Breaking News

সেইদিন । শেষ পর্ব



কেউ যেন না বুঝে যে আমাদের আগেই বিয়ে হয়েছিলো।
উৎস আমাকে বল্লো,
তুমি একদম চিন্তা করোনা।
আমি বিকেলেই আসছি আমার পরিবার নিয়ে তোমার বাসায়।
উৎস সত্যি সত্যি চলে এলো ওর পরিবার নিয়ে আমার বাসায়।
তারপর আর কি,আম্মু আব্বু বাধ্য হয়ে রাজি হলো আমাদের আবার পুনরায় বিয়ের জন্য।বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য।
ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে হয়ে গেলো আমার আর উৎসের বিয়ে।
বিয়ে হতেই আমাকে যেন আমার আম্মু দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছিলো।
এমনকি বাসার সবাই।
সবাই যেন অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিলো আমার উপর।
আমি যখন বাসা থেকে বা বাইরে ফেলি,মনে মনে শুধু ভাবছিলাম এই বুঝি আমার শেষ যাত্রা এ বাড়ী থেকে।

আর বোধয় আমার আর এ বাড়ীতে পা রাখা হবেনা।
যাইহোক,তবুও মনে একটা শান্তি ছিলো,আম্মুর বকা বাজি আর শুনতে হবেনা।
গর্ভধারিণী মায়ের বকা যে কতটা ভয়াবহ আঘাত করে তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে।
সারা রাস্তা গাড়ীতে কাঁদতে কাঁদতে এসেছি।
উৎস আমাকে অনেক বার থামানোর চেষ্টা করেছে,
আমি থামিনি।
কারণ সেই মুহূর্তে আমার ভেতর কি হচ্ছিলো এক মাত্র আমিই জানি।
একদিকে নিজের ভালবাসার মানুষকে হারানোর শোক,
অন্য দিকে দোষ না করেও নিজের পরিবারের কাছে আজীবনের জন্য দোষী হয়ে থাকা।
কাঁদতে কাঁদতে উৎসর বাড়ীর সামনে গাড়ী থামলো।
উৎস হাত ধরে গাড়ী থেকে আমাকে নামালো।
উৎসর বাড়ীর লোকজন আমাকে সবাই চিনি মুখে দিয়ে বরণ করলো।
আমি উৎসর মাকে সালাম করলাম।
একটা রুমে নিয়ে আমাকে বসানো হলো।আমাকে বসিয়ে রেখে উৎস বল্লো,
আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
এদিকে উৎসর ওই বন্ধু গুলো এসে হাজির।
যারা আমাকে জোর করে বিয়ে করিয়েছিলো।
হাসতে হাসতে এসে বল্লো,
-কি?বিয়ে না করবেনা?এখন কিভাবে বিয়ে হলো?
এখন বুঝবা মজা।
এত দিন আমার বন্ধুকে অনেক কষ্ট দিয়েছো।
এখন ওর পালা।
এবার হবে শুধু প্রতিশোধ।

কথা গুলো শুনে আমি কি পরিমাণ ভয় যে পেয়েছি তা বলে বোঝানো যাবেনা।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম,সত্যি সত্যি কি উৎস এবার প্রতিশোধ নিবে?
তাহলে কি আমার জীবন টা এখন দুঃখ ময়ই হয়ে যাবে?
রাতে আমাকে খাওয়া দাওয়া করতে ডাকা হলো।
আমি শুধু পানি খেয়ে উঠে গেলাম।কোন খাবার আমার গলা দিয়ে নামলোনা।
আমাকে আর উৎসকে তার কিছু ক্ষণ পর বাসর ঘরে দেয়া হলো।
উৎসর রুম টাকে ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
আমি তো চুপচাপ বসে আছি,কিন্তু বুকের ভেতর মারাত্মক ভয় কাজ করছে।
মনে মনে ভাবছি,
উৎস কি আসলেই আজ থেকে আমার উপর প্রতিশোধ নিবে?
নির্যাতন করবে আমার উপর?
আমাকে মারবেনাতো?
নানান চিন্তা মাথায় ঘুরছে।
কিছু ক্ষণ পর উৎস এসে আমাকে বলে,
সরি!

আমাকে ক্ষমা করে দিও।
তোমাকে আমি প্রচন্ড রকমের ভালবাসি।
সেইদিন আমি যদি তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে না করতাম তাহলে আজ আমি তোমাকে স্ত্রী রুপে আমার ঘরে পেতাম না।
আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।
আর কথা দিলাম,তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে আমি কোন দিনই স্পর্শ করবোনা।
আমি চুপ করে থাকি শুধু ওর মুখের দিকে চেয়ে।
তারপর কোন কথা না বলে পাশ ফিরে শুয়ে থাকি।
আজ উৎস ও আমার বিবাহিত জীবনের ৫ বছর পূর্ণ হলো।

উৎস আমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারিবারিক একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
আমিতো আমার পরিবারের সবাইকে এক সাথে দেখেই অবাক।
উৎস এখন আমার পরিবারের সবার জান।
ও আমার পরিবারকে নিজের পরিবারের মত আগলে রেখেছে।
উৎস খুব ভালো একটা জব করে এখন।
আমার বিয়ের কিছু দিন পরই যেই ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সে বিয়ে করে নেয়।
আর শান,সেও নতুন জীবন শুরু করে খুব সুন্দরি এক মেয়েকে বিয়ে করে।
শানের বিয়ের দিন আমি খুব কান্না করেছিলাম আমার এখনো মনে পড়ে।
কিন্তু তার চেয়ে বেশি মনে পড়ে উৎস আমাকে কিভাবে সব ভুলিয়ে রাখার জন্য,এবং আমি যেন কষ্ট না পাই সেই জন্য আমাকে সেদিন হাসানোর চেষ্টা করে আর ঘুরতে নিয়ে যায়।
ধীরেধীরে আমি বুঝতে পারি উৎসের আমাকে বিয়ে করার পদ্ধতি টা ভালো না হলেও,ভুল হলেও আমাকে ভাল ঠিকই বেসেছে মন প্রাণ দিয়ে।

তাইতো আমাকে হারানোর চিন্তায় ও সেইদিন সেই পদক্ষেপ নেয়।
তবে ওকে ক্ষমা করতে আমার সময় লেগেছিলো অনেক।
আর সব চেয়ে অদ্ভুত বিষয় আমি ক্ষমা করার আগে আমার পরিবার ওকে ক্ষমা করে দেয়।
আর আমাকে বুঝায়।
আমিও ধীরেধীরে ওকে ভালবাসতে শুরু করি।
শান বাবা হয়ে গেছে,আর ওই ছেলেও বাবা হয়ে গেছে।
আমি আজো পারিনি মা হতে।

মাঝে মাঝে মনে হয়,আমি উৎসর জীবন টা হয়তো নষ্ট করে দিলাম।
বাবা হবার সুখ টা দিতে পারলাম না আমি ওকে।
কিন্তু উৎস আমাকে সব সময় বুঝায়,আমিই ওর কাছে সব চেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।
আজ অব্ধি ওর মুখে কোন রকম খারাপ কথা শুনিনি আমি,
মা না হতে পারার এই বিষয়ে।
আসলেই,এমন স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

এখন প্রায়ই মনে মনে আল্লাহ্‌কে শুকরিয়া জানাই আমি সেইদিন এর জন্য।
আর উৎসকে স্বামী রুপে আমার জীবনে পাঠানোর জন্য।
পরিবারের সবাইকে আচমকা দেখে যখন আমি চোখের জল মুছছি ঠিক সেই সময় উৎস এসে আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,
-এই যে মিসেস!
চোখে জল কেন?এই ছিলো আপনার সারপ্রাইজ গিফট।
কিন্তু আমার গিফট কই?
আমি উৎসর একটা হাত আমার পেটে রেখে ওর দু চোখে চোখ রেখে বলি,
-এই হলো আল্লাহর দেয়া আমার পক্ষ থেকে তোমার তোমার জন্য শ্রেষ্ঠ সারপ্রাইজ গিফট।

(সমাপ্ত)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com