সেইদিন । তিতিশ্মা মুসাররাত কুহু



তোমার তো আর বাসায় ফেরা হবেনা।
আজই আমরা বিয়ে করবো।
কথা টা শুনে আমি চমকে উঠলাম।
-মানে কি?
-মানে আজ তোমাকে আর বাসায় ফিরে যেতে দেয়া হবেনা।
-প্লিজ উৎস!এই কথা বলোনা।
আমি বাসায় যাবো।প্লিজ বাসায় নিয়ে চলো আমাকে।
-সরি কুহু!বাসায় যাবার কথা ভুলে যাও এই মুহূর্তে।
আগে আমাদের বিয়ে হবে।তারপর তোমাকে আমি বাসায় দিয়ে আসবো।
উৎস!
ছেলেটা আমার বন্ধু।
ও আমার সাথে আজ দেখা করার জন্য অনেক বায়না ধরেছিলো।
বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন।
কিছু দিন পরই আমার সেই পাত্রের সাথে বিয়ে।
কথাটা উৎসকে জানাতেই ও আমাকে বল্লো,
-আমাকে তোমার জীবন থেকে একটা দিন সময় দিবে?
-মানে?
-মানে আমি তোমার কাছে একটা দিন চাই।
আর সেই দিন টায় তুমি সারাদিন আমার সাথে ঘুরবে।
-কি হয়েছে তোমার উৎস?
-আরে কিছুনা।
বিয়ে হবার পরই তো তুমি অন্য কারো হয়ে যাবে।তখন আর চাইলেও আমরা ঘুরতে পারবোনা।এক সাথে ঝালমুড়ি খেতে পারবোনা।
তাই আমি চাই তোমার বিয়ের আগে একটা দিন তুমি আমার সাথে ঝালমুড়ি খাও,সারাদিন ঘুরে বেড়াও।
আমিও উৎসের কথায় রাজি হলাম।
যেহেতু ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
উৎস আমাকে তুমি করে বলে।
আমিও ওকে তুমি করে বলি।
তুই শব্দ টা কেন যেন আমরা ইউজ করিনি।
আব্বু আম্মু আমার বিয়ের আয়োজন করছেন।
পাত্র পক্ষ বিয়ের শপিং শুরু করে দিয়েছে।
এদিকে উৎসর সাথে আমি দেখা করতে এসেছি।আর উৎস কিনা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করতে চাইছে।
আমি বার বার উৎসকে বলছিলাম এসবের মানে কি,
কেন ও এমন করছে আমার সাথে।
ও আমাকে সোজাসুজি উত্তর দিলো,
-আমি তোমায় অনেক ভালবাসি কুহু।
আমি কোন দিন তোমায় বলিনি আমার ভালবাসার কথা।কারণ যদি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।
আমি তোমায় ছাড়া ভালো থাকবোনা কুহু।
আর আজ তাই আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
এটা কিভাবে সম্ভব?
আমার বিয়ের প্রস্তুতি চলছে।
কয়দিন পর আমার বিয়ে।
আর তুমি কিনা আজ এমন সীন ক্রিয়েট করছো।
চলো বাসায় যাবো।
সেদিন আমি উৎসের সাথে রিক্সা করে ঘুরতে বের হই।
ওর শেষ ইচ্ছে ছিলো আমি যেন ওর সাথে লং ড্রাইভে যাই।তাও আবার রিক্সায়।
ও বলেছিলো দুই ঘন্টা ও রিক্সায় ঘুরবে আমাকে নিয়ে।
ওর কথা মত তাই হচ্ছিলো।
রিক্সা করে আমরা প্রায় এক ঘন্টা ঘুরেছিলাম।
আর হঠাৎ ও অনেক দূরে একটা জায়গায় গিয়ে বলে আমাকে আর বাসায় যেতে দিবেনা বিয়ে না হওয়া অব্ধি।
বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে ও এমন একটা কাজ করবে আমি তা ভাবতেও পারিনি।
-দেখ উৎস আমাকে নিয়ে বাসায় চল প্লিজ।
এমন করিস না।
আমার বিয়েটা ভেঙে গেলে আম্মু আব্বুর মান হানি হবে।
তারা সমাজে মুখ দেখাতে পারবেনা।
এত বড় ক্ষতি করিস না আমার।
তাছাড়া আমার ভাই বোনদেরো সবাই খারাপ বলবে।
প্লিজ যেতে দে আমাকে বাসায়।
এ কথা বলতে না বলতেই আমার ফোন বেজে উঠে।
আম্মু কল দিচ্ছে।
আর উৎস আমার হাত থেকে মোবাইল টা কেড়ে নিয়ে অফ করে ফেলে।
-এ কি করছো তুমি?
ফোন দাও আমায়।
আম্মু চিন্তা করবে।
-বলেছি না,আগে বিয়ে তারপর সব কিছু।
আমি চিৎকার দিয়ে উৎস কে বললাম,
তুই আমার ফোন দিবি নাকি আমি চিল্লিয়ে লোকজন একত্র করবো?
আর হঠাৎ ই দেখি কিছু ছেলেপেলে এসে ভীর জমালো।
আমাদের দুজনকে ঘিরে দাঁড়ালো।
ছেলে গুলোকে দেখে ভালো মনে হচ্ছেনা।
এর আগে অনেক শুনেছি,রাস্তা ঘাটে ছেলেরা নাকি কোন কাপল দেখলেই ব্ল্যাকমেইল করে আর তাদের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নেয়।
অনেক টা ছিনতাই এর মত।
আবার কোন কোন জায়গায় নাকি একত্রে কোন জুটিকে দেখলেই বিয়ে পড়িয়ে দেয়।
তাদের কোন কথাই শুনেনা।
আমি ছেলে গুলোকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
উৎসর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
চলো বাসায় চলো প্লিজ।আমি বাসায় যাবো।
আমার খুব ভয় হচ্ছে।
এদিকে ওই ছেলে গুলো বলে উঠলো,
বাসায় যাবো মানে?
কোথাও যাওয়া হবেনা,আগে আমাদের কাছে আসো।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url