অস্তিত্ব -পর্ব-৫

আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম না জানি কেয়াদের বাড়িতে কি চলছে এখন। আমার তো ও বাড়িতে একবার যাওয়া উচিত। কিন্তু এতো কান্না পাচ্ছে যে কিছুতেই নিজেকে সামলে উঠতে পারছি না। সব ঐ অস্তিত্বের দোষ।ওর জন্যই হয়েছে সব। চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম ওকে। হঠাৎ করে দোলনচাঁপা ফুলের ঘ্রাণে চারিদিক ভরে উঠলো।

মাথা তুলে দেখলাম অস্তিত্ব আমার বিছানার উপরে বসে বসে হাসছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওর কলার টেনে ধরলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ধরতে পারলাম না। এই প্রথম তাকে স্পর্শ করতে গিয়ে তার শরীর ভেদ করে আমার হাত বেরিয়ে গেল। চমকে পিছিয়ে গেলাম আমি। অস্তিত্ব পাগলের মতো হাসতে শুরু করলো আবার,একপর্যায়ে হাসতে হাসতে কান্না শুরু করলো। আমি নিস্তব্ধ হয়ে দেখছি ওর সবকিছু।

কিছু সময় পর অস্তিত্ব কান্না বন্ধ করে আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো।এবার আমি ভালো করে ওকে দেখতে পেলাম।এটা তো অয়নের মুখ।এই মুখ তো আমার খুব চেনা।কিন্তু ও তো নিখোঁজ হয়ে গেছিলো।ওকে তো পাওয়া যায় নি।এতো বছর পরে ও কোথা থেকে এলো?

আমি আস্তে করে বসে পড়লাম মেঝেতে।তারপর অবিশ্বাসের স্বরে বললাম,”অয়ন!!!”

অয়ন চুপ করে বসে আছে।আমি আবার ডাকলাম,”অয়ন!!!”

মুহূর্তের মধ্যে সে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু পারলো না।আমার শরীরের মধ্যে দিয়ে ওর হাত বের হয়ে গেল।আমি বললাম,”কোথায় ছিলে এতোদিন?”

একটু থেমে অয়ন বললো,”আমাকে মেরে ফেলেছিলো আসতে দেয়নি ঐ দিন।আমি আসছিলাম।তোমার মনে আছে আমি প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম তারপর আস্তে আস্তে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম।কোনদিন বুঝতে দেই নি।

একদিন তোমরা সবাই মিলে ঘুরতে গেছিলে।আমিও ছিলাম সেদিন সাথে।দোলনচাঁপা ফুল বিক্রি করছিল তুমি দাঁড়িয়ে দেখছিলে!আমি একসময় তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।আর সেটা বলবো বলেই তোমার জন্মদিনের দিন রাতে আমি এসেছিলাম কিন্তু চিঠিটা রেখে যাওয়ার আগেই আমার ফোনে ফোন আসে রাফির।

রাফি আমাকে সাবধান করেছিলো যে কেয়ার কোন প্ল্যান আছে আমাকে নিয়ে। ও আমার পিছু নিয়েছে। তোমার মনে আছে আমি কেয়াকে দেখতে পারতাম না একদমই ওর গায়ে পরা স্বভাবের জন্য? আসলে কেয়া আমাকে পছন্দ করতো কিন্তু যখন ও জেনে গেল যে আমি তোমাকে পছন্দ করি তখন ও পাগল হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত তোমার জন্মদিনের আগের রাতে ও আমার পিছু নিয়েছিল।আমি মেজাজ খারাপ করে যখন ওকে বোঝাতে আবার উল্টা ঘুরে যাই তখন আবার তোমাকে দেখি তুমি আসছো আমার পেছনে। একবার ভাবলাম তোমাকে বলি তারপর ভাবলাম থাক তুমি যখন আসছো তখন নিজের কানেই শুনে নাও তোমার প্রিয় বান্ধবীর কথা গুলো।

এরপর হুট করে আমার নাকে মুখে রুমাল চেপে কেউ টান দেয়।আর যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি নিজেকে কেয়াদের বাড়ির গ্যারেজে দেখতে পাই বাঁধা অবস্থায়। ও আমাকে বার বার বলেছিল যাতে ওকে ভালোবাসি।

কিন্তু আমি রাজি হয় নি। শেষ পর্যন্ত ও জেদ করে আমার গলা চেপে ধরে। হাত বাঁধা থাকায় আমি অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। ও আমাকে মেরে ফেলে। আর ওর বাবা মা ওকে বাঁচাতে আমার বডিটা ওদের পেছনের বাগানের মাটিতে পুঁতে দেয়।আর তার উপরে একটা দোলনচাঁপা ফুলের গাছ লাগিয়ে দেয়।যাতে কেউ সন্দেহ না করে। এরপর আমি সেখানে বন্দী হয়ে যাই।”

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url