ্রেশ হোন ভাইয়া
– আচ্ছা
.
রুমেলের প্রবেশ ,
.
– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া
– ওয়ালাইকুম আসসালাম
– ভাইয়া সমস্যা হচ্ছে না তো
– এখনো অবদি না
– তাহলে ভাইয়া আপনি ফ্রেশ হোন , যদি সমস্যা হয় আমায় বলবেন
– আচ্ছা
– আপনি থাকুন , মা খাবারের ব্যবস্থা করতেছে
– না না রুমেল , কিছু করো না এখন আমি ক্ষুধা নেই
– কিন্তু ভাইয়া
– প্লিজ এখন আর না , কেমন ?
– আচ্ছা ভাইয়া
.
বাবার সাথে দেখা করে তনু রুমে আসে , কিন্তু রুম তো ফাঁকা , কেউই তো নেই । তনু হয়তো ভেবেছে তাওহীদ বসার ঘরে গেছে রুমেলের কাছে । তাই রিলেক্স মুডে শাড়ি টার প্রত্যেকটা পিন খুলতে শুরু করে তনু । গহনা গুলো এক এক করে খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখছে তনু ।
পিন গুলো খুলে শাড়ির আচল টা মাত্রই কাধ থেকে সরালো আর ঠিক তখনই তাওহীদ বারান্দা থেকে রুমে প্রবেশ করে । আয়নায় তাওহীদ কে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তনু । তাওহীদ বেকুব হয়ে তাকিয়ে থাকে । পরক্ষনেই তনু শাড়ির আচল টা তারাতারি আবার কাধে নিয়ে নেয় ।
.
– সরি সরি
– নাহ ঠিক আছে , আপনি বারান্দায় ছিলেন ?
– হ্যাঁ , সিগারেট টানছিলাম আর কি
– ওহ , আচ্ছা শুয়ে পড়ুন , আমি ফ্যান চালিয়ে দিচ্ছি
– ফ্যান , এ.সি নেই ?
– নাহ , নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য এ.সি হচ্ছে আকাশের চাঁদের মত
– ওহ
– শুয়ে পড়ুন
– হ্যাঁ শুবো , তোমার রুম টা কিন্তু ততটাও খারাপ না
– আবার ততটা ভালোও না
– ওয়াশরুম টা কিন্ত সুন্দর করেই সাজানো
– ওহ
– তনুশা
– জ্বি
– তোমার বাবার সাথে দেখা করা টা উচিত ছিল না কি ?
– বাবাকে বলেছি আপনি টায়ার্ড কাল দেখা করবেন
– নাহ আমি তো টায়ার্ড নই , মিথ্যা বললা কেন
– আপনি কি দেখা করতে চাচ্ছেন ?
– অবশ্যই
– তাহলে অপেক্ষা করুন , আমি চেঞ্জ করে আসি
– ওকে , এই দাড়াও তো
– জ্বি বলেন
– কি পড়বে এখন
– মানে
– মানে এটা চেঞ্জ করে কি পড়বে
– থ্রী-পিছ ই পড়বো
– ওহ
– আপনি বসেন আমি চেঞ্জ করে আসি
.
তনু ওয়াসরুমে চলে যায় , এই সুযোগে তাওহীদ পুরো রুম টা ঘুরে ঘুরে দেখে ।
হঠাৎ তনুর ছবি টায় চোখ যায় তাওহীদের
একটা পরীর মত মেয়ে চুপচাপ বসে আছে , চোখে তার হাজারো স্বপ্ন , চোখ জোড়া চিক চিক করছে , মনে হচ্ছে এখনি টুপ টুপ করে পানি পড়ে যাবে ।
সত্যিই সে অনন্যা ।
এর মাঝেই পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে
.
– ওটা আমার ছবি , নদীর পাড়ে বসেছিলাম , রুমেল তুলে ছিল
– ওহ আচ্ছা
ঘুমিয়ে পড়ুন
– কেন ? এই না বললা তোমার বাবার সাথে দেখা করতে যাবা
– বাবা ঘুমিয়ে গেছে , আপনি ও ঘুমিয়ে যান
– মানে কি
– কিছুই না
– আচ্ছা তোমাদের বাসায় কয়দিন থাকতে হবে
– পড়শু চলে যাবো
– আচ্ছা , আমি কি এখানে ড্রিঙ্ক করতে পারি ?
– নাহ , খবরদার নাহ , এখানে একদম না
– oh god , যত্তসব মিডেল ক্লাস ম্যান্টালিটির লোক
– হ্যাঁ , ঘুমান এখন good night
.
.
দুইজন দুইদিকে মুখ করে শুয়ে আছে । এমন সময় তনুর মোবাইলে কল আসে । ভাগ্যিস মোবাইল টা সাইলেন্ট করা ছিল ।
কল টা দেখে তনুর আত্না আবার ভয়ে কেপে ওঠে । আবার কেন কল দিল ?
.
.
.
চলবে……………………..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com