Breaking News

সাইকো লাভার । পর্ব -০২



কিছু সময় পর তিথি আবার ঘরে ফিরে এল। কিন্ত আকাশ কোথায়? পাগলের মত এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল, দেখল আকাশ আলমারির কোনায় মাথা হেলান দিয়ে আছে! মনে শান্তি ফিরে পায়।
আকাশের কাছে গিয়ে দেখে মাথার সামনের চুল গুলো থেকে এখনও টপটপ করে পানি পড়ছে।
গায়ের কালো রঙের টি-শার্ট ভিজে গায়ের সাথে আটকে গেছে।
কিন্তু গায়ে হাত দিতেই তিথি পুরো চমকে উঠল।
গায়ে ভীষণ জ্বর, তিথি তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এসে ওর সিকিউরিটি গার্ডেদের ডাকে,
ওরা এসে আকাশকে খাটে শোয়ায়। আকাশের কোন সাড়া নেই,
তিথি ডাক্তার কে কল করল ঘরের বড় আলোটা এখনো জ্বলছে।
!
–প্রায় আধাঘণ্টা পর ডাক্তার এলেন। উনি আকাশকে দেখে বললেন…..
!
–তেমন কিছু হয়নি নরমাল। ডাক্তার কিছু ( কয়েকটি মেডিসিন লিখে দিলেন এবং কপালে জলপট্টি দিতে বললেন কয়েকবার…. তারপরও যদি কোনো উন্নতি না হয় তাহলে কাল আর একবার কল দিতে)
!
–ডাক্তার চলে গেলে তিথি মেডিসিন গুলো আনতে দেয় এবং নিজে একটি রুমাল, আর বাটিতে পানি নিয়ে আকাশের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।
!
এবার পাঠকদের কাছে আকাশের বর্ণনা দেই।আমি পরিষ্কার করে বলছি।
পুরো নাম আকাশ চৌধুরী, বয়স 32। এবং ভদ্র মিষ্টিভাষী একটি ছেলে।
তাকে দেখে মনে হয় এই 23 এর আশেপাশে তার বয়স। বেশ লম্বা সুঠাম দেহ,
দুধে-আলতা গায়ের রং, টানা টানা চোখ দুটো আরো সুন্দর করে তুলেছে, তার ভ্রু যুগল।
এবং বড় বড় চোখের পাতা, ঠোঁট দুটি পুরো রসগোল্লার মত ফোলা ফোলা, এবং গোলাপী রংয়ের।
তাকে দেখে যে কোন মেয়ে তার প্রেমে পড়ে যাবে। সেখানে তিথি তো বাচ্চা মেয়ে।
!
–আকাশ বায়োলজি বোটানির উপর মাস্টার্স করেছেন!
এবং বর্তমান সে বারাসাত গভরমেন্ট কলেজ শিক্ষক!
তবে ব আমাদের তিথিকে দেখেও কিন্তু খারাপ নয়। খুবই মিষ্টি একটি মেয়ে,
শ্যাম বর্ণ, টানা টানা চোখ, আর সে চোখে রয়েছে যেন এক মায়াবী দৃষ্টি। অন্তত নরম মনের মেয়ের।
তিথি কাউকে একটা শুচ ফোটাতেও তার হাত কাঁপে।
কলেজের আসার পর তাকে অনেক রকম ভাবে রেগিং করা হয়েছে।
কিন্তু বলে না আমার যাকে একবার নিজের বলে গ্রহণ করে নেই।
আর তাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই।
!
— সেটাই ঘটছিল তিথির জীবনী। ও ছোট থেকে বাবা-মাকে কাছে পায়নি,
বাবা মায়ের আদর কি জিনিস সেটা দিতে জানে না।
যখন এসকারসানে আকাশ তিথিকে ধর্ষণ হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে ছিল।
সেদিন থেকে তিথি আকাশের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।
মনে করেছিল আকাশ যদি ওর জীবনে আসে তাহলে ওর
এলোমেলো হয়ে যাওয়া জীবনটা একটু সুন্দর হতে পারে।
সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার সবার আছে। তাহলে তিথির কেন এর বাইরে যাবে?
এই মেয়েটা ছোট থেকে কারো ভালোবাসা পাইনি। সে যদি
আজ কারো ভালোবাসা পেতে চায় সেখানে তো কোন দোষ নেই।
!
— ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তিথি দেখলেও বারোটা বাজে…. আকাশের গায়ে হাত দিয়ে দেখল এখন জ্বর অনেকটা কমেছে। আকাশ কিছু বিরবির করছিল। তিথি কানটা আকাশের ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলো।
!
— আমাকে ছেড়ে দাও তিথি, আমাকে যেতে দাও। আমার লাগছে তিথি,(আকাশ)
!
— তিথি আকাশের থেকে সুরে এলো। আকাশের ঠোঁটের দিকে তাকাল ঠোঁট দুটো পুরো ফুলে ফুলে উঠেছে। তার সাথে কেটে গেছে, নিজের উপর ভিষন রাগ হলো তিথির। পাশের দেয়ালে ক্রমাগত গুসি চালাচ্ছে। আকাশের ঘুম ভেঙেছে।
!
— কি করছ এগুলো তুমি?আহঃ(আকাশ)
!
— না আকাশ আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি আমাকে এখন তুমি কষ্ট পেতে দাও(তিথি)
!
— তিথি আমার কথা শোনো! এমন করো না তোমার হাতের থেকে রক্ত পড়ছে…(আকাশ)
!
–( টলতে টলতে আকাশ বিছানা থেকে নেমে তিথির কাছে আসতে যায় কিন্তু শরীর দুর্বল থাকার কারণে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল। তিথি ধরে নেয়।)
!
— আমাকে কষ্ট পেতে দেও আকাশ। আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। আমি খুব খারাপ। আমাকে মরে যেতে দাও, তাহলে তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে। আমাকে মরে যেতে দাও (তিথি)
!
–তিথি আকাশকে নিচে মেঝের মধ্যে বসিয়ে দিয়ে আকাশের গালে দুহাতে দিয়ে কথাগুলো বলতে থাকে।
চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল গড়িয়ে পড়ছে।
আকাশ তিথির ঠোটে আঙ্গুল রাখেন আর কিছু বলতে পারেনা।তিথির ঈশৎ কেঁপে ওঠে।
কোন পুরুষ মানুষের ছোঁয়া প্রথম সে নিজের শরীরে পেল।
নিষ্পাপ একটি মেয়ে।তিথি দেখে মায়া হয় আকাশের। তিথির কপালে একটা চুমু খায় আকাশ।
চোখের জলটা মুছে বুকের মধ্যে চেপে ধরে মেয়েটিকে।
তিথি যেন একটা আশ্রয় পেয়ে স্বেচ্ছায় নিজেকে ঢেকে নেয়।
!
— তিথি হাত দিয়ে এখনো রক্ত গড়াচ্ছে। তিথিকে একটু শান্ত করে ওকে ধরে খাটের দিকে এগিয়ে যায়। আকাশ যানে ও যা বলবে তিথি তাই করবে। খাটের উপর বসে তিথি কে ফাস্ট এন্ড বক্স আনতে বলে। তিথি বাধ্য মেয়ের মত বক্সটা নিয়ে আসে। তারপর আকাশ তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
!
— আমার আঘাত লাগলে তুমি যদি আমাকে তোমার কাছে টেনে নাও আকাশ, তাহলে আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বারবার আহত হবো! (তিথি)
!
–আর একটা কথাও তুমি বলবে না। অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ো।(আকাশ)
!
— আমাকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরা আকাশ আমি ঘুমিয়ে পড়বো।(তিথি)
!
— তুমি ঘুমাও আমি তোমার পাশে বসে আছি….(আকাশ)
!
— না আমাকে জড়িয়ে ধরো আকাশ প্লিজ (অনুরোধ সুরে বললো তিথি)
!
না তিথিকে পেয়ে আকাশ আজ নিজের থেকে দূরে সরাতে পারেনি।
বাচ্চাদের মত মেয়েটাকে আকাশের বুকে আশ্রয় নিয়েছে।
শক্ত করে ধরে আছে আকাশের বুকের কাছটা তিথি।
বাইরে ভীষণ জোরে বৃষ্টি নেমেছে অসময়ে বৃষ্টি, ঠিক যেমন
তিথির আকাশকে গলিয়ে দিচ্ছে ধীরে ধীরে।
বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে আকাশের দেহ ইচ্ছে করছে
এই শিশুসুলভ মেয়েটিকে নিজের বুকের মাঝে আরো শক্ত করে চেপে ধরতে।
!
না আকাশ সেটাও পারল না।। কারণ আকাশ যে বিবাহিত, নন্দিনী যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে।
কিন্তু আকাশ আর তিথি জন্য যতটা ফেল করছে নন্দিনী জন্য কখনো এমনটা মনে হয়নি।
নন্দিনী সব সময় কেমন যেন এলোমেলো। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছে তাদের।
তবে এই এক বছরে ওদের সম্পর্ক এতোটুকু স্বাভাবিক হয়নি।
যত দিন যাচ্ছে তত জটিল হচ্ছে, কথাই বলে ঘি আর আগুন একসাথে থাকলে তা দব দব করে উঠবেই।
তাই আকাশ তার নিজের দেহের কামাগ্নি নন্দিনীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার উপর বসেছে।
নন্দিনীর মধ্যে কেমন যেন একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।
আকাশের থেকো লুকিয়ে কয়েকবার কথা বলতে শুনেছে।
তবে আকাশ ভেবেছে হয়তো নন্দিনী কোন পুরনো বন্ধু হবে হয়তো,
বা নন্দিনী এখনো আকাশকে বলে উঠতে পারেনি।
আর বলবেই বা কখন নন্দিনী সব সময় নিজেকে আকাশের থেকে সরিয়ে রেখেছে।
!
— না, না আমি এসব কি ভাবছি? আমি একটা বাইরের মেয়ের জন্য নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেছি…. তিথির উপরেও রাগ হলো আর, নিজের উপরে রাগ হলো। মনে মনে বলল বড্ড বেশি রগায়ে পড়া এই তিথি।
!
সত্যিই কি তাই মনে হয়…….
!
—তিথিকে নিজের থেকে নামিয়ে দিতে গেল কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আর পারল না। ওকে নিজের থেকে সরাতে, আকাশ বুঝতে পারছে সে এই মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
!
এতে আকাশেরই বা দোষ কোথায় বলুন। দীর্ঘদিন থেকে শুকনো মাটিতে যখন জল পড়ে তখন সে মাটি যেমন সম্পূর্ণ জল চুষে নেয়, ঠিক তেমনি আকাশের মা মারা যাওয়ার ও কারো চোখের নিজের জন্য জল ফেলতে দেখে । সে সত্যিকারের ভালোবাসা মায়া দেখে থাকে তাহলে সেটা তিথির চোখে।
!
— সত্যি মেয়েটা অনেক মায়াবী যে কোন পুরুষই এমন ভালোবাসা পেলে দুর্বল হয়ে পড়বে….. না আর সারে না সে তিথিকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে 4:15 am তাও তার চোখে ভীষণ ভাবে জ্বলছিল। সে খাটের কিনারায় নিজের মাথাটা ঠেকিয়ে দেয়। তার আবার ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে, জ্বর টা হয়তো আবার আসছে।
!
— অন্যদিকে ছেলের চিন্তায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি আকাশের বাবা! স্ত্রীকে হারানোর পর এই আকাশই তার একমাত্র সম্বল। বড্ড আদরে মানুষ করেছে সে আকাশকে। মায়ের অভাব দেয়নি কখনো। আকাশ কখনো এমনটা করনি কিন্তু আজ সে অসহায়। আর চুপ করে বসে থাকতে না পেরে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নন্দিনী নন্দিনী বলে ডাকতে থাকে।
!
— নন্দিনী তো আকাশ থেকে পড়লো। আকাশ কালকে বাড়ি ফেরেনি শুনে। সে ভাবছিলো তার বাবার সাথে কাল রাতে শুয়েছিল। নন্দিনীর এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সত্যিই আকাশের বাবা অবাক। কারণ সে কার হাতে তার ছেলেকে তুলে দিয়েছে। ছেলের বউয়ের সম্পর্ক ঠিক নেই সেটা আকাশের বাবা জানতো। তবে সেটা যে এতদূর সেটা ভাবতে পারেনি। সে একরাশ হতাশা নিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসে। তার এক বন্ধু কমিশনার আছে, সে তাকে ফোন করে আকাশের বাবা। প্রথম ফোন রিসিভ না করলে পরের বার ধরে এবং সে তার সব কথা খুলে বলে। তার বন্ধু জবাব দেয় কাল সে ডিউটিতে যাবার সময় তাদের বাড়ি হয়ে যাবে।
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com