প্রতিশোধ । তিতিশ্মা মুসাররাত কুহু



বিয়ে করে কয়েক ঘন্টা আগেই আশফির বাসায় পা রেখেছি আমি।আর এখনই কে বা কারা যেন চিল্লাচিল্লি করছে আর বলছে,কে কোথায় আছো এদিকে এসো।আশফি যে আর নেই।
কথা টা শুনে দৌড়ে বের হলাম আমি।
আশফি!
খুব সুদর্শন আর শিক্ষিত এক যুবক।
যেকোন মেয়ে ওকে দেখে ক্রাশ খায়,এ যুগে ক্রাশ খাওয়া ছাড়া নাকি পেটের ভাত হজমই হয়না।
যেই হারে ছেলেরা খায় সেই হারে মেয়েরাও নাকি খায়।
সব সময় শুনেছি মেয়েদের পেছনে ছেলেরা ঘুরঘুর করে।কিন্তু কোন ছেলের পেছনেও যে মেয়েরা এভাবে লাইন ধরতে পারে তা আশফিকে না দেখলে জানতাম না।
ছোট বেলা থেকেই আমি ঢাকায় মানুষ।
ঢাকায় মামা মামীর কাছে থেকে পড়াশোনা করেছি।
আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিলো উচ্চ শিক্ষিত হয়ে আমাদের গ্রামের একটি স্কুলে শিক্ষিকা হওয়া।
বাবা মাও তাই আর নিষেধ করেন নি।
তবে কোন এক কারণ বসত ইন্টার পাশ করেই আমার গ্রামে চলে আসতে হয়।
আর এসে গ্রামের একটা কলেজেই আমি ডিগ্রী তে ভর্তি হই।
কলেজে যেদিন আমার তৃতীয় দিন ঠিক সেইদিন একটা ছেলে আমারই সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাইক এক্সিডেন্ট করে।
আর ঠাস করে বাইক নিয়ে পড়ে যায়।
পরবর্তীতে জানতে পারি তার নাম আশফি।আর সে আমাকে দেখতে গিয়েই এক্সিডেন্ট টা করে।
আর করবেই বা না কেন।
সেদিন আমি সাজ টাই দিয়েছিলাম নজর কাড়া।
যদিও সেদিন আমি শুধু কলেজে ঘুরতেই গিয়েছিলাম।
ক্লাস করতে নয়।
তাই টুকটুকে লাল একটা জর্জেট শাড়ী আর কালো ব্লাউজ পরে ঠোঁটে লাল লিপ্সটিক দিয়ে খুব পরিপাটি হয়ে গিয়েছিলাম।
এমনিতে আমি ধবধবে ফর্সা।
আর লালে আমাকে কেমন লাগছিলো তা না হয় আর নাই বললাম।
সেদিন বেচারা আমাকে হা করে দেখতে গিয়ে এক্সিডেন্ট টা করে ফেলে।
পায়ে আঘাত পায়।
কিছু দিন পর সুস্থ হয়ে সে আমাকে খুঁজতে থাকে।
আমার যদিও অবাক হওয়া দরকার,এমন সুদর্শন ছেলে আমাকে খোঁজে।
যাইহোক পরিচয় টা ওখান থেকেই।
আমি দৌড়ে বের হওয়ার সাথে সাথে দেখি চিৎকার করে কিছু লোক আশফিকে ধরাধরি করে ভেতরে আনলো।
আশফির নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে।
মাথাটা ফেটে গেছে।
আমি আশফির কাছে গিয়ে বসলাম।
চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম,কি হয়েছে আশফি।
কথা বলছোনা কেন?
কি হয়েছে তোমার?
কয়েক জন আমাকে টেনে ধরলো।
আর বল্লো,
সামলাও নিজেকে,আশফি আর আমাদের মাঝে নেই।
আমি চিৎকার করে বললাম,না এ হতে পারেনা।
এটা কি করে সম্ভব?
আমি ওকে ছাড়া কি করে থাকবো?
দেখেন দেখেন,আমার হাতের মেহেদীর রঙ এখনো কত গাড়ো।
আমি না একটু আগে ওর বউ হয়ে এ বাড়ীতে পা রাখলাম?
এই যে আমার গায়ে লাল শাড়ী।
হাত ভর্তি লাল চুড়ি।
আমি কিভাবে সাদা শাড়ী পরবো?
না না এ হতে পারেনা।
আমাদের কত স্বপ্ন কত সাধনা।
এইভাবে শেষ হয়ে যাবে?
না আশফি!ওঠো তুমি।
আমাকে এভাবে ছেড়ে যেওনা প্লিজ।
আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো?
আমাকে জড়িয়ে ধরে সবাই কাঁদছে।নিজেকে সামলাতে বলছে।
আমি কিভাবে নিজেকে সামলাবো?
বাসা ভর্তি লোকজন।
সবাই কান্না করছে।আমার বাসায় খবর যাওয়ার সাথে সাথে আব্বু আম্মু সবাই চলে আসলো।
সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
আমার আম্মু আব্বুও কান্না করছে।
আমি আশফিকে যখন বিয়ে করতে চাই।তারা আমাকে একবারো না করেন নি।
বরং আমার মতামত ই তাদের মতামত বলেছেন।
আমার বাবা মায়ের মত বাবা মা হয়না।
আজ তাদের চোখে জল আমার কষ্টে।
আশফি সেদিন পা ব্যথা নিয়েই এসেছিলো আমাকে খুঁজতে কলেজে।
আর একটা সময় আমাকে পেয়েও যায়।
যখন আমাকে পেয়ে যায়,খুব ভাব নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
আর আমি তাকে পাত্তাও দেইনি।
এটা দেখে আশফি যেন আকাশ থেকে পড়ে।
পরের দিনও সেই একই অবস্থা।
এভাবে চলতে থাকে কিছু দিন।
তারপর একদিন আশফি আমাকে ডেকে বলে,
-এই মেয়ে এই!এত দেমাগ কেন তোমার হুম?
-মানে?
আমাকে বলছেন?
-তুমি ছাড়া আর কারো কি এত দেমাগ আছে যে অন্য কাউকে বলবো?
-কি বলতে চাইছেন আপনি?সোজাসুজি বলুন।
-ওকে বলছি।এই যে এত দিন যাবত আমি তোমার আশেপাশে ঘুরঘুর করছি।
একটা বার ভালো ভাবে তাকাইছো?
-আজব!আমি কেন তাকাবো?
-আমি কেন তাকাবো মানে?তুমি জানো,এমন কোন মেয়ে নাই যে আমার সামনে দিয়ে গেলে আমার দিকে ফিরে না তাকায়।
এক মাত্র তুমিই সেই মেয়ে যে কিনা আমার দিকে তাকাবে তো দূরের কথা।
আমি এত ঘুরঘুর করছি একবার চেয়েও দেখছোনা।
-দেখুন,আপনি আমার সিনিয়র ভাইয়া।
আপনার দিকে তাকিয়ে কি দেখবো আমি?
আর কি এমন আছে আপনার মুখে দেখার মত?
-কিহ?এত বড় অপমান?
ঠিক আছে,আমিও দেখে নিবো।একদিন তুমি ঠিকই আমার পিছু ঘুরঘুর করবে।
ছেলেটা প্রায় ছয় মাস ঘুরে আমার পেছন পেছন।
যেই ছেলের জন্য এত মেয়ে পাগল সেই ছেলে আমার পিছু পিছু ঘুরছে।
বিষয় টা আসলেই ইন্টারেস্টিং।
ছয় মাস ঘুরাঘুরির পর যখন আমার কাছে কোন পাত্তা পেলোনা।
তখন এক সকালে আশফি আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসার সময় কিছু ফুল নিয়ে এসে আমার সামনে জনসম্মুখে মাটিতে বসে পড়লো হাটু গেড়ে।
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম,
এই যে এই যে কি করছেন আপনি?
ও বল্লো,
-আই লাভ ইউ।
আমি অবাক হয়ে বললাম,মানে?
-মানে আমি তোমাকে ভালবাসি।
আমাকে কি ভালবাসা যায়?
রাস্তায় কিছু ছেলে পেলে বলছিলো বলো ইয়েস বলো ইয়েস।
আমার সাথে থাকা আমার বান্ধবীটা বল্লো,
বলে দে ইয়েস।
বেচারা কত দিন আর ঘুরবে।
তাছাড়া হ্যান্ডসামও আছে।
আমি মুচকি হাসি দিয়ে আশফির হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে বললাম ইয়েস।
সবাই আশফির লাশ টা গোসল করাতে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি আমার হাতের চুড়ি গুলো ভেঙে এক ধ্যানে বসে আছি।
আশফির মৃত্যু হয়েছে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে।
কিন্তু ও কেন এই সময় ছাদে গিয়েছিলো?
আর ছাদ থেকে পড়লোই বা কি করে?
এটা কি ওর স্বাভাবিক মৃত্যু?
নাকি কেউ ওকে…
কিন্তু কে করবে এটা?
ওর শত্রু কে হতে পারে?
ওর বাবা মা তো নিশ্চয়ই এমন করবেনা।
আছে ওর এক মাত্র ভাই।
ও কেন করবে?সম্পত্তি একা ভোগ করতে কি ও নিয়েছে এই পদক্ষেপ?
নাকি জেরিন (আশফির কাজিন)করেছে এই কাজ?
যে কিনা আশফির জন্য পাগল ছিলো।
আর ওর জীবনে অন্য কাউকে মানতে পারেনি তাই এভাবে ওকে…
নাকি আদিল?(আশফির বন্ধু)
যে নাকি আমাকে ভালবাসতো।
না না ওরা কেন ওকে মারবে?ওরা তো ওকে খুব ভালবাসে।
কিন্তু ওরা যদি কেউ নাই মারে,তাহলে ও কিভাবে ছাদ থেকে পড়লো?
আর কেনই বা ছাদে গেলো?
কি হয়েছিলো ওর মৃত্যুর আগ মুহূর্তে?
জানতে সাথেই থাকুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url