Breaking News

গল্পঃ বিশেষ কেউ । পর্ব -০২


ধৃতি ঢাকা এলো ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকে। দাইয়ানের মা রুনা বেগম ধৃতিকে পেয়ে একবারে আহ্লাদে গলে পড়লেন।
–আসতে কোন কষ্ট হয়নিতো মা ?
–নাহ!
–তোর বাবাকে এত করে বললাম বাসার ভেতরে আসতে। আসলো না।
–বাবা ফিরতি বাসেই বাড়িতে যাবে। টিকিট করে নিয়ে এসেছিলো এই জন্যই দেরি করলো না।
–বুঝিতো পর ভাবে আমাদের। তা তুই কি এখন এমন অল্প কথাই বলিস? আগেতো অনেক গল্প করতি।
রুনা বেগমের এমন কথা শুনে মাথা নিচু করেই ধৃতি একটু হাসলো
— তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস। শোন ধৃতি দাইয়ান যেমন আমার ছেলে তুইও কিন্তুু আমার মেয়ে। তোকে কিন্তুু আমি নিজের মেয়েই মনে করি। আমার সাথে কোন রকম ফর্মালিটি করবি না। এ বাসায় নিজের বাসা মনে করে থাকবি। কোন সমস্যা হলে আমায় বলবি। আজ থেকে এই সংসারের মানুষ আমরা দুজন।
রুনা বেগমের মুখে দুজন কথাটা শুনে একটু বিব্রত হলো ধৃতি।ব্যাপারটা বুঝতে রুনা বেগমের একটুও অসুবিধা হলো না
–আরে বোকা মেয়ে এত নার্ভাস হচ্ছিস কেন ? আমরা দুজনই এই বাসায় পার্মানেন্ট সদস্য আর দুজনতো অতিথি। একজন দু মাসে একবার আর একজন ছয় মাসে একবার বাসায় আসে।
রুনা বেগমের মুখে পারমানেন্ট কথাটা শুনে ধৃতি মনে মনে বলে, আমি আর পারমানেন্ট কই ? থাকবোতো ছয় মাস। এডমিশন হয়ে গেলেই চলে যাবো। তারপর প্রশ্ন করে
–আন্টি! আঙ্কেল কই ?
–তোর আঙ্কেলের পোস্টিং এখন রাজশাহী। আর দাইয়ানেরতো ট্রেনিং শুরু হয়ছে। লাস্ট উইকে এসে বাসা থেকে ঘুরে গেছে। যাওয়ার সময় বললো আগামী দুই মাসের মাঝেও নাকি আসতে পারবেনা। এই জন্যইতো বললাম আমরা এখন সংসারে দুজন মানুষ।
দাইয়ানের মাকে বরাবরই খুব ভালো লাগে ধৃতির। মানুষটা খুব সহজেই অন্য আর একটা মানুষের সাথে মিশতে পারে কিন্তুু দাইয়ান? দাইয়ানের কথা মনে হতেই ধৃতির মাথার মধ্যে অনেক গুলো প্রশ্ন জড়ো হলো। মানুষটা কেমন হয়েছে? ওর মত সেও কি অনেকটা বদলেছে।ধৃতি চাপা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। জেনে না বুঝে কত খারাপ ব্যাবহার করেছে দাইয়ানের সাথে। দাইয়ানের সাথে দেখা হলে এক বার সরি বলে নেবে। যেহেতু এখন বাসায় নেই সুতরাং অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
–কিরে এখানেই কি বসে থাকবি ? আমিও বা কি সেই কখন থেকে বক বক করেই যাচ্ছি।
— নাহ সমস্যা নেই ।
–সমস্যা নেই মানে অবশ্যই সমস্যা আছে। তুই এত দূর থেকে এলি। এখনও ফ্রেশ হলি না। অথচ আমি গল্প জুড়ে দিছি। আয় আমার সাথে তোর রুম দেখিয়ে দেই৷
রুনা বেগমের পিছু পিছু ধৃতি হাঁটা শুরু করলো।
পাশাপাশি দুটো রুম। একটা লক করা। অন্যটা খোলা। লক করা রুমটার সামনে গিয়ে বললো
–এটা আমার দাইয়ানের রুম। ও তো বাসায় থাকেনা তাই লক করেই রাখি।
এরপর খোলা রুমটার ভেতর গিয়ে বললো
–এটা আজ থেকে তোর রুম। আমি নিজে তোর জন্য রুম গুছিয়েছি। দেখতো মা তোর পছন্দ হয়েছে কি না ?।
ধৃতি ঘুরে ঘুরে রুম দেখতে শুরু করলো। একটা মাঝারি সাইজের বেড। তার পাশে একটা পড়ার টেবিল সাথে চেয়ার। দেয়ালের এক পাশে একটা ওয়ারড্রপ সাথেই একটা ড্রেসিংটেবিল। অন্যপাশে একটা এটাচড বাথরুম। ধৃতির সব থেকে ভালো লাগলো বেলকনিটা। বেলকনি থেকে সরাসরি রাস্তা দেখা যায়। মনে মনে ভাবলো যখন সে পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তখন এখানে বসে আকাশ দেখবে। এই শহরে আকাশ দেখাই মুশকিল।
— কিরে বেলকনিতেই থাকবি নাকি ?
— নাহ মানে !
–ভেতরে আয়।
ধৃতি ধীর পায়ে রুমে এলো। এই রুমটা তার অনেক পছন্দ হয়েছে। দাইয়ানের মাকে হাসি মুখে বললো
— আমার অনেক পছন্দ হয়েছে আন্টি। বিশেষ করে বেলকনিটা। ওখান থেকে অনায়াসে নিচের গাড়ি আর উপরের আকাশ দেখা যায়।
–হয়েছে এখন ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। আমি অপেক্ষা করছি।
রুনা বেগম রুম থেকে বের হতেই ধৃতির বাড়ির সবার জন্য অনেক খারাপ লাগলো। এত সময় নতুন জায়গা কেমন হবে এই ভেবে অনেক নার্ভাস লাগছিলো।কিন্তুু এখানে সব কিছু ঠিক ঠাক হওয়াতে এখন বাড়ির জন্য খারাপ লাগছে।ছোট ভাইটা আসার আগে অনেক কান্না করেছে। এখনও নিশ্চয় মন খারাপ করে আছে।অপর দিকে তার বাবার উপর রাগও লাগছে। আসার আগে কত করে বললো একটা ফোন কিনে দিতে। দিলোনা। তার বাবার একটাই কথা ভালো করে পড়াশোনা করো। মেডিকেলে চান্স পেলে একটা সুন্দর ফোন কিনে দেবো। এখন দরকার নেই। এখন ফোন দিলে পড়াশোনায় মন বসবে না। ধৃতি কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে গেল।আপাতত ফ্রেশ হওয়া দরকার তার। তারপর না হয় আন্টির ফোন দিয়ে একবার মায়ের সাথে কথা বলে নেবে।
ধৃতি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই শুনতে পেলো ড্রয়িংরুমে দাইয়ানের মায়ের সাথে কেউ কথা বলছে। হাতের তোয়ালেটা বেলকনিতে মেলে ও এগুলো ড্রয়িংরুমের দিকে। ড্রয়িংরুমের একবারের কর্নারের একটা সোফায় ওর বয়সী একটা মেয়ে। তবে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা অনেক অাপডেট। গায়ে লাল রঙের একটা সালোয়ার কামিজ তার উপরে সাদা এপ্রন। হাতে দামী ফোন। চুলগুলো কেমন বিদেশীদের মত বাদামী রঙের। গায়ের রঙটাও যেন চমৎকার। মেয়েটার গায়ে সাদা এপ্রন দেখে ধৃতির মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেল।
–হেই! তুমি ধৃতি তাই নাহ?
মেয়েটার এমন কথায় চমকে উঠলো ধৃতি। ওকে চেনে এই মেয়েটা। কই ওতো আগে কখনও দেখেনি মেয়েটাকে।
–আরে এদিকে এসো।ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন ?
ধৃতি মেয়েটার কথায় সামনে এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো।
–আরে তুমিতো অনেক কিউট। একদম বাচ্চাদের মত সব কিছু বলে বলে করানো লাগে।
মেয়েটার কথা বুঝতে না পেরে ধৃতি একবার মেয়েটার দিকে তাকালো।
–আমার দিকে কি দেখছো বসো আমার পাশে।
কথাটি বলেই মেয়েটি হাত ধরে টেনে বসালো।
–আমি জিনিয়া। এবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে প্রথম বর্ষে আছি। সম্পর্কে দাইয়ানের ফুফাতো বোন। আর একটা পরিচয় অবশ্য আছে। আজ থাক। অন্য একদিন সে ব্যাপারে বলবো। এবার তোমার সম্পর্কে বলোতো
–আমি ধৃতি। এখানে এসেছি সেকেন্ড টাইম মেডিকেল কোচিং করার জন্য।
— গুড। গত কাল রাতে মামীর সাথে আমার কথা হয়েছে তোমার ব্যাপারে। মামী সব বলেছেন। আর এটাও বলেছেন আমি যেন তোমাকে পড়াটা একটু গুছিয়ে দেই।
–ওহ!
–আরে তুমি কি আনইজি ফিল করছো। আমিতো তোমার সমবয়সী। আমি কিন্তুু খুব খুশি হয়েছি তোমার এই সেকেন্ড টাইম এডমিশন দেওয়ার সিদ্ধান্তে।
ধৃতি শুধু জিনিয়ার কথা গুলো শুনে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলো হয়তো বড়লোকের মেয়ে তারপর এত ভালো পড়াশোনা। সব মিলিয়ে কেমন না জানি হয়। তবে এখন মনে হচ্ছে খুব সুন্দর একটা মনের মেয়ে জিনিয়া।
–কিরে তোরা কি শুধু কথাই বলবি খাবিনা ?
–খাবোতো। তার আগে আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করে আসি।
জিনিয়া কথাটা বলেই ধৃতির রুমের দিকে হাঁটা দিলো।
–কিরে তোকে কি আলাদা করে বলতে হবে ? এদিকে আয়।
–আন্টি! আপনি কি..
–আপনি কি মানে? আমাকে তুমি করে বলবি। এরপরের বার যদি আপনি করে বলতে শুনি তাহলে একদম বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো। মনে থাকবে ?
ধৃতি মাথা দুলিয়ে সায় দেয়।
–মামী তুমি কি দাইয়ানের রুমটা চেঞ্জ করেছো।
–হ্যারে। ওই রুমটায় এখন ধৃতি থাকবে
জিনিয়া একটু রেগেই জিজ্ঞেস করলো
–কেন? ও থাকবে কেন ? পাশের রুমটায় কি সমস্যা।
–ওই রুমটায় এটাচড বাথরুম নেই। তাই ওকে দাইয়ানের রুমটা দেওয়া।
–দাইয়ানের রুমটা যে দিলে। দাইয়ান কে জিজ্ঞেস করে দিয়েছো।
রুনা বেগম কিছু একটা বলতে গিয়েও আবার সামলে নিলেন নিজেকে। তারপর জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন
–ওকে জিজ্ঞেস করার কি আছে। সংসার আমার।আমি যাকে খুশি তাকে রাখতে পারি যে কোন রুমে। তাছাড়া দাইয়ান কি আর বাসায় থাকে নাকি ? ও এখন গেস্ট। সুতরাং গেস্ট রুমে থাকলেই বা সমস্যা কি ?
রুনা বেগম এর এমন কথা জিনিয়ার পছন্দ হলো না। সে বিড় বিড় করে বললো
–রুমটা দাইয়ানের খুব পছন্দ ছিলো সাথে আমারও।
এই আস্তে বলা কথাটাই ধৃতির কান পর্যন্ত খুব ভালো করেই পৌছালো। কথাটা কানে যেতেই এক রকম অসস্তি ঘিরে ধরলো ধৃতিকে
–দাইয়ান যখন জানতে পারবে তার পছন্দের রুমটা আমাকে দেওয়া হয়েছে। ও কি খুব বেশি রাগ করবে ?
চলবে…..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com