Breaking News

আবছা আলো । পর্ব -১০

নিশিতাঃ খালামুনি,,,,,,, (খালামুনি সিড়ি দিয়ে নিচে পরে গেছে,,, মাথা ফেটে রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে,,,)
টুম্পাঃ আম্মা,,,, কেমনে পরলেন আপনে,,,?
নিশিতাঃ এখন কথা বাদ দিয়ে,,, মতিকে ডেকে নিয়ে আয়,,, তাড়াতাড়ি মতিকে আর দারোয়ান চাচাকে ডেকে নিয়ে আয়,,,, (কাঁদতে কাঁদতে)
টুম্পাঃ আ,,,আমি তাড়াতাড়ি যাইতাছি,,,
নিশিতাঃ (টুম্পা ওদের ডাকতে গেলে আমি খালামুনির মাথায় খালামুনির শাড়ীর আচল পেচিয়ে চেপে ধরলাম,,, রক্ত বের হচ্ছে অনেক,,,, বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে,,,, সেদিনের কথা মনে পড়ছে,,, শ্রাবণের রক্তাক্ত দেহ আমার সামনে পরে ছিলো,,, নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে,,,, মতি আর দারোয়ান চাচা এলে সবাই ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালাম,,,, দারোয়ান চাচা গাড়ি ডেকে এনেছে,,,, হাসপাতালে গিয়ে খালুজানকে ফোন দিলাম মতির ফোন থেকে,,,,)
খালুজানঃ হ্যাঁ মতি,,, কী হয়েছে,,, ফোন দিয়েছিস কেনো,,,,?
নিশিতাঃ খালুজান,,,, আমি মতি নই,,, আমি নিশিতা,,,(কান্নাভেজা গলায়)
খালুজানঃ নিশিতা,,,,? কী হয়েছে,,, সব ঠিক আছে তো,,?
নিশিতাঃ কিচ্ছু ঠিক নেই,,,,, খালামুনি সিড়ি থেকে নিচে পড়ে গিয়েছে,,,, আমরা উনাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি,,,,
খালুজানঃ কোন হাসপাতালে,,,,? (অস্থির হয়ে)
নিশিতাঃ স,,সদর হাসপাতালে,,,,
খালুজানঃ আমি এখনই আসছি,,,,,,
নিশিতাঃ(একটু পরই খালুজান চলে এলেন,,, উনি এসে বর্ষণ ভাইয়াকে ফোন দিলেন,,, তখনই ডক্টর বের হয়ে আসলেন,,,,)
নিশিতাঃ খ,,খালামুনি কেমন আছেন এখন,,,,,?
ডক্টরঃ এখন ঠিক আছে,,,, সময়মত না নিয়ে এলে অনেক বড় কিছু হয়ে যেতে পারতো,,,,, মাথার আঘাতটা অনেক গভীর,,,, আর ডান পা ভেঙে গেছে,,,, ঠিক হতে অনেক সময় লাগবে,,,, জ্ঞান ফিরেনি এখনো,,,,, জ্ঞান ফিরলে দেখা করতে পারবেন,,,
নিশিতাঃ(ডক্টর চলে গেলে আমি আর খালুজান পাশের চেয়ারে বসে পড়লাম,,,, মতি আর দারোয়ান চাচা দাঁড়িয়ে আছে,,,, টুম্পা বাড়িতেই থেকে গেছে,,,,, প্রায় রাত আটটার দিকে খালামুনির জ্ঞান ফিরলে খালুজান দেখা করতে চলে যায় আর তখনই বর্ষণ ভাইয়া হন্তদন্ত হয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়,,,,)
বর্ষণঃ ম,,,মা কোথায়,,,,?
নিশিতাঃ ভেতরে আছে,,,,কেবল জ্ঞান ফিরেছে,,, খালুজান কথা বলছে,,,
বর্ষণঃ এখন কেমন আছে,,,?
নিশিতাঃ জ্ঞান ফেরার পর ডক্টর এখনো দেখেনি,,, ডক্টরকে ডাকা হয়েছে দেখলে জানা যাবে,,,,
বর্ষণঃ (নিশিতার পাশে বসে পড়লাম,,, মিটিং থেকে বের হয়ে দেখি বাবার অনেকগুলো মিস কল,,,, ব্যাক করলে মায়ের অবস্থার কথা জানতে পারি,,, আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে আসি,,,,,) তোমাকে তো আমি ফোন দিয়েছিলাম,,,, আমাকে একটা কল দিতে পারতে,,,,
নিশিতাঃ,,,,,,,,, (ফোন আমার কাছে থাকলে তো দিবো)
বর্ষণঃ তোমার ফোন কোথায়,,,,? (সন্দেহের চোখে তাকিয়ে)
নিশিতাঃ ম,,,মানে,, আ,,আমি মনে হয় বাড়ি ফেলে এসেছি,,,(আমতা আমতা করে)
বর্ষণঃ(নিশিতার কথা শুনে কেনো যেনো আমার সন্দেহ হলো,,,,, সত্যি কী বাড়ি ফেলে এসেছে,,,? আমি নিজের ফোন বের করে কল দিলাম,,, ব্যস্ত বলছে,,, এটা কীভাবে সম্ভব,,,? ও তো আমার সামনে তাহলে,,,,? কঠিন গলায় বললাম) ফোন কোথায় তোমার,,,?
নিশিতাঃ,,,,,,,,,,,,,
বর্ষণঃ কথা বলছো না কেনো,,,,?(রেগে গিয়ে)
নিশিতাঃ(কী বলবো এখন,,,,? খালামুনি ফোন নিয়ে নিয়েছে আর আপনার থেকে এই ফোন নেওয়ার জন্য,,, আমাকে আপনার সাথে সম্পর্ক থাকার অপবাদ মাথায় নিতে হয়েছে,,,, বের হয়ে যেতে বলা হয়েছে আপনাদের বাড়ি থেকে,,,,,?)
বর্ষণঃ মা কিছু বলেছে আবার,,,,?
নিশিতাঃ,,,,,,,,,,,,,,
বর্ষণঃ(নিশির নিরবতা বলে দিচ্ছে আমার সন্দেহই সত্যি,,,, এসব ভাবার সময়ই ডক্টর এসে মায়ের কেবিনে ঢুকলো,,,, সেই কখন ডক্টর ডাকা হয়েছে আর এখন আসলো,,, এখানকার চিকিৎসার এই হাল,,,, আমি আজই মাকে ঢাকা নিয়ে যাবো,,,, ডক্টরের সাথে আমিও কেবিনে গেলাম)
নিশিতাঃ(সবার পেছনে আমিও ধীরে ধীরে কেবিনে প্রবেশ করলাম,,,)
বর্ষণঃ এখন কেমন লাগছে মা,,,?
খালামুনিঃ ভ,,,ভালো,,,,(পিছনে নিশিতাকে দেখে মাথা গরম হয়ে গেলো,,, সামনে বর্ষণ দাঁড়িয়ে আর আমি অসুস্থ সেটাও যেনো মুহূর্তে ভুলে গেলাম) তুই এখনো যাসনি কেনো,,,,,? আজ তোর জন্য আমার এই অবস্থা,,,,,(উত্তেজিত হয়ে)
বর্ষণঃ ওর জন্য মানে,,,?(অবাক হয়ে নিশিতার দিকে তাকালাম)
খালুজানঃ এসব কী বলছো,,,? নিশিতাই তো তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে,,,, বরং আজ ও না থাকলে তোমার কী হতো আমি সেই চিন্তা করছি,,,
ডক্টরঃ আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না,,,, আমার মাথায় আঘাত লেগেছে,,,,,
বর্ষণঃ মাকে কী এখন মুভ করানো যাবে,,,?
ডক্টরঃ কেনো বলুন তো,,,?
বর্ষণঃ আমি মাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইছি,,,,, ভালো হসপিটালে ভর্তি করাবো,,,,,
ডক্টরঃ নিয়ে যেতে পারেন,,,, তবে এখন ভয়ের কিছু নেই,,,, এখানেই রাখতে পারতেন,,,,,
বর্ষনঃ নো,,, আমি নিয়ে যেতে চাই,,,
নিশিতাঃ(আমি চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি,,, খালামুনি এখন ঠিক আছে এতেই আমি খুশি,,,, এখন আমার মাথায় ঘুরছে খালামুনি এখন আমাকে চলে যেতে বললে এই রাতের বেলা কোথায় যাবো,,,,? আর বর্ষণ ভাইয়াও এখানে আছে,,, উনি আবার ঝামেলা করতে পারে,,,,)
খালুজানঃ কিন্তু বর্ষণ তুই ঢাকা নিয়ে গেলে ওর দেখাশোনা কে করবে,,,? এখানে নিশিতা আছে,,, টুম্পা আছে,,,, আর আমিও আছি,,, কিন্তু আমি তো সব ফেলে ঢাকা যেতে পারবো না,,,,
বর্ষণঃ সে চিন্তা তোমার করতে হবে না,,,, তুমি এখন চলো,,, দুদিন পর চলে এসো,,, আর মা পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমার কাছেই থাকবে আর নিশিতা মায়ের সাথে যাবে,,,,, টুম্পা এখানে থাক,,, আজ রাতের মধ্যেই যাওয়ার ব্যবস্থা করছি আমি,,,
খালুজানঃ তুই যেটা ভালো মনে করিস,,,,
খালামুনিঃ (এই মেয়েকে দূর করতে চেয়েছিলাম,,, এখন তো আরো বর্ষণের কাছে চলে আসছে,,,, কী করবো আমি এখন,,,,? সব একটু ঠিক হয়ে যাক তারপর সবার আগে আমি এই অপয়াকে বিদায় করবো,,, আজ এর জন্যই আমার এই অবস্থা হয়েছে,,,,, ওর রুম থেকে বিড়বিড় করে ওকে বকতে বকতে সিড়ি দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে নামছিলাম আর কীভাবে যেনো পরে গেলাম,,,,)
নিশিতাঃ(উনি এসব কী বলছে,,,? আমি উনার বাসায় গেলে খালামুনি,,,,,?)
★★★
নিশিতাঃ(উনি কারো কথাই শোনেননি,,,, রাতেই খালামুনিকে ঢাকায় এনে বড় হসপিটালে ভর্তি করে দেয়,,,,, খালামুনি আর আমি এম্বুলেন্সে এসেছি,,, খালুজান আর বর্ষণ ভাইয়া উনার গাড়িতেই এসেছে,,, আমার ব্যাগ তখন প্রায় গুছানো হয়েই গিয়েছিলো,,,, সেটা আর খালামুনির কিছু জিনিস টুম্পা গুছিয়ে দিয়েছে,,,, খালামুনি ঘুমাচ্ছে আর আমি তার পাশে বসে আছি,,,, প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে,,, সেই সকালে খেয়েছি আর দুপুরে খাওয়ার আগেই খালামুনির সাথে ঝামেলা হলো,,, কিন্তু এখানে আমি কিছু চিনিও না আর কাউকে লজ্জায় কিছু বলতেও পারছি না,,,, রাতও প্রায় একটা বাজতে চললো,,,)
বর্ষণঃ এটা ধরো,,, (খাবারের বক্স এগিয়ে দিয়ে,,)
নিশিতাঃ(হঠাৎ সামনে খাবারের বক্স এগিয়ে দেওয়ায় একটু চমকে গেলাম,,,) আ,,,আমার ক্ষিদে পায়নি,,,
বর্ষণঃ হ্যাঁ সেটা মুখ দেখেই বুঝতে পারছি,,, আসলে এতো ঝামেলায় খেয়াল ছিলো না,,, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবারটা খেয়ে নাও,,,
নিশিতাঃ আ,,,আপনি খেয়েছেন,,,?
বর্ষণঃ (চমকে তাকালাম নিশির দিকে,,,, এটা হয়তো খুব সাধারণ প্রশ্ন,,,, তবু এতোটা বুকে কেনো লাগলো,,,, নিশি আমার চিন্তা করছে এটা যেনো আমি ভাবতেও পারছি না,,,, ও হয়তো ফর্মালিটি দেখিয়েই জিজ্ঞেস করেছে,,, কিন্তু আমি,,,,) না আসলে,,, এতো ঝামেলায় মনে ছিলো না,,, প্রবলেম নেই আমি খেয়ে নেবো,,,
নিশিতাঃ এতো রাতে কোথা থেকে খাবেন,,,,?
বর্ষণঃ আমি ব্যবস্থা করে নিবো,,,,,
নিশিতাঃ এখান থেকে শেয়ার করে খেয়ে নিন,,, আমি এতো খাবার একা খেতে পারবো না,,,
বর্ষণঃ (কিছু একটা ভেবে) ঠিক আছে,,,
নিশিতাঃ আমি ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার সার্ভ করছি,,,,
বর্ষণঃ ওকে,,,,
নিশিতাঃ(ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে থেমে গেলাম,,,) খালুজান কোথায়,,,? উনি খেয়েছেন,,?
বর্ষণঃ বাবা আমার ফ্ল্যাটে আছে,,, আর খেয়ে নিয়েছে,,,, সকালে বাবা আসলে তুমি বাসায় গিয়ে রেস্ট নিয়ে নিয়ো,,,,
নিশিতাঃ ঠিক আছে,,,,,,(আমি ফ্রেশ হয়ে আসার পর উনি ফ্রেশ হতে গেলেন,,,, আমি খাবার সার্ভ করে শুরু করলাম,,,, ভাত,,,, চিংড়ি মাছের ভুনা,,, আর মুরগির মাংস,,,, দেখে বাসার রান্না মনে হচ্ছে,,, চিংড়ি মাছ,, ইলিশ মাছ,, গরুর মাংস আর বেগুনে আমার এলার্জি,,,, তবে চিংড়ি আবার ফেবারিট খাবার,,, তাই লোভ সামলাতে পারি না,,, যতবার চিংড়ি মাছ খাই সাথে মেডিসিন খেতে হয়,,, মেডিসিন খেলেও একটু কষ্ট করতেই হয় তবু খাই,,, কিন্তু এখানে মেডিসিন কই পাবো,,, থাক এটা নাহয় আজ না খাই,,, উনি হয়তো জানেন না আমার চিংড়ি মাছে এলার্জি,,,)
বর্ষণঃ কী ভাবছো,,,,?
নিশিতাঃ কিছু না,,, নিন শুরু করুন,,,, এগুলো তো হোটেলের খাবার মনে হচ্ছে না,,,, বাসায় কে রান্না করেছে,,,?
বর্ষণঃ একটা আন্টি আছে আমার বাসায়ই থাকে,,, উনি রান্না করেছেন,,,,, উনার রান্না অনেকটা মায়ের রান্নার মতোই লাগে,,,, উনাকে নিয়ে একটা কাহিনী আছে অন্য একদিন বলবো,,,
নিশিতাঃ ঠিক আছে,,,,
বর্ষণঃ চিংড়িটা স্পেশালি তোমার জন্য রান্না করতে বলেছি,,, তোমার তো অনেক পছন্দ চিংড়ি,,,,
নিশিতাঃ হ্যাঁ,,,, কিন্তু,,,,, (উনি কীভাবে জানলেন,,,?)
বর্ষণঃ এই নাও মেডিসিন আর তোমার ফোন,,,,,,
নিশিতাঃ(অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম,,, উনি কীভাবে জানলো আমার মেডিসিন লাগবে,,,, আর ফোন কোথায় পেলো,,,,?)
চলবে,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com