গল্প বিশেষ কেউ | পর্ব -০৩

পুরো খাওয়ার সময় রুনা বেগম এটা সেটা বললেও জিনিয়া আর একটা কথাও বললো না। ধৃতি খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো দাইয়ানের রুমটা ওকে দেয়াতে জিনিয়া ওর উপর রাগ করেছে। কিন্তুু কেন ?
–তাহলে তুই কবে থেকে ধৃতিকে পড়া দেখিয়ে দিবি?
— তুমি যেদিন থেকে বলবে সেদিন থেকেই।
–তাহলে পরশু থেকে দেখিয়ে দিস। কাল ওকে নিয়ে কোচিংএ যাবো আমি। কখন ফিরি তাতো বলা যায় না।
–ওকে। আজ তাহলে আসি আমি।
জিনিয়া দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে রুনা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো।
–মামী, তুমিতো জানো কোন ব্যাপার আমার মন মত না হলে আমার প্রচণ্ড রাগ লাগে।আমার ব্যাবহারে তুমি কিন্তুু আবার কষ্ট পেয়ো না।
–দুর! আমি কই কষ্ট পেলাম? আমিতো চিনি তোকে।
–আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আজ আসি।পরশু আবার দেখা হবে।
জিনিয়া বাসা থেকে বের হতেই ধৃতি রুনা বেগমকে প্রশ্ন করলো
–আন্টি! জিনিয়া আপু কি আমার উপর রাগ করেছে। ওই রুমটা আমাকে দেয়ার জন্য।
–আরে নাহ! ও এমনই হুটা হাট রেগে যায়। আর একটু পর আবার ঠাণ্ডা।
রুনা বেগম যতই বলুক। তারপরও একটা খটকা ধৃতির মনে রয়েই গেল।
পরের দিন সকালে রুনা বেগম ধৃতিকে সঙ্গে নিয়ে কোচিংএ ভর্তি করে দিলেন।বাসায় আসার সময় প্রয়োজনীয় বই, খাতা একটা ফোন আর অনেক জামা, কাপড় শপিং করে আনলেন।
–ধৃতি এদিকে আয়তো মা!
–বলো
–এই ফোনটা তোর। এখন থেকে এটা তুই ইউজ করবি। আমার একটা সিম দিয়েছি।
–আমার ফোন লাগবেনা। তোমার ফোনতো আছেই প্রয়োজন হলে তোমারটা দিয়ে কথা বলবো।
— সব সময় বেশি বুঝিস কেন? আর ফোন লাগবে না মানে? তুই কোচিং যাবি। ওখানে এক্সাম নিবে। এক্সামের রেজাল্ট ফোনে দেবে।তুই সেটা দেখবি না? তাছাড়া আমিতো সব সময় বাসায় থাকি না। তোর কোন প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ বা কি করে করবি ?
ধৃতি কিছু একটা ভেবে আবার বললো
— বাবা শুনলে রাগ করবে।
–তোর বাবার সাথে আমি কথা বলবো। তোকে কিছু বলবেনা সে।
ধৃতি এবার সত্যি অনেক খুশি হলো। তার নিজেরও খুব শখ ছিলো একটা ফোনের। আসার আগেওতো বাবাকে কত করে বললো। কিন্তুু দিলোনা।
–এই সব গুলো ড্রেস তোর ।
–এই সব গুলোই!
–হ্যা। তাহলে কি এই গুলো আমি পরবো ? তুই যদি পরতে বলিস তাহলে পরবো বাকিটা তুই সামলে নিবি কিন্তুু ?
কথা গুলো বলেই রুনা বেগম হাসতে শুরু করলেন। কি সুন্দর প্রাণ খোলা হাসি। এই মানুষটাকে বরাবরই চমৎকার লাগতো ধৃতির। কিন্তুু এখন এই মানুষটার কাছে এসে বড্ড আপন মনে হয়।
এরপরের দিন খুব সুন্দর এবং স্বাভাবিক ভাবেই কাটলো ধৃতির। সকালে কোচিং যাওয়া। নিয়মিত বাবা মায়ের সাথে কথা বলা।রুনা বেগমের সাথে আড্ডা দেওয়া।আবার সপ্তাহে দুই দিন জিনিয়া এসে পড়া গুলো গুছিয়ে দিয়ে যেত। এভাবেই প্রায় এক মাসের মত কেটেছে।
একদিন রাত প্রায় নয়টার দিকে কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করে বাসায় এলো দাইয়ান। রুনা বেগম তখন রাতের খাবার গরম করছে। ধৃতি তখন ড্রয়িংরুমের বড় সোফাটায় শুয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান পড়ছে। কলিংবেলের শব্দ শুনে রুনা বেগম নিজেই এলেন দরজা খুলতে। ধৃতি উঠতে চাইলে ওকে হাতের ইশারা দিয়ে নিষেধ করলো। রুনা বেগম দরজা খুলতেই দাইয়ান জড়িয়ে ধরলো তাকে।
–কেমন আছো মা? আমাকেতো তোমার মনেই পড়েনা এখন।
–মনে করলেই বুঝি তুই বুঝতে পারিস সেটা। তোকে মনে করা মানে নিজের কষ্ট নিজে বাড়ানো। তাইতো এখন মনে করি না।
দাইয়ান এক হাতে ওর মাকে আবার জড়িয়ে ধরে বললো
–এত অভিমান আমার উপর যে আমাকে ঘরে পর্যন্ত তুমি ঢুকতে বলছো না। তাহলে কি এখান থেকেই বিদায় দেবে তুমি ?
রুনা বেগম চোখের পানি মুছে বলে
–সব কাজ বুঝি আমার পারমিশন নিয়ে করিস। যে এইটার জন্য অপেক্ষা করছিস। বেশি কাহিনী না করে ভেতরে ঢোক।
দরজায় কথা শুনে ধৃতির বুঝতে বাকি নেই কে এসেছে ? এভাবে হুট করে দাইয়ান আসাতে অনেক খানিক ঘাবড়ে গেছে ও।জুতা খুলে দাইয়ান যখন ড্রয়িংরুমে ঢুকলো। সেই সময়ে ধৃতি তাড়াতাড়ি করে সোফা থেকে উঠতে গিয়ে পাশে রাখা টি টেবিলে ধাক্কা খেলো।যার ফলাফল টি টেবিলের উপর রাখা পানি ভরতি কাচের গ্লাস সসম্মানে নিচে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল এবং এর দুই সেকেন্ড এর মাথায় সোফার উপরে থাকা কুশন টাও ফ্লোরে পড়া পানির মধ্যে পড়লো। ধৃতির লজ্জায় তখন মরে যাই মরে যাই টাইপ অবস্থা। এমন বিশ্রী ঘটনা বোধহয় ধৃতির জীবনে আগে কোনদিন ঘটেনি।
দাইয়ান ধৃতিকে এক পলক দেখে পাসের সোফাটায় বসলো।
–কিরে? সাঁতার কাটার কি খুব শখ জেগেছে তোর ? এভাবে ফ্লোরে পানি ফেলে রেখেছিস যে। তাতোর যখন এতই ইচ্ছা হয়েছে সাঁতার কাটার। তুই নিজের রুমের ফ্লোরে পানি ঢেলে সাঁতার কাটনা। এভাবে এখানে পানি ফেলেতো একেবারে সবার সাঁতার কাটার ব্যাবস্থা করে ফেলেছিস।
দাইয়ানের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় ধৃতির চোখে পানি এসে পড়েছে। এত দিন সে কত কিছু ভেবেছে। এই মানুষটার সাথে দেখা হলে কিভাবে একবার স্যরি বলবে এই ব্যাপারটাই চারদিন ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে প্রাকটিস করেছে। অথচ আজ তাকে কি পরিমাণ লজ্জা দিচ্ছে। আবার তুই সম্বোধনে কথা বলছে। মানুষটা সত্যি অনেক বদলে গেছে।
–তুই চুপ কর।ও ইচ্ছে করে ফেলেনি। ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে হয়তো।
ধৃতি মা! তুই ওখানেই দাড়া আমি পরিষ্কার করছি।
কথা গুলো রুনা বেগম বলে কাচ পরিস্কার করা শুরু করলেন। তার সাথে হাত লাগালো দাইয়ান নিজেও।
ধৃতি দাড়িয়ে দাড়িয়ে মা ছেলের কান্ড দেখছে। দাইয়ানের দিকে চোখ পড়তেই কেমন অদ্ভুত ভালো লাগায় মন ছেয়ে গেল। মানুষটা বোধহয় একটু বেশিই বদলেছে।
চলবে…..
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url