Breaking News

তুমিময় নেশা । ৮ এবং শেষ পর্ব

মিহির মুখে কোনো কথা নেই। সালিফ মিহির সামনে এসে দাঁড়ালো। মিহি ভেবেছিলো সে সালিফের কথা ভেবেছে তাই মনে ভুল কিন্তু এখন দেখে না সত্যিই সালিফ তার সামনে দাঁড়ানো। হকচকিয়ে উঠে সে।

—আপনি এখানে এতো রাতে কিভাবে?
সালিফ ভুপ করে আছে,
—কি হলো কথা বলছেন না কেন?
—তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো মিহি! তাই এসেছি!
—আপনার কথা পরে শুনবো প্লিজ এখন এখান থেকে যান পরে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে। প্লিজ যান!
—পরে বলার হলে পরেই আসতাম আমার কথাটা এখনি বলতে হবে! আর তোমার ও এখন শুনতে হবে!

—আমার মুড নেই প্লিজ!
—কেন?
—এমনি!
—তোমার বিয়ে আমাকে বলো নি কেন?
—ককই না তো!
—মিথ্যা বলো না।
—আপনি না কি কথা বলবেন হ্যাঁ বলেন!
—কথা কাটানোর চেষ্টা করো না!
—আরে…

—চুপ। বিয়ের মানে কি বলো! নয়তো আমি নিচে আংকেল আন্টির কাছে যাচ্ছি উনাদের থেকেই জেনে নিবো নাহয়!
— নাআআ।
—তাহলে বলো!
মিহি চোখ বন্ধ করে শক্তি সঞ্চয় করলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
—হ্যাঁ আমার বিয়ে!
—ভুল জানো!
—মানে?
—এই বিয়ে হবে না!
—বুঝলাম না ঠিক!
—হঠাৎ বিয়ের উদ্দেশ্য কি?

—তা জেনে আপনি কি করবেন?
—কিছু করবো কি করবো না সেটা পরে আগে বলো!
মিহির রাগ লাগছে। তাও চুপটি মেরে আছে। রাগ লাগার ই কথা তার জন্যই তো এমন হয়েছে।
—কি হলো বলছো না কেন?
—আপনার জন্যই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এটাই কি শুনতে চান?
—মানে?
—সেদিন কেন নিয়ে গিয়েছিলেন ফুফুর বাড়ি থেকে? বাবা মা সব জানতে পেরে গেছে। তাই বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে!

চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল মিহি। সালিফ স্তব্ধ হয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবে মিহির এই কান্নার পেছনে কারণ কি? বাবা মা কে ছেড়ে যাবে সে জন্য?এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সেজন্য? নাকি অন্য কোনো কারণ!
—কান্না করছো কেন?
—তাতে আপনার কি?

—আমার অনেক কিছু। আমি তোমাকে ভালোবাসি মিহি!
মিহি নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে। সেও সালিফ কে ভালোবাসে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারে নি। এখন সব শেষ হয়ে গেছে। তার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
—ভালোবাসি খুব ভালোবাসি। তুমি আমার ছাড়া আর কারো নও। আমার শহরে তুমিময় নেশা বিরাজমান। এই নেশা ছাড়া আমি এক মুর্হূত ও থাকতে পারবো না! তুমি আমাকে ভালোবাসো?
মিহি ঢুকরে কেঁদে উঠে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে!
—বলো তুমি কি আমায় ভালোবাসো না?
—না বাসি না!

—আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো!
মিহি জানে সে পারবে না। আচমকা সালিফের কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে থাকে। সালিফের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে তার অজান্তেই। উত্তর পেয়ে গেছে সালিফ। কাঁদতে কাঁদতে সালিফের শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে। সালিফ কিছু বলছে না। আলতো করে মিহির চোখের পানি মুছে দিলো!
—কান্না করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে!
—কিছু ঠিক হবে না সালিফ!

—আমার তো ভালোবাসো না তাহলে ওই রোহান কেই বিয়ে করে নাও বেস্ট অফ লাক!
সালিফ চলে যেতে নিতেই মিহি পেছন থেকে বলে উঠলো,
—আমি আপনাকে ভালোবাসি!
সালিফের ঠোঁটে বাঁকা হাসি। সালিফ মিহির কাছে এসে দাঁড়ায়!
—আর যেনো কাঁদতে না দেখি। আর হ্যাঁ সকালের জন্য তৈরি হয়ে থেকো!
—সালিফ ওওওরা!

—চুপ কোনো কথা নয়। এখন রেস্ট নাও জাস্ট চিললল! সকালে দেখা যাবে সব কিছু!
সালিফ কে যতক্ষণ দেখা গেলো মিহি এক নজরে সেদিকে তাকিয়ে রইলো পলকহীন ভাবে! কিছু মাথায় ঢুকছে না কি হবে কে জানে!
এদিকে সালিফ চলে যাওয়ার
সময় মিহির মা সব দেখে ফেলেছে। রুমে এসে মেয়ের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন!
—তোর এতো বড় সাহস কি করে হয় মিহি? তুই তো বলেছিলি ওই ছেলের সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই তাহলে ওই ছেলে বাসায় আসার সাহস কিভাবে পায়! আজ থেকে তুই আর এই ঘর থেকে বের হতে পারবি না!

—মা শোনো….
তিনি শুনলেন না সোজা দরজা বন্ধ করে দিলেন। মিহির বাবা রাগি মানুষ তাকে কিছুতেই এইসব বলা যাবে না। তাই তিনি নিজের মধ্যেই সব টা রেখে দিলেন। যাওয়ার সময় মিহির ফোন ও নিয়ে গেলেন। মিহি কাঁদছে। এবার কি হবে!
—এটা কি করলেন আপনি সালিফ!
মিহির মা বাবা চান না তাদের মেয়ে উশৃঙ্খল হোক। কোনো ছেলের সাথে মিশুক এসব তাদের ভীষণ অপছন্দ। মিহি সেটাই করেছে। সালিফের সম্পর্কে তারা না জানলে ও এখন সালিফ তাদের কাছে খারাপ।

পরের দিন…….
মিহির ফোন ও বন্ধ। সালিফ বার বার ট্রাই করছে কিন্তু সেই একি কথা। ব্যাপার খানা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না। রাইসা কে পাঠালো মিহির কাছে। মিহির মায়ের মুখ ভার। তিনি সন্দেহ জনক দৃষ্টিতে রাইসা কে দেখলেন! কিছু একটা ভেবে রাইসা কে মিহির ঘরে পাঠান। এক রাতেই মিহি অনেক টা চুপচাপ হয়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে একাকার। রাইসা কে আসতে দেখে মিহি অবাক হয় নি। মিহির মা চোখে চোখে রাখছে তাদের। রাইসা ইমারজেন্সি নোটের কথা বলে মিহির খাতায় লিখে শুরু করে। মিহির মায়ের সন্দেহ কেটে গেলো। বিশ্বাস করলেন সত্যি ই নোটের জন্য এসেছে।
মিহির খাতায় লিখে পড়ে থ হয়ে যায়। সে জানে তার মা কিছুতেই তাকে বেরোতে দিবে না। রাইসা নাস্তা শেষে ভয়ে ভয়ে বললো,

—আন্টি আমি মিহি কে নিয়ে একটু ভার্সিটি তে যেতে চাচ্ছিলাম।
—নাহ মিহি যাবে না!
—আন্টি আমি শুনলাম মিহির বিয়ে। সামনে এক্সাম!
—তো?
—আসলে আন্টি ওর একটা সিগনেচার লাগবে!
রোহানের বাবা মা বলেছিলেন মিহি কে বিয়ের পরেও পড়াবেন। রাইসা এমন ভাবে বুঝালো যে সিগনেচার টা না দিলে সব ভন্ডুল হয়ে যাবে। তিনি মেয়ে কে বাহিরে যেতে দিতে রাজি হলেন!
—রাইসা মা তুমি এগো মিহি আসছে!
—জি!

মিহি চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে! তার মা কড়া ঝাঝালো কন্ঠে বললেন,
—এমন কিছু করবি না যাতে আমাদের নাক কাটা যায়। যদি করিস ভুলে যাবি আমরা তোর বাবা মা! মনে রাখিস আমরা তোর কাছে মৃত হবো!
—ছিঃ মা এসব কি বলছো! আমি এমন কিছু কখনো করবো না বিশ্বাস রাখো!
———————
দুপুর গড়িয়ে বিকেল,আর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। মিহির বাবা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মিহির মায়ের বুঝতে বাকি নেই তার মেয়ে কি ঘটিয়েছে। লজ্জায় মুখ লুকাতে ব্যস্ত।
সালিফ এক দৃষ্টিতে মিহির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এবার মিহি কে ডাকতে বাধ্য হলো!

—মিহি উঠো!
—হ.. হ্যাঁ সালিফ আমরা বিয়ে করবো না?
সালিফ হেসে ফেললো। আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় যা ভেবেছে তাই বলছে। আজ সারাটা দিন সে সালিফের সাথে ছিলো। রাতে ঘুমাতে পারে নি তাই গাড়িতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো।
—তোমার বাড়িতে এসে গেছি যাও!
—মানে?
—কি মানে?
—আমাদের বিয়ের কথা ছিলো তো সেটা?
—তুমি ভাবলে কি করে বাবা মায়ের অমতে আমরা বিয়ে করবো? আমি এতোটাও খারাপ নই! বিয়ে যেহুতু করবোই সো বাবা মায়ের মতেই করবো। বাড়ি যাও!উনারা হয়তো এতক্ষনে ভেবেই নিয়েছে তুমি পালিয়েছো! ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আসো! আর হাসি দুঃখিত হবা না কিন্তু বলে দিলাম! নয়তো আমি যা ভেবে রেখেছি তা হবে না!

মিহি অসহায় দৃষ্টিতে সালিফের দিকে তাকিয়ে আছে। সালিফ মুচকি হেসে চলে যায়। ধীর পায়ে বাড়ির ভেতরে পা রাখে মিহি। মিহির বাবা মা দুজন ই এগিয়ে আসেন! দুজনের ই এত্তো গুলো প্রশ্ন। মিহি চুপচাপ শুনে অতঃপর সাহস করে বললো,

—মা বাবা তোমরা মনে করে ছিলে আমি পালিয়েছে! ভুল! ভালোবাসা তো ভুল বা অন্যায় নয় তাই না! আমি সালিফ কে ভালোবাসি। সে চাইলে আজকে আমরা পালিয়ে বিয়ে করতে পারতাম! তাহলে কি আমরা সুখী হতাম তোমাদের অসুখী করে? সালিফ বলে গেছে বিয়ে করলে তোমাদের সবার মতেই করবে নাহলে করবে না! এবার তোমরা যদি মনে করো আমি রোহান কে বিয়ে করলে সুখী হবো ঠিক আছে আমি তোমাদের কথামতো রোহান কেই বিয়ে করবো!

মিহি চলে গেলো। মিহির বাবা মা মেয়ের মুখে এত্তো বড় কথা গুলো শুনে ঠিক কি রিয়েক্ট করবেন নিজে রাও জানেন না। মেয়েটা তাদের তবে বড়ই হয়েছে। তাদের মত পাল্টে গেলো!
আজ ও রাতে আর ঘুম হলো না মিহির।সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে সালিফ কে দেখে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলো। সালিফ মিহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সালিফের বাবা মা মিহি কে দেখে বলে উঠলেন,

—মাশাআল্লাহ আমার ছেলের পছন্দের প্রশংসা করতেই হয়! এখন শুধু বিয়ে টা হয়ে গেলেই আমরা আমাদের বউ মা কে ঘরে নিয়ে যেতে পারি কি বলেন বেয়াই বেয়ান সাহেবা?
মিহি লজ্জায় পড়ে যায়। স্বপ্ন ভেবে ভুল করলেন এখন বাস্তব দেখে পুরাই টাষ্কিত। সালিফ কে মিহির সাথে নিয়ে যেতে বললেন মিহির মা। উনারা কথা বলবেন। সালিফ মিহির পেছন পেছন ছাঁদে আসলো।
উন্মুক্ত আকাশ। কোনো মেঘ নেই পরিষ্কার সচ্ছ। রোদ ও আছে তবে নরম। মিহির মুখে কথা নেই। কিভাবে এসব হলো সে সেটাই ভাবছে! সালিফ মিহির হাতের উপর নিজের হাত আলতো করে ছোঁয়ালো। মিহি কিছুটা কেঁপে উঠে। সালিফ হাসলো!

—কিভাবে কি হয়েছে জিঙ্গেস করো না। শুধু বলো কতোটা ভালোবাসো!
—এতো টা!
—ওইটা আবার কি?
—আপনি ই তো জিঙ্গেস করলেন কতোটা তাই আমি ও বললাম এতো টা হিসাব সমান সমান!
— উহুঁম হিসেবে গোলমাল আছে!
—কোথায়?
—এই যে তুমি আমাকে আপনি আপনি করছো। আপনি আপনি করে আমার না পর লাগে! মনে হয় তুমি আমাকে ভালোবাসো না!
—বাসি তো!
—কিভাবে বুঝবো? বুঝিয়ে বলো!
—কি করে?

—এই যে “সালিফ আমি তোমাকে ভালোবাসি।” এটা বলে! বুঝাও!
মিহির লজ্জা লাগছে। তুমি করে বলার অভ্যাস নেই; বলতে ও পারছে না বারবার আটকে যাচ্ছে! মিহি বলতে পারছে না দেখে সালিফ অভিমানী সুরে বললো,
—বুঝেছি যা বুঝার আমি নিচে গিয়ে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিচ্ছি!
—নাআ!
—না কী?

—সা.সালিফ..আ.আমি.তোমাকে ভালোবাসি!
লজ্জায় মুখ ঢেকে এক নিশ্বাসে বলে ফেললো। সালিফ দুষ্টুমি করে বলে উঠলো,
—কি বললে শুনতে পাই নি আবার বলো
মিহি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো! সালিফের সেই একটা ভাব! কি করবে বুঝতে না পেরে আবার বললো,
—আমি তোমাকে ভালোবাসি সালিফ!
এতো আস্তে বললে কেউ শুনতে পায়! মিহির এবার রাগ লাগছে। নির্ঘাত সে দুষ্টুমি করছে!
—আমার বলো!

—আমি তোমাকে ভালোবাসি এন্ড খুন করবো!
—হাহাহা তোমার ভালোবাসায় অনেক আগেই খুন হয়েছি। কারণ আমি ও যে তোমাকে খুব ভালোবাসি রানী! একটা কথা বলবো?
—কি?

—আমি না সব ই শুনেছি। শুধু এক্টিং করলাম আরো কয়েক বার শোনার জন্য।
সালিফ হো হো করে হাসছে। মিহি রেগে নাক ফুলিয়ে আছে। সালিফ মিহির কাছে এসে বললো,
—রাগলে তোমাকে আরো বেশি কিউট দেখায়। আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি!
মিহি চুপ। সালিফের বুকে মাথা রেখে কি যেনো অনুভব করতে চাচ্ছে। হয়তো বা সেটা ভালোবাসা নামক শব্দটির মূল অর্থ। বেঁচে থাকুক ভালোবাসা।
ওদের মাঝখানে কাবাবে হাড্ডি হয়ে থাকার কি দরকার? গল্প শেষ যান বাড়ি যান!

<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com