অবহেলার সংসার । পর্ব -১১

ভাইয়া তোর হাতে কি ওগুলো আমাকে দেখা দেখি?
আরে এগুলো কিছু না এমনি।(বাসার ভিতরে ঢুকতেই এশা আমাকে জিগ্যেসা করতেছে )
কি এমন দেখা বলতেছি না হলে বাবাকে বলে দিবো?
এশা তুই শুধু শুধু বাবার ভয় দেখাস কেনো রে।
তোকে বাবার ভয় দেখাবো না তো কার ভয় দেখাবো বাবাকে ছাড়া কি তুই আর কাউকে ভয় পাস?আচ্ছা যাই হোক বাবাকে কিছু বলবো না,এখন তুই আমাকে ওই ব্যাগের ভিতরে কি আছে দেখা?
না দেখলে হয় না বোন।তোকে একশো টাকা দিচ্ছি তাও দেখতে চাস না ।
এই আমি কি ফকির নাকি যে আমাকে একশো টাকা দিবি?দেখা বলতেছি না হলে,বাবাকে এখনে ডাকতেছি।

হয়েছে আর বাবাকে ডাকতে হবে না, দেখাচ্ছি ব্যাগের মধ্যে কি আছে?তারপর ব্যাগ টা ওর হাতে দিয়ে পাশে দাড়িয়ে আছি।এশা ব্যাগটা হাতে নিয়ে নীল শাড়িটা আর ফুলগুলো বাহির করলো।বাহির করে বলতেছে,
সত্যি করে বলতো ভাইয়া এগুলো কারজন্য কিনেছেন।আমার জন্য নাকি ভাবির জন্য।
আমার ওতো শক নাই তোকে শাড়ি আর ফুল দেওয়ার।তোর জামাই তোকে ওগুলো দিবে।শাড়ি আর ফুলগুলো তোর ভাবির জন্য কিনেছি।কয়েক দিন থেকে বলতেছে ব্যস্হতার জন্য কিনে দিতে পাড়ি নি।আজকে তোর ভাবি খুবেই ক্ষেপে গেছে তাই না কিনে উপাই পাইলাম না?
তাই বলে তুই শুধু তোর বউ এর জন্য মার্কেট করে আনবি তোর নিজের বোনটাকে রেখে।
আচ্ছা যা তোকে একদিন মার্কেট করতে নিয়ে যাবো এখন এগুলো আমাকে দে আর তোর ভাবির আগে রাগ ভাঙ্গাতে হবে।

ঠিক আছে তোমার জিনিস তুমি নেও।
দে তার পর আমি এশার হাত থেকে ফুলগুলো আর শাড়ির ব্যাগটা নিলাম ।
এশা তোর ভাবি কই আছে রে এখন।
কই আবার থাকবে রুমের আছে মনে হয়।
ওকে।তারপর আমি সোজা আমার রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে দেখে জান্নাতুন বিছানায় সুয়ে আছে।আমি ধীরে ধীরে বিছানার দিকে যাচ্ছি।তারপর বলতেছি,
ওগো বউ তুমি কি করো?
দেখতেই তো পারতেছেন আমি কি করতেছি তাও বলেন কেনো আর আপনাকে না তখন বললাম আমাকে বউ বলে ডাকবেন না?
বউকে বউ বলে ডাকবো না তো কি বলে ডাকবো?
আমার নাম ধরে ডাকুন তাও বলবেন না আমাকে।আপনার কোন অধিকার নাই আমাকে বউ বলার।
বউ বলার অধিকার আছে না আছে সেটা তুমি আমি ভালো করে জানি ওকে।তবে শুনো না বউ তোমার জন্য একটা গিফ্টআছে।

আমার কোন গিফ্টের প্রয়োজন নাই আপনার জিনিস আপনার কাছে রাখুন।
তুমি শুধু শুধু রাগ হচ্ছো আমি কি রাগার মতো কিছু বলেছি?
আপনার কথা শুনলেই আমার বিরক্ত লাগে।তাই আমার সাথে কথা না বললেই ভালো।
এটা তুমি কি বললা,দশটা না, পাঁচটা না একটাই বউ আমার সেই বউ বলে কি না তার সাথে কথা না বললেই ভালো?আমি তো কথা না বললে মরেই যাবো।
আপনার এই ন্যাকামো কথাগুলো শুনলে তো আরো আমার শরীর জ্বলে যাই।
কি জ্বলে জ্বলুক আমি পানি দিয়ে ঠান্ডা করে দিবো?
ধূর আপনার সাথে কথা বলা মানে বেকার।আপনি রুমে থাকুন আমি গেলাম।
এই তুমি কোথায় যাও শুনো তোমার সাথে খুবেই জরুরি কথা আছে।(পিছন থেকে হাত ধরে বলতেছি )
আপনি আমার হাতটা ছারুন।
হাত ছারবো না,তুমি আগে আমার কথা শুনো।হাত ছেড়ে দিলে তুমি পালায় যাবে আর আমার জরুরি কথা বলা হবে না।

আমি আপনার কোন কথা শুনতেই চাই না তাই ভালোই ভালোই আমার হাতটা ছেড়ে দিন না হলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
কিসের ভালো হবে না শুনি,নিজের বউ এর হাত ধরতে ভালো হওয়া আর না হওয়ার কি আছে?
এখন বউ বলে দাবি করতেছে আগে কই গেছিলো এই দাবি যখন না বলার সত্যে হাজার কষ্ট দিয়েছিলেন।এতোই যখন বউ দাবি করেন তাহলে আমার কথা না শুনে কেনো নষ্ট করে দিলেন পৃথিবীতে আসার আগে।আপনার তো কোন কষ্ট নাই থাকবে কেনো,আপনার তো কোন কিছু হারায় নাই,হারিয়েছি তো আমি আমার সন্তানকে যাকে তার বাবা নিজ হাতে হত্যা করেছে।
সত্য তো বলেছে জান্নাতুন এর কথাগুলো শুনে কষ্ট লাগতেছে আগে যে কেনো এমন লাগে নাই যদি আগে এমন কষ্টতা বুঝতে পারতাম তাহলে এইদিনটা দেখতে হতো না।
এখন কেনো চূপ করে আছেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।আমি জানি আপনি আর কিছু বলতে পারবেন না তাই বলতেছি হাতটা আমার ছেড়ে দেন আমি রুমের বাহিরে চলে যাবো।
জান্নাতুন প্লিজ আমার কথাটা একটু শুনো,

আপনার কথা আজকে কেনো শুনবো,সেদিন তো আপনি আমার কথা শুনেন নাই আমিও তো আপনার চেয়ে হাজার বার ভিক্ষা চেয়েছিলাম আমার সন্তানের কই আমার তো কথা আপনি শুনেন নাই শেষে কি করলেন আমাকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করে আমার abortion করালেন।আমার বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আসার আগে মেরে ফেললেন।তাই আমিও আজকে আপনার কোন কথা শুনতে চাই না।
আমি মানতেছি অনেক বড় অপরাধ করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো এখন আমি ভালো হয়ে গেছি।আমি এখন চাই তোমার সাথে সুখ-দুঃখের সংসার করতে যেখানে থাকবে তোমার আর আমার একটা কন্যা সন্তান।আমাদের হবে সুখের সংসার।

আমাকে হাসালেন আপনি,একদিনে কেউ ভালো হয়ে যায় আজকে প্রথম শুনলাম।আপনার মতো মানুষ কখনো ভালো হতে পারে আমার বিশ্বাস হয় না।আপনার কপালে সুখের সংসার লেখা নাই।
প্লিজ তুমি এভাবে বলো না।আমি যেগুলো অপরাধ করছি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।তোমাকে কথা দিচ্ছি আর কোন দিন আর অন্যায় কাজ করবো না।প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও তোমার পা দুটো ধরি।
আরে আপনি এটা কি করতেছেন স্বামী হয়ে স্ত্রীর পা ধরতেছে এটা কখনো ভালো দেখায় না তাই প্লিজ আপনি আমার পা ছেড়ে দিন?
আমি তোমার পা ছাড়বো না যতোক্ষন না তুমি আমাকে ক্ষমা করতেছো।
আচ্ছা আমি আপনাকে ক্ষমা করবো আগে তো আপনি আমার পা ছাড়ুন।
সত্যি আমাকে ক্ষমা করে দিবে তো,

সত্যি তো বলতেছি এখন আমার পা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ান।
হুম এই যে সোজা হয়ে দাড়ালাম এখন বলো আমাকে ক্ষমা করছো কি না?
একটু দাড়ান ভেবে দেখি,
ঠিক আছে যতো খুশি ভাবো কিন্তু আমাকে ক্ষমা করেই দিতে হবে।
আমি ভেবে দেখলাম যে,আপনাকে ক্ষমা করতে পারি কিছু শর্তে যদি আপনি মানেন,
কিসের শর্ত,
যদি মানেন তাহলে আপনাকে ক্ষমা করতে পারি,
ঠিক আছে কিন্তু আগে শর্তের কথাগুলো তো বলো ,

হুম বলতেছি,প্রথম শর্ত হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্তা নামাজ মসজিদের গিয়ে জামায়াতের সাথে পড়তে হবে,দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে আপনার রাগ একটু বেশি তাই রাগকে চেক দিতে হবে এবং বড়দের শ্রদ্ধা এবং সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে হুট হাট করে রাগা যাবে না।তৃতীয় শর্ত হচ্ছে আমি না বলা পর্যন্ত আমাকে স্পর্শ করতে পারবেন না, চার নাম্বার শর্ত তিন মাস এভাবে চলতে হবে কোন কথা বলা যাবে না আমার সাথে।যদি এই চারটা শর্ত তিন মাস মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনাকে ক্ষমা করতে পারি।
এক থেকে তিন নাম্বার শর্ত গুলো মানতে আমার কোন অসুবিধা নেই কিন্তু তুমি চার নাম্বার শর্তটা তুলে নেও তোমার সাথে তিনমাস কথা না বলে থাকতে পারবো না।
তাহলে আপনাকে আর ক্ষমা করতে ও পারবো না।
আচ্ছা ঠিক আছে তোমার সব শর্ত মানতে রাজি আছি।কিন্তু আজকে আমার একটা কথা রাখবে প্লিজ,
আচ্ছা বলেন যদি রাখার মতো হয় তাহলে রাখবো, না হলে নাই।
প্লিজ এমন ভাবে বলো না,

আচ্ছা বলেন কি কথা আছে আপনার?
এই ব্যাগটা রাখো তোমার কাছে,
্যাগের মধ্যে কি আছে?
একটা নীল শাড়ি আর কিছু ফুল আছে।এই শাড়িটা আজকে শুধু রাতে পড়ে আমার সামনে একটু আসবে।আমি দেখতে চাই আমার বউকে নীল শাড়িতে কেমন লাগে।
ঠিক আছে পড়বো কিন্তু আমার শাড়ি পড়া দেখে যেনো আপনার মাথা নষ্ট না হয়ে উল্টা পালটা কাজ না করে বসেন।
সেই রকম কিছুই করবো না,শুধু একটা নজর শাড়ি পড়া অবস্হায় দেখতে চাই তোমাকে।
ওকে।
গল্পটা আর দুই পর্বে শেষ করে দিবো আর বড় করবো না।ঈমান আর জান্নাতুন এর মিল তো হবেই।অনেকে বলে আমার গল্পে নাকি বেশির ভাগ sad end হয় কিন্তু এই গল্পে দুই জনেরে মিল করে দিবো।।কিন্তু একটা বিষয় হচ্ছে আপনারা চাইলে সিজন 2 নিয়ে আসতে পাড়ি গল্পটার ।তাদের নতুন সংসারের গল্প নিয়ে।কালকে গল্প দিতে পারবো না কারন কালকে 26 শে মার্চ বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে লেখাধূলা হবে আমাদের এখানে তাই সারাদিন ব্যস্হতার মধ্যে থাকবো তাই গল্প দিতে পারবো না,আপনারা কেউ অপেক্ষায় থাকবেন না।

চলবে,,,
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url