Breaking News

সেইদিন । পর্ব-০২



এদিকে ওই ছেলে গুলো বলে উঠলো,
বাসায় যাবো মানে?
কোথাও যাওয়া হবেনা,আগে আমাদের কাছে আসো।
আমি ছেলে গুলোকে দেখে উৎসর হাত শক্ত করে ধরলাম।
কিন্তু এ কি,আমি উৎসর কথা শুনে পুরাই অবাক।
-তোদের এত দেরি হলো আসতে?সব কিছু ঠিক আছেতো বিয়ের?
-হ্যাঁ সব ঠিক।
শুধু তুই আর তোর বউ ই মিসিং ছিলি।
এত ক্ষণে বুঝতে পারলাম এই ছেলে গুলো উৎসর বন্ধু।
আর ওরা সবাই প্ল্যান করেই আমাকে নিয়ে এসেছে।
আমি ওদের হাত জোর করে মিনতি করলাম,
আমাকে যেন ওরা বাসায় যেতে দেয়।
কিন্তু ওরা আমার কোন কথাই শুনলোনা।
আমাকে আরো ভয় দেখাতে লাগলো,
আমি যদি এখন চিৎকার চেঁচামিচি করি তাহলে লোক জন জড় হবে।সবাই আমার আব্বু আম্মুকে ডেকে আনবে।
এতে মান সম্মান যা ছিলো সব ধূলোয় মিশে যাবে আমার বাবা মার।
আর তখন হয়তো তারা স্ট্রোক ও করতে পারেন।
মারাও যেতে পারেন।
আর সমাজের লোকজন সব সময় আঙুল তুলবে আমার পরিবারের দিকে।
আমার দিকে।
আর এমনও হতে পারে চিল্লাচিল্লি করলে সবাই এসে আমাদের দুজনকে থানায় দিয়ে দিতে পারে।
পরে পেপারে পত্রিকায় ছাপা হবে আমাদের ছবি।
ভয়ে আমি কুঁকড়ে যেতে লাগলাম।
উৎসকে বললাম,আমি তোমাকে বিয়ে করলে আমাকে বাসায় যেতে দিবে তো?
উৎস উত্তর দিলো হ্যাঁ।
আমার মাথায় শুধু এটাই তখন ঘুরছিলো,কোন ভাবেই যেন লোকজন জানাজানি না হয়।
কিছু জানাজানি হলেই বিয়েতো ভাঙবেই বরং আব্বু আম্মুর মান সম্মান সব মাটির সাথে মিশে যাবে।
আমি সব দিক বিবেচনা করে উৎসকে বিয়ে করতে রাজি হলাম।
আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,বাসায় একবার যেতে পারলেই তো আমাকে আর ও পাবেনা।
তখন বিয়ে টিয়ে কোথায় যাবে।
কিন্তু আমার মাথায় তখন এটা একবারের জন্যও ঢুকেনি যে বিয়ে কোন ঠুনকো বিষয় না যে চাইলাম আর করে ফেললাম।আবার গোপনে ভেঙেও ফেললাম।
উৎস আমার জন্য একটা শাড়ী,ব্লাউজ,পেটিকোট,চিরুনি লিপ্সটিকও কিনেছে।
যা ও আমাকে দিয়ে বল্লো এগুলো পরতে হবে।
আমি বললাম পরে পরবো।
আমাকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হলো।
একজন ইমাম সাহেব এলেন।
সেখানে গিয়ে দেখি আগে থেকেই সব কাগজ পত্র রেডি করা ছিলো।
উৎসর বন্ধুরা আমাকে ফিসফিস করে বল্লো,
এখন কোন উলটা পালটা কথা বললেই দুজনকে জেলে ভরে দিবে।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
বাধ্য মেয়ের মত সাইন করার সাথে সাথে কবুলও বলে দিলাম।
কিন্তু মনে মনে উৎসর উপর সেই মুহূর্তে ছিলো মাত্রাতিরিক্ত ঘৃণা।
আর একটা কথাই বার বার ভাবছিলাম,
শুধু বাসায় গিয়ে নেই।
তোকে আমি দেখে নিবো।
এ বিয়ে তো আমি মানিই না।
কিন্তু বিয়ে টা যে খুবই মজবুত ভাবে হয়েছিলো তা আমি বুঝতেও পারিনি।
বিয়ের পর উৎস ওর বন্ধুদের মিষ্টি খাওয়ার টাকা দিলো।
বন্ধুরা চলে গেলো।
আমি উৎসকে বললাম,
বাসায় চলো এবার।
আমি বাসায় যাবো।
উৎস আমাকে বল্লো,
বাবা মায়ের ঠিক করা ছেলেটাকে না করে দাও।আর বাসায় বলবে দু বছরের আগে তুমি বিয়ে করতে পারবেনা।
দু বছরে আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবো।
আর তারপর পারিবারিক ভাবে আমাদের অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে।
উৎস আমাকে বাসার সামনে অব্ধি পৌছে দিলো।
মনে মনে বলছিলাম,এটাই তোর আর আমার শেষ দেখা।
বাসায় গিয়ে নিজের রুমে ঢুকে কাঁদতে লাগলাম।
আম্মু দৌড়ে এলো আমার কাছে।
-কি হয়েছে কাঁদছিস কেন এভাবে?
ফোন দিলাম,মোবাইল বন্ধ।
কই ছিলি এত ক্ষণ?
আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে এবার আরো জোরে কাঁদতে লাগলাম।
বুঝতে পারছিলাম না কি করবো,কিভাবে আম্মুকে সব কিছু বলবো।
যেখানে তারা বিয়ের ধুমধাম আয়োজন করছেন।
তবুও আমি সাহস করে আম্মুকে বলেই দিলাম,
আম্মু,উৎস আমাকে বিয়ে করে ফেলেছে।
আম্মু আমার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
-ঠিক বুঝলাম না।কি বললি আবার বল তো।
-আম্মু উৎস আমার ফ্রেন্ড।ও আমাকে জোর করে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করে ফেলেছে।
বিশ্বাস করো আমি ওকে ইচ্ছে করে বিয়ে করিনি।
আম্মু আমার গালে ঠাস করে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
-বিয়ে হয়ে গেছে?
এসবের মানে কি?দুদিন পর তোর বিয়ে আর তুই কিনা এসব বলছিস।
-আম্মু প্লিজ বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে বিয়েটা করিনি।
আমি পরিস্থিতির স্বীকার।
তুমি কিছু একটা করো।
আমার আম্মু যা ইচ্ছে তাই গালাগাল শুরু করলো আমাকে।
আমার কোন কথাই সে বিশ্বাস করলোনা।সে ভাবছে আমি নিজে ইচ্ছেতেই বিয়ে করেছি।
আমি আর এবার চুপ রইলাম না,
চিল্লাতে চিল্লাতে বলতে লাগলাম,
মা হয়ে বিশ্বাস করলে না আমাকে।আমি আর তাহলে এ দুনিয়ায় কাকে বিশ্বাস করাবো?
শুধু মাত্র তোমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে যেই মেয়ে নিজের ভালবাসাকে কুরবানি করে অচেনা এক পুরুষকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে সে নিজে ইচ্ছেতে এমন কাজ করবে তোমার তা মনে হয়?
আরে পালিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলেতো আমি আমার ভালবাসার মানুষটাকেই করতে পারতাম।
অথচ তোমরা রাজি না বলে তোমাদের কথা মত আমি ওকে রিজেক্ট করে তোমাদের পছন্দ করা পাত্রকে আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।
আর তুমি আমাকে বিশ্বাস করছোনা?
আম্মু আমাকে বিশ্বাস করলোনা করলোইনা।
যেখানে আমার আম্মু আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সেখানে অন্য কেউ তো বিশ্বাস করবে তা ভাবাও ভুল।
আর আমি এই বিয়ে গোপন রেখে অন্য একটা পরিবারে যাবোই বা কিভাবে।
আর ওই পরিবারের লোক জানলে অবশ্যই আমাকে গ্রহণ করবেনা।
আমার মাথা কোন কাজ করছিলোনা কি করবো আমি।
কি করা উচিৎ ই বা আমার।
আমি তো উৎসকে কোন ভাবেই মানতে পারবোনা স্বামী হিসেবে।
কারণ ও আমার সাথে খুব বড় রকমের প্রতারণা করেছে।
আর বিয়েটা গোপন করে বাবা মায়ের পছন্দ করা পাত্রকেও বিয়ে করা সম্ভব নয়।
আমি যখন মাত্রাতিরিক্ত ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে পড়লো আমার ভালবাসার মানুষ টার কথা।
যাকে আমি কিছু দিন আগেই আব্বু আম্মুর জন্য রিজেক্ট করেছি।
অপমান করে ব্রেকাপ করেছি সম্পর্কের।
যাতে ও আমাকে ভুল বুঝে ভুলে যায়।
আচ্ছা ও কি আমাকে বিশ্বাস করবে?
আমি কি ওকে সব কিছু বলে দেখবো একবার?
ও কি আমাকে কোন উপায় বলে দিতে পারবে?
যে কি করা উচিৎ এখন আমার।
আর কোন কিছু না ভেবে আমি ফোন দিলাম রোশানকে।
-হ্যালো শান….
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com