Breaking News

এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪৬

জীবনে গতিপথ কখন যে পরিবর্তন হবে তা কেউ জানে না।
আজকে যে আমাদের চরম শত্রু কাল হয়তো সে বন্ধু। তার উছিলায় একদিন হয়তো জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে।
একদিন যার ছায়া সহ্য হতো আজকে হয়তো তার জন্য জীবনের দিশা খুঁজে পেতে পারি।
হয়তো অন্ধকারের যাত্রী হয়ে সে আমাকে আলোর দিশা খুঁজে দিবে।
শত দুঃখের মাঝে কেটেছে যার অতীত হয়তো তার উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো হবে ভবিষ্যৎ।
এক সময় জীবনে না পাওয়ার ঝুলি পূর্ণ।
এটাই তো জীবন।
জীবন যে বড় বিচিত্রময়।
কখন যে কি ঘটে যায় তা এক আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
রেশমা ও রোহান ওদের পরিবারের সাথে দার্জিলিং এসেছে চারদিন হয়েছে।
এখানে এসে আল্লাহর সৃষ্টি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে গেছে।
রেশমার পরিবারের কখনো ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ বা সামর্থ্য ছিল না।
তাছাড়া রেশমার কাঁধে ছোট থেকেই দায়িত্বের ভার ছিলো বেশি।
ছোট ছিলো সে সময়ে মায়ের দেখাশোনা ওকেই করতে হয়েছে।
কারণ ওর মা ছোট বোনের মৃত্যু,বড় বোনের বিয়ে নামক ধংস সহ্য করতে না পেরে মানসিক রোগী হয়ে যায়।
সে সময়ে বড় বোনের জীবন এতটাই জটিল অবস্থায় ছিল যে সে সময়ে মা ও বোনের দিকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নজর দিতে পারেনি।
তখন রেশমায় ওর মা’কে আগলে রাখে।
তারপর হঠাৎ একদিন ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় খায়ের চৌধুরীর বদলাতে।
রেশমার বড় বোন রেশমার দায়িত্ব নেয়।
নিজের কালো অতীত ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয় রেশমার বোন।
কিন্তু তখন অনেক কিছু বদলে গেছে।
রেশমা বড় বোনকেও কাছে পেয়েছে তবে কিছু অহংকারী মানুষের কারণে মা’কে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেছে।
অবশ্য মা’কে হারিয়ে বোনের কাছে মায়ের ভালোবাসা পেয়েছে।
সাথে পেয়েছে রক্তে মাংসে গড়া জীবন্ত ছোট একটা পুতুল।
পুতুলের আগমনের রেশমার জীবনে মানেই বদলে যায়।
কিশোরী মেয়েটা এক সময় হয়ে ওঠে জীবন্ত পুতুলের মামণি।
যার হাসি খুশি হয়ে যায় রেশমার ভালো থাকার ওষুধ।
তারপর ধীরে ধীরে পুতুলটা বড় হতে থাকে।
রেশমা কখনো নিজের জীবনে রাজকুমার নিয়ে স্বপ্ন দেখেনি।
কিন্তু এক রাজকুমার এসে ঠিকই রেশমাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছে।
কালের পরিক্রমায় রাজকুমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
সে রাজকুমার হচ্ছে রোহান।
রোহানের প্রতিটা ক্ষণ কাটে রেশমাকে ভালো রাখার চিন্তায়।
রোহানের ইচ্ছে রেশমার সকল অপূর্ণতা কে পূর্ণ করা।
সেই লক্ষ্যে ওকে দার্জিলিং বেড়াতে নিয়ে এসেছে।
চারদিন শুধু ঘুমানোর আর খাওয়ার সময় ছাড়া ঘুরেছে।
আজকে সকাল থেকে রেশমার মনটা খারাপ থাকায় ঘুরতে যায়নি।
রেশমার মন ভালো করার জন্য মেহরাব ও তার রোহান আঙ্কেল উঠে পড়ে লেগেছে।
তবুও কাজ হচ্ছে।
মেহরাব বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে মামণির মন খারাপ হলো কেন?
তবে চুপচাপ বসে থাকা যাবে না।
তাহলে মামণি মন খারাপ করে এখানে থম মেরে বসে থাকবে।
মেহরাব কথাটা ভেবে মামণিকে চুমু দিয়ে বললো,
আচ্ছা মামণি দার্জিলিং কি জন্য বিখ্যাত তুমি কি জানো?
রেশমা মাথা ঝাঁকিয়ে না বোঝায় ।
মানে সে জানে না।
ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা ও দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ের জন্য বিখ্যাত।
তাছাড়া দার্জিলিং তার অনাবিল সৌন্দর্য এবং মনোরম জলবায়ুর কারণে ভারতের একটি জনপ্রিয় ছুটির গন্তব্য হয়ে আসছে ।
রোহান এভাবে মেহরাবের প্রশের উত্তর দিলো।
মেহরাব খুশি হয়ে বললো, মামণি আঙ্কেল বলতে পেরেছে ইয়া হু।
আচ্ছা আঙ্কেল আমরা তো এক ক’দিন অনেক কিছু দেখেছি।
কি কি শক্ত শক্ত নাম মনে রাখতে পারছি না।
মা যদি জানতে চায় আমরা কী কী দেখেছি?
রোহান মুচকি হেসে বলল, আপু জানতে চায়লে বলবে,
আমরা
পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশন ঘুম দেখেছি।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয় দেখেছি।
পৃথিবীর বিখ্যাত প্রার্থনা স্থান ঘুম মোনাস্ট্রি।
আর ছবির মতো অপূর্ব সুন্দর স্মৃতিসৌধ বাতাসিয়া লুপ বিলুপ্ত প্রায় পাহাড়ি বাঘ Snow Lupard খ্যাত দার্জিলিং চিড়িয়াখানা গিয়েছি।
এবং অসাধারণ শৈল্পিক নিদর্শন খ্যাত ‘আভা আর্ট গ্যালারি’।
শতবর্ষের প্রাচীন মন্দির ‘দিরদাহাম টেম্পল’।
পাথর কেটে তৈরি ‘রক গার্ডেন’ এবং গঙ্গামায়া পার্ক।
মহান সৃষ্টিকর্তার বিশাল উপহার হিমালয় কন্যা কাঞ্চনজংঘা।
বিশুদ্ধ পানির অবিরাম বয়ে যাওয়া ভিক্টোরিয়া ফলস।
মেঘের দেশে বসবাসরত এক সুসভ্য জাতির সংস্কৃতি।
দ্যা মল দেখা হয়েছে।
মেহরাব রোহানের কথা শুনে অভিজ্ঞ সুরে বলে,তা তো বোঝলাম।
কিন্তু আমার ছোট মাথায় এতো গুলো নাম মনে রাখি কিভাবে তুমিই বলো?
রোহান ওর কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে বললো,আব্বু তোমাকে মনে রাখতে হবে।
তুমি ট্যাবে যে ছবিগুলো তুলেছো তা দেখালেই আপু বুঝতে পারবে।
মেহরাব রোহানের কথা শুনে বলল,তা আগে বলবে না?
ইস কতগুলো কথা বলালো এই বাচ্চাটাকে দিয়ে।
রেশমা মেহরাবের কথা শুনে রোহানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার সোনাকে দিয়ে এতো কথা বলানো জন্য শাস্তি আছে।
রোহান রেশমার কথা শুনে বলে,রানী সাহেবা এই অধম আপনার যে কোন শাস্তি মাথা পেতে প্রস্তুত।
যদি শাস্তির পরে মিষ্টি কিছু পাওয়া যায়।
মেহরাব রোহানের কথা শুনে বলল, আঙ্কেল তুমি আমায় কপি করলে কেন?
রোহান আবাক হয়ে বললো!
কখন কোথায়?
মেহরাব রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,এই যে কিছুক্ষণ পূর্বে শাস্তির চাইলে।
মামণি আমাকে কখনো শাস্তি দিলে শাস্তির চকলেট বা ছোট ছোট মিষ্টি দেই।
তা জেনে আবার কপি করছো।
রোহান মেহরাবের কথা শুনে মনে মনে বললো,সোনা আমি তো দোকানের মিষ্টি চায়নি সে কথা তোমায় বোঝাব কেমনে!
মেহরাব আবারও বললো, ছিঃ আঙ্কেল তুমি আমার মিষ্টি চাও।
তুমি একটা ছোচা ।
আমি সবাইকে বলে দিবো।
রোহান কিছু বলতে যাবে তার পর্বেই রিফাত এসে রুমের দরজা নক করলো।
রোহান দরজা খুলে দিলে রিফাত মেহরাবকে বললো,সোনা আমাকে একা রেখে তুমি মামণির কাছে ঘুমাও এটা ঠিক?
রিফাতের কথা শুনে মেহরাব বলে, আমি তো মামণিকে ছাড়া থাকতে পারি না।
রিফাত মেহরাব কে কোলে নিয়ে বললো, আজকে আমার কাছে ঘুমালে তোমাকে গল্প বলে শুনানো।
মেহরাব খুশি হয়ে রিফাতের সাথে চলে যায়।
এদিকে মেহরাব চলে গেলে রুমের দরজা লক করে রোহান রেশমাকে চেপে ধরে বললো,জান কি হয়েছে?
সকালে থেকে মনা খারাপ করে আছো কেন?
আমি কী এমন কিছু করেছি যাতে তুমি কষ্ট পেয়েছো?
রেশমা রোহানের কথা শুনে
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com