Breaking News

লেডি কুইন । পর্ব -২১

মেহেরাব শুভ্র কে বললো
-আমি একটু আসছি?
-কই যাবি।
-একটু পাশেই।
কথাটা বলে মেহেরাব বেরিয়ে গেলো। আশফা হৃদয় শুভ্র নেহা অবাক হয়ে গেলো।
আরোহী বললো ফুটেজ টা দেখেই
-স্টপ স্টপ স্টপ।
কুহু বলে উঠলো
-ও এখানে কি করছে।
-ঐ ছেলেটার সাথে যে কথা বলছে সে কে?
-ওনি তো ওয়ার্ড বয়। ডিউটিতে ছিলো।
-ওনাকে ডাকুন তো।
মেহেরাব একটা বেডে ঢুকে পড়লো। হৃদয় তা লক্ষ্য করলো। হৃদয় বললো
-মেহেরাব অন্য বেডে ঢুকলো কেন?
-চল তো দেখি?
-হ্যা চল দেখি।
শুভ্ররা বের হলো।
আরোহীর কথা অনুযায়ী লোকটাকে ডাকা হলো। লোকটাকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে
-এই ছেলেটার আপনাকে কি বলছিলো?
-ও ঐ ছেলে। ছেলেটা অনেক ভালো। একজন রোগী নিয়ে আসছিলো আর্জেন্ট সব ব্যবস্থা তো ঐ করলো। কেন কিছু হয়েছে।
-ও কি আমাকে আনছিলো
-আপনাকে আনবে কেন? আপনার কি ডেলিভারি হয়েছে নাকি?
-আচ্ছা আপনি আসতে পারেন।
আরোহী কুহুর দিকে তাকিয়ে পড়লো। কুহু বলে উঠলো
-মেহেরাব আবার কোন মহিলাকে আনতে গেলো।
-আনতেই পারে। তবে একটা রহস্য রয়েই গেলো।
মেহেরাব বেডে থাকা রোগীর সাথে কথা বলছে। মেহেরাব বললো
-আপনার আর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো।
-না ভাই। কে তুমি আমার এই বিপদে এভাবে পাশে দাড়ালে।
-ধরে নিন আপনার ছোট ভাই। আপনার হাসবেন্ড কি আসছে। আপনার মা বাবা কোথায়?
-তারা ওষুধ আনতে বাইরে গেছে। হাসবেন্ড আসতাছে।
-হোয়াইট ওষুধ আনতে তারা বাইরে যাবে কেন? নার্স নার্স
নার্স বেডে ঢুকলো
-কোনো সমস্যা
-হ্যা। তার লোকজন বাইরে কেন গেলো ওষুধ আনতে৷ কি বলা হয়েছিলো।
-আমরা তো কিছুই জানি না। এই যে ওনার ওষুধ পত্র আমরা সব এনে রেখেছি।
-তাহলে এ কথা তাদের বলতে হয় না।
-সরি।
-আপনার ওষুধ আনলে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে বলেন।
-ভাই টাকা পয়সার সমস্যা হবে তো। হাসপাতালের ওষুধ বেড ভাড়া এত টাকা তো আমরা দিতে পারবো না।
-টাকা পয়সার কোনো চিন্তা করতে হবে না। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। নিচিন্তে থাকুন।
মেহেরাব কথা বলে বেড়িয়ে গেলো। আরোহীর বেডের দিকে গেলো। এতক্ষণে আরোহী চলে আসছে। শুভ্ররা কথা বলছে। মেহেরাব বেডের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আরোহীর দিকে উঁকি মারছে৷ আরোহীর চোখ মেহেরাবের উপর পড়লো। সবাই পিছনে তাকালো। সাইড হয়ে গেলো। শুভ্র আশফা নেহা হৃদয় মেহেরাবকে অন্যচোখে দেখছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে। মেহেরাব ওদের এমন তাকানো দেখে অবাক হয়ে গেলো। আরোহী বলে উঠলো
-কি হিরো যার ডেলিভারি হলো তার বেবিসহ সে কেমন আছে।
আরোহীর কথা শুনে মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব দাঁড়িয়ে যেয়ে ভাবতে লাগে
-আরোহী কিভাবে জানলো। ওকে কি কেউ কিছু বলছে।
আরোহী বলে উঠলো
-এত ভাবতে হবে না। আমি সিসিটিভি ফুটেজ এ সব দেখেছি। কিন্তু একটা কথা মাথায় আসছে না।
-কি?
-আমাকে যে আনলো তার কোনো ফুটেশ নেই ভ্যানিশ হয়ে গেলো।
মেহেরাব চুপ হয়ে গেলো। আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে । এর ভেতর ডাক্তার ঢুকলো সাথে নার্স। ডাক্তার মেহেরাবকে দেখে
-আরে তুমি এখানে। পেশেন্ট কি তোমার কিছু হয়?
-হ্যা।
-ওহ। শোনো আর কোনো সমস্যা নেই সবকিছু নরমাল আছে এখন।
-জ্বী ধন্যবাদ আপনাকে।
-আরে এটা তো আমাদের কর্তব্য ধন্যবাদ তো তোমাকে দেওয়া উচিত ।
মেহেরাব ডাক্তারের দিকে চেয়ে পড়লো আরোহী বলে উঠলো
-হ্যা। হিরোকে তো সবারই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কতজন আছে অসহায়দের পাশে দাঁড়ায়।
-তা ঠিক বলেছো। আর লেডি কুইন যদি তার কিছু হয় তার কি আর ভয় থাকে নাকি।
আরোহী হেসে দিলো৷
শুভ্র আশফা হৃদয় নেহা খুব চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। ডাক্তার আরোহীকে চেকআপ করে দেখলো।
-তোমাকে আরো দুদিন থাকতে হবে৷
-কেন?
-এখনো এক ব্যাগ রক্ত লাগবে।
-বাসায় বসে দিলে হবে না।
-হুম হবে।
-আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
-ওকে।
আরোহীকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাচ্ছে। আরোহীর গাড়ির পিছনে অনেকগুলো গাড়ি সামনে ও গাড়ি।
শুভ্র আশফাকে বললো
-মেহেরাব এতগুলো টাকা কই পেলো।
-হ্যা আমার ও একই কথা কথা। ও টাকা কই পাবে।
নেহা হৃদয়কে বললো
-তোমার বন্ধুর বাবা কৃষক না।
-হ্যা কেন?
-ও দেখছো কি পড়ে হাসপাতালে সব বিল পরিশোধ কিভাবে করলো।
-ঠিকি বলছো। কিভাবে ও টাকা কই পেলো।
আশফা বললো
-ও তো চলে ক্ষ্যাত হয়ে। কখনো তো ভালো পোশাক পড়েনি। ওর কাছে টাকা আসবে কিভাবে৷
-আমাদের একটু খোজ নিয়ে দেখতে হবে।-আমরা মেহেরাবের গ্রামে যাওয়ার কথা বলবো।
-হ্যা। তা ভালোই হবে।
মর্জিনা খান কুহুর নাম্বারে কল দেয়। কুহু কল রিসিভ করে আরোহীকে দেয়। মর্জিনা বেগম বলে উঠে
-কে ছিলো? শুধু নামটা বল।
-তার আর দরকার নেই মাম্মি ও হয়তো বেচে নেই।
-কি বলছিস। আমার লোকেরা কি তবে?
-তোমার লোকেরা কেউ ছিলো না। আমাদের উপরে হয়তো আর কেউ আছে।
-কি বলছিস কি তুই?
-হ্যা মাম্মি। তুমি একটু খোঁজ নিয়ে দেখো।
মর্জিনা খান কলটা কেটে দিয়ে আশরাফ চৌধুরী কে কল দেয়। আশরাফ চৌধুরী ফোনটা ধরে
-আমার কথা তবে কি মনে পড়ছে।
-রাখো তোমার রসিকতা। আরোহীর ব্যাপারটা শুনেছো।
-হ্যা। আরোহী সেভ আছে তো। ওকে পাওয়া যায় নি
-হ্যা গেছে পাওয়া। কিন্তু আমাদের লোকেরা তো আরোহীকে উদ্ধার করেনি। অন্য কেউ।
আশরাফ চৌধুরী অবাক হয়ে
-অন্যকেউ মানে। কে করে ওকে উদ্ধার? আমাদের লোকেরা ছাড়া আর কে আছে?
-শোনো তোমার ছেলেকে নিয়ে দেশে এসো। আমি খুব তাড়াতাড়ি ওদের বিয়ে দিবো। আমার মেয়েটার উপর আর কোনো প্রভাব পড়তে দিবো না।
-ঠিক আছে। আমার ব্যবসার ঝামেলা শেষ করে আমি খুব শীগ্রই আসছি। ততোদিন আরোহীকে আমার গার্ডসরা দেখে নিবে৷
-তোমার গার্ডস কই থেকে আসবে।
-আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ফোনটা কেটে গেলো। আশরাফ চৌধুরী ফোনটা বের করে নীলকে কল দিলো। অনেকবার রিং দেওয়ার পর নীল ফোনটা তুললো আশরাফ চৌধুরী বলে উঠলো
-তোর এই বদঅভ্যাসটা বদলাসনি এখনি। ভিডিও কল এ আয়
-ড্যাড আমি তো কিছু দিন পর আসছি এখন আর ভিডিও কল কেন?
-তুই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন? তুই সত্যি করে বল তো কই আসিছ।
-ড্যাড তুমি কি অন্য দেশের নাম্বারে কল দিছো।
-না ঠিকি তো আছে।
-তাহলে আমি আর থাকবো কই।
-তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
-ওয়াও। কি ড্যাড বলে দাও।
-এখন আর না ২০ দিন পর আমরা বাংলাদেশে ব্যাক করছি।
-ওমা কেন? ড্যাড। তোমার প্রাক্তন কে খুজতে।
-তা আর লাগবে না পেয়ে গেছি তাকে। তোর একটা ব্যবস্থা করবো।
-ড্যাড প্লিজ।
-আর কোনো বাহানা না। রাখছি।
আশরাফ চৌধুরী ফোনটা কেটে দিলো। নীল হেসে উঠলো।
দুইদিন পর আরোহী সুস্থ হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সাথে আশরাফ চৌধুরীর গার্ডস৷ এই কদিন যেভাবে শত্রুরা পিছনে লেগে আছে। আরোহীর এভাবে গার্ডস নিয়ে চলতে বিরক্ত ফিল করছে। আরোহীর গাড়ি ভার্সিটির ভেতরে ঢুকছে মেহেরাব ও ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকছে। মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। একটু ভয় ও পেয়ে গেলো। আরোহী গাড়ি থেকে নেমে মেহেরাবকে ডাক দেয়। মেহেরাব এগিয়ে যায় আরোহীর পিছনে গার্ডসরা নামে। গার্ডসদের মাথা নিচু হয়ে গেলো। মুহুর্তের ভেতর বসে পড়লো। আরোহী অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আরোহী ওদের জিঙ্গেস করলো
-আপনারা কেন বসে পড়লেন।
-আমাদের রুলস্ আমরা পালন করছি।
-ওহ ঠিক আছে। বসতে হবে না। আপনারা উঠুন।
সবাই উঠে দাঁড়ালো। আরোহী মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে
-তুই ওদের দিকে ঐভাবে তাকিয়ে আঙ্গুল নাড়াচ্ছিস কেন?
-কারা ওনারা। আমার জানে তো পানি নেই।
-আমার গার্ডস। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
মেহেরাব আরোহীকে বললো
-কেমন আছেন?
-খারাপ থাকলে তো আর ভার্সিটিতে আসতাম না।
এর ভেতর হৃদয় নেহা এসে
-মেহেরাব কাল থেকে তো ভার্সিটি অফ ভাবছি তোদের গ্রামে বেড়াতে যাবো।
মেহেরাব নেহার কথা শুনে ঢোক গিলে
-আমার গ্রামে কেন?
হৃদয় বললো
-বন্ধের ক দিন ঘুরে আসবো।
-কিন্তু
শুভ্র মেহেরাবকে থামিয়ে দিয়ে
-কোনো কিন্তু না । আমরা যাচ্ছি। তোর অসুবিধা থাকলে তোর বাসার ঠিকানা বল আমরা চলে যাবো।
-আরে বোঝার চেষ্টা কর। তোদের নিয়ে কি খাওয়াবো৷ ভালো কোনো খাবার তো খাওয়াতে পারবো না।
-তা নিয়ে তোর চিন্তা করা লাগবে না। আমরা গাড়ি নিয়ে আগামিকাল রওনা হচ্ছি।
আরোহী বলে উঠলো
-তোরা সবাই যাবি আমি কি করবো।
-তুই ও গেলে চল।
-ঠিক আছে।
-কাল দশ টায় আমরা যাচ্ছি তবে গ্রামে।
মেহেরাবের মুখটা কালো হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবছে আমার মানইজ্জত সব শেষ হয়ে যাবে। ওদের তো আমি ঠিক মতো যত্ন করতে পারবো না।
শুভ্র বলে উঠলো
-এত চিন্তা করিস না। আমরা সব ব্যবস্থা করে নিবো। আজকে আর ক্লাস করবো না। চল বাসায় মা ভূনা খেঁচুরি রান্না করছে।
আরোহী বলে উঠলো
-সত্যি নাকি।
-হুম।
-ওকে আমরা ও যাবো।
-ঠিক আছে চল সবাই।
গাড়ি নিয়ে সবাই চলে গেলো শুভ্রদের বাসায়। মেহেরাবকে দেখে শুভ্রের মা খুব খুশি। চোখের কোণে পানি। মেহেরাব সামনে দাঁড়াতে মেহেরাবে মাথায় হাত ভূলিয়ে
-আমার ছেলেটাকে কত বছর পর দেখছি।
শুভ্রর মার চোখ আরোহীর উপর গেলো। মেহেরাবকে সরিয়ে দিয়ে আরোহীকে বুকে টেনে নিয়ে
-তুমি আরোহী লেডি কুইন।
আরোহী অবাক হয়ে
-হ্যা
-তোমার ভাগ্যটা অনেক ভালো। বেচে থাকো মা।
শুভ্র আশফা পুরোই থ। আশফাকে কখনো এভাবে ধরেনি। আরোহী কথাটা শুনে হা হয়ে গেলো। শুভ্র বললো
-মা সবাই খেতে এসেছে। খেতে দাও। আর হ্যা আমরা আগামিকাল সবাই মেহেরাবের গ্রামে যাচ্ছি।
শুভ্রের মা এটা শুনে শুভ্রের হাত টেনে নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে
-যাওয়ার দরকার নেই?
-কেন? কি হয়েছে।
-গ্রামটা ভালো না। আর ওখানে যেয়ে কি খাবি।
-যায় হোক আমরা যাচ্ছি। তুমি আটকাবা না। ওরা এসেছে খেতে দাও।
শুভ্রের মা সবাইকে খেতে দিলো। মেহেরাবের পাশে বসে একটা প্লেট এ খাবার নিয়ে মেহেরাবকে খাইয়ে দিচ্ছে। আরোহী তাকিয়ে পড়লো আরোহীর আঙ্গুল খাবারের প্লেট এর উপর চলছে । মেহেরাব উঠে দাঁড়ালো। সবাই তাকিয়ে পড়লো। শুভ্রের মা ও উঠে দাড়ালো। মেহেরাবের চেয়ারে যেয়ে বসলো। আরোহীর দিকে ফিরে আরোহীর মুখের কাছে খাবার ধরলো আরোহী অবাক হয়ে গেলো শুভ্রের মা বললো
-নে মা খা তো দেখি। চেয়ে আছিস কেন ?
আরোহীর চোখের কোণে পানি চলে এসেছে কিছু না বলে মুখে খাবার নিলো।
আশফা শুভ্রের পাশে শুভ্রকে গুটো মেরে
-মেহেরাবকে বেশি ভালোবাসে তোমার মা।
-হ্যা। আমাকে ঠিক যতটা ভালোবাসে ততোটাই ভালোবাসে।
-হ্যা হারানো ছেলেকে কাছে পেয়েছি কতবছর পর।
-হুম।
সবাই খাওয়া শেষ করলো। মেহেরাব শুভ্রের বাসায় থেকে গেলো।
পরেরদিন সবাই ১০ টার ভেতর শুভ্রদের বাসার সামনে আসলো। সবাই এক সাথে গাড়িতে করে রওনা হলো গ্রামের উদ্দেশ্যে। বিকাল ৫ টায় গ্রামের রাস্তায় গাড়ি গুলো ঢুকলো৷ চারপাশ প্রকৃতির দৃশ্য ফুটে উঠেছে৷ গাড়ির গ্লাস গুলো নামিয়ে দিয়ে সবাই প্রকৃতি ফিল করছে। গাড়ি কিছুদূর যেতে না যেতেই ব্রেক কষলো। সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো। সামনে লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে গ্রামের লোকজন। সবাই গাড়ির দিকে তেড়ে আসলো
চলবে..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com