Breaking News

আবছা আলো । পর্ব -১১

নিশিতাঃ ফোন কোথায় পেলেন,,,?
বর্ষণঃ পরে যাওয়ার সময় ফোন মায়ের হাতেই ছিলো,,, সিঁড়িতে পরে ছিলো টুম্পা পেয়েছে,,, তোমাদের জিনিসপত্র আনার সময় টুম্পা দিয়েছে,,,
নিশিতাঃ ওহ্ ,,,,, কিন্তু আমি এই ফোন নিতে পারবো না,,,,
বর্ষণঃ কেনো,,, (অবাক হয়ে,,,)
নিশিতাঃ খালামুনি চান না তাই,,,,,
বর্ষণঃ আমি মাকে বুঝিয়ে বলে দিবো,,,, এখন ফোনটা ধরো,,,
নিশিতাঃ কিন্তু,,,,,
বর্ষণঃ আমি তো বললাম,,,, মাকে বুঝিয়ে বলবো,,,(কড়া গলায়)
নিশিতাঃ(এই ফোনের জন্য এতো কথা শুনলাম,,, এখন আবার এই ফোন কীভাবে নিবো আমি,,,? না না নিতে পারবো না আমি,,,, আমি নিজের হাত মোচড়াতে থাকলাম,,,)
বর্ষণঃ ঠিক আছে,,, আমি তোমার সামনেই মায়ের সাথে কথা বলবো,,, তারপর নাহয় নিয়ো,,,, এখন খাও,,,,
নিশিতাঃ(কোন কথা না বলে খাবার এগিয়ে দিলাম উনার দিকে,,,, আর নিজেও এক প্লেট নিলাম,,, উনি খেতে শুরু করলেন,,, আমি খাবার নাড়াচাড়া করছি শুধু,,,)
বর্ষণঃ কী হলো,,, খাচ্ছো না কেনো,,,?
নিশিতাঃ খ,,খাচ্ছি তো,,,(এক লুকমা খাবার মুখে দিলাম,,, সারাদিনে না খেয়ে থাকার জন্য এখন খাবার খেতে একদমই ইচ্ছে করছে না,,,,)
খালামুনিঃ পানি,,,,
নিশিতাঃ (তাড়াতাড়ি উঠে খালামুনিকে পানি দিলাম,,,,)
খালামুনিঃ (পানি খেয়ে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি নিশিতা,,,) তুই এখনো এখানে কী করছিস,,,?
নিশিতাঃ ম,,মানে,,,,
বর্ষণঃ ও না থাকলে এখন তোমাকে পানি কে দিতো,,,?
খালামুনিঃ তুই,,,,,(দুজনেই এখানে,,,)
বর্ষণঃ নিশিতার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম,,,, তোমার এখন কেমন লাগছে মা,,,?
খালামুনিঃ ভালো,,, তুই বাসায় যাবি না,,,
বর্ষণঃ নাহ্ ,,,,, নিশিতা একা কী করবে,,,? কোনো দরকার হলে,,,,তুমি বেশি সময় জেগে থেকো না,,, আবার মাথা ব্যাথা করতে পারে,,,, ঘুমিয়ে পড়ো তাড়াতাড়ি,,,
খালামুনিঃ হুম,,,,,
নিশিতাঃ(খালামুনি আমার দিকে কড়া নজরে তাকালেন,,,, একটু পরই খালামুনি ঘুমিয়ে পড়লো,,,) আপনি বাসায় চলে জান,,,, আমি একাই থাকতে পারবো,,,
বর্ষণঃ তোমার খাবার শেষ করো,,,
নিশিতাঃ আমি আর খাবো না,,,,
বর্ষণঃ যা বললাম তাই করো,,,(কড়া গলায়,,,)
নিশিতাঃ(চুপচাপ খাবার শেষ করলাম,,,)
বর্ষণঃ তুমি সোফায় শুয়ে পড়ো আমি মায়ের পাশে বসছি,,,,
নিশিতাঃ ঠিক আছে,,,, (সোফায় উঠে শুয়ে পড়লাম,,,,
শরীরটা অনেক ক্লান্ত লাগছে,,, প্রায় সাথে সাথেই চোখে ঘুম ভর করলো,,,)
বর্ষণঃ (মেয়েটা বড্ড ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো,,, সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়েছে,,,
ওর জীবন দেখে আমার সত্যি অদ্ভুত লাগে,,,, এমন কারো জীবন হয়,,,,,?
পাশে দাঁড়ানোর মতো মানুষ একটাও নেই কিন্তু কথা শোনানোর জন্য মানুষের অভাব নেই,,,,
কোথাও অধিকার খাটানোর জায়গা নেই,,,,। ওর বাবা কিন্তু গরীব ছিলেন না,,,,
আমার বাবার থেকেও ভালো অবস্থা ওর বাবার ছিলো,,,,
নিশির পুরো নাম নিশিতা দেওয়ান,,,,
ওর বাবা জিহাদ দেওয়ান ছিলো জাহাঙ্গীর দেওয়ানের একমাত্র ছেলে,,,,,
শুনেছি চার বোনের পর অনেক প্রার্থনার ফল ছিলো জিহাদ আঙ্কেল,,,,
গ্রামের চেয়ারম্যান ছিলো নিশির দাদা,,,,, আর জিহাদ আঙ্কেল অনেক ভালো একটা গভমেন্ট জব করতো,,,, সোহানা আন্টিকে (নিশির মা) দেখে নিজের পছন্দেই বিয়ে করেছিলো,,,,
আন্টিকে বেশী পছন্দ ছিলো না তার পরিবারের,,,, আন্টি যেদিন জানতে পারে সে প্রেগনেন্ট,,,,
সেই খবর শুনে বাড়ি ফিরার পথে আঙ্কেল এক্সিডেন্টে মারা যায়,,,,,
আর জন্মের আগেই নিশি পায় অপয়া উপাধি,,,,
এতবড় বাড়িতে আন্টির জায়গা হয়নি আঙ্কেল মারা যাওয়ার পর,,,,
আমাদের নানু বাসায় চলে আসে,,, এরপর যখন আন্টিও মারা যায় নিশিতাকে কেউ সয্য করতে পারে না,,,, সেদিন ছোট খালামুনি না থাকলে হয়তো কোন অনাথ আশ্রমে জায়গা হতো নিশির,,,,,
এসব আমি ছোট খালামুনির থেকেই শুনেছি,,,,
কারণ আমার বয়স তখন মাত্র পাঁচ বছর আর শ্রাবণের সাত বছর,,,,
যখন নিশির জন্ম হয়,,,, ওকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম একটা জীবন্ত পুতুল মনে হয়েছিলো,,,,
ইচ্ছে করছিলো নিজের কাছে রেখে দিই,,,, কিন্তু ভাগ্যে তো অন্যকিছু ছিলো,,,,)
নিশিতাঃ শ্রাবণ,,,,,,,
বর্ষণঃ(নিশিতার মুখে শ্রাবণ ডাক শুনে চমকে তারকা ওর দিকে,,, বেশি জোরে বলেনি কিন্তু রুম একদম নিস্তব্ধ থাকায় নামটা স্পষ্ট শুনতে পেলাম,,,, হঠাৎই নিশির গলাটা কেমন কান্না ভেজা হয়ে গেলো,,, কী বলছে শোনার জন্য মার পাশ থেকে উঠে নিশির সামনে ফ্লোরে বসে পড়লাম,,, শীত এখনো যায়নি,,, ফ্লোরটা অনেক ঠান্ডা,,, কিন্তু এখন এই ঠান্ডাটাও যেনো আমি অনুভব করতে পারছি না,,,,, এই ঘুমন্ত মুখের মায়াজালে আটকে গেছি আমি,,, এই জাল ভেদ করে বের হওয়ার সাধ্য আমার নেই,,,,)
নিশিতাঃ এই শ্রাবণ,,,,,,
বর্ষণঃ (নিশিতা হঠাৎ করেই আমার হাতটা আঁকড়ে ধরলো,,,, হয়তো শ্রাবন ভেবে,,, একবার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার ওর দিকে তাকালাম,,, আর ওর কথাগুলো শোনার চেষ্টা করছি)
নিশিতাঃ কী হলো কথা বলছো না কেনো,,,?
শ্রাবণঃ কী বলবো,,, কেমন আছিস,,, এটা জিজ্ঞেস করবো,,? কিন্তু এর উত্তর তো আমার জানাই আছে নিশু,,,, তুই ভালো নেই,,, একদম ভালো নেই,,, কিন্তু আমি ভালো আছি,,, অনেক ভালো আছি,,,
নিশিতাঃ সত্যি ভালো আছো,,,,?(ছলছল চোখে তাকালো শ্রাবণ,,, ভালো নেই ও)
শ্রাবণঃ তোর চোখের পানির কারণ হয়ে কীভাবে ভালো থাকি বল,,,,?
তোর চোখ থেকে ঝরা এক এক বিন্দু পানি আমার বুকে তীরের মতো বিঁধে,,,
যেদিন তোর ঠোঁটের কোণে হাসি থাকবে সেদিন আমিও ভালো থাকবো,,,,,
নিশিতাঃ(জোর করে হাসার চেষ্টা করলাম,,,)
শ্রাবণঃ তোর হাসির উৎস তোর আশেপাশেই আছে,,,, একটু কষ্ট করে খোঁজে নে,,,,,,
নিশিতাঃ (অবাক হয়ে তাকালাম শ্রাবণের দিকে,,,) আমার হাসির উৎস আমার আশেপাশে মানে,,,?
শ্রাবণঃ খোঁজে নে,,,,,,
নিশিতাঃ(শ্রাবণ একটা রহস্যময় হাঁসি দিয়ে আমার হাত ছাড়িয়ে কুয়াশায় মিলিয়ে গেলো,,,,,)
নিশিতাঃ শ্রাবণ,,,,, এই শ্রাবণ,,,, বলে যাও,,,,,
(উঠে বসে পড়লাম,,,, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি,,,
এটা আমার প্রতিদিনের রুটিন,,, প্রতি রাতে শ্রাবণ কোনো না কোনোভাবে আমার সামনে আছে,,,
আর কিছু রহস্যময় কথা বলে হারিয়ে যায়,,,,
একটু শান্ত হতেই অনুভব হলো আমি কারো হাত ধরে আছি শক্ত করে,,, শ্রাবণ,,,,?
ফট করে পাশে তাকালাম,,,,,বর্ষণ ভাইয়া,,,,,? তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দিলাম,,,,
উনি এখানে কী করছেন,,,? আর আমিই বা কখন এভাবে উনার হাত আঁকড়ে ধরলাম,,,,,?
ফ্লোরে বসে সোফায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে,,,,
খালামুনি এভাবে দুজনকে দেখলে কী হবে ভাবতে পারছি না,,,,
আমি তাড়াতাড়ি সোফা থেকে নেমে পা বাড়াতেই ওড়নায় টান লাগলো,,,
কী আঁটকে গেলো দেখার জন্য পিছনে ফিরতেই হকচকিয়ে উঠলাম অনেকটা,,,,)
বর্ষণঃ কই যাচ্ছো,,,?
নিশিতাঃ (কী বলবো এখন,,,? কিছু না বলে উনার হাতের দিকে তাকালাম,,,
যে হাতে আমার ওড়না ধরে আছে,,,)
বর্ষণঃ (নিশির চোখ অনুসরণ করে নিজের হাতের দিকে তাকালাম,,,
তাড়াতাড়ি ওর ওড়না ছেড়ে দিলাম,,, কী ভাবছে কে জানে,,?) স,,,সরি খেয়াল ছিলো না,,,,
নিশিতাঃ ইটস ওকে,,,,,
বর্ষণঃ কোথায় যাচ্ছিলে তুমি,,,,?
নিশিতাঃ ও,,,ওয়াশরুমে,,,(কিছু একটা বলা প্রয়োজন ছিলো)
বর্ষণঃ ওহ্ সরি,,,,,যাও,,,
নিশিতাঃ (আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম,,, শ্রাবণের বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছে,,,
শ্রাবণকে আমি কখনো ভালোবাসিনি,,,,
তবে শ্রাবণ আমার জীবনের অনেকটা জায়গা দখল করে আছে,,,
আমার জীবন একটা অধ্যায় শ্রাবণ,,, যে অধ্যায় বাদ দিয়ে আমার জীবন অসম্পূর্ণ,,,,)
নিশিতাঃ(খালামুনিকে কয়েকদিন হসপিটালে রাখার পর বাড়ি আনা হয়েছে,,,,
তবে ঠিক হতে সময় লাগবে,,,,
উনার সব দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমাকেই দিয়ে গেছে খালুজান আর বর্ষণ ভাইয়াও,,,
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খালামুনির সাথেই থাকতে হয়,,,,
খালামুনি এখন আমাকে এতো কথা শোনায় না,,,,
একটু চেঞ্জ হয়ে গেছে খালামুনি,,,,
নাকি তার খেয়াল রাখছি বলে কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছে সেটা আমার জানা নেই,,,
খালামুনির ব্রেকফাস্ট নিয়ে তার রুমে গেলাম) খালামুনি খাবারটা খেয়ে নাও,,,
তারপর আবার মেডিসিন আছে,,,
খালামুনিঃ তুই খেয়েছিস,,,,?
নিশিতাঃ(খালামুনির প্রশ্ন শোনে একটুও অবাক হলাম না,,,,
প্রথম যেদিন করেছিলো সেদিন একটু না,,, অনেকটা অবাক হয়েছিলাম,,,,
আর প্রশ্নটা করতেও খালামুনিকে যে নিজের সাথে কতটা যুদ্ধ করতে হয়েছে
সেটাও বুঝতে বাকি ছিলো না সেদিন,,, এখন প্রায় এই প্রশ্ন করে,,,)
তোমার খাওয়া শেষ হলে আমিও খেয়ে নিবো,,,,
খালামুনিঃ বর্ষণ কোথায়,,,,?
নিশিতাঃ ব্রেকফাস্ট করে একটু আগে অফিস গেছে,,,
খালামুনিঃ ওহ্ হ্যাঁ আমার সাথে তো দেখা করতে এসেছিলো,,,,
নিশিতাঃ খালামুনি আমার আজ একটু বাইরে যেতে হবে,,,,
(চোখ বুঁজে বলে ফেললাম,,, খালামুনি খানিকটা অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে,,,,
তবে তার উত্তর শুনে আমি তার থেকেও বেশি অবাক হয়ে গেলাম,,,,)
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com