ঘরে খাবার নেই - চায়ের কাপগুলো ভেঙ্গে কেটলিটাও নিয়ে গেল

বাবার চায়ের দোকানটা সেদিন পুলিশ এসে বন্ধ করে দিয়েছে। গত চারদিন ঘরে কোন বাজার নেই।
আজ খুব সকালে দোকানটা একটু খুলেছিলেন চুপিসারে,
এলাকার সচেতন ছেলেরা এসে চায়ের কাপগুলো ভেঙে কেটলিটা নিয়ে চলে গেছে।
সকালে শুধু পেঁয়াজ দিয়ে ভাত দিয়েছিলেন মা, আমি চুপ করে খাবার না খেয়ে উঠে গিয়েছি। বাবা পাশ থেকে বললেন দোকান খুলতে দিচ্ছেনা, কী করবো। একটু কষ্ট করতেই হবে।
কিছুক্ষণ পর বাবা একটা ব্যাগ নিয়ে বাজারের দিকে গেলেন।
ঘন্টাদুয়েক পরে তিনি মাথায় একটি বস্তা নিয়ে ফিরে এলেন, বস্তায় কেজি দশেক চাউল সহ,
ডাউল, তেল, পেঁয়াজ, আলু রয়েছে। আমি বললাম, টাকা পেলেন কোথায়?
বাবা চোখ রাঙিয়ে বললেন ওতো কথা শুনতে হবে না। আমি চুপ করে স্থান ত্যাগ করলাম।
রাতে ঘুমানোর আগে তানিশা ইনবক্সে একটা ছবি পাঠিয়ে লিখেছে,
দেখো মানুষগুলো কী অসহায়ের মত ত্রাণ নিচ্ছে।
আমি ছবিটায় স্যাড রিয়েক্ট দিয়ে স্ক্রল করে বেরিয়ে যেতেই ছবিটায় ছলছল করা একজোড়া চোখ দেখলাম,
যে চোখজোড়ার রাঙানী গত তেইশটা বছর দেখে আসছি।
পুরোনো একটা গামছা দিয়ে মুখ লুকালেও চোখদুটো তো আর লুকাতে পারেননি বাবা!
পরদিন সকালে সবাই একসাথে খাবার খাচ্ছি,
বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম চাউল কত করে কেজি নিয়েছে?
বাবা ভাতের লোকমাটা মুখে তুলতে যেয়ে কাঁপা-কাঁপা গলায় ধমক দিয়ে বললেন,
এত শুনে লাভ কি? তারপর আর বাবার মুখের দিকে তাকানোর সাহস হয়নি আমার।
সুকান্ত বলেছিলেন “ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ”
লেখা- হাবিব আনাম
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url