শিক্ষকের ঋণ

শিক্ষকের ঋণ

যে মানুষটার শিক্ষায় আজ আমি নিজেকে মানুষ বলে দাবী করি তিনি হচ্ছেন আমার শিক্ষক।

মা বাবার পরে যে মানুষটা আমাদের হাতে ধরে পৃথিবী চিনিয়ে দেন সেই মানুষটাকে একটা সময় এক প্রকারে আমরা ভুলেই যাই।

পুরো শিক্ষা জীবনে হাজারো অভিযোগ থাকে আমাদের এই শিক্ষকদের উপরে!

অথচ একটিবারও তখন ভাবিনি যে এই মানুষ গুলোর জন্যেই আমরা মানুষ হতে পেরেছি?

যে শিক্ষকের কড়া শাসনে আমি সব সময় বিরক্ত হয়ে থাকতাম সেই শিক্ষকের কথা মনে পড়লে আজ আমার চোখের কোণে জল গড়ায়।

শিক্ষককে ভয়ে ভয়ে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতাম শিক্ষা জীবনে,

অথচ তিনিই ছিলেন আমার বাবার মত দায়িত্বশীল মানুষ।

মন থেকে ভালোবাসার আগেই আমরা অনেক সময় হারিয়ে ফেলি সেই শিক্ষকদের যাদের জন্য আজ আমরা মানুষ নামধারী।


একটা সময় প্রতিটা মানুষ শৈশবে ফিরে যেতে চায় ঠিক তেমনি আমিও ফিরতে চাই,যদি আরেকটা বার ফিরতে পারতাম আমার বিদ্যালয়ে?

যেখানে সাদা শার্ট আর প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন আমার শিক্ষকেরা,যেখানে মায়ের মত শাড়ির আঁচলের মায়ায় জড়িয়ে থাকতেন আমার শিক্ষিকারা।

অল্প বেতনে, ছোট্ট কোয়ার্টারের ঘর গুলোতে থাকতেন আমার শিক্ষকেরা,

তবুও তাদের মুখের অকৃত্রিম হাসি ফুটে ওঠতো আমাদের পরীক্ষার উচ্চ নাম্বারে।

সেই আনন্দময় জ্বলজ্বল করা চোখ গুলো আজকাল আমাকে ভীষণ তাড়িয়ে বেড়ায়,

বুকের ভেতর একটা হাহাকার যেনো দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে,

সেই হাহাকারের নাম হচ্ছে শিক্ষকের সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারা।

এই অনিয়মের সমাজে আজকাল শিক্ষকেরা বেত নিয়ে শ্রেণীকক্ষে যেতে পারেন না,

অথচ আমরা এই বেতের ভয়েই একদিন মানুষ হওয়ার অদম্য লড়াই করেছি।

মাঝে মাঝে ভাবলে ভীষণ অবাক লাগে আমরা খুব অল্পতেই কত বিরক্ত হয়ে যাই,

অথচ একটা পড়া না বুঝলে শিক্ষকের কাছে কত শত বার জিজ্ঞেস করেছি,

তারাও আমাদের যত্ন সহকারে অসংখ্যবার বুঝিয়ে দিতেন কিন্তু বিরক্ত হতেন না।

ধৈর্যের মশাল হাতে দৃঢ় চিত্তে যেই শিক্ষকেরাই আমাদের সঠিক মানুষ করে গড়ে তোলার কাজ করেছেন,


এই আমরাই পান থেকে চুন খসলেই তাদের হেয় প্রতিপন্ন করার কোন সুযোগই হাত ছাড়া করিনি।

আজকাল ভীষণ যন্ত্রণা হয়, বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়।

শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান না জানিয়ে উল্টো তাদের নিয়ে রসিকতা করাই যেনো ছিলো আমাদের প্রধান কাজ!

আজ চাইলেও আর ফিরে পাবো না সেই সোনালী দিন গুলো,

যেখানে আমার শিক্ষকেরা ছিলেন আমাদের আদর্শের গুরু।

তবুও আমি বারবার ফিরতে চাই সেই ফেলে আসা দিনে,

যেখানে আমৃত্যু থাকবে আমার মানুষ হওয়া শিক্ষকের ঋণে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url