Breaking News

এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪৫

মৌরি কিছু একটা ভেবে গাড়ির দিক পরিবর্তন করতে চেষ্টা করতে যেয়ে দেখে গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না।
অন্যদিকে ট্রাকটি ওর গাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে ।
মৌরি বুঝতে পারছে না এখন সে কি করবে”
মৌরির চোখের সামনে সামনে রেশমা, মেহরাবের
ভাসছে।
ওদের সাথে বুঝি আর দেখা হবে না।
ফেরা হবে না ওদের কাছে আর দেখা হবে না নিজ গৃহ।
ছেলেকেও বড় হতে দেখতে পারবে না।
তবে মনে একটা শান্তি নিয়ে যেতে পারছে , রেশমার আছে মেহরাব কে সামলানো জন্য।
আচ্ছা ছেলেটা ওকে খুঁজবে না তো?
না পেয়ে আমার উপর অভিমানের পাহাড় গড়ে তুলবে না তো?
তাহলে মৌরি মরেও যে শান্তি পাবে না।
মৌরির মনে একটা বিশ্বাস আছে ,সে জানে বেঁচে না ফিরলেও রেশমা ও রোহান কখনো মেহরাবের অযত্ন বা অবহেলা করবে না।
ওদের সন্তানের থেকে বেশি ভালোবাসা দিবে মেহরাব কে।
তবে রাঁধা,কলি এনজিওর মেয়ে গুলোর কি হবে?
ওদের মলিন মুখগুলো চোখের সামনে ভাসছে।
ওরাও তো মৌরির সন্তানের মতো।
মেহরাবের জন্য সবাই আছে কিন্তু মৌরি মারা গেলে ওদের জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকবে না।
রেশমা তো ওর চলে যাওয়া মানতে পারবে কিনা তা জানা নেয়।
তার উপর মেহরাবের দায়িত্ব থাকবে ওর ছোট কাঁধে।
আচ্ছা ,রোহান ও রেশমা কি পারবে ওদের দায়িত্ব নিতে?
নাকি নিজেদের সংসারের মাঝে হারিয়ে ফেলবে দায়িত্ব গুলো।
আচ্ছা রাঁধার কি হবে?
মৌরির কিছু হলে তো রাঁধার বাবা জোর খাটিয়ে মেয়েকে নিয়ে যাবে।
মেয়েটা সমাজের কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে রবে আজীবন।
আচ্ছা তখন শানকে সাথে নিয়ে এলে হয়তো এখন কোনো উপায় বের করতে পারতো।
ইস্ তখন কেন যে রাগারাগী করে ওকে সাথে আনলো না।
সাথে কেউ থাকলে সাহস পেতো।
মৌরি হঠাৎ করে মাথায় আসে , ছিঃ ছিঃ সে এসব কি ভাবছে।
শান থাকা বা না থাকার সাথে তো এটা বদলে যেতো না।
বরং আল্লাহ ওর ভাগ্যে যা রেখেছেন হবে তো সেটায়।
আজকে কপালে মৃত্যু লেখা থাকলে তো শত চেষ্টা করেও বাঁচতে পারবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে মৌরির মাথায় আসে , তবে বাঁচার চেষ্টা তো করতেই হবে।
ওকে এতো সহজেই হার মানলে চলবে না।
তাকে নিজের জন্য না হলেও এই অসহায় মেয়েদের জন্য বাঁচতে হবে।
দরকার হলে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাঁচার লড়াই করে যাবে।
এভাবে ভয়ে ভয়ে মরতে চায় না।
কিন্তু গাড়িতে বসে থাকলে নিশ্চিত মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আর যদি গাড়ি থেকে লাফিয়ে বাহিরে পড়ে তাহলে আল্লাহ রহমত হলে এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কথাটা ভাবা মাত্রই চলন্ত গাড়িতে থেকে দরজা খুলে লাফিয়ে পড়ে কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি!
তাইতো ট্রাক গাড়ির কাছাকাছি থাকায় না দেখে লাফিয়ে পড়ে ।
পাশে যে বিশাল গাছ তা খেয়াল করেনি।
না দেখে লাফিয়ে পড়াতে গাছের সাথে মাথায় আঘাত লেগে গড়িয়ে পড়ে যায় রাস্তার পাশে থাকা নিচু বাগানে।
তখনই কপাল ফেটে রক্তের ফোয়ারা ছুটে।
রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার দিকে তাকিয়ে ঝাপসা চোখে দেখলো ট্রাকটি গাড়িকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে।
তাতে হয়তো ট্রাক ড্রাইভার খান্ত হয়নি গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে বাগানের দিকে ছুঁড়ে ফেললো।
সে দৃশ্য দেখে মৌরি চোখে মুখে আতংকে ছেয়ে গেছে ওর মুখ পাংসে হয়ে গেছে।
এমনিতেই রাস্তা থেকে বাগান অনেকটা নিচু থাকায় গাড়িতে থেকে গড়িয়ে পড়ার সময় কাটাযুক্ত গাছে লেগে শরীর কেটে ছিঁলে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছে।
মৌরি কোনো রকমে মাথা চেপে ধরে বসতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
মৌরি মাথা সোজা রাখতে চেষ্টা করেও পারছে আস্তে আস্তে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে।
চোখের সামনে ভেসে এলো মেহরাব ও রেশমার সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো।
মেহরাব ওকে মা মা বলে ডেকে চলছে।
রেশমা ওকে বলছে আপু দেখেতো দার্জিলিং থেকে শাড়িটা এনেছি তোমার জন্য কেমন হয়েছে?
এই আপু তুমি কথা বলছো না কেন?
রিফাত বলছে,মৌরি দার্জিলিং এসে তোমাকে অনেক মিস্ করছি এসে পড় না।
রোহান ডাকছে মৌরিকে , রেশমা অভিমান করেছে তার অভিমান ভাঙাতে সাহায্য লাগবে।
ওরা সবাই এতো কথা বলছে কেন?
ওরা কি দেখতে পারছে না আমি অসুস্থ্য।
এতো কথা বলছে কেন ওঁরা?
কে কোথায় আছ?
ওদের আমার সামনে থেকে কেউ সরাও।
মৌরির চোখের সামনে ভেসে এলো পাঁচ বছর আগের সে রাত।
যে রাতে শান ওকে বন্ধ ঘরে দিয়েছিল স্ত্রীর অধিকার।
মৌরির চোখে মুখে ফুটে ওঠে হাসির ঝিলিক।
তবে তার কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওর মায়ের রক্তাত মুখটা।
মৌরি মা’কে এমন অবস্থায় দেখে মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে ।
মা ওরা তোমাকে বাঁচাতে দিলো না মা।
তোমার একা থাকতে কষ্ট হচ্ছে না?
মা তুমি চিন্তা করো আমি তোমার কাছে আসছি।
মৌরির কেমন অস্থির অনুভূত হচ্ছে।
দূর থেকে কেউ আসছে ওর কাছে।
কে এলো, ওটা দাদা জান না তো?
হ্যাঁ দাদা জানেই তো এসেছে,
আর কোনো চিন্তা নেয়।
এবার ওর সব ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
এদিকে মৌরির মনে হচ্ছে খায়ের চৌধুরী ওর কাছে এসে ওকে ডাকছে তার সাথে যেতে বলছে।
মৌরি তাকে দেখে খুশি হয়ে আবারও ফিসফিসিয়ে বললো, দাদা জান আপনি এসেছেন?
খায়ের চৌধুরী ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, চলে আয় গিন্নী।
মৌরি হাত বাড়িয়ে দিবে তার আগে চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো।
ধীরে ধীরে চোখ বুজে ফেললো
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com