Breaking News

প্রতিশোধ। ৩য় এবং শেষ পর্ব

তার মানে আশফি আর আহিল এক মায়ের পেটের ভাই না?
আশফি আর আহিল দুজন সৎ ভাই?
থাক তাতে কি।
উনারাতো আশফিকে কত ভালবাসেন।
আর এত ভালবাসেন বলেই হয়তো আশফি আমাকে বলেনি।
যাইহোক সবাই কষ্টের মুহূর্ত কিছুক্ষণের জন্য কাটিয়ে অল্প খাবার খেয়ে নিলাম।
কিছু ক্ষণ পর হঠাৎ আমার বাবা মায়ের আগমন।
আশফির বাবা মা আম্মু আব্বুকে দেখে ভেতরে আসতে বললেন,
কিছু ক্ষণ তারা কথা বার্তা বললেন।
তারপর আমার বাবা বললেন,
-বিয়াই সাহেব,কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না।
ভেবেছিলাম,মেয়ে লাল শাড়ী পরে বউ হয়ে এ বাড়ীতে ঢুকেছে আর সাদা কাফন পরে এ বাড়ী থেকে বেরুবে।
কিন্তু এখনই যে আমার মেয়েকে এ বাড়ী থেকে বেড়িয়ে যেতে হবে তা ভাবিনি।
-ভাই সাহেব,কি বলবো বলুন।
কিছুই বলার ভাষা নেই আমাদের।
-বলছিলাম যে,আজ আমি কুহুকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে এসেছি।
আশফিই তো নেই,কার উছিলায় থাকবে এ বাসায় ও?
-ও চাইলে আমাদের মেয়ে হয়ে এ বাসায় থাকতে পারে।
-তা ঠিক,কিন্তু তবুও এখন ও হয়তো আমাদের বাসায়ই একটু ভালো থাকবে।
আর ওকে এখন আমরা একবারে পুরান বাড়ীতে নিয়ে যাবো।ওকে নিয়ে পুরান বাড়ীতে উঠবো।
অনেক দিন হয় বাড়ীটা ছেড়ে নতুন বাড়ীতে এসেছি।তাই আগের বাড়ীতেই আবার ফিরে যাবো।
মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবে আপনাদের কুহু।
কি বলেন বেয়াইন সাহেবা?
-আমরা আর কি বলবো ভাই,আমাদের ছেলেই যে আর নেই।
আর চাইলেই কি আর কুহুকে আমরা ধরে রাখতে পারবো?
যেটা আপনাদের ভালো মনে হয় সেটাই করুন।
শেষমেস সবার মতামতে আমি আমার আম্মু আব্বুর সাথে আমাদের পুরান বাড়ীই চলে আসি।যেখানে শিশুকাল কেটেছে আমার।
এসে ফ্রেশ হয়ে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে খাটে শুয়ে পড়ি।
আম্মু এসে মাথায় হাত রাখেন আমার।
-কিরে মা,খুব খারাপ লাগছে?
-না আম্মু।
-কিছু খাবি?নিয়ে আসবো?
-না আম্মু।আচ্ছা তুই তাহলে একটু রেস্ট নে।
-আচ্ছা।
আম্মু চলে যায়,
আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি।
চোখের সামনে স্পষ্ট কিছু দৃশ্য ভেসে উঠে।বিয়ের দিন আমাদের বরণ করার সাথে সাথে হঠাৎ করেই আমাকে রুমে রেখে আশফি ছাদে চলে যায়।
আর তার সাথে সাথেই দেখি জেরিনও ওর পিছু নেয়।
বিষয় টা আমার কাছে কেমন যেন সন্দেহ জনক মনে হয়।
আমিও ওয়াশ রুমের কথা বলে উঠে চলে যাই পিছু পিছু।
গিয়ে দেখি জেরিন আশফির বুকে মাথা রেখে কাঁদছে।
আশফিও জেরিনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
-কেন করলে তুমি আমার সাথে এমন?আমি কি তোমাকে কম ভালবাসতাম?তাহলে কেন করলে আমার সাথে তুমি এমন প্রতারণা?
আমাকে ঠকিয়ে কেন করলে এই মেয়েকে বিয়ে?
আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো?
আশফি জেরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আর জেরিন অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।
-চুপ,কাঁদেনা।একদম কাঁদেনা।
তুমি তো জানো,আমার পরিবার তোমাকে মেনে নিতোনা কোন দিনই।
কারণ তুমি ডিভোর্সি।
তাইতো তারা তোমাকে মানতে নারাজ।
আর আমি,আমি এই মেয়েকে বিয়ে করেছি শুধু মাত্র নিজেকে বিবাহিত নাম দিতে।
যাতে করে ওকে ডিভোর্স দিয়ে আমিও তোমার সমান সমান হয়ে যেতে পারি।
আর তারপর আর আমার পরিবার তোমাকে মানতে নারাজ হবেনা।
রাজি হয়ে যাবে।
এইতো অল্প দিনের ভেতরই আমি ওকে কোন এক বাহানা দিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
-সত্যি বলছো?
-হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ সত্যি।আমি কি তোমাকে কম ভালবাসি?
-আই লাভ ইউ আশফি।
-আই লাভ ইউ টু।
তারপর আশফি জেরিনের কপালে একটা চুমু দেয়।
আর তখনই আদিল ভাইয়া ওখানে চলে আসে।
আশফির পাঞ্জাবি ধরে ধাক্কাতে থাকে।
-এসব কি দেখছি হ্যাঁ?এসব কি শুনছি?
-ছাড় আমাকে আদিল।
-কেন ছাড়বো?
তুই জেরিনকে ভালবাসিস?তাহলে কেন কুহুকে বিয়ে করলি?
ডিভোর্স দিতে?
তোর জন্য আমি কুহুকে নিজের করে পেলাম না।
আর তুই কিনা ওকে বিয়ে করেছিস শুধু মাত্র ডিভোর্স দিতে?
যাতে জেরিনকে তুই বিয়ে করতে পারিস,আর তোর পরিবার মেনে নেয়?
কেন করলি মেয়েটার সাথে এমন?
-উফ ছাড় তো,
কি প্যাক প্যাক করছিস।
তুই তো জানিস,আজ অব্ধি আমি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।
শুধু মাত্র এই মেয়েটাই পটছিলোনা।মানে কুহু।
ওকে পেতে আমার বিয়েটাই করা লাগলো শেষ পর্যন্ত।
তুই তো জানিস,আশফি কখনো এক মেয়ে নিয়ে থাকেনা।
-বাহ্!ভালোই বলেছিস।
অথচ আমি ভেবেছিলাম তুই ভালো হয়ে গেছিস।
মানুষ কি আর সব সময় খারাপ থাকে?
ভেবেছি কুহুকে ভালবেসে তুই ভালো হয়ে গেছিস।
কিন্তু না,আমার ধারণা ভুল।
তোর মত শয়তান কোন দিনও ভালো হবার নয়।
থুঃ!
থুঃ তোর গায়ে।
আদিল আশফিকে রেখে চলে যায়।
তারপরই আমি ওখানে উপস্থিত হই।
আশফি আমাকে দেখে থতমত খায়।
আমি হাসতে হাসতে আশফির দিকে এগিয়ে যাই।
কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলি,
-খুব ভালবাসো আমাকে তুমি তাইনা?
-হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ বাসিতো।
-কত টুকু শুনি?
-অনেক বেশি।
-কার চেয়ে বেশি?
-কা কা কার চেয়ে বেশি মানে?
-জেরিনের চেয়ে বেশি নাকি মিহুর চেয়ে বেশি?
আমার মুখে মিহু নাম টা শুনে আশফি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ওর বুক থেকে সরিয়ে দিলো আর বল্লো,
-মি মি মিহু?
মিহু কে?
আমি অট্ট হাসিতে বলতে লাগলাম,
-হা হা হা,মিহুকে চিনোনা?
মিহুকে চিনিস না তুই?
সেই মিহু,যাকে তুই ভালবাসতি,যাকে তুই বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলি।বিয়ের আশা দিয়ে যার সব কিছু তুই কেড়ে নিয়েছিলি।
যার গর্ভে ছিলো তোরই সন্তান।
আর যে কিনা শেষ পর্যন্ত তোরই জন্য আত্মহত্যা করেছে।
তাকে চিনিস না তুই?
-কু কু কুহু,
কে তুমি?
-হা হা হা,এখন তুই আমাকেও চিনছিস না,তাইনা?
-আমি সেই কুহু।যাকে মিহু কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে।
বড় করেছে।
মিহুর এক মাত্র ছোট বোন।
তোর কপাল খারাপ আমি শহরে ছিলাম বলে তুই আমাকে চিনিস নি।
কখনো দেখিস নি।
আর যখন দেখলি,তখন তোর জম হয়ে তোকে ফাদে ফেললাম।
মিহু মারা যাবার পর গ্রামে পা রাখলাম,তোর জম হয়ে।
কি ভেবেছিলি?তুই আমার পিছু পিছু ঘুরতি আর আমি তোকে খেয়াল করতাম না?
আরে আমিই তো আমাকে তোর নজরে ফেলেছি।
-কুহু শোনো,
প্লিজ আমার একটা কথা শোনো,
আমার না ভুল হয়েছে।
আমার মিহুর সাথে এমন করা ঠিক হয়নি।
আমাকে ক্ষমা করে দাও।
-ক্ষমা?ক্ষমা কাকে করবো?
যার পায়ে ধরে আমার বোন অধিকার চেয়েছিলো?
একটু বাঁচার প্রেরণা চেয়েছিলো. তাকে?
যে আমার বোনের মৃত্যুর কারণ তাকে ক্ষমা করবো?
নাকি যেই মানুষ টা নিজের বিয়ের দিন অন্য একটা মেয়েকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাকে?
নাকি যে আমার দেহ টা ভোগ করে ছেড়ে দেয়ার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে তাকে ক্ষমা করবো?
হা হা হা!
ক্ষমা মানুষকে করা যায়।
কোন অমানুষকে নয়।
ওপাড়ে ভালো থেকো মিঃ আশফি!
ওহ হ্যাঁ, মিহু আপুকে বলে দিও।
তার বোন টা আজ তার হয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে।কঠিন প্রতিশোধ।
গুড বাই!
আর হঠাৎ আপুর ডাকে আমার চোখ খুলে যায়।
-কুহু,এই কুহু!
আমি না আজ খুব খুশি,খুব বেশি খুশিরে বোন।
-আমি উঠে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।
আপু…
-কাঁদিস না পাগলি।আজ যে আমাদের আনন্দের দিন।
তুই কাঁদলে কি আমার ভালো লাগবে বল?
-এই তো আপু আমি কাঁদছিনা।তুমিও আর কাঁদবেনা,কেমন?
হাসো একটু হাসো।
আপু একটা মিষ্টি হাসি দিলো।
আর হাসি দিয়ে আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বল্লো,
ভালো থাকিস,বাবা মাকে দেখিস।
আসিরে…
আমি আপুকে খুব ডাকলাম।
কিন্তু আপু আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।
চলে গেলো দূর অজানায়।
আমি কাঁদতে কাঁদতে আলমারি থেকে আপুর একটা চিঠি আর চিঠির ভেতরে থাকা আশফি আর আপুর অনেক গুলো ছবি বের করলাম।
ছবি গুলো পাশে রেখে চিঠিটা আবার একবার পড়লাম।
কলিজারে,
এই চিঠিটা যখন তুই পাবি,আমি তখন ঠিক তোর থেকে অনেক অনেক দূরে।
কিন্তু মনে রাখিস,আমার শরীর টা তোর সাথে না থাকলেও আমার আত্মাটা সব সময় তোর সাথেই থাকবে।
বোনরে,আমি না বাঁচতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু মানুষ রুপি জানোয়ার টা না আমাকে বাঁচতে দিলোনা।
আমি আশফির সন্তানের মা হতে চলেছি।
আমাকে ও বিয়ে করার ওয়াদা করেছে।
কিন্তু আজ ও আমাকে বল্লো,আমি যেন আমার মুখটা আর ওকে কোন দিন না দেখাই।
আর যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে নাকি আমার বাবা মায়ের মান সম্মান নিয়ে টান দিবে।
সমাজে নাকি আমি এবং বাবা মা আর মুখ দেখাতে পারবোনা এমন কিছু করবে।
আমি তো এমনিতেও আর কাউকে মুখ দেখাতে পারবোনারে।
বাবা মায়ের চোখের দিকে তাকানোর সাহস আমার নেই।
তাই আমি নিজেকে শেষ করে দিলাম।
ভালো থাকিস কলিজা,বাবা মাকে ভালো রাখিস।
আর যদি পারিস,তবে তুই প্রতিশোধ নিস।
তোর বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ।
ইতি
তোর আপু।
আমি চিঠিটা বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
আর বলতে লাগলাম,
আপুরে আমি নিয়েছি প্রতিশোধ।
নিয়েছি তোর মৃত্যুর প্রতিশোধ।
<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com