বিয়ের আগেই বাসর | পর্ব-০২

গান বন্ধ করে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার শেষ এ নিচে আসি। এসেই প্রায়ই ১০০ টি মিসকল ফোনে।

কল ব্যাক করতে যাবে তখন আবারো ঝিনুকের ফোন আসে। রিসিভ করতেই….
–হ্যালো ফয়সাল। একটা কথা বলার জন্য তোকে ফোন দিসি। আসলে নিঝুম খুব ভালো মেয়ে।

আর ও খুব গরিব। ওর একটা ছোট বোন আছে। ওর ছোটবোনটার কিডনির সমস্যা।

তাই ও পড়াশনা করে রোজগার করে বোনের চিকিৎসা করাতে চাই। তাই ও তোর সাথে প্রেম করতে চায়নি। তুই আবার ভুলভাল কিছু করে বসিসনা।
–কি যা তা বলছো, যা বলার সোজাসুজি ভাবে বলো।
— আসলে ওই মেয়েটা তোকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু ও তোকে কোনোদিন বলেনি।

আমাকেই বলছে শুধু। আসলে ওর বাবা-মা নাই। ওর মামা-মামির কাছে থাকে।

কিন্ত ওর মামি ওকে দেখতে পারেনা। তাই ওকে তারাতারি বিদায় করে দিতে চায়।

–ফয়সাল পাপ বোধ এ জ্বলছে, তাও সে উপরে গেলো। দেখে মেয়েটার জ্ঞান এখনও আসেনি,

নিজেই নিজেকে দোষারপ করছে। এতোটা জঘন্য কাজ সে কখনো করবে বলে ভাবেনি।
–আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে ফয়সাল, এরপর মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয়।

দেখে মেয়েটার শরীরে অনেক যায়গা ই ছিলে গিয়ে রক্ত বের হয়েছে।

নিজের অজান্তেই একটা নির্দোষ কে এতো বড় শাস্তি দিয়ে সে নিজেই কস্ট পাচ্ছে।

ওয়াশরুমে নিয়ে শাওয়ার করিয়ে নিজেই মাথা মুছিয়ে দিয়ে শাড়িটা পড়িয়ে দেয়।

এরপর কাটা অংশ গুলো তে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দেয়।
–মেয়েটার পাশে বসে থাকে ফয়সাল, নিজের অপরাধে ভুগতে ভুগতে মেয়েটার পাশে বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে যাই আমি। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি নিঝুম এখনো ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় নিঝুমকে বাচ্চাদের মতো লাগছে। এভাবেই নিঝুমের দিকে তাকিয়েছিলাম। তখনই নিঝুম ঘুম থেকে উঠল।।।।তারপর…..
–আমি কোথায়??? আর তুমি আমার সাথে কেন???(নিঝুম)
–।।।।।।।।
–কি হলো বলছনা কেন???

–তুমি আমার সাথে এরকম করতে পারলে।। কি দোষ ছিলো আমার। যে তুমি আমার সাথে এরকম করলে।।
–(এবার আর কথা না বলে থাকতে পারলাম না) সরি নিঝুম আমাকে ক্ষমা করে দেও।।আমি তোমার সাথে এরকম করতে চাইনি।। আসলে আমি আমার রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা।
–চুপ।।তুমি আমার সাথে আর একটা কথাও বলবেনা। (একথা বলে যেই নিঝুম উঠতে গেল ওমনি পড়ে গেল। দেখে বোঝাই যাচ্ছে নিঝুমকে উঠার মতো শক্তি নাই)
–দাঁড়াও। কোথায় যাবে বলো??আমি নিয়ে যাচ্ছি। তুমিতো এভাবে চলতে পারবেনা।
–তুমি চলার মতো অবস্থায় রাখলেতো চলতে পারব(কান্না করতে করতে)

-ওকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে কোলে তুলে নিলাম।

নিঝুমকে গোসল করায় দিয়ে আবার আরেকটা নতুন শাড়ি পড়ায় দিলাম।

নিঝুমকে কোথায়ও যেতে দেইনি। ও রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

কিন্তু হটাৎ ই ফয়সালের ঘুম ভেঙে যায়, মেয়েটির অস্ফুট গোঙানির শব্দে।

তাকিয়ে দেখে অচেতন অবস্থাতে মেয়ে টা কাতরাচ্ছে।

ফয়সাল তাড়াতাড়ি করে বাটিতে পানি এনে মেয়েটার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।

জ্বর কিছুটা কমেছে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে ফয়সাল। কি হতে কি হয়ে গেলো,

দুই দিন আগেও যে ছিলো সব চেয়ে চরিত্রবান ছেলে সে আজ রেপিস্ট।

তাই ওতো চিন্তা না করে মামাতো বোনকে ফোন দিলাম।তারপর…..
–কিরে কি খবর, আজকাল তোর তো কোন খবর ই নাই,

তা কেমন আছিস বল।” একদমে কথা গুলো বলে জান্নাত।
–এইতো আপু খবর ভালোই আছে। কিন্তু একটা প্রব্লেম হয়ে গেছে, বাসায় আসতে পারবা ইমার্জেন্সি,

প্লিজ তারাতরি আসো।

–হুম, পারবো, এখন তো রাত হয়ে এসেছে, এখুনি বাসায় চলে যেতাম।

ওকে আসছি এই বলে জান্নাত রওনা দিল।
–জান্নাত ফয়সালের এক মাত্র ফুাফাতো বোন, সদ্য পাশ করা গাইনী ডাঃ।

ফয়সাল কেনো জানি এই মেয়েটাকে নিঃসন্দেহে সব কথা বলে দিতে পারে।

জান্নাতের সাথে ফয়সালের খুব ভাব।

আমার ফুফাতোবোন MBBS পাশ করে গাইনী তে FCPS করে,

বিসিএস দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ডাঃ হিসেবে নিয়োগ পায় আর পারসোনাল চেম্বার আছে তার।

বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান ফয়সাল তাই তার এতো মাথা ব্যথা ছিলো না কখনোই।

–কলিংবেল বেজে ওঠায় ফয়সালের ধ্যান ভাঙে। দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখে জান্নাত আপু।

তার পায়ের কাছে বসে পড়ে ফয়সাল আপু আমি পাপী, আমার জন্য একজনের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে,

সে কেমন আছে প্লিজ দেখ” কান্নায় ভেঙে পড়ে ফয়সাল।।।

চলবে

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url