Breaking News

সিনিয়র বউ | পর্ব -৬



তামিম দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে এখন কি করবে।।
তার আম্মু আজ তার উপর যেভাবে রেগে আছেন মনে তো হয়না এই রাগ এতো সহজে ভাঙবে।।
এই তানিয়া মেয়েটাই সবকিছুর মূল।।
আমি সিগারেট খেয়েছি তাহলে তার কি আসে যায়.?
এই কথা আম্মুকেও শোনাতে হলো তার।।
একবার আম্মুর থেকে ছাড়া পাই তখন বোঝাব মজা এই মেয়েটাকে।।
আমার লাইফ একেবারে হেল করে দিচ্ছে এই মেয়েটা।।
তামিমকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তামিমের আম্মু তামিমের পায়ের মধ্যে দিলেন খুন্তি দিয়ে এক বারি।।

তামিমঃ উ মা গো, আমার পা শেষ (হালকা চিৎকার মেরে)।।
আম্মুঃ এই চুপ একদম চিল্লাবি না বলে দিলাম।।
তোকে আমি কান ধরে ওঠবস করতে বলেছি, কিন্তু তুই তা না করে দাঁড়িয়ে থেকে কি ভাবছিস.?
ওঠবস না করলে আজ তোর ছাড়া নেই বলে দিলাম (কড়া গলায়)।।
তামিমঃ আম্মু প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও, আমি আর জীবনেও সিগারেট খাব না।।
আম্মুঃ না তোর কোনো মাফ নেই, যা বলেছি তা কর নাহলে কিন্তু এখন এই খুন্তির বারি খেতে হবে তোকে।।

তামিমঃ ও আম্মু উনার সামনে মানে নিজের বউয়ের সামনে ওঠবস করবো এটা কেমন দেখায় না.?
তাই বলছি কি (আমায় বলতে না দিয়ে)
আম্মুঃ তোর কোনো অজুহাত আমি আজ শুনবো না।। তোকে আমি ওঠবস করতে বলছি ওঠবস কর, নাহলে কিন্তু আমি এখন এই খুন্তিটা দিয়ে তোকে পিটানো শুরু করবো।।
তামিমঃ ও আম্মু সোনা আম্মু আমার একটা কথা আউচ (খুন্তির আদর পরছে)।।
আম্মুঃ ওঠবস কর বলছি নাহলে (চোখ গরম করে)।।
তামিমঃ করছি করছি এতো রাগছ কেন।।
আর কোনো উপায় না পেয়ে লজ্জাশরম খাটের নিচে ফেলে কান ধরে ওঠবস করা শুরু করলাম।। তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার এমন অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসছে।।
তামিমঃ খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা.? বেশি কর হাস সময় আমারও আসবে তখন বোঝাব মজা (মনে মনে)।। আউচ (আবার খুন্তির আদর পরছে) এখন মারলা কেন.?
আম্মুঃ এতো জিমুচ্ছিস কেন.?

তামিমঃ তাই বলে এইভাবে মারবা.?
আম্মুঃ তোর সাহস তো দেখছি কম না আমার মুখের উপর কথা বলিস।।
তামিমঃ সরি সরি ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না।।
আম্মুঃ হুম তারাতাড়ি দে, আর মামনি তুমি গুনতে থাক ও কতবার ওঠবস করছে।।
তানিয়াঃ আচ্ছা আম্মু।।

আম্মুর কথায় তানিয়া আমার ওঠবস করা গুনতে শুরু করলো ১,২ বলে আর আমি মাথা নিচু করে ওঠবস করেই যাচ্ছি।। এ কেমন বউ কোথায় নিজের স্বামীকে এখন এই বিপদ থেকে বাঁচাবে তা না করে উলটা স্বামী কয়বার ওঠবস করছে তা গুনতেছে.! সময় আমারও আসবে তখন বোঝাব মজা।।
তামিম ওঠবস করছে আর তানিয়া গুনে যাচ্ছে আর পাশে তামিমের মা বিছানার উপর বসে আছেন হাতে খুন্তি নিয়ে।। এমন সময় হঠাৎ তামিমের বাবা রফিক আহমেদ এসে বাড়িতে ঢুকলেন।। সাড়া বাড়িতে কাউকে দেখতে না পেয়ে ছেলের রুম থেকে ১,২ গণনার আওয়াজ শুনে ছেলের রুমে এসে হাজির হলেন।। ছেলের রুমে ঢুকে দেখলেন তামিম কান ধরে ওঠবস করছে আর তানিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুনতেছে আর তামিমের মা বিছানার উপর বসে আছেন হাতে খুন্তি নিয়ে।।
আব্বুঃ এসব কি হচ্ছে, তামিম এইভাবে কান ধরে ওঠবস করছে কেন.?
হঠাৎ কারও গলার আওয়াজ পেয়ে সবাই দরজার সামনে তাকিয়ে দেখে তামিমের বাবা দাঁড়িয়ে আছেন।।

আম্মুঃ তোমার ছেলেকে না করার পরেও আবার সিগারেট খেয়েছে তাই ওকে শাস্তি দিচ্ছি (রাগী গলায়)।।
আব্বুঃ শাস্তি দিচ্ছি ভালো কথা কিন্তু এটা কোন ধরণের শাস্তি.? এতো বড় ছেলেকে কেউ কান ধরে ওঠবস করায়.?
তামিমঃ আব্বু আম্মুকে একটু বল না আমায় মাফ করে দিতে (আব্বুর দিকে করুণভাবে তাকিয়ে)।।
আম্মুঃ সবকিছুর মূল তো তুমিই, বাবা সিগারেট খেলে তো ছেলে সিগারেট খাবেই।। এইখানে এসেছ ভালো কথা, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক একদম ছেলের পক্ষ নিয়ে দালালি করবে না বলে দিলাম।। নাহলে তোমাকেও ওইদিনের মতো

আব্বুঃ থাক থাক আর বলতে হবে না, আমি বরং রুমে যাই তোমরা তোমাদের কাজ কর (বলেই আব্বু তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন)।।
আসলে তামিমের মা-বাবা প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন।। আর প্রেম করে বিয়ে করলে যে কতো পুরুষ মানুষের জীবন কয়লা হয়ে যায় সেটা আর নাই বললাম।। প্রেম করার সময়ই তামিমের আব্বু তামিমের আম্মুর সব কথা মেনে চলতেন।। তাই এখনো উনি তামিমের আম্মুর সব কথা মেনে চলেন আর উনাকে একটু ভয় ও পান।। এক কথায় তামিমের আম্মুই বাসার কর্তা আর সবাই উনার কথামতোই চলে।।
আম্মুঃ এই তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন ওঠবস কর (বলেই খুন্তি দিয়ে পিছন দিকে একটা বসিয়ে দিলেন)।।
তামিমঃ করছি তো এতো মার কেন (বলেই আবার ওঠবস শুরু করলাম)।।
আম্মুঃ তাড়াতাড়ি কর, আর মামনি ও কয়বার ওঠবস করেছে.?
তানিয়াঃ ২০ বার করেছে আম্মু।।

তামিমঃ কিহহ মাত্র ২০ বার.! আম্মু এই মেয়ে মিথ্যা বলছে আমি ৪০ বার করেছি বিশ্বাস কর।।
আম্মুঃ চুপ কথা বলবি না ওঠবস করতে থাক, কে মিথ্যা বলছে আর কে সত্যি বলছে আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি।।
তামিমঃ আম্মু এবারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ আর জীবনেও সিগারেট খাব না প্রমিস।।
আম্মুঃ তুই ওঠবস করবি (চোখ গরম করে)।।
তামিমঃ করছি তো।।
আর কথা না বলে ওঠবস করতে লাগলাম।। প্রায় ৫ মিনিট ওঠবস করার পর হঠাৎ আম্মু বললেন…
আম্মুঃ এই থাম, মামনি কয়বার হয়েছে.?
তানিয়াঃ ৫০ বার হয়েছে আম্মু।।

আম্মুঃ যা আজকের জন্য তোকে মাফ করলাম।। এরপর যদি আর কখনো সিগারেট খাস তাহলে তোকে একেবারে এই বাসা থেকেই বের করে দিব।।
তামিমঃ আহ্ বাচলাম, সিগারেট খেলেও জীবনেও আর প্রমাণ নিয়ে বাসায় আসবো না (আস্তে আস্তে)।।
আম্মুঃ কিছু বললি নাকি.?
তামিমঃ হে না না কই কিছু বলি নাই তো।।
আম্মুঃ এই শাস্তির কথা যেন সবসময় মনে থাকে আর মামনি তুমি একটু আমার সাথে আস তো।।
কথাটা বলেই আম্মু রুম থেকে চলে গেলেন।। আম্মুর পিছনে পিছনে তানিয়াও রুম থেকে বেরিয়ে গেল।। অনেক্ষণ ধরে ওঠবস করার ফলে শরীর কিছুটা ঘেমে গেছে তাই তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম গোসল করতে।।

এদিকে আম্মু তানিয়াকে সাথে নিয়ে রান্নাঘরে গেলেন আর তানিয়াকে বললেন…
আম্মুঃ মামনি আমায় মাফ করে দাও তোমার মতো একটা ভালো মেয়ের সাথে আমার খারাপ ছেলেটার বিয়ে দিয়ে হয়তো আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করে ফেলেছি (তানিয়ার হাত ধরে)।।
তানিয়াঃ ছিঃ ছিঃ এইসব আপনি কি বলছেন আম্মু।। আপনি তো এখন আমার মা, আর মা হয়ে নিজের মেয়ের কাছে মাফ চাচ্ছেন.! আর ও এতোটাও খারাপ না যতটুকু আমরা ভাবছি।। বন্ধুদের সাথে থেকে হয়তো সিগারেট খাওয়া শিখে গেছে তাই এখন মাঝেমধ্যে খায়।।
আম্মুঃ আমি ওর মা, আমার ছেলেকে আমি ভালো করেই চিনি।। খারাপ ছেলেদের সাথে থেকে সেও দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।। আগে তো প্রায় ই সিগারেট খেয়ে বাসায় আসতো।। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম না।। হঠাৎ একদিন ওর রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে ওর বিছানার নিচে সিগারেটের প্যাকেট দেখে বুঝতে পারলাম সে সিগারেট খায়।। ওইদিন ও বাসায় আসলে ওকে অনেক বকাঝকা করেছিলাম।। সেই থেকে আর ওকে সিগারেট খেয়ে বাসায় আসতে দেখি নি।। তারপরও হয়তো ও আমার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে এতোদিন ধরে সিগারেট খেয়ে এসেছে।।

তানিয়াঃ আচ্ছা আম্মু ও এমন কেন হলো.? ওর কি কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল.?
আম্মুঃ নাহ আমার জানামতে ওর এইসব কিছুই ছিল না।। হঠাৎ করে ও এমন হয়েগেছে।। এখন ওকে আমি কীভাবে ভালো পথে আনবো মা তুমিই বল।। তুমি কি পারবে আমার ছেলেকে ভালো পথে আনতে.?

তানিয়াঃ কেন পারবো না আম্মু অবশ্যই পারবো।। আর ও তো এখন আমার স্বামী, ওকে তো আমারই ভালো পথে আনতে হবে।। আর একটা খারাপ মানুষকে ভালো পথে আনতে পারলে আমারই লাভ।। আপনি চিন্তা করবেন না আজ থেকে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে ওকে ভালো পথে আনার চেষ্টা করবো।। আপনি শুধু আল্লাহর কাছে ওর জন্য দোয়া করেন, ও যেন খারাপ পথ ত্যাগ করে ভালো পথে আসতে পারে।।

আম্মুঃ দোয়া তো সবসময়ই করি মা, আর মায়ের দোয়া তো সবসময়ই সন্তানের সাথে থাকে।।
তানিয়াঃ কিন্তু আম্মু ওকে ভালো পথে আনতে হলে আমার আপনার একটু হেল্প লাগবে।।
আম্মুঃ কি হেল্প মামনি বল.?
তানিয়াঃ এখন থেকে আপনার টেকনিকটা আমি ব্যবহার করবো।।
আম্মুঃ মানে.?
তানিয়াঃ শোনেন তাহলে, তারপর তানিয়া আম্মুর কানে কানে সব বললো (সময় হলে আপনারাও জানতে পারবেন)।।
আম্মুঃ আচ্ছা তাই কর, আমি সবসময় তোমার সাথে আছি।।
তানিয়াঃ আচ্ছা আম্মু দুপুরের খাওয়ার সময় তো হয়েগেছে, খাবেন না.?
আম্মুঃ হুম ভাত আর প্লেট নিয়ে টেবিলে রেখে সবাইকে খাওয়ার জন্য বলে আস আমি ভাটিতে তরকারি নিচ্ছি।।

তানিয়াঃ আচ্ছা আম্মু।।
তারপর তানিয়া আম্মুর কথামতো ভাত আর প্লেট নিয়ে টেবিলে রেখে সবাইকে খাওয়ার জন্য বলে গেল, মানে আমাকে আর আব্বুকে।। এদিকে আমিও গোসল করে রেডি হয়ে বসে ছিলাম এমন সময় তানিয়া এসে খাওয়ার জন্য ডেকে গেল।। আমিও চুপচাপ নিচে চলে আসলাম আর এসে একটা চেয়ার টেনে টেবিলে বসে খাবার খেতে লাগলাম।। খাওয়া শেষ হলে আবার রুমে চলে আসলাম।। রুমে এসে কিছুক্ষণ ফেসবুকিং করে সন্ধ্যা হয়ে গেলে বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম।। যেই রুম থেকে বের হতে যাব তখনই তানিয়া এসে আমার সামনে দাড়ালো।।
তানিয়াঃ কোথায় যাচ্ছ.?

তামিমঃ আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব, কোথায় যাচ্ছি এটা কি আপনাকে বলে যেতে হবে.? (কিছুটা রাগ দেখিয়ে)
তানিয়াঃ হুম এখন থেকে কোথাও গেলে তোমার আমাকে বলে যেতে হবে নাহলে যেতে দিব না।।
তামিমঃ আমার তো ঠেকা পরছে আপনার কথা শোনার।। দেখি সরেন সামনে থেকে আর আমায় যেতে দিন।।
তানিয়াঃ এখন তো সন্ধ্যা হয়ে পরেছে তাই এখন আর কোথাও যেতে পারবা না।।
তামিমঃ দেখেন ভালোই ভালোই বলছি আমায় যেতে দিন নাহলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।।
তানিয়াঃ তোমার খারাপ হওয়া আমি বের করছি দাড়াও বলেই আম্মু আম্মু বলে জোরে চিল্লাতে শুরু করলো।।

এদিকে আমি কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।।
কিছু বলতে যাব তার আগেই আম্মু এসে হাজির।।
আম্মুঃ কি হয়েছে মামনি ডাকছ কেন.?
তানিয়াঃ দেখেন না আম্মু ও এখন বাহিরে যাচ্ছে।।
ওকে আমি যেতে না করলাম কিন্তু ও আমার কথা শুনছেই না।।
আম্মুঃ তুই এখন বাহিরে গিয়ে কি করবি রে.?
তামিমঃ এমনি একটু দরকার আছে।।
আম্মুঃ তোর কি এমন দরকার যে এই সন্ধ্যাবেলায় বাহিরে যেতে হচ্ছে।।
আর তানিয়া যে তোকে যেতে না করছে তাহলে তুই ওর কথা শুনছিস না কেন.?
তামিমঃ আমি উনার কথা শুনতে বাধ্য নই।।
আম্মুঃ বাধ্য না হলেও তোকে এখন থেকে তানিয়ার সব কথা শুনতে হবে কারণ…

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com