Breaking News

এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪৪



তার মন বলছে এই মেয়ে বাহিরে দেখতে যেমন ভিতরে ভিতরে হয়তো তার থেকে ভয়ংকর।
এর থেকে দূরে থাকায় ভালো।
সাজ্জাদের মতো ছেলে শেষমেষ এই মেয়ের হাতে ঘোল খেলো মৌরি কাছে ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না।
অবশ্য এসব ওদের সমস্যা তা নিয়ে অযথা ভাবার মৌরির সময় কোথায়!
মৌরি বাড়িতে থেকে হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হবে সে সময়ে শান মৌরির সামনে এসে দাঁড়ায়।
শানকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে মৌরি বিরক্তবোধ করে ।
শান তা বুঝতে পেরে বললো, আমি জানি আমাকে দেখলেই তোমার বিরক্ত লাগে।
তাই আমি চেষ্টা করি তোমাকে বিরক্ত না করতে।
আজকেও করার ইচ্ছে ছিল না।
তবে তোমার সাথে জরুরি কথা ছিল সেজন্য সামনে আসা ।
তুমি চিন্তা করো না, তোমার বেশি সময় আমি নিবো না।
মৌরি শানের কথা শুনে বললো,
আপনার সাথে আমার কোনো জরুরি কথা থাকতে পারে না।
সামনে থেকে সরে দাঁড়ান।
শান মৌরির কথা শুনে বলে,মৌরি তুমি একজন ডাক্তার সেজন্য রোগী বা তাদের অভিভাবকরা তো তোমার সাথে কথা বলতে আসে তাই না?
আজকে না হয় আমাকেও তোমার রোগীর একজন অভিভাবক ভেবে কিছু বলার সুযোগ দাও।
আমার অন্য পরিচয় না হয় আজ ভুলে যাও ।
মৌরি শানের কথা শুনে রেগে বললো, ভুলে যাওয়া আপনার স্বভাব আমার নয়।
আর আপনি রোগীর অভিভাবক হলেই তাতে আমার কী?
শান মৌরিকে রেগে যেতে দেখে বললো, তাতে কিছু হয়েছে কখন বললাম?
আমি বুঝাতে চেয়েছি , তুমি যেহুতু একজন ডাক্তার সেক্ষেত্রে অনেক সময় তোমার শত্রুর ও তোমাকে প্রয়োজন হতে পারে।
যেমন এই মুহূর্তে তোমাকে আমার প্রয়োজন ।
শানের কথা শুনে মৌরি বললো,শান চৌধুরী আপনার সাথে আমার কোনো প্রয়োজন থাকতে পাড়ে না।
আপনি আসতে পারেন।
শান মৌরির কথা শুনে বলে, আমি তা জানি, আমার কাছে তোমার কোনো প্রয়োজন নেয় আর কখনো হবেও না।
কিন্তু মৌরি আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য তো তুমি সে কবেই তোমার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছো।
আজকে না হয় যাকে সাহায্য করছো তার প্রয়োজনে একটু কথাটা শুনো।
মৌরি শানের কথা শুনে বলল, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,যা বলার জলদি বলে সামনে থেকে বিদায় হোন।
শান মৌরির কথা শুনে মনে মনে কষ্ট পেলেও প্রকাশ করলো না।
আজকের এই ব্যাবহার যে ওর পাওনা ছিল।
শান মৌরির পায়ের কাছে বসে বললো, অতীতে আমি এবং আমার পরিবার তোমার সাথে যে আচরণ করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।
তা জেনেও তোমার কাছে আমার মায়ের পক্ষে থেকে ক্ষমা চায়।
মৌরি আমার মায়ের অবস্থা তেমন ভালো না‌ তা তো তুমি আমার থেকে ভালো জানো।
আমার মা আস্তে আস্তে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে এগিয়ে যাচ্ছে ।
আমরা তা দেখেও কিছু করতে পারছি না ।
এর থেকে বড় শাস্তি কি হতে পারে!
মৌরি শানের কথা শুনে বললো,তা এসব আমায় বলছেন কেন?
তোমাকে বলছি কারন , তোমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমার মা ও আমরা পাচ্ছি।
মৌরি তোমার দয়ার শরীর তাইতো আমাদেরকে তুমি ঘৃণা করা সত্ত্বেও মা’কে চেকআপ করতে ডাঃ পাঠাও।
আমি বাড়িতে না থাকলে তার দেখাশোনা করতে লোক পাঠাও।
তা আমি জানি।
কিন্তু মৌরি মায়ের যে এই মুহূর্তে সেবার চেয়ে ক্ষমা দরকার বেশি।
মা যে আমার তোমার কথা ভেবে
ভিতরে ভিতরে অনু সূচনার আগুনে দগ্ধ হচ্ছে।
মৃত্যু্র আগে তোমার কাছে যে ক্ষমা চায়।
মায়ের মনে একটু শান্তির জন্য তুমি কি আমার মা’কে ক্ষমা করতে পারবে না?
যে মৌরির কারণে কত অসহায় মেয়েরা সাবলম্বী হয়েছে।
অসংখ্য মানুষ অসুস্থ্য থেকে সুস্থ্য হয়েছে তার মন কি আমার মায়ের জন্য একটু দয়া দেখাতে পারে না মৌরি।?
শানের কথা শুনে মৌরি বলে, আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন তো আপনার মায়ের এমন অবস্থা না হলে সে কি আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবতো?
আমার তা মনে হয় না।
বরং আমাকে এবং আমার আশেপাশের মানুষের ক্ষতি করতে মুখিয়ে থাকতো।
তাছাড়া আপনি এবং আপনার পরিবার কি সেদিন আমার মায়ের উপরে দয়া দেখিয়েছিলেন?
উল্টো সেদিন আমার মা’কে প্রস্টটিউটের মাও একজন প্রস্টটিউট বলে আক্ষা দেওয়া হয়েছে।
একদিন আপনারা যাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন ,এখন তার কাছে ক্ষমা চায়তে লজ্জা করলো না।
শান মৌরির কথা শুনে মাথা নিচু করে রয়।
মৌরি তো মিথ্যা বলেনি শান ও তার পরিবার কাজেই করেছে এমন ।
বিশেষ করে ওর মায়ের এবং অর্নির জন্য মৌরি ও তার মা’কে প্রস্টটিউট পর্যন্ত বলেছিল শান।
যেখানে তারা ছিল নির্দোষ।
রাগের মাথায় নেওয়া সিদ্ধান্ত কখনো জীবনে সফলতা আনতে পারে না।
বরং রাগের বশে কাজ করলে সেটা ভুল ছাড়া কিছু হয় না।
যার জলন্ত প্রমাণ শান নিজেই।
শানের জিদ,রাগের কারনে মৌরি ওর থেকে এতো দূরে।
অতীতের কাজের কথা ভাবলে ওর নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।
আজকে ওর কর্মের দোষে স্ত্রী ও সন্তানের সামনে থেকেও কাছে টেনে নিতে পারছে না।
মৌরি ও মেহরাবকে বুকে জড়িয়ে ধরতে না পেরে বুকটা হাহাকার করছে।
কখনো এই হাহাকার শেষ হবে কিনা তা শানের জানা নেয়।
কথাগুলো মনে মনে ভাবলে চোখে পানি এসে যায়।
যেমন এখন এসে গেছে।
মৌরি শানকে মাথা নিচু করে কাঁদতে দেখে বললো,যান আপনার মাকে গিয়ে বলে দিন।
আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
কিন্তু এর বাইরে সে যেনো কিছু না ভেবে।
সে যদি ভেবে থাকে তাকে ক্ষমা করলে তার ছেলেও ক্ষমা পাবে তা হলে ভুল।
মৌরির কথা শুনে শান দাঁড়িয়ে বললো, তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো আমার জানা নেয়।
তুমি মা’কে ক্ষমা করে দিয়োছো কথাটা শুনলে সে অর্ধেক সুস্থ্য হয়ে যাবে।
আর আমার মতো পাপিকে তো শাস্তি দেওয়া যায় মৌলি কিন্তু ক্ষমা করা যায় না তা আমি জানি।
তাই তুমি চায়লে আমাকে শাস্তি দিতে পারো।
মৌরি শানের কথা শুনে বললো, আপনাকে শাস্তি দেওয়ার আমি কে?
আর শাস্তি দেওয়ার হলে তো সেদিন দিতাম যেদিন আমাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
আমার চোখের সামনে তার সাথে বাসর করেছেন।
আমিও মানুষ আমারো কষ্ট হতে পারে তা বিন্দুমাত্র ভাবেননি।
আপনার স্ত্রী হয়েও আপনার মনে আমার জন্য জায়গা ছিলো না তা মেনেছি।
আপনার প্রথম স্ত্রী হয়েও সম্মান কপালে না জুটলেও জুটেছে ছিল কাজের লোকের তকমা।
সেদিন আপনাকে স্বামীর আসনে বসিয়ে‌ ও যেহেতু শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবিনি আজকে কেন ভাববো?
যেখানে এখন আমার কাছে আপনার পরিচয় শুধু অচেনা কেউ।
আর একটা কথা জানেন তো যে যেমন কর্ম করবে ফলতো তেমন মিলবে।
তার বড় উদাহরণ আপনার পরিবার।
আপনার কর্ম দোষে আপনার সহধর্মিণী , ভালোবাসার অর্নি অন্যের স্ত্রী।
আর আপনার ভালোবাসার মানুষটি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে এটাই তো মনে হচ্ছে আপনার জন্য
বড় শাস্তি কথাটা বলে মৌরি চলে যায়।
শান মৌরির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলো, তুমি ভুল বললে বৌ।
আমার জন্য বড় শাস্তি হচ্ছে চোখের সামনে স্ত্রী ও সন্তানকে দেখেও কাছে টানতে পারছি না।
এই দেহ মন সব দিয়ে যাকে ভালোবাসতে চাচ্ছি সে আমার ছায়াও সহ্য করতে পারে না।
এই শাস্তি থেকে যে আমার কাছে মৃত্যুও অনেক ভালো।
বৌ তুমি কখনো বিশ্বাস করবে কিনা জানা নেয় তবে আমি তোমাকে অর্নির থেকে বেশি ভালোবাসি।
অর্নির প্রতারণা আমাকে কষ্ট দিয়েছে তবে ওকে ছাড়া বেঁচে থাকা কঠিন মনে হয়নি।
কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা বড় দায়।
কিছুদিন পর।
মৌরির এনজিওতে রিফাতের রেফারেন্সে শানের চাকরি হয়েছে।
তাই শানের কাছে ইদানিং সময়কে ঈদ ঈদ লাগছে।
যেখানে প্রতিদিন মৌরিকে দেখতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সেখানে অনেকটা সময় মৌরির সাথে থাকতে পারছে এটায় তো অনেক।
অবশ্য রিফাত না থাকলে এমন সুযোগ কখনো পাওয়া হতো না।
শান রিফাতের কাছে সেজন্য কৃতজ্ঞতা শেষ নেয়।
সেদিন রিফাত কে শান মৌরির জন্য চিন্তা, মৌরির প্রতি ওর ভালোবাসা এবং বাবা বেঁচে থাকতেও ছেলে বাবার আদর পাবে না।
এতে মেহরাবের ভবিষ্যৎ এ খারাপ প্রভাব ফেলবে তা বোঝায়।
রিফাতের কাছে শানের ভালোবাসা মূল্য থাকতে না পারে কিন্তু মেহরাব ?
সেতো রিফাতের জান।
রিফাত এই জীবনে মৌরিকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।
মৌরি তা জেনেও ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
রিফাত ভালো করেই জানে মৌরি কখনো তার জীবনে ফিরবে না।
আর রিফাতকে মেহরাবের বাবার জায়গা দিবে না।
ছেলেটা বাবা ছাড়া বড় হবে রিফাত তা মানতে নারাজ।
শান যেহেতু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।
ছেলে ও স্ত্রীকে ফিরে পেতে চায়।
তাহলে একটা সুযোগ তো তাকে দেওয়া উচিত।
শান যদি মৌরির কাছাকাছি বেশি থাকে তাহলে এক সময় মৌরির মন পরিবর্তন হতে পারে।
শানকে মেহরাবের কথা ভেবে মেনেও নিতে পারে কথাটা ভেবে মৌরির এনজিওতে শানকে চাকরি দিতে মৌরিকে রিকোয়েস্ট করে ।
অন্যদিকে মৌরি রিফাতকে শানের জন্য রেফারেন্স করতে দেখে রিফাতের মনে কি চলছে বুঝতে অসুবিধা হয়নি।
মৌরি রিফাতের কথাগুলো ভেবে মুচকি হাসে ।
রিফাত কি ভেবেছে?
শানকে কাছাকাছি দেখে মৌরি দুর্বল হয়ে যাবে?
অসম্ভব মৌরি সবাইকে দেখিয়ে দিবে শানের কাছিকাছি থাকা বা না থাকায় মৌরির কিছু যায় আসে না।
এই মৌরি যে খায়ের চৌধুরীর হাতে গড়া শানের জন্য এক হৃদয়হীন নারী।
যার মনে শানের জন্য ভালোবাসা তো দূরের কথা ঘৃণা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেয়।
শান হাজার চেষ্টা করেও এই মনের বন্ধ দরজা খুলতে পারবে না।
কিছুদিন পর
তিনদিন হলো,রেশমা রোহান ও রোহানের সম্পূর্ণ পরিবার দার্জিলিং ঘুরতে গেছে ।
রিফাত মৌরিকে ও যেতে বলেছিল কিন্তু মৌরির জরুরী কাজ থাকায় যেতে পারেনি।
তবে মৌরি না গেলেও রেশমা মেহরাবকে সাথে নিয়ে গেছে।
মৌরি এতো দূরে ছেলেকে দিতে চায়নি কিন্তু মেহরাব না গেলে রেশমা ও রোহান যাবে না।
মৌরির জন্য ওদের সবার যাওয়া পন্ড হবে কথাটা ভেবে মৌরি মেহরাবকে যেতে অনুমতি দিয়েছে।
তবে মেহরাব যাওয়ার পর থেকে মৌরির ছেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে ।
মেহরাব রেশমার সাথে বেশি ওর শ্বশুড় বাড়ি থাকলেও মৌরি কাজের ফাঁকে দুইদিন পর পর গিয়ে ছেলে সাথে দেখা করে আসতো।
কিন্তু এখন তো তা সম্ভব নয়।
আর ছেলে আসবে আরও চার দিন পর ।
এ ক’দিন ছেলেকে না দেখেয় ওকে থাকতে হবে।
পরেরদিন
মৌরি আজকে দুপুরে শহরে যাবে নিজের হসপিটালের জন্য মেডিসিন আনতে ।
সেজন্য তাড়াহুড়ো করে হসপিটালে থেকে এসে ফ্রেস হয়ে কলি কে কিছু খেতে দিতে বলে।
কলি খাবার দিলে মৌরি খেতে বসে মেহরাবের কথা মনে করে খেতে পারলো না।
হাত ধুয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেল যায়।
কিছুক্ষণ পর রেডি হয়ে নিচে নেমে কলিকে সাবধানে থাকতে বলে বাড়িতে থেকে বের হতে নিলে সামনে শানের সাথে দেখা হয়ে যায়।
শান মৌরিকে বের হতে দেখে বললো, তুমি নাকি আজ এনজিওর ওখানে যাবে না ম্যানেজার বললো।
মৌরি শানের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না তা জেনেও শান বারবার ওর সাথে কথা বলতে চায়।
শান দশটা প্রশ্ন করলে মৌরি উঃ দেয় একটা।
কিন্তু আজ এর প্যাচাল শুনতে গেলে দেরি হয়ে যাবে ভেবে বললো, হসপিটালের মেডিসিন আনতে শহরে যাচ্ছি কথাটা বলে একটু হেঁটে গাড়িতে উঠে যায়।
মৌরি নিজে ড্রাইভ করে শহরে যাচ্ছিল ।
গ্রামের রাস্তা পাড় হয়ে শহরের রোডে উঠে গাড়ি চালিয়ে সামনে দিকে যাচ্ছিলো তখন দেখে দূরে থেকে একটি ট্রাক সামনের দিকে আসছে ।
মৌরি খেয়াল করে দেখলো ট্রাকটি রং সাইড দিয়ে আসছে এতে ওর গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৌরি কিছু একটা ভেবে গাড়ির দিক পরিবর্তন করতে চেষ্টা করতে যেয়ে দেখে গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না।
অন্যদিকে ট্রাকটি ওর গাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে,,,
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com