Breaking News

এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪০



সাদ একে একে রেশমাকে মনের সব কথাগুলো জানায়।
রেশমা সাদের মুখে তার জন্য ভালোবাসা কথা শুনে চমকে উঠে।
এই ছেলে কি বলছে?
সাদের কথাগুলো রেশমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
রেশমা যে পরিবারের ছায়াকেও ঘৃণা করে আজ সে পরিবারের মেজো ছেলে তাকে ভালোবাসার কথা বলছে এটা আদৌও ভাবা যায়!
সাদের পরিবারের উপরে রেশমার অনেক রাগ ও ক্ষোভ থাকলেও সাদের প্রতি তা নেয়।
রেশমা যানে সাদ তার পরিবারের মতো সেলফিস বা লোভী না।
ওদের পরিবারের মধ্যে সাদেই একমাত্র আলাদা ধরনের।
রেশমা এখনও ভুলেনি সেদিনের কথা ,যখন তার মা জীবন মরণের সাথে লড়তে ছিল।
কিন্তু ওরা দুই বোন মাকে ডাক্তারের কাছে বা হসপিটালে নিতে পারছিল না।
ঠিক সে সময়ে সাদ তাদের সাহায্য করতে এসেছিল তবে তার ভাইয়ের জন্য তাদের সাহায্য করতে পারেনি।
হঠাৎ করে কথাটা মনে পড়ায় রেশমার ইচ্ছে থাকলেও সাদের সাথে খারাপ আচরণ করতে মন সায় দিচ্ছে না।
রেশমা মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় সাদের মন তার দিকে থেকে সরাতে সাদের সাথে কথা বলতে হবে।
এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোন সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
নাহলে সারা জীবনের জন্য সামনের মানুষটির কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে।
তার দরকার কি!
কথাটা ভেবে রেশমা সাদকে বললো, শুনুন আমার পক্ষে আপনাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।
আপনার মনে আমার জন্য কিভাবে ভালোলাগা বা ভালোবাসা তৈরি হয়েছে তা বুঝতে পারছি না।
কিন্তু আমার জানামতে ,আমি এমন কিছু করেনি যে আমার প্রতি আপনি দুর্বল হবেন?
সাদ রেশমার হাত জড়িয়ে ধরে বললো, প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।
দরকার হলে কিছুদিন সময় নেও তারপর ঠান্ডা মাথায় ভেবে না হয় তোমার সিদ্ধান্ত জানিয়ো।
আজকে বিষয়টি না হয় থাক।
রেশমা সাদের কথা শুনে বললো, এখানে ভাবনার কিছু দেখছি না তো!
আজকে আমার যা সিদ্ধান্ত দুইদিন পরেও তাই থাকবে।
তাই আজকে জানালে ক্ষতি তো আর হচ্ছে না।
সাদ রেশমার কথা শুনে বললো, প্রিয়তমা এতো কঠোর হয়ো না।
তোমাকে ছাড়া আমি যে অসম্পূর্ণ।
একটু একটু করে দিন দিন তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা এতটাই বেড়েছে যে আমি এখন ইচ্ছে করলেও তোমাকে ভুলতে পারবো না।
তুমি আমার রক্তে মিশে গেছো।
আচ্ছা আমার পরিবারের জন্য তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো না তো?
যদি তাই হয় তো আমি তোমার জন্য নিজের পরিবারকে ত্যাগ করতে রাজি আছি।
তবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া ছাড়া পরিবারের সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক থাকবে না।
তুমি শুধু একবার রাজি হয়ে যাও।
তারপর দরকার হলে আমি ভাবীর পায়ে ধরে তার কাছে তোমাকে চায়বো।
রেশমা সাদের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।
এই ছেলে কবে থেকে ওকে এতো ভালোবাসতে শুরু করছে
আর এক তরফা ভালোবাসা এমন গভীর হলোই বা কিভাবে!
ওর জন্য সাদ তার পরিবার ছাড়তে রাজি আছে এসব কি বলছে?
না যা হবার নয় তা নিয়ে সাদকে রেশমা দিবাস্বপ্ন বিভোর হতে দিবে না।
সাদের দিকে তাকিয়ে রেশমা বললো,
দেখুন এটা ঠিক আমি আমার বোনকে যতটা ভালোবাসি তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি ঘৃণা করি আপনাদের পরিবারকে।
বিশেষ করে আপনার ভাই,বাবা ও দুই মা’কে।
এই যে আপনি আমাকে পছন্দ করেন এটা যদি আপনার মা জানতে পারে তাহলে চেঁচামেচি শুরু করে দিবে। তিনি যে পরিমাণ দর্জ্জাল মহিলা এটা তার কানে গেলে আমাকে কিছু করতে পারবে না।
কিন্তু এমনও হতে পারে আপানাকে উত্তম মাধ্যমও দিতে পারে।
রেশমার কথা শুনে সাদ বললো,এসব আমার জানা আছে।
আর তুমি সত্যি করে বলো,আমার পরিবারের জন্য আমাকে ছাড়তে চাইছি তাই না?
রেশমা সাদের কথা শুনে বলল, আমি সেজন্য আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না।
আপনি হয়তো জানেন না রোহান ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে।
এখন আমি তার বাগদত্তা ।
সাদ রেশমার কথা শুনে চমকে উঠে পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলল, তুমি রোহানের বাগদত্তা বউ নও।
হবু বউ মানে বউ শব্দের আগে হবু আছে।
আর এখনও তোমার সাথে রোহানের বিয়ে তো হয়নি ।
তুমি ইচ্ছে করলেই তাকে ছেড়ে আমাকে গ্রহণ করতে পারবে।
রেশমা সাদের কথা শুনে বললো, আমাকে আপনার ভাইয়ের মতো মনে হয়?
সে যেমন আমার বোনকে রেখে অন্যজনকে নিয়ে মেতে ছিল।
আমিও তেমন রোহান ভাইকে রেখে আপনার কাছে আসবো।
একটা কথা ভালো মতো শুনে নিন, রোহান ভাইকে বিয়ে না করলেও আপনার কাছে আসবো না।
এমনকি আপনি পৃথিবীর একমাত্র পুরুষ হলেও আপনাকে আমি বিয়ে করবো না।
আর যে ছেলে প্রেমিকার জন্য মা,বাবা ও পরিবারকে ছাড়তে পারে।
সে একসময় আমার থেকে ভালো কাউকে পেলে আমায় ছাড়তে দ্বিধা করবে না।তা জানা আছে।
রেশমার কথা শুনে সাদ বললো, তুমি আমাকে ভুল বুচ্ছ ।
রেশমা সাদের কথা শুনে বললো, আমি ভুল বুঝিনি। বরং সঠিকটাই বুঝতে পারছি।
আপনি কি জানেন?
আপনাকে দেখলে আমার মায়ের রক্ত ভেজা শরীরের কথা মনে পড়ে ।
আমার মা’কে হারানোর দিনের কথা মনে পড়ে।
যার জন্য না কখনো আপনাকে আমি স্বামী হিসেবে মানতে পারবো ।
না কখনো ভালোবাসতে পারবো।
তাছাড়া রোহান ভাই এবং রিফাত ভাইয়া আমাদের জন্য যা করেছে তার ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না।
তাদের জীবনের লক্ষ্যেই হচ্ছে আমাদের ভালো রাখা।
যখন আমার বোনের পাশে দাদু ছাড়া আর কেউ ছিল না সে সময়ে রিফাত ভাইয়া আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
নিজের কথা না ভেবে আপুকে সামনে এগিয়ে যেতে সাপোর্ট করেছে।
আপুর এনজিও কাজে তারা দুই ভাই দিনরাত পরিশ্রম করে সাহায্য করছে।
আর রোহান ভাইয়া আমাকে তার ভালোবাসার কথা না বলেই
নিঃস্বার্থ ভাবে আমাকে কয়েক বছর ধরে ভালোবাসেন।
তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আমার মনে স্বামীর রূপে জায়গা তৈরি করেছে।
সেখানে তাকে রেখে আপনার কাছে আসবো তা ভাবলেন কি করে!
আপনার কয়েক মাসের ভালোবাসার জন্য আমি তাকে ধোঁকা দেয় কি করে?
রেশমার কথা শুনে সাদ বললো,আমার ভুল হয়ে গেছে
মাফ করে দাও।
আমি স্বার্থপরের মত শুধু নিজে কথা ভেবেছি।
রোহানের কথা ভাবেনি।
না তোমার কথা ভেবেছি।
তবে প্রিয়তমা ভুল করছি শুধু তোমাকে ভালোবাসি বলে।
এই জীবনে হয়তো তোমাকে আমি ভুলতে পারবো না।
আমার হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে থাকবে আজীবন।
আমি তোমাকে এই জীবনে আপন করে পাবো না জানি তবুও আমৃত্যু তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
কথাটা বলে সাদ বসে পড়ল।
ওর চোখ দিয়ে ঝরঝরে পানি পড়ছে।
রেশমার তা দেখতে ভালো লাগছে না।
এখানে থাকলে হয়তো তাকে দেখে সাদের কষ্ট আরও বাড়বে রেশমা তা চাচ্ছে না।
তাই রেশমা ছাদ থেকে দ্রুত চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর
রাতে রেশমা রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আর ভাবছে তা সাথে আজকে এটা কি হলো!
সাদ তাকে ভালোবাসে তাও যেয় সেয় ভালোবাসা না কঠিন ভালোবাসা।
ওর জন্য সাদের চোখে পানি এসেছে
সাদকে তখন কাঁদতে দেখে রেশমার খারাপ লাগছিল।
একটা ছেলে কতটা ভালোবাসলে তার জন্য কাঁদতে পারে তা রেশমা বুঝতে পারছে।
আজকে সাদ শানের ভাই না হলে তাকে ফিরিয়ে দিতে রেশমার অনেক কষ্ট হতো।
রেশমা কখনো ভাবেনি সাদ তাকে ভালোবাসতে পারে।
সাদ মাঝে মাঝে তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো।
বাগানে দাঁড়িয়ে গাছে পানি দেওয়ার সময়ে কতবার ওকে আড়চোখে দেখছে তার হিসেব নেয়।
রেশমার এখন বিষয়গুলো মনে পরছে।
তখন একবারও মনে হয়নি সাদ তাকে দেখছে।
অবশ্য তখন বুঝতে পারলে সাদকে এতোটা ওর দিকে ঝুঁকতে দিতো না।
এখন আর কিছুই ওর হাতে নেয়।
রেশমার রুমের মধ্যে ভালো লাগছে না তাই রান্না ঘরে যায় মেহরাবের জন্য কিছু করতে।
কিন্তু আজকে কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না।
বারবার সাদের চোখের পানি দেখেছে তা চোখের সামনে ভাসছে।
মায়ের কথা ,সাদের কথা ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ছে আর কাজে ভুল হচ্ছে।
রেশমা নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত হয়ে গেছে।
সাদকে রেশমা ভালোবাসে না ঠিক।
কিন্তু ওর জন্য মনের মধ্যে সহানুভূতি হচ্ছে ।
কেন হচ্ছে তা ভেবে পাচ্ছে না।
এমনিতেই কয়েকদিন ধরে ওর বাবার বিষয় নিয়ে অন্য মনস্ক হয়ে আছে।
রেশমা চায় না ওর বাবা‌ ওকে রোহানের হাতে তাকে তুলে দিক।
রেশমার ইচ্ছে ছিল ওর মায়ের মতো বোন ওকে রোহানের হাতে তুলে দিব।
রেশমা কথাটা মৌরিকে বলেছিলো ও ।
রেশমার কথা শুনে মৌরি বোনকে বলেছে, একটা মেয়েকে আরেকজন মেয়ে অভিভাবক হয়ে বিয়ে দিতে পারে না।
ইসলামের শরিয়ত মোতাবেক এমন বিয়ে জায়েজ নেয়।
একজন মেয়ের অভিভাবক তার বাবা,যদি বাবা না থাকে তো চাচা চাচাও যদি না থাকে তো মামা।
আমাদের যেহেতু চাচা,মামা নেয় তাই তাকে এই দায়িত্ব দিতে হবে।
এ বিষয়ে আমি আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না।
যে বোন এতদিন সব দায়িত্ব পালন করছে সে বোন ওর বিয়েতে অভিভাবক হতে পারবে না সেদিন থেকে কথাটা ভেবে মন খারাপ লাগছিল।
আর আজকে সাদের মুখে ওর জন্য ভালোবাসার কথা শুনে মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।
রেশমা অন্য মনস্ক হয়ে মেহরাবের জন্য লুডলস রান্না করতে ছিল ।
চুলার পাশে কড়াই ধরার জন্য নুসনি ছিল তা খেয়াল না করে লুডলসের কড়াই ওড়না দিয়ে ধরে নাড়াচাড়া করছে
এক সময় রেশমার ওড়নার আগুন ধরে যায়।
রেশমার সেদিকে খেয়াল নেয়।
কিছুক্ষণ পর রুমের বাহিরের ফুলির কন্ঠস্বর শোনা যায়।
সে চিৎকার করে আপা আগুন বাঁচাও বলছে ।
মৌরি রুমে বসে আগুন শুনে চমকে উঠে!
মেহরাব ছোট থেকে আগুন ভয় পায়।
ছেলেটা আগুনের কথা শুনা মাত্র কাঁপতে শুরু করছে।
মৌরি মেহরাবকে কাঁপতে দেখে বলল, সোনা ভয় পাচ্ছ কেন?
তুমি না আমার সাহসী ছেলে?
এসো আমরা দেখে আসি তোমার ফুলি আন্টি চিৎকার করছে…..
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com