Breaking News

সিনিয়র বউ | পর্ব -২



সকালবেলা…
ঘুমের মধ্যে বুকের উপর ভারি কিছু একটার অনুভব পেতেই ঘুমটা ভেঙে গেল।। চোখ মেলে তাকাতেই দেখি একটা মেয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।। মেয়েটার মুখের সামনে সব চুল এসে পরেছে তাই মেয়েটার চেহারা দেখতে পাচ্ছি না।। কে এই মেয়ে কিছু বুঝতে না পেরে হালকা ধাক্কা দিয়ে মেয়েটাকে নিজের থেকে সরিয়ে নিলাম।। ধাক্কা দেওয়াতে মেয়েটারও ঘুম ভেঙে গেল।। মেয়েটা চোখ কচলাতে কচলাতে আমার দিকে তাকালো, আমিও মেয়েটার দিকে তাকালাম।। মেয়েটাকে দেখেই তো আমি অবাক.!

এতো সুন্দর একটা মেয়ে আমার সামনে বসে আছে।। মেয়েটার গায়ের রঙ একেবারে ফর্সা।। হালকা চিকন গোলাপি ঠোঁট মেয়েটার।। সমস্ত শরীর কালো বোরকা দিয়ে ঢাকা, শুধু মুখটাই খোলা।।মনে হচ্ছে আকাশ থেকে কোনো পরী নেমে এসেছে।। মেয়েটার থেকে কোনোভাবেই চোখ ফেরাতে পারছি না এক পলকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।। পৃথিবীতে যে এতো সুন্দর মেয়েও আছে তা এই মেয়েটাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।। কিন্তু এই মেয়েটা কে.? আর আমার রুমেই বা কি করছে.?
–কি হলো এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছ.? (মেয়েটা লজ্জা মাখা চেহারা নিয়ে বললো)
তামিমঃ হে না মানে ককই কি দেখছি কই কিছু না (কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে)।। কিন্তু আপনি কে আর আমার রুমেই বা কি করছেন.? আর আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলেন কেন.? (কিছুটা রাগী গলায়)
–আমার স্বামীর রুমে আমি থাকবো না তো কে থাকবে হুম.? (আদুরে গলায়)
তামিমঃ মানে কে আপনার স্বামী.? (কিছুটা অবাক হয়ে)
–কেন তুমি (মুচকি হেসে)।।

তামিমঃ আমি আপনার স্বামী হলাম কবে.? আপনাকে তো আমি চিনিই না।।
–তা গতকাল কোন মেয়েকে বিয়ে করেছিলে শুনি.?
তামিমঃ গতকাল বিয়ে মানে.? এই এই আপনি কীভাবে জানলেন যে গতকাল আমার বিয়ে হয়েছে.?
–হায় আল্লাহ এই ছেলেটা এতো বোকা কেন।। এই গতকাল তুমি যাকে বিয়ে করেছ আমিই সে মানে তোমার বউ।।
তামিমঃ আপনি সেই মেয়ে যার সাথে গতকাল আমার বিয়ে হয়েছে.? 
মানে আপনিই আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে.?

–হুম আমিই সে।।
তামিমঃ তো আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলেন কেন.? আপনাকে না গতকাল বলেছি যে ভুলেও বিছানায় আসবেন না (কিছুটা রাগী কণ্ঠে)।।
–আসলে ফজরের নামায পড়ে সোফায় বসে ছিলাম কিন্তু মশার কামড়ে ওইখানে থাকতে পারছিলাম না।। তাই ভাবলাম তোমার পাশে এসে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি।। রাতেও মশার কামড়ে ঠিকমতো ঘুম হয়নি তাই কখন যে চোখ লেগে যায় খেয়ালই নেই।।
তামিমঃ প্রথমবারের জন্য কিছু বললাম না, নেক্সট টাইম যেন আর এমন না হয় মনে থাকে যেন।। দেখি এখন সরেন আমি ঘুমাব।।
–ঘুমাবে মানে ৯টা বেজে গেছে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আস, আব্বু আমাদের নিতে এসেছেন।।
তামিমঃ কিহহ ৯টা বেজে গেছে.! আমাকে আগে বললেন না কেন.? আর আব্বু আমাদের নিতে এসেছেন মানে.? আব্বু তো বাসায় ই আছেন।।
–আরে আমার আব্বু মানে তোমার শ্বশুর আমাদেরকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছেন।।

তামিমঃ কেন.?
–এটাই নিয়ম, বিয়ের পরেরদিন কনের বাড়ি থেকে কিছু লোক এসে কনেকে আর বরকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাবে।।
তামিমঃ যাওয়ার হলে আপনি যাবেন আমি কোথাও যেতে পারবো না আগেই বলে দিলাম।।
–আচ্ছা দেখা যাবে এখন যাও তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।।
তামিমঃ আর কোনো কথা না বলে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।। ফ্রেশ হওয়া শেষ, বের হয়ে দেখি মেয়েটা (মানে আমার বউ) বিছানা ঠিক করে বসে আছে।।
–আম্মু একটু আগেই আমাদের ডেকে গেছেন তারাতাড়ি নিচে চল।।
তামিমঃ চলেন আর শোনেন রাতে আপনাকে আমি যা যা বলেছি তার কিছুই যেন আম্মু-আব্বু জানতে না পারে বলে দিলাম।।

–এই নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।। আমি তাদেরকে কিছুই বলবো না, এবার নিচে চল।।
তামিমঃ তারপর আর কথা না বাড়িয়ে নিচে চলে আসলাম।। আমার পিছনে পিছনে মেয়েটাও নিচে নেমে আসলো।।

নিচে আসতেই দেখলাম আমার শ্বশুর আব্বা সহ আরও ২জন লোক আব্বুর সাথে ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছেন (শ্বশুর বলে কথা চিনবো না.?) ড্রয়িং রুমের বাম পাশেই ডাইনিং টেবিল মানে খাবার খাওয়ার টেবিল।। ডাইনিং টেবিলের দিকে যেতেই আব্বু আমায় ডাক দিয়ে তাদের কাছে আসতে বললেন।। নিরুপায় হয়ে তাদের কাছে যেতেই হলো আর আব্বুও আমায় ইশারায় বললেন তাদের সাথে ভালো-মন্দ কথা বলতে।। তাই শ্বশুর আব্বার সাথে কিছু ভালো-মন্দ কথা বলে ডাইনিং টেবিলে চলে আসলাম।।
তামিমঃ আম্মু নাস্তা দাও (টেবিলে বসে)।।
আম্মুঃ তানিয়া মামনি ওকে নাস্তা দাও তো।।
তামিমঃ এই তানিয়া টা আবার কে.?
আম্মুঃ নিজের বউয়ের নাম নিজেই জানিস না.?
তামিমঃ আমার বউ মানে.?

আম্মুঃ মানে যার সাথে গতকাল তোর বিয়ে হয়েছে।।
তামিমঃ ওহহ আচ্ছা তাহলে এই মেয়ের নাম তানিয়া (আস্তে আস্তে)।।
আম্মুঃ কেন তুই ওর নাম জানিস না.?
তামিমঃ হে জানি তো, আচ্ছা এখন নাস্তা দাও আর আব্বু তারা নাস্তা খাবেন না.?
আম্মুঃ তারা একটু আগেই খেয়ে নিয়েছে।।
তামিমঃ ওহহ
তানিয়াঃ এই নাও তোমার নাস্তা (হুট করে মেয়েটা এসে আমার সামনে একটা নাস্তার প্লেট রেখে বললো)।।

তামিমঃ আম্মু তুমি খাবে না.?
আম্মুঃ হুম খাব তো মামনি তুমিও এসে বসে পর, এমনিতেই সকাল থেকে অনেক কাজ করে যাচ্ছ।।
তানিয়াঃ না আম্মু আপনারা আগে খান আমি পরে খেয়ে নিব।।
আম্মুঃ তোমাকে আমি বসতে বলছি না, আস আমার পাশে এসে বস (ধমকের শুরে)।।
তানিয়াঃ আর কিছু না বলে আম্মুর পাশে গিয়ে বসে পরলো।।
তামিমঃ বাহ আম্মু নাস্তা তো অনেক ভালো বানিয়েছ দেখছি, দারুণ মজা হয়েছে (খেতে খেতে)।।
আম্মুঃ নাস্তা আমি না তোর বউ বানিয়েছে।। মেয়েটা সেই সকাল থেকে উঠেই সবার জন্য নাস্তা বানাতে লেগে গেছিল।।

তামিমঃ আম্মুর কথা শুনে আমি মেয়েটা মানে তানিয়ার দিকে তাকালাম।। 
সেও আমার দিকে তাকালো।। 
ওর চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।।
তারপর নাস্তা খাওয়া শেষ করে আমি রুমে চলে আসলাম।। 
রুমে এসে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৯ঃ৩০ বেজে গেছে।। 
ভার্সিটি শুরু হয়ে গেছে কিন্তু আমার জন্য নয়।। 
কারণ ভার্সিটিতে আমি যখন ইচ্ছা তখনই যেতে পারি আমায় কেউ কিছু বলে না।। 
বখাটে বলে আমায় ভার্সিটির সিনিয়র রাও অনেক ভয় পায়।। 
আরও একটা কারণ আছে কারণ আমার বাবা এই শহরের নাম করা ব্যাবসায়ী 
তাই আমায় কেউ কিছু বলার সাহস পায়না।। 
তো ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় তানিয়া রুমে আসলো।।
তানিয়াঃ তুমি রেডি হয়ে যাচ্ছ, কাপড়-চোপড় নিবা না.?
তামিমঃ ভার্সিটিতে যাব কাপড়-চোপড় নিব কেন.?

তানিয়াঃ ভার্সিটি মানে.! 
আজ ভার্সিটিতে যাওয়া হবে না আব্বু আমাদের নিতে এসেছেন, 
আমরা আজ আমাদের বাসায় যাব।।
তামিমঃ আপনাকে আমি আগেই বলেছি যে আমি কোথাও যেতে পারবো না যাওয়ার হলে আপনি একা যান।।
তানিয়াঃ তার মানে তুমি যাবে না.?
তামিমঃ নাহ

তানিয়াঃ আচ্ছা দাড়াও একটু আমি আসছি (বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল)।।
কিছুক্ষণ পর তানিয়া আবার রুমে আসলো, সে একা আসেনি তার পিছনে পিছনে আম্মুও এসেছেন হাতে খুন্তি নিয়ে।।
আম্মুঃ কিরে তুই নাকি তানিয়াদের বাসায় যাবি না বলেছিস.?
তামিমঃ দেখ আম্মু এমনিতেই আমার বিয়েতে মত ছিল না তার উপর এখন আবার ওদের বাসায় যেতে বলছ।। এইসব আমার একদমই ভালো লাগে না প্লিজ আমাকে জোর কর না আমি কোথাও যেতে পারবো না।।

আম্মুঃ কিছু না বলে পাশের টেবিলের উপর থেকে আমার মোবাইল আর মানিব্যাগটা নিয়ে নিলেন আর বললেন, এবার যা দেখি কোথায় যাবি।।
তামিমঃ আম্মু ক্লাসে আজ একটা এক্সাম আছে প্লিজ আমায় যেতে দাও।।
আম্মুঃ তো যা না করেছে কে।।
তামিমঃ তাহলে আমার মোবাইল আর মানিব্যাগটা দাও।।
আম্মুঃ এগুলো পাবি না।। এই যে আমি তানিয়ার কাছে এগুলো দিয়ে গেলাম।। 
যদি তুই ওদের বাসায় যাব তাহলে এগুলো পাবি নাহলে পাবি না।।
তামিমঃ আম্মু ?
আম্মুঃ তাড়াতাড়ি রেডি হ নাহলে এই গরম খুন্তি এখন তোর পিঠে বসাবো বলে দিলাম।।
তামিমঃ দুর যাও তুমি আমি রেডি হচ্ছি।।
আম্মুঃ আমি কোথাও যাব না তুই রেডি হ।। আর মামনি তুমি ওর কাপড়-চোপড় একটা ব্যাগের মধ্যে ভরে নাও তো।।

আম্মুর কথায় তানিয়া মেয়েটা আমার কিছু কাপড় নিয়ে একটা ব্যাগে ভরতে লাগলো।। 
কি আর করার বাধ্য হয়ে আমাকেও রেডি হতে হলো।।
এদিকে আম্মু তানিয়া মেয়েটার কানে কানে কি যেন বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।।
তামিমঃ এই আমার মোবাইল আর মানিব্যাগটা দেন।।
তানিয়াঃ এগুলো এখন দেওয়া যাবে না আম্মু নিষেধ করে গেছেন।। 
রেডি হওয়া শেষ হলে এখন নিচে চল আব্বু আমাদের জন্য ওয়েট করছেন।। আর আসার সময় আমাদের ব্যাগটাও নিয়ে এস।।
কথাগুলো বলেই তানিয়া মেয়েটা রুম থেকে চলে গেল।। 
আমিও আর উপায় না পেয়ে ব্যাগটা নিয়ে তার পিছনে পিছনে নিচে চলে আসলাম।।

তারপর আম্মু-আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম তানিয়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে (গাড়িটা তানিয়ার আব্বুর)।।
প্রায় ১ঘন্টা পর আমরা এসে তানিয়াদের বাসায় পৌছলাম।। 
গাড়ি থেকে নামতেই কোথা থেকে জানি কয়েকটা মেয়ে এসে আমাদের ঘিরে ধরলো বিশেষ করে আমায়।। 
আসলে চুলগুলো একটু স্টাইল করে এসেছি + স্যুট ও পরে এসেছি তার জন্যই হয়তো মেয়েগুলো আমায় দেখার জন্য ঘিরে দাড়িয়েছে।। মেয়েগুলো সম্ভবত তানিয়ার কাজিন হবে।।

তো মেয়েগুলোর মধ্যে একেকজন আমায় একেকরকম প্রশ্ন করতে লাগলো।। 
আমিও বাধ্য হয়ে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলাম।। 
অচেনা জায়গা এইখানে রাগ দেখালে তো আর হবে না।। 
ওদের সাথে হাসি মুখেই কথা বলতেছিলাম, এমন সময় তাদের মধ্যে হঠাৎ এক মেয়ে দুষ্টুমি করে বললো…
দুলাভাই আপনি না খুব কিউট, একেবারে আমার সপ্নের রাজকুমারের মতো।।
মেয়েটার কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।। 
এদিকে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।। 
হঠাৎ সে আমার হাত ধরে টানতে টানতে সেখান থেকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসলো।। 
বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই আমার শ্বাশুড়ি আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন।। 
কিন্তু তানিয়া ওইখানেও আমায় থাকতে দিল না হাত ধরে টানতে 
টানতে সিড়ি বেয়ে উপরের একটা রুমে নিয়ে আসলো।।

রুমে ঢুকেই সে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে রুমের দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে
 দিয়ে নিজের বোরকার মুখের কাপড় বিছানার উপর ছুড়ে মারলো।। 
তানিয়ার দিকে তাকাতেই আমি হালকা ভয় পেয়ে গেলাম।। 
কেননা সে আমার দিকে এক ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। 
তার চেহারা একেবারে লাল হয়ে আছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড পরিমাণে রেগে আছে।। 
কিন্তু তার রাগের কারণ কি আর আমার দিকেই বা কেন এমন চাহনিতে তাকিয়ে আছে।। 
মনে তো হচ্ছে সে আমার উপরেই রেগে আছে।। 
কিন্তু আমি কি করলাম যে সে এইভাবে রেগে আছে.? 
কিছুই তো বুঝতে পারছি না।। 
এদিকে তানিয়া ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে, 
আর এসেই আমার স্যুটের কলার চেপে ধরে বললো…

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com