Breaking News

মিঃ ডেভিল লাভার | হিয়া চৌধুরী । পর্ব -০১ এবং ০২

চেঞ্জিং রুমের ভেতর হুট করে একটা ছেলের আগমনে নীলিমা থ হয়ে যায়। রেগে যায় ছেলেটির চাহনি দেখে।
হা করে তাকিয়ে আছে, কি অসভ্য রে বাবা। দাঁতে দাঁত চেপে নীলিমা ছেলেটির কলার ধরে বাহিরে আসে।
ভাগ্যিস সে ভালো পজিশনে ছিলো নাহলে কি হতো বুঝতে তার আর বাকি নেই।
সাফওয়ান কিছুই বলছে না। সে কোনো ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।
নীলিমার রাগ আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়।
—“এই যে মিস্টার ইডিয়েট। চোখ কি বাসার আলমারি তে সাজিয়ে রেখে এসেছেন নাকি?
এভাবে স্টুপিডের মতো হুট করে চেঞ্জিং রুমে ঢুকে যাওয়ার মানে কি?”
সাফওয়ান রেসপন্স করছে না। নীলিমা তার মুখের উপর তুড়ি মেরে বললো,
—“হ্যালোওওও। মেয়ে দেখলে হুস থাকে না তাই না?!”
সাফওয়ানের ঘোর কেটে যায়। জোড়ে ভ্রুঁ কুঁচকে নীলিমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—“মেয়ে দেখলে হুস থাকতো কিন্তু আমি তো অন্য কিছু দেখছি!”
—“আমি নিতান্তই খুব-ই সুন্দরী সেটা আমি জানি!তাই বলে হাতির মতো চোখ গুলা দিয়ে, যেমন করে জলহস্তীর মতো, তাকিয়ে ছিলেন মনে হচ্ছিল রাক্ষুসের মতো, গিলেই খেয়ে ফেলবেন।”
মানুষের আবার হাতির মতো চোখ ও হয়? তার পর সেই চোখ দিয়ে জলহস্তীর মতো তাকানো? আর সেই তাকানো থেকে রাক্ষুসের মতো গিলে ফেলা? লাইক সিরিয়াসলি? হাউ ইস পসিবল….? সাফওয়ানের মাথায় এই ৩ সমীকরণ গন্ডগোল বাঁধিয়ে দিয়েছে। এই গন্ডগোল দূরে ঠেলে সাফওয়ান নীলিমা কে আরো রাগানোর জন্য বললো….
—“সাক্ষচুন্নির মতো দেখতে চেহারা, সে নাকি আসছে নিতান্তই সুন্দরী হাহা!”
—“কিহ! আমাকে সাক্ষচুন্নি বলা! এতো বড় সাহস!”
—“আমি জন্মগত সাহসী!”[ভাব নিয়ে]
রেগে আগুন হয়ে গেছে নীলিমা। সাফওয়ানের এই মুহূর্তে বিকট শব্দে হাসতে মন চাচ্ছে। জোড় করে হাসি চাপিয়ে রেখেছে। রাগের ফলে নাক ভীষণ লাল হয়ে আছে নীলিমার, যেনো একটা লাল টমেটো। নাহ অবস্থা বেগতিক! এটা সাফওয়ান বেশ ভালোই বুঝতে পারছে!
—“চোখ বাসার আলমারি তে রেখে আসতে যাচ্ছি”
সাফওয়ান দ্রুত চলে যায়। নীলিমার চেঁচামেচি শুনে সায়মা এগিয়ে আসে। সে এসে কাউকে দেখলো না।
—“কিরে নীলিমা কি হলো?”
—“ওই বেয়াদব ছেলেটা…
—“কোন ছেলে?”
—“পালিয়েছে!”
—“মানে?”
নীলিমা একটু আগের ঘটনার সায়েমা কে বলতেই সায়মা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় নীলিমা!
—“তুই তোর সেই স্পেশাল ডায়লগ শুনিয়ে বেচারা কে অজ্ঞান করে দিতি একটু হলে..এটা বুঝতে পেরেই হয়তো সে ভেগেছে!”
—“সাক্ষচু্ন্নি তুই হাসছিস? আর উনি যে হুট করে ঢুকে পড়লো সেটা দেখছিস না?”
—“আরে উনি মনে হয় খেয়াল করে নি!”
—“ও আচ্ছা এখন ওর হয়ে সাফাই গাইছিস! মনে তো হচ্ছে তুই ই পাঠিয়েছিস!”
—“আরে বাবা আমার কাউকে অজ্ঞান করার কোনো ইচ্ছে নেই! জানের মায়া সকলের আছে!”
—“ডায়নী তোকেই এখন উষ্ঠা মেরে মঙ্গলে পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে! তুই না নিয়ে আসলে আমি এখানে আসতাম না!”
—“তোর পায়ে এতো শক্তি? তাহলে বিজ্ঞানী রা কেন শুধু শুধু এতো কষ্ট করছে? দোস্ত তোর পায়ের শক্তি খুলে আমার পায়ে লাগিয়ে দে, আমি তোকে মঙ্গলে পাঠাবো, তুই ওখানে খানাপিনা আছে কিনা দেখে আসিস তারপর নাহয় আমি যাবো! জানিস ই তো আমি খাবার না খেয়ে থাকতে পারি না।”
—“রাক্ষুসী মুটকি সর্বক্ষণ শুধুই খানাপিনা!”[রেগে]
অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে সায়মার দিকে তাকিয়ে আছে নীলিমা। সায়মা কাচুমাচু হয়ে বললো,
—“আচ্ছা সরি। রাগিস না!”
—“মঙ্গলে তো আমি ওই স্টুপিড টাকেই পাঠাবো। বাই চান্স একবার বাগে পাই হুহ! আমাকে সাক্ষচুন্নি বলেছে না? সাক্ষচুন্নি কাকে বলে কত প্রকার উদাহরণ সহ বুঝিয়ে দিবো!”
সায়মা হা করে তাকিয়ে আছে। নীলিমা এটা খেয়াল করলো,
—“যেভাবে হা করে আছিস মশার ১৪ গোষ্ঠী তোর পেটের ভেতর সফর করে চলে আসতে পারবে!”
সায়মার মুখের মানচিত্র বাংলা পাঁচের মতো হয়ে গেলো!
সায়মার মুখের অবস্থা দেখে নীলিমা হো হো করে হাসতে থাকে। সায়মা রেগে যায়।
— সময় আমার ও আসবে দেখিস!
— তাহলে টাকা দে!
— কিসের?
— তোর সময় দেখবো সেই টাকা। জানিস ওই তো আমি টাকা ছাড়া কোনো কাজ করি না!
সায়মার ফোন টা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রীনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মেঘলা ই কল করেছে। সায়মা দ্রুত কল রিসিভ করলো!
— হ্যাঁ আপু বলো!
— কোথায় তুই? সেই কখন বেরিয়েছিস আসার নাম গন্ধ ও নেই! এদিকে মামনি টেনশন করছে!
— এইতো আমরা শপিংমলে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো! মামনি কে টেনশন করতে নিষেধ করো!
— নীলিমা আছে তোর সাথে?
— হু!
— যাক অবশেষে রাজি করাতে পারলি তবে। আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়! আমি ফোন রাখছি!
— আচ্ছা।
সায়মা ফোন টা কেটে নীলিমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
— আপু ফোন দিয়েছে তাড়াতাড়ি যেতে বললো। আর কি কোনো কাজ বাকি আছে?
— না!
— তাহলে চল!
— হুম!
আফিকের কল পেয়ে আতঁকে উঠলো মেঘলা। কেন জানি আফিকের কথা মনে পড়লে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়। যার সাথে দুদিন পর বিয়ে তাকেই কেন এতো ভয় পায় কিছুই বুঝতে পারছে না নীলিমা। এটা ভয় নাকি লজ্জা সঠিক জানা নেই। কল টা বাজতে বাজতেই কেটে গেলো। আফিকের মন আনচান করছে। এই মুহূর্তে তার নীলিমা কে দেখতে ভীষণ মন চাচ্ছে। কিন্তু দেখবে কিভাবে কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না! কল দিচ্ছে তুলছে ও না! হালকা রাগ ও লাগছে। কিছুক্ষণ পর যদি তার হারামি বন্ধু রা চলে আসে কথা ও বলতে পারবে না। তার উপর নাকি আজ সাফওয়ানের ও আসার কথা! এই ছেলে কিছু বুঝতে পারলে ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ছাড়বে। তাই ওর সামনে খুব সাবধানে থাকতে হবে। এক প্রকার ভয়ে আছে আফিক। আবার কল দিলো। এবার মেঘলা ফোন টা তুললো,
— আসসালামু ওয়ালাইকুম!
— ওয়ালাইকুম আসসালাম!
দুপাশে নিরবতা যদি ও আফিকের ইচ্ছা ছিলো বকা দিতে কিন্তু কেন যেনো সেটা পারছে না। হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে মেঘলা কে। তাই অল্পতেই অভিমান হয়! আফিক নিরবতা কাটিয়ে বলে উঠলো,
— কি করছেন?
— প্রেম!
— কার সাথে?
— আছে একজন!
— কে সে?
— আপনাকে বলবো কেন? আচ্ছা বলেই দিই উনার নাম আফিক মাহবুব!
আফিক ভেবেছিলো উল্টা পাল্টা কিছু কিন্তু তার নাম শুনে হেসে ফেললো।
— ও আচ্ছা। আমি ও প্রেম করবো ভাবছি!
— করেন আমার কি!
— আপনার কিছু না?
— না!
— আচ্ছা তাহলে রাখছি!
— এইই না না আমার অনেক কিছু!
নীলিমা আর সায়মা মেঘলার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের প্রেমালাপ শুনে মিটিমিটি হাসছে। নীলিমা হাসি চেপে রাখতে না পেরে খিলখিল করে হাসতে শুরু করে। মেঘলা ভয় পেয়ে ফোন টা হাত থেকে দোলনায় পড়ে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বললো,
— তোরা এখানে!
— কি ব্যাপার আপু ডিস্টার্ব করলাম না তো?
— না মানে…কি ডিস্টার্ব করবে?
— কার সাথে কথা বলছিলে?
— ওই আমার ফ্রেন্ড একজনের সাথে।
— দাও আমি ও কথা বলি প্রেম করবো![সায়মার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়!]
— না![হায় আল্লাহ কি বজ্জাত মেয়ে রে বাবা!]মনে মনে
মেঘলা ফোন টা কেটে দেয়! মেঘলা গাল ফুলিয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। নীলিমা দুষ্টুমি করে বললো,
— তুমি আসতে বলেছিলে বলেই তো এসেছি। ঠিক আছে গাল ফুলিয়ে আছো যখন চলে যাচ্ছি!
— না না।
মেঘলা এক গাল হেসে মেঘলা কে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি সুরে বললো,
— বোনের বিয়েতে এসে চলে যাবি এটা কখনো হয়? তুই না আসলে তো আমি ভেবেছিলাম বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো![ডাহা মিথ্যা কথা]
— কিহ!
— হু!
— আর ওইদিকে ভাইয়া কান্না করতো। আমাকে উরাধুরা কেলানি দিতো বলতো তোমার জন্যই আমি আমার বউ কে পাই নি! থাক বাবা দরকার নেই।
নীলিমার কথা শুনে মেঘলা হাসলো। এই মেয়েটা খুব দুষ্টু। সায়মা মুখ গোমড়া করে বললো,
— ও আচ্ছা এখন ও তোমার বোন হয়ে গেছে আমি কিছু না! ভালো!
— আমি কখন বলেছি তুই কিছু না?
— বুঝি বুঝি!
— গাঁধি তুই কিছু বুঝিস না। বুঝলে তো আর মুখ গোমড়া করতি না তুই তো শাকচুন্নী! গাছের উপর উঠে পা দুলাতি!
— তোকে আমি!!!
— থাক থাক আমাকে আর ধন্যবাদ দিতে হবে না!
মেঘলা দুইজনের দিকে তাকিয়ে দেখলো বেহাল অবস্থা।
— থাম থাম আর ঝগড়া করা লাগবে না! তোরা দুইজন ই আমার বোন হয়েছে?
— আমি আগে সায়মা পরে!
— নাহ আমি আগে তুই পরে!
— না আমি আগে!!!
দুইজনের ঝগড়া দেখে মেঘলার বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম। একে তো আফিক কি ভাবছে সেই টেনশন তার উপর দুইজনের ঝগড়া!
এদিকে আফিক ওইপাশ থেকে সব শুনে হাসছে। আফিক কে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে সাফওয়ান এসে বললো,
— বাহ প্রেমে সাগরে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছেন দেখি মিস্টার আফিক সাহেব!
চোখের সামনে হঠাৎ ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো আফিক। চুপসে গেছে একদম। যে ভয়টা পাচ্ছিলো সে সেটাই হয়েছে।
কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়!
— তুই কখন আসলি সাফওয়ান?
— এই তো এখন! প্রেম করছিলে করো!
— আমি তোর বড় হই। বড়দের সামনে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?
— কয় বছরের বড়?
— ১
— ১০/১২ বছর হলে ভেবে দেখতাম!
— কিইই
— জ্বি! এখন বলো আড়শি কোথায়?
— দেখ আছে কোথাও!
আড়শি সাফওয়ান কে দেখে দৌড়ে আসে।
— ভাইয়া তুমি আসছো! হুররে কি মজা!
— আমি না আসলে হতো নাকি!
— ঠিক বলছো ভাইয়া!
আফিক আর ফোনে মেঘলা কে পাচ্ছে না। সারাদিন ব্যস্ততায় কাটলো। সাফওয়ান খেয়াল করলো আফিক কিছু নিয়ে টেনশনে আছে। আফিকের কাছে এসে বসলো!
— কিছু নিয়ে টেনশনে আছো?
— হ্যাঁ…না!
— আমতা আমতা না করে সোজাসুজি বলো তো!
— কই কিছু না তো!
— বলো তো!
— আসলে ওকে দেখতে মন চাচ্ছে!
সাফওয়ান চোখ বড় বড় করে আফিকের দিকে তাকিয়ে আছে।
আফিক অসহায় দৃষ্টিতে নিয়ে সাফওয়ানের দিকে!
আফিক অবাক হয়ে গেলো সাফওয়ান রাজি হয়েছে দেখে।
সাফওয়ান কে সাথে নিয়ে মেঘলাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আফিক।
মেঘলাদের বাড়ির সামনে এসে ফোন দিলো।
সব কিছু থেকে ফ্রি হয়ে ফোন হাতে নিতেই মেঘলা থ হয়ে যায়।
এত্তো গুলা কল! তখনি আফিকের ফোন আসে।
রিসিভ করে মেঘলা কে কিছু বলতে না দিয়ে আফিক বলে উঠলো,
— কোনো কিছু শুনতে চাই না এক্ষুনি নিচে আসো।
— নিচে মানে? আপনি কো….
আফিক কল কেটে দিয়েছে। বারান্দায় গিয়ে দেখলো গেটের ওপাশে বাইক রাখা।
আর দুটি ছেলে দাঁড়ানো।। হার্টবিট বেড়ে গেছে আফিকের কথা শুনে। ঘামতে শুরু করেছে হঠাৎ করে।
মাথায় ভালো ভেবে ওড়না টেনে দিলো মেঘলা। নীলিমা চোখ কুঁচকে তাকায়।
মেঘলার মতিগতি ঠিক লাগছে না।
— আপু কোনো সমস্যা?
— কককই নাতো।
— কোথাও যাচ্ছ?
— হুম ড্রয়িংরুমে মামনি ডাকছে!
— ও আচ্ছা।
ডাহা একটা মিথ্যা কথা বলে গুটিগুটি পায়ে নিচে নামে মেঘলা।
গেটের বাহিরে আফিক।
নীলিমার ফোনে নেটওয়ার্ক নেই। বারান্দায় আসতেই দেখে গেটের দিকে কারা যেনো আছে।
সায়মা কে সাথে নিয়ে গেটের কাছে আসতেই পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পারলো।
সাফওয়ানের চোখ হঠাৎ করে নীলিমার দিকে যায়। নীলিমা কেউ দেখে ফেলেছে ভেবে দ্রুত সরে পড়ে।
তাড়াহুড়ো করে চলে যায় সায়মা সহ। সায়মা আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না।
সাফওয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে সেদিকে আবার ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলো কেউ নেই।
আনমনে কি যেনো ভেবে হাসলো সে!
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com