Breaking News

লেডি কুইন । পর্ব-১৮

মর্জিনা বেগম ভেতর ঢুকে চশমা পড়া লোকটাকে দেখে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর বলে উঠলো
-তু তু তমি
চশমা পড়া লোকটা মুচকি হেসে দিয়ে
-হুম আমি। কত বছর পর তোমার সাথে দেখা হলো।
-তুমি জানতে আগে থেকে।
-হ্যা। তাই তো তোমার সাথে ডিলটা করতে চেয়েছি।
মর্জিনা বেগমের মুখে হাসি ফুটে উঠলো
-আমি না বিশ্বাসি করতে পারছি না তোমার সাথে আবার দেখা হবে।
-তুমি চাওনি তাই দেখা হয়নি। তবে আজ আমার ইচ্ছায় দেখা হলো।
-আমি আগে জানলে
-কেন? আসতে না।
-তা না। তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পায়নি।
চশমা লোকটা হেসে দিলো
-মন দিয়ে খুজলে ঠিকি পেয়ে যেটা।
-হুম তবে বড্ড দেরি করে ফেলিছি।
-তোমার মেয়ে কই সে আসেনি?
-ও রাস্তায় আছে।
-ব্যস্ত আসতে বলো। তোমার মেয়েটাকে দেখে চলে যাবো।
-হ্যা। শুনলাম তোমার একটা ছেলে আছে নাকি?
-হ্যা ঠিকি শুনেছো।
-কই আসেনি?
-না। ও আমেরিকায় আছে।
-কি নাম রাখছো
-নীল।
-সাথে আনলে পারতা।
-পড়াশোনার চাপ বেশি তো তাই আসেনি। আমার এখানে আসার একটাই উদ্দেশ্য
-কি?
-ডিল এ সাইন করার সাথে সাথে আমি চায় তোমার মেয়েকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে। তোমাকে তো আর পারলাম না।
মর্জিনা খান হা হয়ে গেলো আর বললো
-কি বলছো। তুমি আমার মেয়েকে
-হ্যা। তোমার কোনো আপত্তি থাকলে বলতে পারো।
-আর না কিসের আপত্তি । তোমার মতো আন্ডারওয়ার্ল্ড এর কিং এর ছেলের সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দিলে তো খুব সৌভাগ্যের ব্যাপার।
-তুমি এখনো বদলালে না।
-হুম পারিনি বদলাতে। তাই তো আমি লেডি কুইন হতে পেরেছি।
-হ্যা। তোমার মেয়েকে ও তো বানিয়ে ফেলছো।
-হুম। চাইছিলাম ওকে এই পথে ঢুকতে দিবো না। কিন্তু ও নিজেই ঢুকে পড়েছে।
-আমি তোমাকে বারণ করছিলাম কিন্তু এই বারণ করাতে তুমি আমার সাথে সম্পর্কটা রাখলে না।
-তাহলে তুমি কেন এই পর্যায়।
-জেদ করেছি। আর লক্ষ্য একটাই ছিলো তাই পেরেছি । তোমার থেকে বড় কিছু হবো।
-তা তো দেখতেই পারছি। ভাবছি এই পথ ছেড়ে দিবো আর ভালো লাগে না।
-বললেই তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না।
-কেন যাবে না। তোমার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে তারপর থেকে এই জগৎ থেকে বেরিয়ে আসবো৷
-হ্যা আমি ও এটাই চায়। এই জগৎ টা না দেয় শান্তি না দেয় ঠিক মতো ঘুমাতে৷
এর ভেতর আরোহী চলে আসে। চশমা পড়া লোকটাকে দেখে হা হয়ে
-আঙ্কেল আপনি। আমি তো বিশ্বাসি করতে পারছি না আপনাকে দেখতে পাবো।
আশরাফ চৌধুরী অবাক হয়ে
-তুমি আমাকে চিনো কিভাবে।
-কেনো মম তো আপনার কথা প্রায়ই বলতো। আপনার ছবি ও তো মমের কাছে আজ ও আছে। যতই হোক আপনি মমের প্রাক্তন ।
মর্জিনা খান লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আশরাফ চৌধুরী মাথা নিচু করে নেয়। চোখ দিয়ে চশমাটা খুলে ফেলে
-মামনি এদিকে এসো তো
আরোহী এগিয়ে গেলো। আশরাফ চৌধুরী আরোহীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে
-আর কি বলতো
-বলতো আপনার কথা শুনলে সে আজ শান্তিতে আর পাঁচটা মানুষের মতো সংসার করে বেঁচে থাকতে পারতো।
-তোমার নানার জন্যই তো এতদূর হলো। তার স্বপ্ন তার মেয়ে কুইন হবে একদিন। আর আমাকে তাড়িয়ে দিলো।
-বুড়োটা দুনিয়ার শয়তান ছিলো। কি যে রাগি আর জ্বালাতন করতো।
মর্জিনা খান বলে উঠলো
-আরোহী সে তোমার নানা। তার সম্পর্কে এসব বলা ঠিক না।
-ও ওহ নানার মেয়েটার যে লাগছে।
আশরাফ চৌধুরী আরোহীর আঙ্গুলে ডায়মন্ডের একটা আংটি পড়িয়ে দিলো। আরোহী হা হয়ে গেলো। মর্জিনা খানের মুখে হাসি।
আশরাফ চৌধুরী পেপারস্ এ সাইন করে দিয়ে রাতে ডিনার করে চলে গেলো আমেরিকায়।
মর্জিনা খান বাসায় ফিরলো রাতে আরোহীকে নিয়ে। মেহেরাব এসে দরজা খুলে দেয়। মর্জিনা বেগম মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেহেরাবকে দেখে। মেহেরাব সরে দাঁড়ায়। মর্জিনা খান ভেতরে ঢুকে আরোহীকে বললো
-ছেলেটাকে কি নতুন রেখেছিস।
-না মম ও আমি একই ভার্সিটিতে পড়ি।
মর্জিনা খান রাগি গলায়
-আমি একটা জিনিস ভেবে পাই না ছোট লোকদের সাথে তোমার কেন উঠাবসা।
-মম তুমি কিন্তু ভূলে গেছো ওরা আমাদের বিপদের আগে ঝাপিয়ে পড়া বন্ধু।
-তোর তো বেশ উন্নতি হয়েছে। এই দিনটায় তো দেখতে চেয়েছিলাম।
আরোহী মর্জিনা খানকে জরিয়ে ধরে
-মম তোমাকে মাঝে মাঝে চিনে উঠতে পারি না।
-শোন মা কাউকে কখনো ছোট চোখে দেখতে নেই। হতে পারে যাকে ছোট চোখে দেখছিস সে কাল বা কোন একদিন ঠিকি বড় হবে। ব্যবধান শুধু সময়ের।
-হুম।
কুহু পিছন থেকে
-আন্টি how are you
মর্জিনা খান মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে
-তুই এয়ারপোর্টে কেন গেলি না?
-আমার শরীরটা ভালো ছিলো না। আরোহী না করছিলো তাই যায় নি।
মর্জিনা খান কুহুর কাছে এগিয়ে যেয়ে
-কেন কি হয়েছে?
আরোহী সবকিছু খুলে বলে। মর্জিনা খান অবাক হয়ে যায়। তখন সে বললো
-কার এত বড় কলিজা আমার প্রিন্সেসের দিকে চোখ তুলে তাকায়। আরোহী তুই আমাকে নদীর পাড়ের ঘটনা বলিসনি কেন?
-তুমি চিন্তা করবানে আর কি ঘটিয়ে ফেলো তাই বলিনি।
-মেহেরাবকে ডাক।
আরোহী মেহেরাবকে ডাকলো। মেহেরাব সামনে আসতেই আরোহী বললো
-মেহেরাব মম।
মেহেরাব মর্জিনা খানের দিকে তাকিয়ে
-আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। বাবা তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না। তুমি আমার মেয়েটাকে বাঁচিয়েছো।
-আমি তো কিছুই করিনি তারা যদি ঠিক টাইমে না আসতো তাহলে আমি ও তো বেচে থাকতাম না।
-কুহু আরোহী তোমরা ভেতরে যাও। মেহেরাবের সাথে কথা আছে। কুহু আর আরোহী চলে গেলো।
আশফা শুভ্রকে ফোন দেয় শুভ্র ফোন রিসিভ করতেই
-কি করো
-এই তো তোমার কথা ভাবছি। তুমি
-আমি তো অন্য কথা ভাবছি
-কি?
-তোমার বন্ধু মেহেরাব আর আরোহীকে দেখছো আজ হাসপাতালে
-হ্যা তো
-আমার কি মনে হয় জানো
শুভ্র অবাক হয়ে
-কি?
-ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে হয়তো।
-কি বলছো তুমি?
-হ্যা ঠিকি বলছি।
মর্জিনা খান মেহেরাবকে সেদিনের কথা জিঙ্গেস করতে মেহেরাব সবকিছু বলে দেয়। মড়জিনা বেগম বললো
-তুমি কি কাউকে চিনতে পেরোছো।
-না। আমি তো এই শহরে নতুন।
-ঠিক আছে।
পরেরদিন মর্জিনা খানের সাথে ছোট থেকে শুরু করে সকল নেতারা দেখা করতে আসছে। সবার সাথে দেখাসাক্ষাৎ করে মতবিনিময় করলো কম বেশি।
আজ সন্ধ্যায় মর্জিনা খান চলে যাবে। আরোহী থাকতে বললো কিন্তু তার থাকার কোন উপায় নেই৷ যেতেই হবে৷
সন্ধ্যায় সবাই মিলে একসাথে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা নিলো। মর্জিনা খানকে বিদায় দিয়ে। সবাই ফিরবে তখন আশফা নেহা আরোহীকে পাশে নিয়ে গেলো। শুভ্র হৃদয় মেহেরাবকে পাশে নিয়ে গেলো। মেহেরাব যা বললো তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com