Breaking News

প্রেয়সী | পার্ট: ১০ | লেখিকা: সুলতানা তমা

ছাদের কার্নিশে বসে আনমনা হয়ে অর্পির কথা ভাবছিলাম হঠাৎ সাজিদ এসে পাশে বসলো, 
কেন যেন ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
সাজিদ: তোদের ডিভোর্স কবে হচ্ছে? (প্রশ্নটা শুনে সাজিদের দিকে তাকালাম)
আমি: ছয়মাস পর।
সাজিদ: এর আগে সম্ভব নয়?
আমি: কেন?
সাজিদ: ছয়মাস অনেক সময়, অপেক্ষা করতে কষ্ট হবে আমার।
আমি: অর্পি জানে তুই যে ওকে ভালোবাসিস?
সাজিদ: না, ভাবছি প্রপোজ করে ফেলবো।
আমি: রাজি হবে?

সাজিদ: যেহেতু অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই রাজি করতে একটু কষ্ট হবে।
আমি: কিন্তু ও যে হিন্দু?
সাজিদ: তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আর আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা দিয়ে ওকে পালটে দিতে পারবো।
আমি: কিরকম?
সাজিদ: হতেও পারে ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলো।
আমি: (নিশ্চুপ)
সাজিদ: কিছু বলছিস না যে?
আমি: কি বলবো? প্রপোজ করে দেখ।
সাজিদ: কিন্তু ডিভোর্স?
আমি: ছয়মাস হলেই দিয়ে দিবো।
সাজিদ: ঠিক আছে।

সাজিদ চলে গেল। 
অর্পিকে ভালোবাসি সেটা এতদিন বুঝতে পারিনি, বুঝতে পারলাম আজ যখন সাজিদ অর্পিকে ভালবাসলো। 
সাজিদের থেকে আমি সব কেড়ে নিয়েছি, সব হারিয়ে ও বিদেশে চলে গিয়েছিল। 
আজ যখন সাজিদ নতুন করে বাঁচতে শিখেছে নতুন করে সব সাজাতে চাচ্ছে 
তখন আমি অর্পিকে কেড়ে নিবো? এইটা আমার পাপ হবে। 
অর্পিকে তো আমি মাত্রই ভালবাসলাম, কিছুদিন ওর থেকে দূরে থাকলেই ওকে ভুলে যেতে পারবো। কাল থেকে আমি অফিসে যাবো, একদিকে ভাইয়াকে হেল্প করা হবে 
অন্য দিকে অর্পির থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা যাবে। 
কিন্তু দূরে থেকে কি আমি সত্যি অর্পিকে ভুলতে পারবো? ভুলতে হবে আমাকে, সাজিদের জন্য।

আজকের সকালটা অন্যরকম। আমি সব নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছি। 
জানিনা কতটুকু সফল হতে পারবো।
অর্পি: রাগ করেছেন? (অর্পির কন্ঠ শুনে হন্তদন্ত হয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। 
অর্পি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। 
গতকাল বিকেল থেকে আজ সকাল অব্ধি অর্পির সাথে একটা কথাও বলিনি, 
আসলে অর্পির থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছি)
অর্পি: নামাজ পড়ে বাগানে হাটাহাটি করছেন দেখে এখানে আসলাম। 
আপনি আমার সাথে কথা বলেন না কেন? রাগ করেছেন কেন কি করলাম আমি?
আমি: তোমার মুখে তুমি শব্দটা…
অর্পি: তুমি শব্দটা কি? থেমে গেলেন কেন? 
(থাক না আপনি থেকে তুমিতে এসে কি হবে? দুজন যে সম্পূর্ণ আলাদা)

আমি: আজ থেকে অফিস জয়েন করবো তো তাই নিজেকে প্রস্তুত করছি, 
তোমার উপর রাগ করবো কেন?
অর্পি: না কেমন যেন এড়িয়ে চলছেন আমাকে।
আমি: অনেক বেলা হয়েছে নাশতা খেয়ে অফিসের জন্য বেরুতে হবে।
মৃদু হেসে অর্পির সামন থেকে চলে আসলাম। 
কি হচ্ছে এসব আমার সাথে? কেন বারবার অর্পির প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি? 
অর্পি হিন্দু তাছাড়া ও এখন সাজিদের ভালোবাসা এসব কেন ভুলে যাচ্ছি আমি? 
দুর্জয় খারাপ এইটা অর্পির কাছে প্রমাণ করে অর্পি আর সাজিদকে এক করে দিবো। 
অফিস যেতে হবে এখন, অর্পির থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে নাহলে আমি পাগল হয়ে যাবো। 
তাড়াতাড়ি রুমের দিকে চলে আসলাম।

চোখের আড়াল হলেই কি মনের আড়াল হওয়া যায়? 
অর্পি বাসায় আমি অফিসে কতটা দূরত্ব তবুও ওকে এক মুহূর্তের জন্য মন থেকে সরাতে পারছি না,
বারবার অর্পির মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। 
সত্যিকারের ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়?
ভাইয়া: আয়াস? (হঠাৎ ভাইয়ার ধাক্কায় হকচকিয়ে উঠলাম)
আমি: হ্যাঁ ভাইয়া।
ভাইয়া: কি হয়েছে তোর? কি এত চিন্তা করছিস? কখন থেকে ডাকছি শুনছিসই না।
আমি: (নিশ্চুপ)
ভাইয়া: এইটা তোর রুম, এই চেয়ার এর দায়িত্ব আজ থেকে তোর। 
চাচ্চুর জায়গায় তুই বসছিস, মন দিয়ে কাজ করিস।
আমি: হুম।
ভাইয়া: কি হয়েছে বলবি ভাই কে?
আমি: কিছু নাতো।
ভাইয়া: অর্পিকে নিয়ে কিছু ভাবছিস?
আমি: (নিশ্চুপ)

ভাইয়া: ভালোবাসার ইচ্ছে না থাকলে তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দে, 
দেরি হয়ে গেলে মায়ায় পড়ে যাবি।
ভাইয়া চলে গেলো, আমি ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি দেরি তো হয়ে গেছেই বড্ড দেরি আর তাইতো এতোটা মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি।
–স্যার আসবো? (একমনে কিছু ফাইল দেখছিলাম হঠাৎ মামার কন্ঠ শুনে দরজায় তাকালাম)
আমি: মামা আসুন।
মামা: অর্পিতা কেমন আছে স্যার?
আমি: স্যার স্যার করছেন কেন? আমি আপনার ভাগ্নির হাজবেন্ড হই।
মামা: অর্পিতা কেমন আছে? (উনি মৃদু হেসে প্রশ্নটা করলেন)
আমি: ভালো আছে।
মামা: অর্পিতার মা ওকে দেখতে চেয়েছিল নিয়ে যাবে? 
(আবার অর্পির সঙ্গে যাবো? তাহলে তো সবসময় ওর আশেপাশে থাকতে হবে। 
মায়া বেড়ে যাবে, মায়া কাটাতে হবে। যাবো না আমি)
মামা: কি হলো বাবা কি ভাবছ?
আমি: সবে মাত্র অফিস জয়েন করলাম এখনি বন্ধ দেওয়া ঠিক হবে না, 
আমি যাবো না কিন্তু টেনশন করবেন না অর্পিকে পাঠিয়ে দিবো।
মামা: ঠিক আছে।

মামা টেবিলের উপর একটা ফাইল রেখে চলে গেলেন। 
আচ্ছা মামাকে কি জিজ্ঞেস করবো অর্পি সত্যি উনার ভাগ্নি কিনা? 
বা দুর্জয় সত্যি উনার ছেলে কিনা? জিজ্ঞেস করলে যদি উনি কিছু মনে করেন, 
না না জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না। 
কিন্তু একটা কথা তো আমাকে খুব ভাবাচ্ছে, 
যদি অর্পি দুর্জয় এর পিসির মেয়ে হয় তাহলে ওদের বিয়েটা কিভাবে সম্ভব? 
কার কাছে গেলে এই প্রশ্নের উত্তর পাবো আমি?
প্রথম দিন অফিসে সবকিছু দেখেশুনে নিতে একটু বেশিই সময় লেগে গেছে, 
কখন যে রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে বুঝতেই পারিনি। 
বাসায় ফিরতে প্রায় বারোটা বেজে গেলো। 

কলিংবেল চাপলাম সাথে সাথে কে যেন দরজা খুলে দিল, 
মনে হচ্ছে দরজার ওপাশে কেউ আমার কলিংবেল চাপার অপেক্ষায় ছিল। 
সামনে তাকালাম, অর্পি! নির্বাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, 
ও অভিমানী চোখে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। 
যত দূরে যেতে চাচ্ছি ও যেন ততোই কাছে চলে আসছে আমার, 
কেন হচ্ছে এমন? তাহলে কি অর্পিও আমাকে… না না কি ভাবছি আমি এসব?

অর্পি: ফিরতে এতো দেরি হলো যে? (অর্পির প্রশ্নে আমার ঘোর কাটলো। 
এভাবেই অভিমানী কন্ঠে ইরা আমাকে প্রশ্ন করতো। 
কোথাও থেকে ফিরতে একটু রাত হলেই পাগলীটা আমাদের বাসায় চলে আসতো আর আমার 
আসার অপেক্ষায় থাকতো। 
ইরার অভিমান ভাঙ্গাতে ওর কপালে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিতাম। 
কিন্তু অর্পি! অর্পির অভিমান কিভাবে ভাঙ্গাবো?)
অর্পি: থাক উত্তর দিতে হবে না।

অর্পি গাল ফুলিয়ে ভিতরে চলে গেলো। দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোফায় এসে বসলাম। 
বাসার বাকিরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে শুধু অর্পিই জেগে আছে। কিন্তু কেন? 
আমার জন্য? আমি দেরিতে ফিরলে অর্পির কি? 
কেন ও আমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল? কে হই আমি ওর?
অর্পি: টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিন।
আমি: তুমি খেয়েছ?

আনমনেই প্রশ্নটা করে ফেললাম, 
অর্পি রুমের দিকে চলে যাচ্ছিল আমার প্রশ্ন শুনে পিছন ফিরে তাকালো। 
কিছুক্ষণ আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে 
আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রুমের দিকে চলে গেল, তারমানে অর্পিও খায়নি। 
ইরাও তো এভাবে না খেয়ে খাবার নিয়ে বসে থাকতো অপেক্ষা করতো আমার জন্য, 
ইরা নাহয় আমাকে ভালবাসতো তাই এমন পাগলামি করতো 
কিন্তু অর্পি.. অর্পি কেন এসব পাগলামি করছে? 
তাহলে অর্পিও কি আমায় ভালোবাসে? আনমনে হেসে উঠলাম আমিও না কিসব ভাবি।

ফ্রেশ হয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে অর্পির রুমে আসলাম। 
অর্পি জানালার গ্রীল ধরে রাতের আকাশের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। 
খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে অর্পির পাশে এসে দাঁড়ালাম, অর্পি একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো।
আমি: কি ভাবছ এত?
অর্পি: (নিশ্চুপ)
আমি: দুর্জয় এর কথা?
অর্পি: (নিশ্চুপ)
আমি: সময় কিন্তু থেমে নেই, সময় সময়ের নিয়মেই চলছে আর এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন দেখবে ছমাস হয়ে গেছে। আর সেদিন আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। তুমি ফিরে যাবে দুর্জয় এর কাছে আর আমি…
অর্পি: তুমি কি? (অর্পির মুখে তুমি শব্দটা শুনে মুচকি হাসলাম)
আমি: সবসময় তুমি করে বলতে পারো না? শুনতে ভালো লাগে তো।
অর্পি: (নিশ্চুপ)
আমি: ডিভোর্স এর পর আমাকে ভুলে যাবে তাই না?
অর্পি: ভুলে যাবো কেন? এখন যেভাবে বন্ধুর মতো আছি তখনো এমন বন্ধুর মতো থাকবো। (ম্লান হাসলাম)
আমি: খাবে চলো।
অর্পি: আমি খেয়ে নিয়েছি।

আমি: মিথ্যেটা তোমার মুখে মানায় না। অফিসে প্রথম দিন তো তাই দেরি হয়ে গেলো।
অর্পি: হুম। (অর্পির হাত ধরলাম, অর্পি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ দুটো বুজে ফেললাম। এই প্রথম অর্পিকে ছু্ঁয়ায় আমার ভিতরে কেমন যেন ফীল হচ্ছে, ভালোবাসি বলেই কি এমন হচ্ছে? না না অর্পির থেকে আমাকে দূরে থাকতে হবে, নাহলে মায়ায় পড়ে যাবো)
আমি: খেয়ে নাও, আমি খেয়েই তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। আসছি আমি।
অর্পির হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে আসলাম। জানি অর্পি অবাক হয়ে আমার চলে আসার দিকে তাকিয়ে আছে, আমার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে ওর অবাক হওয়াটা স্বাভাবিক। নিজেকে ওর থেকে দূরে রাখতে হলে তো কিছুটা অদ্ভুত আচরণ করতেই হবে আমাকে।

রাত প্রায় দুটো, বারান্দার বেতের চেয়ারটায় বসে আনমনা হয়ে আকাশ দেখছি। 
ভালোবাসার মানুষের থেকে নিজেকে আড়াল রাখতে গেলে কি এমনই হয়? 
চোখে ঘুম নেই, পেটে খিধা নেই, ভিতরে শান্তি নেই, মনের ভিতরটা সারাক্ষণ তোলপাড় হচ্ছে। 
কেন হয় এমন? এমন নাহয়ে তো অর্পি আমার হতে পারতো, 
অতীত ভুলে অর্পিকে নিয়ে নাহয় নতুন করে জীবন সাজাতাম। 
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম, মানুষ চাইলেই যে সবকিছু হয় না।

আম্মু: আয়াস খাচ্ছিস না কেন? 
(প্লেটে খাবার নিয়ে আনমনা হয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম হঠাৎ আম্মুর কথায় ঘোর কাটলো)
আম্মু: কি হয়েছে বাবা?
আমি: কিছুনা, খাচ্ছি তো।
দাদি: রাতে এত দেরি করে ফিরলি যে?
আমি: প্রথম দিন তো তাই।
আব্বু: কাজে মন দিয়েছে আমার ছেলে। (মৃদু হাসলাম)
আমি: আম্মু মামা বলছিলেন অর্পি যেন বাড়িতে যায়, মা নাকি দেখতে চেয়েছেন ওকে।
আম্মু: ঠিক আছে নিয়ে যা।
আমি: আমি কি করে যাবো? অফিস…
সাজিদ: আমি নিয়ে যাই? (সাজিদ চেয়ার টেনে বসতে বসতে কথাটা বললো, সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এখন যদি সবাই সন্দেহ করে? এই সাজিদটাও না)

আম্মু: তুই কেন যাবি? আয়াস না গেলে ওর শশুড় বাড়ির লোকজন খারাপ ভাববে না?
আমি: কিন্তু আম্মু আমাকে তো নাশতা করেই অফিসে যেতে হবে, 
এমনিতে আজ দেরি হয়ে গেছে।
তনিমা: যার যাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে সে কোথায়? 
তাকে তো জিজ্ঞেস করা দরকার যে সে কার সাথে যাবে। 
(সত্যিই তো অর্পি কোথায়? এত বেলা হয়ে গেল এখনো মেয়েটা নিচে আসেনি? 
এত সকাল অব্ধি তো অর্পি ঘুমায় না)

অর্পি: এইতো আমি। (অর্পির কন্ঠ শুনে সিঁড়ির দিকে তাকালাম, সবুজ রঙের জামদানী শাড়িতে ওকে একদম পরীর মতো লাগছে, সাথে হালকা সাজগোজ আর চুলগুলো খোঁপা করা)
তনিমা: কি চোখ ফেরাতে পারছিস নাতো? (হা করে অর্পির দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ তনিমার ধাক্কায় মাথা নিচু করলাম। সাজিদের দিকে চোখ পড়লো, সাজিদ এখনো অর্পির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। টেবিলের নিচ দিয়ে ওর পায়ে দিলাম এক লাত্তি, তড়িঘড়ি করে মাথা নিচু করলো)
অর্পি: মামা ফোন করে বলেছেন আজ নাকি আমি যাচ্ছি তাই একেবারে রেডি হয়ে নিচে আসলাম।
আম্মু: খুব ভালো করেছ।

তনিমা: কিন্তু তোমাকে নিয়ে যাবে কে?
অর্পি: কেন আয়াস।
আমি: আমার অফিস আছে। (যতো দূরে সরে যেতে চাচ্ছি এই মেয়ে যেন আমাকে ততোটাই কাছে টেনে নিচ্ছে অসহ্য)
অর্পি: আমি যাবোই না তাহলে। (উফফ আবার গাল ফুলিয়ে ফেলছে)
আব্বু: আয়াসই তোমাকে নিয়ে যাবে। আয়াস?
আমি: হ্যাঁ যাবো কিন্তু দিয়েই চলে আসবো।
আব্বু: ঠিক আছে।

এবার মনে হলো মহারাণীর মুখে হাসি ফুটেছে। কিন্তু এই মেয়ে আমাকে বারবার কাছে টেনে নিচ্ছে কেন? দূরে সরে যেতেই পারছি না।
সাজিদ: অর্পিকে দুর্জয় এর কাছে দিয়ে আসবি? (গাড়ি স্টার্ট দিতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ সাজিদ এসে ফিসফিস করে কথাটা বললো। অর্পির দিকে তাকালাম চুপচাপ বসে আছে)
সাজিদ: দুর্জয়…
আমি: উপায় নেই আমার অফিস আছে।
সাজিদ: কিন্তু…
আমি: অর্পি কিন্তু এত বছর ওখানেই ছিল।
সাজিদ: এত বছর তো আমি ছিলাম না ওর জীবনে।
আমি: এখনো নেই, এমন একতরফা ভাবে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। পারলে প্রপোজ করে নিস। (সাজিদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম)
অর্পি: এখনো রেগে আছ?

আমি: রাগ করবো কেন? আর ড্রাইভ করার সময় কথা বলতে নেই।
অর্পির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম, ও গাল ফুলিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। 
ইচ্ছে করেই ওকে রাগালাম নাহলে ও যে সারাক্ষণ বকবক করেই যেতো
 যা পরে আমার কাছে স্মৃতি হয়ে থাকতো। 
আমি নতুন করে আর স্মৃতির বুঝা বইতে পারবো না, 
এমনিতেই ইরার স্মৃতি আমাকে বড্ড যন্ত্রণা দেয়।
বাড়ির উঠোনে এসে হর্ন বাজাতেই সবাই বেরিয়ে আসলো। 
অর্পি গাড়ি থেকে নামতেই মা এসে ওকে জড়িয়ে ধরলেন। 
লক্ষ করলাম মা অর্পিকে জড়িয়ে ধরলেও উনার নজর আমার দিকে, 
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। 
উনি তো আমার শাশুড়ি ছাড়া কিছু হন না তাহলে আমার প্রতি উনার কিসের এত টান?

মা: নামবে না বাবা? (হঠাৎ উনার প্রশ্নে আমার ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
আমি: না আমাকে চলে যেতে হবে।
মা: কিন্তু একবার ঘরে যাবে না?
অর্পি: থাক মা ব্যস্ত মানুষদের বিরক্ত না করাই ভালো। 
(অভিমানী সুরে অর্পি কথাটা বললো, সারা রাস্তা একটাও কথা বলেনি অভিমান ভালোভাবেই করেছে)
মা: চুপ কর তো তুই।
আমি: মা অর্পি ঠিকই বলেছে, আমাকে অফিসে যেতে হবে। অন্যদিন আসবো।
মা: ঠিক আছে।

উনার চোখ দুটো ছলছল করছে, উনার দিকে তাকিয়ে থেকেই গাড়ি স্টার্ট দিলাম। 
উনি এখনো আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। 
অর্পির দিকে একবার তাকিয়ে চলে আসলাম। 
অর্পি অভিমান করেছে 
কিন্তু আমি কেন এমন করছি এইটা জানলে হয়তো আর অভিমান করতো না। 
মন যে বড্ড বেহায়া জিনিস, মন কখন কাকে ভালোবেসে ফেলে সেটা সে নিজেও জানে না। 
আমিও কখন অর্পিকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি, ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়!

বিকেল হয়ে গেছে তাছাড়া অর্পিকে ছাড়া সবকিছু কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছে, অফিস যেতে ইচ্ছে হলো না তাই বাসায় ফিরে আসলাম। আমাকে বাসায় দেখে সবাই বেশ অবাক হলো, হয়তো সবাই ভাবছে অফিসের জন্য অর্পিদের বাড়িতে যেতে চাইনি আর এখন কিনা অফিস না গিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম। সবাইকে বুঝাবো কিভাবে অর্পি ছাড়া যে আমি বড্ড একা হয়ে যাই।
ছাদের কার্নিশে বসে আছি, রাত আনুমানিক বারোটা। আনমনা হয়ে আকাশ দেখছি। হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে তাকালাম, তনিমা এসেছে।
তনিমা: ভাইয়া এখানে বসে আছিস যে?

আমি: একা থাকতে চাচ্ছি একটু।
তনিমা: আমার কথাগুলো সত্যি হলো তো অবশেষে?
আমি: হুম তবে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
তনিমা: হয়তো।
আমি: (নিশ্চুপ)
তনিমা: চাচ্চু তোকে এই অবস্থায় দেখলে কষ্ট পাবে, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িস।
আমি: হুম।

তনিমা চলে গেল, আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালাম। আজকের আকাশটা বড্ড সুন্দর, পুরো আকাশ জুড়ে জ্যোৎস্নার আলোয় ভেসে যাচ্ছে। এই জ্যোৎস্নার আলোয় অর্পিকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু কি লিখবো? উড়োচিঠি? যে চিঠিতে থাকবে অর্পিকে মিস করার বিষণ্ণতার ছাপ। থাকবে কিছু আবোলতাবোল প্রশ্ন! আচ্ছা অর্পি আমার মনের উঠোনে যেমন তোমার শূন্যতা ভর করেছে তোমার মনের উঠোনেও কি তেমনি আমার শূন্যতা ভর করেছে? 

মন খারাপের বিষণ্ণতা কাটিয়ে আমার যেমন ইচ্ছে করছে তোমার সাথে মুঠোভরতি জ্যোৎস্না ধরতে তোমারো কি তাই ইচ্ছে করছে? নাকি তুমি এই পূর্ণিমাতিথিতে ব্যস্ত আছ তোমার প্রিয়জনের সাথে? হয়তো দুজন হাতে হাত রেখে পূর্ণিমার আলোয় নদীর চর ধরে হাটছ। পূর্ণিমার আলোয় সাদা কাশফুল গুলো আরো সাদা হয়ে উঠেছে দেখে হয়তো তুমি বিস্মিত হচ্ছ, হয়তো রাতের জোনাকিপোকা গুলোর মিটমিট করে আলো জ্বালা দেখে তুমি খিলখিল করে হেসে উঠছ। বড্ড ব্যস্ত আছ তুমি তাই না? আচ্ছা অর্পি যদিও আমি তোমায় ছোট্ট একটি উড়োচিঠি লিখি সময় হবে কি তোমার ব্যস্ততা কাটিয়ে আমার চিঠি পড়ার?

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com