Breaking News

গল্পঃ নতুন জীবন । লেখা-আরিয়ান রহমান


প্রতিদিনের মতো আজ রাতেও ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে নিলাদ্রি।প্রতিদিন এসময়টা এরকম দাড়িয়ে থাকে ও।সবসময় মন মরা হয়ে থাকে কারও সাথে ঠিকমতো কথা বলে না।মুখে হাসি নেই একদম চুপচাপ থাকে।
কিন্তু আজ ছাদে নিলাদ্রি একা নেই একটা ছেলেও বসে আছে।ওর নাম সিহাব।ডিল্পোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সবে মাত্র চাকরিতে জয়েন করেছে।
সিহার ওর মা-বাবার সাথে নিলাদ্রিদের পাশের ফ্লাটে নতুন উঠেছে।
সিহাব নিলাদ্রি পাশে গিয়ে দাড়ালো তারপর বলল:
—-একা একা কি তাড়া গুনছেন নাকি?(সিহাব)
নিলাদ্রি একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকালো।সিহাব আবার বলল:
—-চাদের আলো আপনার মুখে পড়া দেখে মনে হচ্ছে।রাতের আকাশের কোন এক পরী আমার সামনে নেমে এসেছে(সিহাব)
এবারও কোন কথা বললো না।সিহাব মনে মনে ভাবছে মেয়েটা কি কথা বলতে পারে না নাকি।
না এ হতে পারে না।সিহাব একটা ক্যাটবেরি চকলেট খাচ্ছিলো,পকেট থেকে আরেকটা বের করে বলল:
—-চকলেট খাবেন?(সিহাব)
কিন্তু এবার কোন কথা না বলে ও চলে গেলো।পরেরদিন আবার ওই একই সময় নিলাদ্রিকে ছাদে দেখলো।তারপর আবার ওর পাশে গিয়ে বলল:
—-আচ্ছা আমি কি আপনার নাম জানতে পারি?(সিহাব)
—-নিলাদ্রি।চকলেট দিবেন না আমাকে?(নিলাদ্রি)
নিলাদ্রির কন্ঠ সিহাবের বুকে গিয়ে লাগলো।এতটা সুন্দর হতে পারে কারও কন্ঠ।সিহাব দেরি না করে নিলাদ্রি কে চকলেট বের করে দিলো।এভাবে বেশ কয়েকদিন ওদের কথা হলো।আজ নিলাদ্রি সিহাবকে জিজ্ঞেস করলো:
—-এতোদিন হয়ে গেলো আপনার নামটায় তো জানা হলো না।আর কি করেন আপনি?(নিলাদ্রি)
—-আমার নাম সিহাব।কিছুদিন হলো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজে জয়েন করেছি।(সিহাব)
—-দেখুন সব বিষয়ে ইয়ার্কি কিন্তু ভালো লাগে না।(নিলাদ্রি)
—-এখানে ইয়ার্কি কি করলাম,যা সত্য তাই তো বলেছি।(সিহাব)
ওমনি নিলাদ্রি সিহাবকে একটা চড় মারলো।তারপর আর কোন কথা না বলে চলে গেলো।মনে মনে ভাবছে এটা কি হলো আমার নাম বললাম আর থাপ্পড় মারলো।জীবনে থাপ্পড় ছাড়া আর প্রেম জুটলো না।
পরেরদিন রাতে ছাদে গিয়ে দেখলো নিলাদ্রি নেই।সিহাব বুঝতে পারলো না এমন আচরন করার কাজটা কি?
এমন সময় পিছন থেকে নিলাদ্রি বলল:
—-সরি,কালকের ঘটনার জন্য(নিলাদ্রি)
—-ঠিক আছে,কিন্তু কাল আমার নাম শোনার পর এমন করলেন কেন?(সিহাব)
—-সিহাব নামটা আমার খুব আপন একজনের নাম ছিলো।(নিলাদ্রি)
—-ও আচ্ছা বেশ ভালো। তো কোথায় সে?(সিহাব)
—-ওই যে আকাশে তারা হয়ে জ্বলছে।(নিলাদ্রি)
—-কিছু তো বুঝতে পারছি না(সিহাব)
—-তাহলে বলছি শুনুন।(নিলাদ্রি)
আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসতাম।আর ও আমাকে ভালোবাসতো।ছেলেটার নামও ছিলো সিহাব।আমাদের দুইজনের পরিচয় হয়েছিলো কলেজ লাইফ থেকে।সিহাবও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তো।একে অপরকে খুব ভালোবাসতাম।যেদিন আমাদের রিলেশনের তিনবছর পূর্ণ হলো সেদিন আমাদের একটা জায়গায় দেখা করার কথা ছিলো।বিকেলে ওর আসার কথা ছিলো কিন্তু ও এলো সন্ধ্যার একটু আগে:
—-এত দেরিতে আসলে কেন তুমি(আমি)
—-শরিরটা খারাপ ছিলো তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো।(সিহাব)
—-মিথ্যা কথা।নতুন কাউকে পেয়ে গেছো তার সাথে সময় কাটালে তাই না।(আমি)
আরে না আসলে আমার মাথা ব্যথা করছিলো খুব তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো।সরি আর হবে না(সিহাব)
—-প্রায় তোমার এরকম মাথা ব্যথা হয় ডাক্তার দেখাতে পারো না
(আমি)
—-আরে এ কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।(সিহাব)
—-আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ো আমি আস্তে করে টিপে দিই।(আমি)
সিহাব আস্তে করে আমার কোলে শুয়ে পড়লো।আমি ওকে বললাম:
—-আচ্ছা সিহাব আমাদের বিয়ের পর কয়টা বাচ্চা নিবে(আমি)
—-দুইটা।একটা ছেলে আর একটা মেয়ে(সিহাব)
—-নাম কি রাখবে? (আমি)
—-আমি তো মেয়ের অদ্রি ঠিক করে রেখেছি।(সিহাব)
—-তাহলে আমি ছেলের নাম সিয়াম রাখবো,কেমন হবে বলো(আমি)
—-হুম খুব ভালো(সিহাব)
কিছুদিন পর থেকে সিহাব আমার সাথে কথা বলতো না ঠিকমতো।আমায় সবসময় এড়িয়ে চলতো এর কারন জিজ্ঞেস করলে আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করতো।এমনকি একদিন আমার গায়ে হাতও তুলছিলো।সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।একদিন খোজ নিয়ে যা শুনলাম এর জন্য কখনো প্রস্তুত ছিলাম।ওর মাথায় ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়ছিলো আর ও এর লাস্ট স্টেজে ছিলো।ও মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে আমি ওর সাথে দেখা করেছিলাম।
—-তোমার যে ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে এটা বলো নি কেন?(আমি)
—-বলতে তো চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি কষ্ট পাবে ভেবে বলিনি।(সিহাব)
অনেক কাঁদলাম ওকে জড়িয়ে ধরে।বললাম:
—-তোমার কিছু হবে না দেখো,আমি আছি তো তোমার পাশে(আমি)
—-তুমি পাশে থাকলে কি হবে তুমি তো আর আমার মৃত্যুকে আটকাতে পারবে না(সিহাব)
—-তোমাকে অনেকবার বলেছি ডাক্তার দেখাও কিন্তু তুমি দেখাতে না যার কারনে আজ তোমাকে হারাতে চলেছি(আমি)
—-আমি মরে গেলে তুমি যেন কষ্ট পেও না,কারন তোমার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না।মনের মতো একজনকে খুজে নিও।আর আমরা ছেলে মেয়ের না যেগুলো রেখেছিলাম সেগুলোই রেখো।আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।ভালো থেকো সুখে থেকো।
আমি আর
সেখানে থাকি নি চলে এসেছি।দুইদিন পর ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে।যেখান থেকে কেউ আর আসতে পারবে না।
এটা বলে নিলাদ্রি জোরে কান্না করে দিলো।তখন সিহাব ওকে বুকে টেনে নিয়ে বলল:
—-আচ্ছা আমি যদি তোমার ওই সিহাব হয়ে থাকি তাহলে,,,,,(সিহাব)
—-না এটা আমি কখনোই পারবো না। তোমার নাম এক হতে পারে কিন্তু মানুষতো এক না(নিলাদ্রি)
—-বিশ্বাস করো নিলাদ্রি আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।আর এতোদিন যে কষ্ট গুলো তুমি পেয়েছো সব আমার ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিতে চাই।প্লিজ নিলাদ্রি একটা সুযোগ দাও(সিহাব)
—-কখনো না,আমি নতুন করে আর কষ্ট পেতে চাই না।(নিলাদ্রি)
নিলাদ্রি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।কয়দিন নিলাদ্রি আর ছাদে আসলো না।এদিকে সিহাবের অফিস থেকে বদলি করলো অন্য এলাকায়।সিহাব ওর মা-বাবার থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছিলো।এমন সময় নিলাদ্রি পিছন থেকে বলল:-
—-আমায় একা রেখে চলে যাবে?(নিলাদ্রি)
সিহাব একটু মুচকি হাসলো।দৌড়ে এসে নিলাদ্রি সিহাবকে জড়িয়ে ধরে বলল:
—-খুব ভালোবাসি তোমায় আর কখনো হারাতে চাই না তোমায়।কোথাও হারিয়ে যাবে না তো?(নিলাদ্রি)
—-কোথাও হারিয়ে যাবো না পাগলি কথা দিলাম।(সিহাব)
অত:পর শুরু হলো এক নতুন জীবন।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com