Breaking News

প্রেয়সী | পার্ট: ১২ | লেখিকা: সুলতানা তমা

ফজরের নামাজ পড়ে বাগানে হাটতে আসলাম। আনমনা হয়ে হাটছি আর সদ্য ফোটা ফুলগুলো আলতো হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ অর্পির দিকে চোখ পড়লো, ও এদিকেই আসছে। 

অর্পির হাতে ফুলের ঝুড়ি, হয়তো পূজার জন্য ফুল তুলবে। গতকাল সন্ধ্যায় অর্পি আমার জন্য পূজো দিলো কিন্তু একবারের জন্য আমাকে দেখতে আসেনি, আমার কাছে আসেনি। 

অর্পির এমন অবহেলা আমাকে সত্যি খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। অর্পির নজর আমার দিকে পড়লো আর তৎক্ষণাৎ অর্পি আবার বাসার ভিতর চলে গেল। অর্পি আমাকে এড়িয়ে চলছে আমি বুঝতে পারছি কিন্তু… 

হঠাৎ ছাদের দিকে চোখ পড়লো, সাজিদ মন খারাপ করে দোলনায় বসে আছে। সাজিদ তো এত ভোরে ঘুম থেকে উঠে না। সাজিদ আমার কাছে আসছে না কেন, আমার সাথে কথা বলছে না কেন, ও এমন পালটে গেছে কেন সব আমাকে জানতে হবে আর এজন্য ওর মুখোমুখি হওয়া প্রয়োজন। ছাদের দিকে ছুটে গেলাম।

আমাকে ছাদে দেখেই সাজিদ চলে যেতে চাইলো, ওর হাত ধরে টেনে এনে আমার সামনে দাঁড় করালাম ওকে। সাজিদ মাথা নিচু করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: কি হয়েছে তোর?
সাজিদ: (নিশ্চুপ)
আমি: কেন করছিস এমন? আমাকে ইগ্নোর করছিস কেন?
সাজিদ: (নিশ্চুপ)

আমি: আমাকে পুলিশ এরেস্ট করে থানায় নিয়ে গেল সবাই আমাকে আনতে গেল কিন্তু তুই গেলি না। বাসায় আসার পর সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো কিন্তু তোর দেখা নেই। আমি অসুস্থ এইটা শুনেও আমাকে একবারের জন্য দেখতে আসলি না। এত পালটে গেলি কিভাবে সাজিদ? তিনবছর আগে এত বড় ঝড় বয়ে গেলো আমাদের উপর দিয়ে তবুও তুই এতটুকু পালটে যাসনি। আর এখন কি এমন হলো যে দু চারদিনের ব্যবধানে তুই এত পালটে গেলি?
সাজিদ: (নিশ্চুপ)

আমি: তিনবছর আগে যখন তোর চাচা, চাচাতো ভাই, পুলিশ, মিডিয়া পুরো দুনিয়া আমার বিপক্ষে ছিল তখন তুই আমার পাশে ছিলি আর আজ সেই তুই এত পালটে গেলি? কিসের জন্য? কি চাস তুই? যা চাইবি তাই দিবো তবুও চুপ করে থাকিস না বল প্লিজ!

সাজিদ: কি চাইবো? কি চাওয়ার আছে আমার তোর কাছে? আমি না চাইতেই তো তুই আমাকে সব দিয়ে দিস তাহলে চাইবোটা কি? যার কাছে এতো মানুষের ভালোবাসা আছে তার আবার কিসের প্রয়োজন থাকতে পারে? (সাজিদ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা গুলো বললো)
আমি: তাহলে এমন পালটে গেছিস কেন?

আব্বু: আয়াস ও পালটে যায়নি। (আব্বু এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন)
আব্বু: কাল থানায় তোর দুচোখ শুধু সাজিদকে খুঁজছিল আমি সেটা লক্ষ করেছি। এমনকি বাসায় এসেও তুই সাজিদকে খুঁজেছিস মনে মনে। তোর ভাবনা সাজিদ পালটে গেছে। সাজিদ পালটে যায়নি আসলে ও লজ্জায় তোর সামনে আসতে পারছিল না।
আমি: লজ্জা? কিসের লজ্জা?

সাজিদ: আমার জন্য তোকে জেলে যেতে হলো এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে?
আব্বু: কিন্তু সাজিদ তুই’ই তো ছুটাছুটি করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আয়াসের জামিনের ব্যবস্থা করলি এইটা কি কম?
আমি: সাজিদ…
আব্বু: তোর জামিনের ব্যবস্থা সাজিদই করেছে। আমাদের পাঠিয়েছিল তোকে আনতে, ও লজ্জায় যায়নি।

সাজিদ: তিনবছর আগেও চাচ্চু তোর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল আমি সব সামলে নিয়েছিলাম, তোকে এরেস্ট হতে দেইনি। আর আজ কিনা আমার জন্যই তোকে… (সাজিদকে বুকের সাথে ঝাপটে ধরলাম। এবার তো আমার লজ্জা হচ্ছে। সাজিদ লজ্জায় আমার সামনে আসেনি আর আমি কিনা কি ভাবছিলাম। আমার ভাবনা সত্যিই খুব নিচু হয়ে গেছে)

আব্বু: অবশেষে লজ্জা কেটে গেলো তাহলে। এবার কান্না থামা দুজনে। তোদের বন্ধুত্ব দেখলে আমার খুব হিংসে হয়।
সাজিদ: তোমারও তো এমন একটা বন্ধু…
আমি: সাজিদ! (সাজিদকে থামিয়ে দিলাম, আব্বু মৃদু হেসে চলে গেলেন)
আমি: কত কিছুই না ভেবেছি তোর বিরুদ্ধে, এখন নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।
সাজিদ: বাদ দেতো এসব। এখন ভাব কি করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
আমি: হুম জিসান অনেক বেড়ে গেছে।
সাজিদ: আমার কাছে একটা সমাধান আছে আর এই কাজটা করলে চাচ্চু আমাদের আর কখনো ডিস্টার্ব করবে না।
আমি: কোন কাজ?
সাজিদ: পরে বলবো।
আমি: ঠিক আছে।

সাজিদ চলে গেলো। জানিনা ও কি সিদ্ধান্ত নিলো। তবে একটা বিষয় খুব খটকা লাগছে, জিসানরা কি সাজিদকে সত্যি ভালোবাসে? নাকি সব লোক দেখানো? ওদের এতো ভালোবাসার পিছনে কোনো স্বার্থ নেই তো? হতেও পারে কোনো স্বার্থের জন্যই ওরা সাজিদকে ওদের কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু কি স্বার্থ?

মধ্যে কেটে গেছে কয়েকটা দিন…
অফিস নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম এই কয়দিন। অবশ্য ব্যস্ত ছিলাম বললে ভুল হবে কারণ আমিতো ইচ্ছে করে ব্যস্ত থেকেছি। আর তার কারণ একটাই অর্পির থেকে দূরে থাকা। কিন্তু কথায় আছে না প্রিয় মানুষের থেকে দূরে গেলেও তাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলা যায় না। আমিও অর্পিকে ভুলতে পারিনি, প্রতিটি মুহূর্তে ওকে মনে পড়েছে। কিন্তু অর্পি… অর্পি তো দিব্যি আমাকে অবহেলা করে যাচ্ছে। আমাকে দেখলে অর্পি এড়িয়ে চলে, কথা বলে না আমার সাথে আর অর্পির এই অবহেলা গুলো আমাকে খুব বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। প্রিয় মানুষ অবহেলা করলে বোধহয় তার গুরুত্বটা ভালোভাবে বুঝা যায়, যেমনটা আমি বুঝেছি। আমি বুঝে গেছি অর্পি ছাড়া আয়াস একদম নিস্ব।

–স্যার আসবো? (জানালার কাছে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আকাশ দেখছিলাম আর আনমনা হয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো, ভুলেই গিয়েছিলাম আমি যে অফিসে আছি)
আমি: হ্যাঁ এসো।
–এই ফাইলে কিছু সিগনেচার লাগবে কিন্তু…
আমি: দাও করে দিচ্ছি।
–কিন্তু স্যার আপনি করলে হবে না।
আমি: ওহ আব্বুর সিগনেচার লাগবে? ঠিক আছে বাসায়…
–না স্যার, যে শিমুলতলী ফ্যাক্টরির আসল মালিক তার সিগনেচার লাগবে।
আমি: আসল মালিক মানে? ঐ ফ্যাক্টরি তো আব্বুর নামে।
–নাতো। দলিলে তো লেখা অর্পিতা রায় মানে আপনার স্ত্রী। (আমার মাথা ভনভন করছে, কি বলছে এসব? ফ্যাক্টরি অর্পির নামে মানে?)
আমি: পাগল হয়ে গেছ কিসব বলছ? ফ্যাক্টরি অর্পির নামে হতে যাবে কেন?
–সেটা আমি কি করে জানবো স্যার? আমিতো গত সপ্তাহে জয়েন করলাম মাত্র।
আমি: ঠিক আছে ফাইল রেখে তুমি যাও।
–ওকে স্যার।

সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে, কি হচ্ছে এসব? ফ্যাক্টরি অর্পির নামে এইটার মানে কি? আব্বু শুধু শুধু অর্পির নামে ফ্যাক্টরি লিখে দিতে যাবেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তর তো একমাত্র আব্বুই দিতে পারেন। ফাইল হাতে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সবকিছু জানতে হবে আমাকে। প্রথমে অর্পির সাথে এভাবে বিয়ে আর এখন অর্পির নামে ফ্যাক্টরি লিখে দেওয়া সবকিছু কেমন যেন সন্দেহজনক লাগছে। আব্বু কি কিছু লুকাচ্ছেন আমার থেকে? কেন করছেন আব্বু এসব?
বাসায় এসে সোজা আব্বুর রুমে আসলাম। আব্বু ইজি চেয়ারে চোখ বুজে বসে আছেন।
আমি: আব্বু?
আব্বু: আয়াস? এই সময় তুই বাসায়?
আমি: একটা কথা জানার ছিল।
আব্বু: হ্যাঁ বল।

আমি: আবারো বলছি সত্যি করে বলতো অর্পি আর আমার বিয়েটা কেন দিয়েছ? শুধু কি ও লগ্নভ্রষ্টা হবে বলে নাকি এর পিছনে কোনো কারণ আছে?
আব্বু: আয়াস এই বিষয়ে আমরা আগেও কথা বলেছি। এখন আবার নতুন করে এসব কথা আসছে কোথা থেকে?
আমি: আসছে কারণ তোমার সব কাজকর্ম আমার কাছে সন্দেহজনক লাগছে।
আব্বু: মানে?
আমি: অর্পির নামে তুমি ফ্যাক্টরি লিখে দিয়েছ কেন?
আব্বু: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো বল।
আব্বু: আমার বৌমার নামে আমি লিখে দিয়েছি প্রয়োজন হলে সব লিখে দিবো কিন্তু সেই কৈফিয়ত কি আমি তোমাকে দিবো?
আমি: তোমার বৌমার নামে তুমি লিখে দিতেই পারো কিন্তু সবার থেকে লুকিয়ে কেন? চাচ্চু বা ভাইয়া ওরা কেউ জানে?
আব্বু: না।

আমি: লুকিয়ে দিয়েছ আর এটাই তো আমার সন্দেহ। প্রথমে হুট করে অর্পির সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দিলে আর এখন এসব রহস্যময় কাজ করছ। কেন আব্বু? অর্পি কে? ও কি সত্যিই শুধু আমার স্ত্রী নাকি অন্য কেউ?
আব্বু: আয়াস…
আমি: আমার তো মনে হচ্ছে অর্পির সাথে তোমার অন্য কোনো সম্পর্ক আছে। কিন্তু কি সেটা বলবে প্লিজ!
আব্বু: এবার কিন্তু তুমি বাড়াবাড়ি করছ। সবকিছু তোমাকে বলতে হবে কেন? অফিসের দায়িত্ব নিয়েছ তাই? নিতে হবে না তোমাকে   দায়িত্ব। আমি সব সামলে নিতে পারবো।
আমি: ধ্যাত!

রাগ দেখিয়ে আব্বুর রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। যা খুশি তাই করছেন কিছুই বলছেন না আমাদের যত্তোসব। অর্পির থেকে জানতে হবে আমাকে। অর্পি নিশ্চয় জানে কারণ অর্পির সিগনেচার ছাড়া তো আর আব্বু ওকে ফ্যাক্টরি লিখে দেননি।
অর্পির রুমে এসে সব রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো ওকে দেখে। এতো সাজুগুজু করছে কেন মেয়েটা? আমাকে ওর প্রেমে পাগল করার জন্য? আমিতো এমনিতেই ওর প্রেমে পাগল হয়ে আছি।
অর্পি: আপনি এখানে কেন? (শাড়ির কুচি ঠিক করতে পারছে না আবার তেজ দেখিয়ে কথা বলছে হুহ)
অর্পি: এসেই যখন পড়েছেন তাহলে একটা হেল্প করুন।
আমি: কুচি ঠিক করে দিবো?
অর্পি: জ্বী না। তনিমাকে ডেকে দিন। (ধ্যাত ভেবেছিলাম কুচি ধরে দিতে বলবে)
অর্পি: কি হলো যান।
আমি: শর্ত আছে।
অর্পি: কি?

আমি: তুমি করে বলো।
অর্পি: যাও তনিমাকে ডেকে দাও, হয়েছে? (মুখ ভেংচি দিলো তারমানে অভিমান কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমি তনিমাকে ডাকতে যাচ্ছি কেন আমিই তো শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করে দিতে পারি, হাজার হউক ভালোবাসি তো। যদিও সে ছমাস পর অন্য কারো হয়ে যাবে)
অর্পি: কি হলো ফিরে আসলে যে?
আমি: তনিমা নেই।
অর্পি: নেই মানে? ওহ বুঝেছি। কিন্তু এখন আমি কি করবো? (কি বুঝেছে কে জানে। একটু একটু করে অর্পির দিকে এগিয়ে আসলাম আর ওর পায়ের কাছে বসে এলোমেলো হয়ে যাওয়া কুচি গুলো ঠিক করতে লাগলাম)
আমি: হয়েছে?

অর্পি: তুমি শাড়ির কুচিও ঠিক করতে পারো? এই সত্যি করে বলতো এভাবে কয়টা মেয়ের শাড়ির কুচি ঠিক করে দিয়েছ? (অর্পি চোখ রাঙ্গিয়ে প্রশ্ন করলো, আমি মৃদু হাসলাম)
আমি: শুধু ইরার। আর এই প্রথম তোমার।
অর্পি: ওহ সরি।

আমি: কিন্তু তুমি এতো সাজুগুজু করছ কেন বলতো?
অর্পি: এখনো তো সাজিই নি শুধু শাড়ি পড়েছি মাত্র। আর সাজিদ তোমার বন্ধু সাজতে বললো।
আমি: ও বললো আর ওমনি সাজতে শুরু করলে?
অর্পি: আমার তো সাজতে ভালো লাগে। আর সাজিদ বললো আজ নাকি আমার জন্য কি সারপ্রাইজ আছে। (সারপ্রাইজ শব্দটা শুনে বুকের বা পাশটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো, তাহলে আজ সাজিদ অর্পিকে প্রপোজ করবে, নিশ্চয় খুব সুন্দর করে আয়োজন করছে)
অর্পি: কি হলো?

আমি: কিছুনা। (চোখের কোণে আসা পানি তড়িঘড়ি করে মুছে নিলাম। কান্না করে কি হবে? অর্পিকে ভালোবাসার অধিকার আর মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত সময় আছে আমার কাছে, কান্না না করে মুহূর্ত গুলো সুন্দর করে তুলাটাই তো ভালো)
আমি: অর্পি?
অর্পি: হুম।
আমি: তোমার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে দিবে? বেশি সময় নষ্ট করবো না তোমার, আধ ঘন্টা বা এক ঘন্টা…
অর্পি: এভাবে বলছ কেন কি হয়েছে?
আমি: কিছুনা।

অর্পি কানের দুল পড়ছিল আমি এগিয়ে গিয়ে দুলটা আমার হাতে নিলাম, অর্পি আয়নায় আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। কানের দুলটা পড়িয়ে দিলাম। আমার ভিতর কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে, এই মনে হচ্ছে সব ঠিক আছে অর্পি শুধু আমার আবার এই মনে হচ্ছে একটু পর সবকিছু পালটে যাবে আর এইটা ভাবতেই ভিতরটা একদম দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। অর্পির দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বারান্দার দিকে চলে গেলাম।

বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি আর আকাশ দেখছি। আজো পুরো আকাশ জুড়ে জ্যোৎস্না ভেসে বেড়াচ্ছে। সেদিন অর্পি পাশে ছিলনা কিন্তু আজ আছে তবুও ওর সাথে জ্যোৎস্না বিলাস করতে পারবো না কারণ মাঝখানে সাজিদের ভালোবাসা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর কখনো চাইলেও অর্পির সাথে জ্যোৎস্না বিলাস হবে না, হবে না আর কখনো মন খারাপের মেঘ কাটিয়ে একসাথে মুঠো ভরতি জ্যোৎস্না ধরার। কারণ.. কারণ অর্পি কয়েক মুহূর্ত পর সাজিদের ভালোবাসা হয়ে যাবে, আমার আর ওর উপর কোনো অধিকার থাকবে না।

অর্পি: আয়াস? (অর্পির ডাকে পিছন ফিরে তাকালাম, অপলক দৃষ্টিতে দেখছি ওকে)
অর্পি: এই কাঠগোলাপ দুটো খোঁপায় গুঁজে দাওনা প্লিজ! (অর্পির কথায় পাত্তা না দিয়ে আমি ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। গাঢ় ফিরোজা রঙের জামদানী শাড়ি, হাতে কাচের চুড়ি, কপালে ছোট একটি কালো টিপ, চোখে কাজল, পাতলা ঠোঁট দুটোতে হাল্কা লিপস্টিক। চোখ সরানো যাচ্ছে না। অর্পির প্রেমে আবারো পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু…)

অর্পি: হা করে তাকিয়ে থাকবে নাকি কাঠগোলাপ দুটো খোঁপায় গুঁজে দিবে? (ওর চুলের খোঁপার দিকে লক্ষ করলাম, উঁহু খোঁপায় ওকে যতোটা সুন্দর লাগছে তারচেয়ে বেশি সুন্দর লাগবে খোলা চুলে। চট করে খোঁপাটা খুলে দিলাম, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পুরো পিটে ছড়িয়ে পড়ে কোমড়ে গিয়ে থামলো। অর্পি চোখ দুটো রাঙ্গিয়ে আমার দিকে তাকালো)
অর্পি: এইটা কি করলে?
আমি: রাগলে তোমাকে দারুণ লাগে।
অর্পি: আয়াস?

আমি: এই শাড়ি আর সাজের সাথে তোমাকে খোঁপা চুলে নয় খোলা চুলে বেশ মানিয়েছে। (অর্পির হাত থেকে কাঠগোলাপ দুটো এনে ওর কানের পাশে গুঁজে দিলাম। অর্পি আর কিছু না বলে আমার পাশে এসে রেলিং ধরে দাঁড়ালো)
অর্পি: ইরার সাথেও বুঝি এমন পাগলামি করতে? (অর্পির কন্ঠে অভিমানের সুর, মৃদু হাসলাম)
আমি: হ্যাঁ। একমাত্র ইরার সাথেই এমন পাগলামি করতাম আর আজ তোমার সাথে করলাম কারণ…
অর্পি: কারণ কি?
আমি: কিছুনা। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
অর্পি: সত্যি?

আমি: একদম। আমি নিশ্চিত হুমায়ুন আহমেদ স্যার আজ তোমাকে দেখলে তোমার সৌন্দর্য বর্ণনা করে গল্প লিখতে বসে যেতেন। আর বর্ণনার শেষটায় লিখতেন উনার দেখা শ্রেষ্ঠ মায়াবতী অর্পিতা রায়। (আমার কথা শুনে অর্পি খিলখিল করে হেসে উঠলো, আমি অদ্ভুত মুগ্ধতায় ওর হাসি দেখছি)
অর্পি: তোমার মধ্যে যে কবি কবি ভাব আছে সেটা তো আমি আগে জানতাম না।
আমি: মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন তার মনে হাজারো রঙ ধারণ করে, কখনো কবি আবার কখনো উদাসীন কখনোবা…

অর্পি: কারো প্রেমে পড়েছ নাকি?
অর্পির প্রশ্ন শুনে মৃদু হেসে আকাশের দিকে তাকালাম। বড় তারাটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ইরাকে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে… খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে ও কি অভিমান করছে না আমার এসব পাগলামো দেখে? ওর কি এতটুকুও রাগ হচ্ছে না আমি অর্পিকে ভালোবাসি জেনে? নাকি ইরা চাইছে আমি নতুন করে বাঁচতে শিখি নতুন করে কাউকে ভালোবাসি? যদি তাই হবে তাহলে কেন অর্পি অন্য কারো হতে চলেছে? এমন কি হতে পারেনা অর্পি আমারই রয়ে গেল আর ঠিক ইরার মতো আমাকে আগলে রাখলো…

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com