Breaking News

প্রেয়সী | পার্ট: ১১


ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের তারিখটায়ও গোল চিহ্ন দিলাম। আজ নয়দিন, হুম দেখতে দেখতে নয়দিন পেরিয়ে গেল অর্পিকে আমি দেখিনা। অর্পি চলে যাওয়ার পরের দিন থেকে দিন গুনতে আর ক্যালেন্ডারের পাতায় গোল চিহ্ন দিতে শুরু করেছিলাম। মেয়েটা কি বুঝেনা তাকে ছাড়া আমি ভালো নেই?

তাকে একনজর দেখার জন্য আমার মন চাতকপাখির মতো অপেক্ষা করছে?
কেন ফিরছে না সে? নয়দিন কি কম সময়? নাকি তার দুর্জয় আসতে দিচ্ছে না?
নাকি আমি শুধু একাই তার মায়ায় পড়েছি! সে পড়েনি?
প্রিয় মানুষ চোখের আড়াল হলে তার জন্য মন এমন ছটফট করে কেন?
আচ্ছা নয়দিনে আমার এত কষ্ট হচ্ছে অর্পিকে ছাড়া থাকতে তাহলে ছয়মাস পর সারাজীবন
অর্পিকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে? হঠাৎ দরজায় ঠোকা পড়লো, তড়িঘড়ি করে চোখের
পানি মুছে নিয়ে দরজা খুলতে গেলাম।

তৃষ্ণার্ত চাতক বৃষ্টির দেখা পেলে যেমন আনন্দে আত্মহারা হয় সামনের মানুষটাকে
দেখে আমারো তাই হচ্ছে, অর্পিকে দেখে আমার মন যেন আনন্দে নেচে উঠেছে। অবশেষে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অর্পি ফিরে আসলো তাহলে। কিন্তু এত সকালে অর্পি আসলো কিভাবে?
অর্পি: হা করে কি দেখছেন? আমি ভূত নই আমি অর্পিই।
আমি: (নিশ্চুপ)
অর্পি: কথাও বলবেন না নাকি?
আমি: এত সকালে…
অর্পি: আমার মামাকে সেই দূরের পাহাড়ি গ্রাম থেকে প্রতিদিন অফিসে আসতে হয়, উনার সাথে এসেছি।

আমি: মামার জন্য এখানে বাসার ব্যবস্থা করে দিবো?
অর্পি: প্রয়োজন নেই আপনার দয়ার।
আমি: রেগে আছ?
অর্পি: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো?
অর্পি: কথা বলবো না।
আমার দিকে একটি ভাজ করা কাগজ এগিয়ে দিলো, ওর থেকে কাগজটা নিতেই দৌড়ে পালিয়ে গেল।
চিঠি! কিন্তু কিসের চিঠি এইটা? ডিভোর্স নিয়ে কিছু নয়তো? বিছানায় বসে কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠির ভাজ খুলতে শুরু করলাম। ইয়া বড় পাতায় ছোট ছোট অক্ষরে কিছু লেখা, পড়তে শুরু করলাম…
“ভেবেছিলাম তুমি আমাকে সত্যি বন্ধু ভাবো কিন্তু আমার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিলে।
বন্ধুত্ব কি এমন হয়? সেদিন আমাকে দিয়ে আসতে গিয়ে গাড়ি থেকেই নামলে না,
তড়িঘড়ি করে ছুটে আসলে অফিসের অজুহাত দিয়ে। তারপর শুরু হলো তোমার ফোনের অপেক্ষা করা।

বারবার মনে হতো এই বুঝি তুমি ফোন করে বলবে আমাকে বড্ড মিস করছ।
কিন্তু তোমার ফোন আসেনি, তুমি তো মামা আর দুর্জয় এর নাম্বার জানতে তাহলে কেন একবারের
জন্যও ফোন করনি? ফোনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে যখন
এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো তখন হঠাৎ মনে হলো তুমি বোধহয় আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ফোন করনি। তোমার ফোনের অপেক্ষায় থেকে যখন আমি অভিমানে গাল ফুলাবো তখনি কোনো এক সন্ধ্যায়

তুমি আসবে আমার দরজায়, কড়া নেড়ে দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে আমার আসার!
আর আমি? আমি এই বুঝি অপেক্ষার অবসান হলো ভেবে দৌড়ে এসে দরজা খুলবো।
তুমি আমার চোখে চোখ রেখে শান্তভাবে বলে ফেলবে ‘তোমাকে খুব মনে পড়ছিল তাই চলে এলাম’ কিন্তু..

কিন্তু তুমি আসনি। জানিনা কি ভুল করেছি যার কারণে তুমি আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলছ।
সমাজ বলে দু ধর্মের দুজন মানুষের বিয়ে কখনো সম্ভব না কিন্তু তুমি প্রমাণ
করলে শুধু বিয়ে নয় বন্ধুত্বও সম্ভব নয়। যতোটা পারি তোমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবো”
চোখ দুটো বুজে ফেললাম। কষ্ট হচ্ছে খুব, অর্পি আমার জন্য এভাবে অপেক্ষা করছিল
আর আমি বুঝতেও পারিনি? অবশ্য না বুঝাটাই ভালো হয়েছে, বুঝলে হয়তো ছুটে যেতাম
ওর কাছে। চিঠিটা ভাজ করে ড্রয়ারে যত্ন করে রেখে দিলাম আর আনমনেই বলে
ফেললাম “তোমার ভুল একটাই অর্পি তোমার প্রেমে আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলেছ, মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছ তোমার”

অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে আসলাম, সাজিদ বসে ছিল আমাকে দেখেই আমার কাছে আসলো।
আমি: কিরে কিছু বলবি?
সাজিদ: বাসায় থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছি।
আমি: অর্পি ছিলনা তাই, আজ তো অর্পি চলে এসেছে।
সাজিদ: হুম অর্পিকে না দেখে এই নয়দিন খুব কষ্টে কাটিয়েছি। (মৃদু হাসলাম)
সাজিদ: বিশ্বাস হচ্ছে না?
আমি: হবে না কেন? অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে আসছি।
সাজিদ: হুম।

আমি: বাহিরে যাস না প্লিজ! জিসান যেন কোনোভাবেই জানতে না পা…
অর্পি: উফফ! (সাজিদের দিকে তাকিয়ে পিছু হাটছিলাম, দরজার সামনে এসে অর্পির সাথে ধাক্কা খেলাম। বাগান থেকে ফুল তুলে এনেছে পূজো দিবে হয়তো, ইশশ ফুলগুলো পড়ে গেছে)
অর্পি: অন্ধ কোথাকার আমার ফুলগুলো সব ফেলে দিলো।
আমি: আমি তুলে দিচ্ছি।

অর্পি: খবরদার আমার পূজোর ফুলে হাত দিবেন না। (হাত গুটিয়ে নিলাম, পূজোর ফুলে হাত দেওয়া নিষেধ কেন?)
অর্পি: হিন্দুদের যে বন্ধু ভাবতে পারেনা তার কোনো অধিকার নেই হিন্দুদের পূজোর ফুল স্পর্শ করার। (বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছে আর ফুল তুলছে)
আমি: অর্পি আসলে আমি দেখি…

অর্পি: আপনাকে আমি ছিনি না কথা বলতে আসবেন না আমার সাথে।
অর্পি ফুলগুলো নিয়ে চলে যাচ্ছে আমি ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। অর্পি আমাকে অবহেলা করছে? ওর অবহেলা যে আমি সহ্য করতে পারছি না।
অর্পির কথা ভাবতে ভাবতে আনমনে ড্রাইভ করছিলাম হঠাৎ সামনে অন্য একটি গাড়ি এসে দাঁড়ালো, তাড়াতাড়ি গাড়ি থামাতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেলাম। কপাল কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে, কাটা জায়গা হাত দিয়ে চেপে ধরে সামনে তাকালাম, জিসান! ইচ্ছে হচ্ছে ওকে এখানেই শেষ করে দেই।
জিসান: নেমে আয়।

আমি: রাস্তা কি তোর বাবার? এভাবে গাড়ি আটকিয়েছিস কেন?
জিসান: তুই যে অধিকারে সাজিদকে আটকে রেখেছিস আমি সে অধিকারে তোর গাড়ি আটকালাম। (সাজিদ এসেছে সেটা জিসান জানলো কিভাবে?)
জিসান: কিভাবে জানলাম সেটাই তো ভাবছিস? তোর কি মনে হয় আমি কোনো খবর রাখি না? তোর বাসায় কে আসছে কে যাচ্ছে রোজ কি কি হচ্ছে সব খবর আমি রাখি।
আমি: তাতে আমার কি?

জিসান: সাজিদকে আটকে রেখেছিস কেন?
আমি: আটকে রাখিনি ও নিজেই আটকে আছে আর সেটা আমাদের ভালোবাসার জোরে।
জিসান: ভালোবাসা? তোর মুখে শব্দটা মানায় না। যদি ভালোবাসা শব্দটার মর্ম বুঝতি তাহলে ইরাকে মেরে ফেলতি না। তিন তিনটা খুন করেছিস আর এখন আবার সাজিদকে নিয়ে খেলছিস, ভুলে যাস না তিন বছর আগের মামলা এখনো আছে। আমি চাইলে আবারো…
আমি: যা না আবার মামলা ওপেন কর, আগেও কিছু করতে পারিসনি এখনো পারবি না।
জিসান: এখন পারবো কারণ আগে সাজিদ তোদের পক্ষে কথা বলেছিল…
আমি: এখন কি তোদের হয়ে কথা বলবে?
জিসান: হতেও পারে। (জিসান হঠাৎ এমন কথা বলছে কেন? এতটা শিওর হয়ে ও বলছে কিভাবে সাজিদ এখন ওদের হয়ে কথা বলবে?)

জিসান: দেখ আমি সব ভুলে যাবো শুধু সাজিদকে আমাদের কাছে আসতে দে।
আমি: সাজিদ কি পিচ্ছি? ও যেখানে ভালো মনে করে সেখানে থাকবে।
জিসান: তুই কিন্তু আমার ধৈর্যের…
আমি: সামনে থেকে সরে দাঁড়া।
গাড়ি স্টার্ট দিলাম, জিসান নিজে থেকেই সরে গেল। অযতা মাথাটা গরম করে দিলো যত্তোসব।
মামা: আয়াস বাবা কি হয়েছে? (অফিসে ঢুকতেই মামা আমার কপালে রক্ত দেখে চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন)

আমি: তেমন কিছু না মামা।
মামা: এসব কি করে হলো? দাঁড়াও আমি তোমার ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসছি।
ভাইয়া: কি হয়েছে? (ধ্যাত সারা অফিস এখন চেঁচামেচি শুরু করবে)
ভাইয়া: আয়াস..
আমি: বলছি ভাইয়া আগে ব্যান্ডেজ করতে দাও।
ভাইয়া: চল আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি। (ভাইয়া আমাকে চেয়ারে বসিয়ে ব্যান্ডেজ করতে শুরু করলো)
ভাইয়া: কপালে লাগলো কিভাবে?
আমি: হঠাৎ গাড়ি…
ভাইয়া: কিছু লুকাস না প্লিজ!

আমি: লুকাচ্ছি না। অফিসে আসার সময় জিসান হঠাৎ আমার গাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো আর আমি তাল সামলাতে না পেরে তাড়াতাড়ি গাড়ি থামাতে গিয়ে কপালে লেগে গেছে।
ভাইয়া: এই জিসান আবার শুরু করেছে?
আমি: জিসান জেনে গেছে সাজিদ…
“সাজিদকে যে তোমরা কিডন্যাপ করেছ” (কথাটা শুনে দরজায় তাকালাম, পুলিশ? শেষ পর্যন্ত জিসান অফিসে পুলিশ পাঠালো?
ভাইয়া: আপনারা?
পুলিশ: জিসান থানায় ডায়েরী করেছেন উনার চাচাতো ভাই সাজিদকে নাকি আপনারা কিডন্যাপ করে বাসায় আটকে রেখেছেন?
ভাইয়া: কিডন্যাপ করে কি বাসায় আটকে রাখে? মুক্তিপণ চেয়েছি আমরা? আর আমরা কি কিডন্যাপার? তাই মনে হয় আপনাদের?

পুলিশ: আমাদের মনে হওয়ায় তো কিছু হবে না, আপনারা কেমন আমি জানি কিন্তু তাতে তো কিছু হবে না। এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে আমাদের কাছে।
আমি: এরেস্ট? কাকে এরেস্ট করবেন?
পুলিশ: জিসানের বক্তব্য অনুযায়ী আপনি সাজিদকে কিডন্যাপ করেছেন।
আমি: ও বললো আর আপনারা এরেস্ট করতে চলে আসলেন? প্রমাণ কোথায় আমরা যে কিডন্যাপ করেছি? সাজিদ আমার বন্ধু আর তাই ও আমাদের বাসায় উঠেছে।
পুলিশ: সাজিদ আপনাদের বাসায় আছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
ভাইয়া: সাজিদ তো আর বাচ্চা ছেলে না।
পুলিশ: এইটা কোর্টে গিয়ে বলবেন।
ভাইয়া: কোর্ট? কোর্ট পর্যন্ত আমার ভাইকে যেতে হবে না তার আগেই আমি ওকে ছাড়িয়ে আনবো।
পুলিশ: আমিও তাই চাই।
ভাইয়া: আয়াস চিন্তা করিস না আমি আব্বু আর চাচ্চুকে জানাচ্ছি। আর ওই জিসানের ব্যবস্থা আমি করবো।

পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে, পুরো অফিসের লোক আমাকে দেখছে, ইচ্ছে হচ্ছে… জিসানকে তো এর ফল ভোগ করতেই হবে।
থানায় বসে আছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে চললো কিন্তু কেউ আসছে না। অবশ্য আমি একজন ছাড়া অন্য কারো আসার অপেক্ষা করছিও না। আমি জানি সাজিদ আসবে, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এতক্ষণ ধরে সাজিদ আসছে না কেন? তবে কি জিসানের কথাই সত্যি? এবার কি সাজিদ জিসানদের হয়ে কথা বলবে? কিন্তু আমিতো কোনো অপরাধ করিনি।
আব্বু: আয়াস? (আব্বুর ডাকে হকচকিয়ে উঠলাম, আব্বু কাঁদছেন। জানিনা ওদিকে আম্মুর কি অবস্থা)
আব্বু: জামিনের ব্যবস্থা হয়ে গেছে বাবা। (আব্বু, চাচ্চু আর ভাইয়া এসেছে। কিন্তু সাজিদ? সাজিদ তো আসেনি। আমি থানায় আছি শুনেও সাজিদ আসলো না?)
চাচ্চু: আয়াস কি ভাবছিস?

আমি: হুম কিছুনা।
ভাইয়া: এখানে সিগনেচার কর আর বাসায় চল।
আমি: হুম।
মন কিছুতেই মানতে চাইছে না, সাজিদ এতোটা পালটে গেল? কিন্তু কেন?
আম্মু: ঐ জিসান আমার ছেলেকে শান্তিতে থাকতে দিবে না আমি বুঝে গেছি। তিন তিনটা বছর ধরে ও আমার ছেলেকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। আর ওর বাবা তো আরো বেশি। কেন যে ওরা এমন করছে আমি বুঝতেই পারছি না।

ভাইয়া: চাঁচি আয়াসকে রেস্ট নিতে দাও, ওর সামনে এখন এসব নিয়ে চেঁচামেচি করা কি ঠিক হচ্ছে?
চাঁচি: এসবের পিছনে জিসানের দোষ? বাসায় যে হিন্দু মেয়েকে জায়গা দিয়েছ সেটা কিছু না? (বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছি আর ওরা এসব বকবক করেই যাচ্ছে। চাঁচির কথায় পাত্তা না দিয়ে দুচোখ বুজে শুয়ে রইলাম)
চাঁচি: তোমাদের আদরের অর্পিতা তো রোজ পূজা দিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমের ঘরে হিন্দুর পূজা! অমঙ্গল তো হবেই। সব ঐ মেয়ের জন্য হয়েছে।
চাচ্চু: চুপ করবে তুমি?

চাঁচি: কেন চুপ করবো? আমাদের ছেলের ক্ষতি হবে আর আমি চুপ করে বসে থাকবো?
দাদি: আয়াস এই সূপটা খেয়ে নেতো। (একবার তাকিয়ে আবার চোখ বুজে ফেললাম)
আমি: এখন কিছু খাবো না দাদি।
আম্মু: কষ্ট হচ্ছে বাবা?
আমি: আমার তো তেমন কিছু হয়নি আম্মু, কপাল একটুখানি কেটে গেছে এতে এতো কষ্ট হবার কি আছে? কষ্ট তো হচ্ছে অন্য কারণে।
আম্মু: কি কারণ?
আমি: আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ!
আম্মু: ঠিক আছে।

সবাই একে একে উঠে চলে গেল। হ্যাঁ কষ্ট হচ্ছে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তবে সেটা কপাল কেটে যাওয়ার জন্য বা পুলিশ এরেস্ট করার জন্য নয়। আমার কষ্ট হচ্ছে সাজিদ পালটে গেছে এইটা ভেবে। এতোটাই পালটে গেছে যে আমাকে আনার জন্য থানায় পর্যন্ত যায়নি। এমনকি আমি বাসায় এসেছি শুনেও একবারের জন্য আমাকে দেখতে আসেনি। কি অপরাধ করলাম আমি? কেন সাজিদ এত পালটে গেল? এমনটা কখনো হবে আমিতো কল্পনাও করিনি।
শুয়ে শুয়ে সাজিদের কথা ভেবে নিশ্চুপে কাঁদছিলাম হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। চোখের পানি মুছে নিয়ে নাম্বার না দেখেই ফোন রিসিভ করলাম।

আমি: হ্যালো।
–জিসানের আব্বু বলছি।
আমি: আপনি?
–এখন কেমন আছ?
আমি: ছেলে অপরাধ করলো আর বাবা ফোন করে জিজ্ঞেস করছে এখন কেমন আছি, বেশ ভালো নাটক জানেন তো।
–মানছি তোমার উপর আমাদের রাগ আছে কিন্তু এমনটা করার ইচ্ছে ছিলনা আমার। জিসান কেন যে এসব করতে গেলো।
আমি: থানায় আটকে রাখতে পারেননি তাই এমন নরম গলায় কথা বলছেন। শুনে রাখুন আগেও পারেননি কিছু করতে আর পারবেনও না। কারণ আমি কোনো অপরাধ করিনি।
–তিন তিনটা মানুষের মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী, এইটা অপরাধ নয়?
আমি: কোনদিক থেকে আপনি আমাকে দায়ী করছেন আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।
–আমি সব ভুলে যাবো, আর জিসানের আজকের কাজের জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি। তুমি শুধু সাজিদকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।

রাগে ফোন কেটে দিলাম। সাজিদকে আমি কি ওদের কাছে পাঠাবো সাজিদ হয়তো নিজেই ওদের কাছে চলে যাবে কারণ ও যে পালটে গেছে। কিন্তু সাজিদ এভাবে পালটে গেল কেন? আচ্ছা এমন নয়তো সাজিদ অর্পিকে পাওয়ার জন্য এমন পালটে গেছে? হতেও পারে আমাকে অর্পির জীবন থেকে সরানোর জন্য সাজিদ জিসানের সাথে হাত মিলিয়েছে। কিন্তু এসবের কি প্রয়োজন ছিল আমি নিজেই তো অর্পিকে সাজিদের হাতে তুলে দিতাম। অর্পির কথা মনে পড়লো, ও কোথায়? সবাই আমার রুমে ছিল এতক্ষণ কিন্তু অর্পি তো একবারের জন্যও আসেনি। তবে কি অর্পি আর সাজিদ একসাথে আছে? নাকি মেয়েটার অভিমান এখনো ভাঙেনি? আস্তে আস্তে উঠে অর্পির রুমের দিকে পা বাড়ালাম, হতেও পারে মেয়েটার কোনো সমস্যা হয়েছে বা অসুস্থ।

“আমি সবসময় তোমাকে মানি তোমার পূজো করি আর তুমি কিনা আমার পূজোর এই প্রতিদান দিলে? আমিতো সবসময় বলি আমার আপনজনদের তুমি ভালো রেখো। তুমি তো জানো আমি আয়াসকে বন্ধু ভাবি তাহলে কেন ওর এমন ক্ষতি হতে দিলে? 

পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে গিয়েছিল, কপাল থেকে রক্ত ঝরলো। কেন এমন হলো? ওকে কেন এত কষ্ট দিলে? ও তো আমার আপনজন, ওর কষ্টে তো আমারো কষ্ট হয়। অবশ্য তোমাকে দোষ দেই কি করে? দোষ তো সব আমার। মা বলতো স্বামীর মঙ্গলের জন্য নাকি স্ত্রীর সিঁথিতে সিঁদুর দিতে হয় কিন্তু আমিতো সিঁদুর দেই না। যদিও সবাই বলে এই বিয়ের কোনো মানে নেই কিন্তু সত্যি তো এটাই বিয়েটা হয়েছে সেটা হউক ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী। কেউ না মানুক আমি বিয়েটা মানি আর ডিভোর্স এর আগ পর্যন্ত মানবো। আজ থেকে আয়াস এর নামে আমি সিঁদুর পড়বো। এই সিঁদুরের জন্য হলেও তুমি ওকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করো”

অর্পি দেবতার পায়ের কাছ থেকে এক চিমটি সিঁদুর এনে ওর সিঁথিতে দিলো। আমি নির্বাক হয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছি আর অর্পিকে দেখছি। 

সিঁথি ভর্তি সিঁদুর, চোখ দুটো বুজে দুহাত জড়ো করে অর্পি পূজো করছে। পূজা আমি বরাবরই ঘৃণা করি কিন্তু কেউ একজন আমার মঙ্গলের জন্য পূজো দিচ্ছে আমিতো ভাবতেই পারছি না। ভালোবাসা না থাকলে কি এইটা কখনো সম্ভব? অর্পি কি সত্যিই আমাকে বন্ধু ভেবে এমন পাগলামি করছে? নাকি অর্পি নিজের অজান্তেই আমাকে ভালোবেসে ফেলছে? অর্পির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আনমনেই বলে ফেললাম “আজ আবার নতুন করে তোমার প্রেমে পড়লাম মায়াবতী”

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com