Breaking News

গল্পঃ ভাবির অহংকারী বোন । পর্ব - ১৫



সাদিয়াঃ মানে..? ওইটা শাকিব..? (অবাক হয়ে)

সাগরঃ হ্যাঁ ওটাই শাকিব। তোর বিশ্বাস না হলে কিছুই করার নেই।
সাদিয়া আর কোন কথা না বলে ওর বান্ধবীদের কাছে ফিরে যায়
এই দিকে আমি বাসায় এসে নিজের রুমে চলে এলাম..। আজ অনেকদিন পর আবার সাদিয়াকে দেখতে পেলাম। হয়তো এখন থেকে প্রতিদিনই দেখা হবে।
দেখা হলে বা কি। ও থাকবে ওর মত আর আমি আমার মতো। এসব ভেবে আমার এখন আর কোন কাজ নেই, শুধু শুধু সময় নষ্ট করা...
আমি ফোনটা নিয়ে মিথিলাকে ফোন দেই
আমিঃ কিরে কোথায় তুই?
মিথিলাঃ আমিতো বাসায়, কেন..?
আমিঃ কিছু না। আজ কলেজে আসলি না কেন?
মিথিলাঃ আমি আজকেই যেতে চেয়েছিলাম, আব্বু বলল কাল থেকে যেতে তাই আরকি...
আমিঃ আমি আজ গিয়েছিলাম এবং ভর্তি হয়ে এসেছি।
মিথিলাঃ আমি কাল থেকে যাব।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে একসাথে যাব।
বিকালের দিকে....
বাসায় একা একা ভালো লাগছেনা কিছুক্ষণ বসে টিভি দেখলাম। এখন ভাবীর সাথে তেমন একটা কথা বলতে ইচ্ছা করে না।
রুমে এসে ফোনে গেম খেলতে খেলতে হঠাৎ সাগরের ফোন এল.. কি আর করার বাইরে থেকেই না হয় ঘুরে আসি....
সারা বিকাল ওদের সাথে ঘুরে, আড্ডা দিয়ে সময় পার হয়ে গেল।
সন্ধ্যায় বাসায় এসে..
পড়তে বসেছিলাম। সেদিনের রাতটা পার করে...
সকালের উঠে নাস্তা করে কলেজের দিকে রওনা দিলাম আর মিথিলাকে ফোন দিয়ে আসতে বললাম।
আমি কলেজে পৌছানর কিছুক্ষণের মধ্যেই মিথিলা চলে আসলো।
আমি, সাগর, রাহাত আর মিথিলা একসাথে বসে আছি
সাগরঃ কিরে মিথিলা তোর প্রাণের বান্ধবীর কি অবস্থা..?
মিথিলাঃ কে আমার প্রাণের বান্ধবী ..?
সাগরঃ কেন, সাদিয়া...
মিথিলাঃ ওর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।
সাগরঃ কেনরে আগে তো ওকে ছাড়া কিছুই বুঝতি না সব সময় ওর পিছে পিছে ঘুরতি এখন আবার কি হলো..?
মিথিলাঃ তুই জানিস না কি হয়েছে..?
সাগরঃ হ্যাঁ..
মিথিলাঃ তাহলে আবার বলছিস কেন...
সাগরঃ এমনি ইচ্ছা হল তাই...
মিথিলাঃ ওর কথা আর আমার সামনে বলবি না,,
রাহাতঃ এসব কথা বাদ দে এখন, আর তোর ঢাকায় কেমন কাটলো..?
মিথিলাঃ ভালোই কেটেছে...
আমরা কয়েকজন বসে কথা বলতে বলতে..
হঠাৎ দেখি সাদিয়া আর ওর বান্ধবীরা আমাদের এদিকে আসছে...
দূর থেকেই সাদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও একবার খেয়াল করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম...
মিথিলাঃ শাকিব, ঐ যে সাদিয়া আসছে।
আমিঃ আসছে দে। আর এখানে আসলে চুপচাপ বসে থাকবি কোন কথা বলবি না। ভয় নেই কোন...
আমরা আমাদের মতো কথা বলছি সাথিয়া আমাদের কাছে এসেই...
সাদিয়াঃ কিরে এতদিন কোথায় ছিলি...
মিথিলাঃ ঢাকায় ছিলাম কাকুদের বাসায।
সাদিয়াঃ কেন..?
মিথিলাঃ ঘুরতে...
সাদিয়াঃ ঘুরতে গিয়েছিলিস নাকি আমাকে ভয় পেয়ে চলে গিয়েছিলি।
মিথিলাঃ তোকে ভয় পাওয়ার কি আছে..?
সাদিয়াঃ তোর সাথে একটু কথা আছে এদিকে আয়।
মিথিলাঃ আমার তোর সাথে কোন কথা নেই,,
সাদিয়াঃ কিন্তু আমার আছে।
মিথিলাঃ যা বলার এখানেই বল,,
সাদিয়াঃ তোকে আসতে বলেছি....
আমিঃ মিথিলা কোথাও যাবেনা..
সাদিয়া আমার কথার কোন উত্তর দিলো না শুধু মুখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিল।
মায়াঃ তুই তাহলে শাকিব...?
আমিঃ হ্যাঁ...
মায়াঃ সাদিয়া ঠিকই বলেছিল তুই বদলে গেছিস....
আমিঃ তো...
মায়াঃ তো কিছু না... মিথিলা এদিকে আয় কথা আছে।
আমিঃ মিথিলা কোথাও যাবে না, এত জরুরী হলে এখানেই বল আর না হলে যা..
মায়া ও সেই একই কাহিনী করল আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মিথিলার দিকে তাকালো।
আমিঃ চল আমরা ক্লাসে যাবো...
সাগরঃ চল এখানে ভালো লাগছে না
আমরা ওখান থেকে উঠে চলে আসলাম সাদিয়া আর ওর বান্ধবীরা বেকুব ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
থাক তাতে আমাদের কি আমরা ক্লাসে এসে সবাই একসাথে বসলাম।
একসাথে বলতে পাশাপাশি
আমি আবার ফিরে আসাতে কলেজের স্যার ম্যাডামরা অনেক খুশি হয়েছে। যদিও তারা আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসতো। কিন্তু তখন তো কালো ছিলাম তবুও তারা আমায় অনেক ভালবাসত সেটা আপনাদের আগেই বলেছি।
ক্লাসে স্যার এসে ক্লাস নিতে শুরু করে দিলো।
একে একে সবগুলো ক্লাস গুলো চলছে। প্রতিটা ক্লাস ই মন দিয়ে করছি। মাঝে মাঝে সাদিয়া দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখে চোখ পরতে আবার চোখ সরিয়ে নেই।
যাইহোক সবগুলো ক্লাস করে আমরা সবাই একসাথে বাইরে বের হলাম।
সাগরঃ এখন কি বাসায় চলে যাবি নাকি..?
আমিঃ তাহলে আর কোথায় যাবো..?
সাগরঃ মানে যদি কোথাও ঘুরতে যাস তাই বললাম...
আমিঃ না এখন আর কোথাও যাব না, সামনে পরীক্ষা সেইভাবেই প্রিপারেশন নিতে হবে। আর এখন একটু ঘোরাঘুরি কম করে করতে হবে।
সাগরঃ হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস।
আমিঃ তাহলে সবাই বাসায় চলে যা..
সাগরঃ তুই কোথায় যাবি..?
আমিঃ বাসায় যাবো...
সাগরঃ এমন ভাবে বলছিস যেনো, আমরা চলে গেলে তুই কোথা্ও যাবি...
আমিঃ আরে না...
আমরা যে যার মত বাসার দিকে রওনা দিলাম। এর মাঝে সাদিয়া কে আর দেখতে পাইনি। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে দিলাম এক ঘুম।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপরে একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করে করেছি...
ভাবিঃ পড়তে বসছিস..?
আমিঃ হুমম, ভিতরে আসো।
ভাবিঃ তোর থেকে একটা কথা জানতে এলাম...
আমিঃ হ্যাঁ বলো।
ভাবিঃ সাদিয়া আজকে কিছু করেছে নাকি..
আমিঃ না তেমন কিছু করেনি, তবে আমি না থাকলে হয়তো মিথিলাকে কিছু বলতো।
ভাবিঃ ওকে নিয়ে আব্বু-আম্মু একটু চিন্তায় আছে।
আমিঃ কেন..?
ভাবীঃ দেখিসনা কিভাবে চলাফেরা করে, সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়েছে। ওকে এতবার করে বলা হয়েছে যে বাজে লোকদের সাথে মিশবিনা তাও একটা কথা শোনে না।
আমিঃ(ওর কানের ছিদ্র থাকলে তো শুনবে। মনে মনে বললাম)
ভাবিঃ আর হ্যাঁ তোকে আর একটা কথা বলার ছিল,,,
আমিঃ কি...?
ভাবিঃ সাদিয়া তোর সাথে ওরকম বাজে একটা কাজ করার পরেও এখানে এসে ক্ষমা চেয়েছিল। সবাই ক্ষমা করলেও আম্মু কিছুতেই ওকে সহ্য করতে পারছে না। এখনো সাদিয়ার সাথে কথা বলেনা।
আমিঃ তো আমি এখন কি করতে পারি..? আম্মুর মনে চাইনি তাই কথা বলে না।
ভাবিঃ সেটা তো আছেই, কিন্তু আম্মু বলেছিল তুই যদি ভাল ভাবে বাসায় ফিরে আসিস তাহলেই শুধু ওর সাথে কথা বলবে। এখন তো তুই চলে এসেছিস তুই যদি আম্মুকে একটু বলিস তাহলে....
আমিঃ তুমি পাগল হয়েছ ওই মেয়ের জন্য আমি আম্মুর কাছে সাফাই গাইবো...?
ভাবিঃ আমি জানি যে ও অনেক বড় অপরাধ করেছে, শুধু আমি না সবাই জানে এটা। যাই করুক ওতো আমার বোন। ছোট থেকে ওকে মানুষ করেছি ওর সাথে থেকেছি। বিশ্বাস কর এতটাও খারাপ না। বাজে লোকের সাথে মিশে আজ এরকম পরিণতি।
আমিঃ তা আমাকে কি করতে হবে..?
ভাবিঃ তেমন কিছু না, ও তো আমার বোন আমাকেও তো ওকে দেখতে ইচ্ছা হয়..
আমিঃ দেখতে ইচ্ছা হলে বাসায় গিয়ে কিছুদিন থেকে আসো।
ভাবিঃ সেটা তো পারি কিন্তু, ও এখানে এসে থাকতে চাই না শুধু আম্মুর জন্য। তুই যদি আম্মুকে বলে দিস ওকে ক্ষমা করতে। তাহলে একটু আমাদের এখানে এসে থাকতে পারতো।
আমিঃ ওর মতো মেয়ে এখানে না আসাই ভাল। শুধু শুধু ঝামেলা বাড়ানো...
ভাবী কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল। হয়তো আমার এমন কথায় কষ্ট পেয়েছে।
কষ্ট পাবারই কথা নিজের বোনকে বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা আর শ্বশুর বাড়িতে এনে আদর যত্ন করা অনেক পার্থক্য।
ভাবির আব্বু-আম্মু যে কোন সময় আসতে পারে না আর ভাবি ও তার ইচ্ছামত যেতে পারে না। তারও তো সবাইকে দেখতে মন চায়।
যাইহোক দেখি আম্মুকে বলে।
তবে সাদিয়ার সাথে বোঝাপড়া করবো আমি।
কিন্তু আমার জন্য আমার পরিবারের মধ্যে তো কোন ঝামেলা সৃষ্টি হতে দিতে পারিনা।
আমি রুম থেকে বেরিয়ে ভাবীর রুমের কাছে যেতেই অনেকটা চমকে উঠলাম।
ভাবীর রুমের মধ্যে কান্না করছে হয়তো একটু বেশি কষ্ট পেয়েছে। অনেক আশা নিয়ে এসেছিল আমার কাছে।
আমি ভাবীর রুমে ঢুকতে গিয়ে কেমন করে গেলাম না। আমি সোজা আম্মুর কাছে চলে এলাম এসে আম্মুকে অনেক বোঝালাম কিন্তু কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছে না। আবার ওদিকে ভাবিও মন খারাপ করে আছে কি করি এখন..?
শেষমেষ আম্মুকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি..
তারপর ভাবীর রুমে এসে ভাবিকে বিষয়টা বললাম কথাটা শুনে ভাবী হয়তো একটু স্বস্তি পেয়েছে...
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে কলেজে এলাম। রাহাত আগেই এসেছিল আর সাগর কে ফোন দিতেই ও চলে আসলো মিথিলাও এসে পড়েছে।
সবাই একসাথে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছি..
কলেজে এসে একটা জিনিস খেয়াল করলাম আজ সাদিয়াকে কোথাও দেখতে পেলাম না...
ওর বান্ধবীদের মধ্যে শুধু রিয়া কে দেখতে পেলাম।।
হয়তো সাদিয়া কোথাও গিয়েছে তাই আসতে পারেনি। যাইহোক কলেজের সময় হয়ে যাওয়াতে আমরা সবাই ক্লাসে চলে গেলাম।
ক্লাসে স্যার চলে আসলো ক্লাস শুরুর ঠিক 15 মিনিট হবে হয়তো..
তখন সাদিয়া কোথা থেকে যেন দৌড়ে ক্লাস রুমের সামনে এল..
মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসেছে।
কিছু হয়েছে নাকি....?
দেড়ি হয়ে গেলো...

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com