বরিশাল জেলা ভ্রমণ গাইড
আপনি যদি বরিশাল জেলা ভ্রমণ করতে চান তাহলে এই পোষ্টটি ভালোভাবে পড়ুন তাহলে আপনার ঘুরার আনান্দ শত গুন বেড়ে যাবে। বরিশাল জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল । এটি ১৭৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরের পূর্বতন নাম চন্দ্রদ্বীপ। দেশের খাদ্যশষ্য উৎপাদনের একটি মূল উৎস এই বৃহত্তর বরিশাল। একে বাংলার ‘ভেনিস’ বলা হয়। বরিশাল অন্যতম গুরুত্বপূর্ন একটি নদীবন্দর।
বরিশালের দর্শনীয় জায়গা গুলোর এক নজরে দেখে নেয়া যাক:-
- বিবির পুকুর- বরিশাল সদর উপজেলা , বলিশাল।
- ব্রজমোহন কলেজ – বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- বরিশাল মহাশ্মাশান- বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- জীবনানন্দ দাশ এর বাড়ি ( ধানসিঁড়ি) – বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিদ্দীনের বাসভবন- বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- অক্সফোর্ড মিশন গীর্জা – বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- বেল ইসলামিয়া হসপিটা্ল – বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক)- বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- ৩০ গোডাউন -বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- আশ্বিনী কুমার টাউন হল – বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- এবাদুল্লাহ মসজিদ- বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- শ্বেতপাদ্ম পুকুর- বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ী- বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।
- দুর্গাসাগর দিঘী- বাবুগঞ্জ উপজেলা, বরিশাল।
- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় – বরিশাল।
- বাইতুল আমান জামে মসজিদ ( গুঠিয়া মসজিদ )- গুঠিয়া উপজেলা , বরিশাল।
গুঠিয়া মসজিদ
বরিশাল শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বানারীপাড়া সড়কসংলগ্ন উজিরপুর উপজেলায় এই গুঠিয়া গ্রামের অবস্থান। বরিশাল-বানারীপাড়া সড়ক ধরে এগুলেই উজিরপুর উপজেলা। সড়কের পাশে গুঠিয়ার চাংগুরিয়া গ্রাম। এ গ্রামেই আছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ গুঠিয়া মসজিদ (Guthia Baitul Aman Jame Masjid Complex)। ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু চাংগুরিয়ার নিজ বাড়ির সামনে প্রায় ১৪ একর জমির উপর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-ঈদগাহ্ কমপ্লেক্স এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন।
ভাসমান পেয়ারা বাজার
ঝালকাঠি, বরিশাল এবং পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলিতে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার (Floating Guava Market)। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় বসে ভিমরুলির এই ভাসমান পেয়ারা বাজার। জুলাই, আগস্ট পেয়ারার মৌসুম হলেও মাঝে মাঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজার চলে। ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখতে আগস্ট মাস সবচেয়ে উপযোগী সময়। সকাল ১১ টার পর পেয়ারা বাজারের ভীড় কমতে থাকে তাই ১১ টার আগে বাজারে যাওয়াই সবচেয়ে ভাল।
দুর্গাসাগর দিঘী
দুর্গাসাগর দিঘী (Durga Sagar) বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে স্বরূপকাঠি – বরিশাল সড়কে মাধবপাশায় অবস্থিত। ১৭৮০ খৃষ্টাব্দে তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনের জন্য মাধবপাশায় একটি বৃহৎ দীঘি খনন করে তাঁর মা দুর্গা দেবীর নামানুসারে দিঘীটির দুর্গাসাগর নামকরণ করেন। ঐতিহাসিক এই দিঘীটির জলাভূমির আয়তন ২৭ একর এবং পাড় ও জমি সহ মোট আয়তন ৪৫.৪২ একর। বর্তমানে জেলা প্রশাসন দুর্গাসাগর দিঘী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে। দুর্গাসাগর দিঘীর তিন দিকে ৩টি ঘাটলা এবং দিঘীর মাঝখানে একটি টিলা বা ছোট দ্বীপ রয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এই দুর্গাসাগর মাধবপাশা দীঘি (Madhobpasha Dighi) নামেও ব্যাপক পরিচিত।
শাপলা গ্রাম, সাতলা
শাপলা গ্রাম সাতলা (Shapla Gram Satla) যেন এক শাপলার রাজ্য। বিলের পানিতে ফুটে থাকা হাজারো লাল শাপলা যেন সূর্য্যের লাল আভাকেও হার মানায়। বরিশাল (Barishal) সদর থেকে সাতলা গ্রামের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত। এখানে কবে থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়েছে এ তথ্য পাওয়া না গেলেও জানা যায় এখানে লাল, সাদা আর বেগুনি এই তিন ধরণের শাপলা জন্মে। তবে লাল শাপলা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি (Lakutia Zamindar Bari) দেখতে যেতে হবে বরিশাল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত লাকুটিয়া গ্রামে। ১৭০০ সালে রুপচন্দ্র রায়ের পুত্র রাজতন্ত্র রায়ের হাত ধরে ইট পাথর আর সূড়কি গাথুনিতে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি মঠ, সুবিশাল দীঘি, মাঠ এবং কারুকার্যমন্ডিত জমিদার বাড়ি।
অক্সফোর্ড মিশন
অক্সফোর্ড মিশন চার্চ (Oxford Mission Church) প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল বিভাগের বগুড়াগামী রোডে অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্যতম শৈল্পিক গির্জা স্থাপত্যের নিদর্শন অক্সফোর্ড মিশন চার্চকে এশিয়ার ২য় বৃহত্তম চার্চ হিসাবে গন্য করা হয়। প্রাচীন এ গির্জার নাম ইপিফানি গির্জা হলেও এটি অক্সফোর্ড মিশন নামেই পরিচিতি লাভ করে। সিস্টার এডিথের নকশায় ১৯০৩ সালে গির্জাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ফাদার স্ট্রং এর নির্দেশনায় ১৯০৭ সালে এর কাজ শেষ হয়।
মিয়াবাড়ি জামে
মসজিদ কড়াপুর মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ (Mia Bari Mosque) বরিশাল জেলার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৮০০ শতকে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। মূল মসজিদটি উঁচু একটি আয়াতকার বেসমেন্টের উপর নির্মাণ করা হয়েছে। আর নীচের বেসমেন্টের কক্ষগুলো বর্তমানে মাদ্রাসার ছাত্রদের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
শংকর মঠ
বরিশাল জেলা শহরের নতুন বাজার এলাকায় শংকর মঠের (ShreeShree Shangkar Moth) অবস্থান। ১৮৮৪ সালের ১২ আগস্ট গলাচিপায় জন্মগ্রহণকারী বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নেতা স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী ১৯১২ সালে শ্রী শ্রী শংকর মঠ নামের এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতীর আসল নাম সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। আশ্রম স্থাপনের পরও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্বামী প্রজ্ঞানানন্দের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। এমনকি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শংকর মঠ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল হিসাবে সর্বদা উন্মুক্ত ছিল।
বিবির পুকুর
বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এক ঐতিহ্যবাহী জলাশয়ের নাম বিবির পুকুর (Bibir Pukur)। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জিন্নাত বিবি জনমানুষের জলের কষ্ট নিরসনের উদ্দেশ্যে এই পুকুর খনন করেন। নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত বিবির পুকুরের দৈর্ঘ্য ১৮৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০০ ফুট। পরবর্তীতে জিন্নাত বিবির নামানুসারে শতবর্ষী পুকুরটি বিবির পুকুর নামে পরিচিত হয়ে উঠে। তৎকালীন সময় কীর্তনখোলা নদীর সাথে খালের মাধ্যমে বিবির পুকুরের দুইটি সংযোগ ছিল। ফলে নদীর মতই এই পুকুরে নিয়মিতভাবে জোয়ার ভাটা দেখা যেত।
শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর
বরিশাল জেলা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের বসতভিটার ২৭ একর জায়গা জুড়ে শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর (Sher-e-Bangla Memorial Museum) গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এই জাদুঘরটি চাখার প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। অবিভক্ত বাংলার প্রধান মুখ্যমন্ত্রী ও অবিস্মরণীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক পিতার মৃত্যুর পর কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসার উদ্দেশ্যে ১৯০১ সালে বরিশাল আগমন করেন। আইন ব্যবসার পাশাপাশি তিনি চাখারের জমিদারিত্বের দেখাশুনা করতেন। ১৯৮৩ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ইতিহাস ও স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এই জাদুঘর নির্মাণ করা হয়।
এছাড়াও ঘুরে দেখতে পারেন:- মাহিলারা মঠ, সংগ্রাম কেল্লা, শরিফলের দুর্গ, শের-ই- বাংলা জাদুঘর, শংকর মঠ, জমিদার বাড়ি (মাঘরপাশা), লন্টা বাবুর দিঘী (লাকুটিয়া), কবি বিজয়গুপ্তর মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লেখিত মনসা মন্দির, আদম আলী হাজীর গলি, পাক্কা বাড়ি দূর্গ (মেহেন্দিগঞ্জ)।