Breaking News

লেডি কুইন । পর্ব ২২

আশফা বলে উঠলো
-কারা এনারা। কি হবে এখন
-পলানোর ও তো কোনো রাস্তা নেই।
আরোহীর গার্ডসগুলো নেমে পড়লো৷
হৃদয় বললো
-এরকম ঝামেলা হবে আগে জানলে তো কখনোই আসতাম না।
-হাসপাতালের বেড রেডি করতে বল ফোন দিয়ে ।
মেহেরাব গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো৷ সবার তেড়ে আসা থেমে গেলো। থমকে দাড়ালো সবাই৷ সবাই হা করে তাকিয়ে আছে মেহেরাবের দিকে। আশফা বলে উঠলো
-কি ব্যাপার সবাই থেমে গেলো কেন?
-বুঝতে পারছি না।
আরোহী বলে উঠলো
-মেহেরাব কি গ্রামের বড় কোনো জমিদারের ছেলে।
নেহা বলে উঠলো
-তাই তো মনে হচ্ছে। ওর বাবা কৃষক হলে মেহেরাবকে দেখে থমকে গেলো কেন?
-কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
জামাল বলে উঠলো
-এই লাঠিসোঁটা ফেলা৷ মেহেরাব এসেছে গ্রামে। সবাইকে খবর দে।
মেহেরাব সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। জামালের সামনে দাঁড়িয়ে
-চাচা কি হয়েছে। তোমরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ছুটছো কই।
-তুই না নামলে তো আমরা তোর উপর হামলা করতাম।
মেহেরাব অবাক হয়ে
-কেন?
-ঐ যে মধু বংশ আমাদের জমি আত্মসাৎ করে রেখেছে। শহর থেকে গুন্ডা আনিয়ে আমাদের শাশিয়ে গেছে। আমাদের সবাইকে মারবে বলে হুমকি দিয়েছে৷
-কবে থেকে করছে এসব।
-১মাস হতে যাচ্ছে।
-আমাকে ফোন করে জানাও নি কেন?
জামাল চাচা মাথা নিচু করে
-ওরা তোকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। যদি তোকে জানায় তাহলে আমাদের মারবে সাথে তোকে ও মেরে ফেলবে।
আরোহী গাড়ি থেকে নেমে মেহেরাবের পিছনে দাঁড়িয়ে
-কি হয়েছে?
-তেমন কিছু না।
-কারা এসেছে
-আমার বন্ধুরা। আর ওরা কোনো গুন্ডা না। গার্ডস।
-তোরা এসেছিস কত ভালো লাগছে। এই ওদের নিয়ে যা তোরা।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। মেহেরাব সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাইকে নিয়ে চলে গেলো। জামাল আর মেহেরাব থেকে গেলো। মেহেরাব বললো
-চাচা তুমি ওদের একটু ভালোভাবে যত্ন করো । আমি আসছি।
-কই যাবি।
-মধু বংশের বাসা থেকে ঘুরে আসি।
-তোর যেতে হবে না। চল আমাদের সাথে।
-চাচা তুমি কি ভয় পাচ্ছো।
-তোর একা যাওয়াটা কি ঠিক হবে। ওরা যদি তোর কিছু
মেহেরাব জামাল চাচাকে থামিয়ে দিয়ে
-চাচা তোমাদের ভালোবাসা আর দোয়া তো আমার সাথে আছেই কিছু হবে না।
-ঠিক সাবধানে যাস।
মেহেরাব চলে গেলো। জামাল চাচা ওদের সাথে যুক্ত হলো। আরোহী বললো
-মেহেরাব কই গেলো চাচা।
-ও একটু পর আসছে। পাশেই গেছে৷
শুভ্র বলে উঠলো
-আমাদের এনে ও একা কেন গেলো। আমাদের সাথে নিয়ে যেতো।
-আরে না। ও বিলে গেছে ধানগুলো দেখেই চলে আসবে। রফিকের সাথে গেছে।
-আমরা ও যেতাম।
-তোমরা এসেছো হাতমুখ ধুয়েমুছে বিশ্রাম করো পরেরদিন পুরো গ্রাম ঘুরে দেখো।
নেহা বলে উঠলো
-আপনারা মেহেরাবকে দেখে থেমে গেলেন কেন?
-আসলে আমরা মনে করেছি শহর থেকে গুন্ডারা এসেছে। কিন্তু মেহেরাব আসছে এটা দেখে থেমে গেছি।
আরোহী অবাক হয়ে
-গুন্ডারা আসবে মানে
-মধু বংশরা আমাদের উৎখাত করে দিতে চায়। আমাদের জমিতে ফ্যাক্টরি করবে।
কুহু বললো
-এই যাত্রায় বেঁচে গেছি। মেহেরাব না আসলে তো আমাদের আর ফেরা হতো না।
-তা ঠিক। আমাদের ধারণা ভূলে।
জামাল চাচা ওদের নিয়ে একটা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলছে। আশফা বলে উঠলো
-এটা কি মেহেরাবদের বাসা।
-হ্যা।
-ওর বাবা কোথায়?
-গতকাল তার গ্রামের বাড়িতে গেছে ধান কাটতে। ধান কাটা হলেই চলে আসবে।
-ঘরটা তো ছোট। আমাদের কি হবে।
জামাল চাচা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে
-ভেতরো এসো বুঝবে।
সবাই ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলো।
মেহেরাব মধুবংশের বাড়ির গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। মেহেরাবকে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো। মধুবংশের কানে খবর গেলো। মেহেরাব এসেছে। মেহেরাব ভেতরে ঢুকলে মেহেরাবকে একজন চেয়ার এনে দিলো মেহেরাব চেয়ারে বসলো। মধুবংশ উপর থেকে নিচে নামলো। মেহেরাব এক পা হাটুর উপর দিয়ে মধুবংশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। মধু বংশ নামছে আর বলছে
-আরে মেহেরাব। কখন আসলি। এসেই যখন পড়েছিস ভালোই করেছিস৷
মেহেরাব মুচকি হাসছে। মধু বংশ চেয়ারে বসছে আর বলছে
-এখন আর কারো প্রাণ যাবে না৷ তুই একটু ওদেরকে বুঝিয়ে বলিস।
-আপনি নাকি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।
-হ্যা। কি করবো বল। ওরা তো তোর সাহসেই এক জোট হয়েছে। ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলাম।
-ও আচ্ছা। তাহলে আপনি ওদের পেটে লাঠি কেন মারছেন। সবাইকে মারার ও হুমকি দিয়েছেন।
-জায়গা না ছাড়লে তো মরতে হবেই। তুই তো আমাকে ভালো করেই চিনিস।
মেহেরাব উঠে দাঁড়িয়ে
-আমার শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে পারলে ওদের কিছু করে দেখিয়েন।
-আরে উত্তজিত হচ্ছো কেন? বসো। এই নিয়ে আয়।
একজন একটা ব্যাগ এনে ছোট টেবিলের উপর রাখলো। ব্যাগের চেইন খুলে দিলো। মধু বংশ টাকাগুলো দেখিয়ে
-পুরো এক কোটি আছে। এটা নিয়ে ওদের দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ো । আর তোকে আমি আলাদা ৫০ লাখ দিয়ে দিবো।
-টাকা দিয়ে কিনতে চান আমাকে। এটা আপনার কাছে রেখে দেন। আমি ও দেখবো আপনি কিভাবে ওদের থেকে জমি নেন।
মেহেরাব উঠে দাড়ায়
আশফা বলে উঠলো ওয়াও বাইরে থেকে ছোট মনে হলে ও ভেতরে তো অনেক বড়। মাঝখানে উঠান। দুপাশে ঘর। বাসাটা কাঠের তৈরি। জামাল ওদেরকে দু তলায় নিয়ে যায়। সবাই বেশ অবাক। ভেতরটা সুন্দর করেই সাজসজ্জায় ভরা। গ্রামে এমন বাড়ি যেনো স্বপ্নের বাড়ি৷ জামাল চাচা বলে উঠলো
-পছন্দ হয়েছে তো। তোমাদের মতো অট্টালিকা সিমেন্ট কংক্রিটের বাড়ি আমাদের গড়া সম্ভব না।
শুভ্র বলে উঠলো
-আরে চাচা কি বলছেন ঐসব বাড়ির থেকে এমন বাড়িতে থাকতে মন চায়। এত সুন্দর বাংলোর মতো বাসা।
-হ্যা চাচা শুভ্র ঠিকি কথা বলেছে। বাসাটা খুব পছন্দ হয়েছে।
সবাইকে রুম দেখিয়ে দিলো। লাইট জ্বালিয়ে নিলো। চোখ ধাঁধানোর মতো রুম। লাইটের আলোয় এতটা সুন্দর লাগছে চোখ যেনো পড়েই না।
জামাল চাচা সবাইকে বললো
-তোমরা হাতমুখ ধুয়ে নিচে এসো খাবারের ব্যবস্থা করছি।
জামাল চাচা চলে গেলো।
মধুবংশ উঠে দাঁড়িয়ে
-আরে কই যাবি তুই। তোকে তো মামা শশুরের বাড়িতে যেতে হবে। ভালোভাবেই বলছিলাম এখন তুই মরবি।
-আচ্ছা। তাই নাকি। তা কই সেই মামা যে নিয়ে যাবে।
-পিছনে তাকিয়ে দেখ দাঁড়িয়ে আছি। সাপের গর্তে ঢুকে পড়েছিস।
-আরে দারোগা সাহেব যে। আপনার মুখে এমন কথা ব্যাপারটা কেমন না।
দারোগা এসে মেহেরাবের কলার ধরে
-ব্যাপারটা তোকে থানায় নিয়ে যেয়ে বোঝাবো। মধুবংশ আপনার আর চিন্তা নেই এমন কেস দিবো জেলে বসেই পচে মরবে।
মধুবংশ হেসে উঠলো জোড়ে
-বাচ্চা ছেলে। থেরাপিটা সুন্দর মতো দিয়েো। উঠে দাঁড়াতে না পারে।
-ঠিক আছে।
দারোগা মেহেরাবকে নিয়ে থানায় চলে আসে। মেহেরাবকে ধরে নিছে জামালের কানে খবরটা পৌঁছে গেলো। কি করবে এখন তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। আরোহীরা নিচে নামলো। আরোহী জামালের মুখটা কালো দেখে
-চাচা কি হয়েছে। মুখটা কালো করে আছেন কেন?
-কিছু না। তোমরা খেতে বসো।
-চাচা আমাকে বলতে পারেন সমস্যা নেই।
-আসলে বলি কিভাবে মেহেরাবকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশে।
-হোয়াইট কেন?
জামাল সবকিছু বললো। আরোহী এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে সোজা ফাড়িতে চলে গেলো৷ মেহেরাবকে ঝুলিয়ে এতক্ষণে বেশ মারা হয়ে গেছে। দারোগা জেল থেকে বেরিয়ে আরোহীর দিকে তাকিয়ে
-কি সমস্যা?
-মেহেরাবকে কেন ধরে এনেছেন
-ওর নামে মামলা হয়েছে ও ওয়ারেন্ট আসামি।
-আচ্ছা। ওকে ছেড়ে দেন।
-তুমি কে? ওকে ছাড়া যাবে না।
-হুম ফোনটা তুলুন
দারোগা ফোনটা তুলে ঢোক গিলতে লাগলো। তারপর ফোনটা রেখে দিয়ে
-আরে তোমার পরিচয়টা দিলে তো পারতে কি দরকার ছিলো এসবের। কে আছিস মেহেরাবকে নিয়ে আয়।
দুজন কনস্টবল মেহেরাবকে ধরে নিয়ে এলো। আরোহী মেহেরাবকে এমন অবস্থায় দেখে দারোগার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। দারোগা বললো
-সরি ভূল হয়ে গেছে। না জেনে আর কারো গায়ে হাত দিবো না।
আরোহী মেহেরাবকে যেয়ে ধরলো। কাঁধে হাত বাধিয়ে ধরে বাহিরে আনলো। গাড়িতে উঠালো।
শুভ্র আশফা নেহা হৃদয় কুহু বলতে লাগলো
-আরোহী কোথায়? মেহেরাব কেন আসছে না এখনো।
জামাল চাচা ওদের খেতে বলে চলে গেলো।
কুহু বললো
-আজিব তো না বলেই চলে গেলো।
-আমার এড়িয়ে চলছে।
-কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে ।
জামাল বাইরে বেরিয়ে এসে রফিকরে বললো
-কিছু কি করতে পারলি?
-আরে ঐ দারোগা তো মধুবংশের পোষা। আমাদের কথা আর শুনবে নাকি।
-কি করবো এখন। ছেলেটা এসে বিপদে পড়ে গেলো।
-আচ্ছা যে মেয়েটার সাথে গার্ডস আসছে নিশ্চয় ও বড় কোনো অফিসারের মেয়ে হবে। তাকে বললে ও কিছু একটা ব্যবস্থা করবে।
-আমি তো অনেক আগেই বলে দিয়েছি।
-তাহলে আর কোন চিন্তা নেই। নিচিন্তিত থাকো।
কুহু বলে উঠলো
-গার্ডসরা এখানে আরোহী গেলো কই। ফোন দিচ্ছি ধরছে না।
এর ভেতর আরেহী মেহেরাবকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে
-কি হয়েছে ওর। ওর শরীর দিয়ে তো রক্ত ঝরছে৷
-ওকে একটা রুমে শোয়ার ব্যবস্থা কর ফাস্ট।
হৃদয় শুভ্র এসে আরোহীর থেকে মেহেরাবকে নিয়ে রুমে নিয়ে গেলো। আরোহী বাইরে এসে জামাল চাচাকে বললো
-মেহেরাবকে নিয়ে এসেছি। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।
-ঠিক আছে।
আরোহী ঢুকে মেহেরাবকে যে রুমে গেছে ঐ রুমে গেলো একটা বক্স নিয়ে। আরোহী এসে মেহেরাবের গায়ে মলম লাগিয়ে দিলো৷ মেহেরাব বেহুশ অবস্থায় আছে। শুভ্র বললো
-কি হয়েছে ওর। কে মারলো ওকে।
আরোহী সবটা বলতেই সবাই অবাক হয়ে গেলো। শুভ্র বললো
-আমাদের জন্যই ও এতবড় বিপদে পড়লো।
আরোহী রাগি লুক নিয়ে
-একা একা হিরেগিরি করতে যাওয়ার কি দরকার আমাদের বললে ক্ষতি হতো।
-এটা ও অন্যায় করেছে।
-এখন বুঝুক কেমন লাগে।
রাত দুটো মশাল হাতে নিয়ে বিশ জনের মতো এগিয়ে আসছে। আজকে এই গ্রামের সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দিবে।
মেহেরাব চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর পাশে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব সবার মুভমেন্ট বুঝতে পেরে বললো
-আমার খিদে লাগছে খুব।
-হ্যা তোর জন্য যে আমরা এখনো খেতে পারিনি
-ঠিক আছে সবাই একসাথে খায় তাহলে। তারপর একটা মিশনে যাবো।
সবাই অবাক হয়ে গেলো
-মিশন মানে
-আরে ডাব চুরি করবো। তবে আমার যে অবস্থা তোরা একটু ধরে নিয়ে যাস আমাকে।
-গাছে উঠবে কে?
-চলে আসবেনে উঠার লোক
খাওয়া শেষ করে সবাই বের হলো। সবাই মশাল হাতে লোকগুলোকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। মশাল হাতের লোকেগুলো ওদের দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না। পিছনে যাবে নাকি ওদের একসাথে পুড়িয়ে দিবে
চলবে…..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com