সাইকো লাভার । পর্ব -০১
আকাশের যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে নিজেকে একটা বন্ধ করে আবিষ্কার করল।
কিন্তু ভীষণ অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ওর মুখ হাত-পা রুমাল দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে।
তারপর মনে পড়ল ও তো কলেজে গিয়েছিল, সেখান থেকে ফেরার সময় কেউ ওর ওপর আক্রমণ করে,
কিন্তু কোনো ক্ষতি করেনা। তবে ওকে ওরা মুখে রুমাল চেপে অজ্ঞান করেছিল।
ও তো একটা নিরীহ ছেলে, কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা।
তাহলে ওকে এখানে কে অপহরণ করল।
কোন কারণেই আকাশ বুঝে উঠতে পারছে না তাহলে কি মুক্তিপণ আদায় এদের মূল লক্ষ্য।
!
:-হঠাৎ রুমের আলো টা জ্বলে উঠলো। খুব সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো ঘরটা, কিন্তু কে আনলো ওকে এখানে।
!
:- কি মিস্টার আকাশ কেমন আছেন? আর কেমনই বা লাগছে আপনার আমার এখানে….(মেয়েলি কন্ঠ)
!
:- কে? কে আপনি? ( আকাশ)
!
:-আরে ধৈর্য ধরো এত তাড়া কিসের? তুমি না চাইলেও তোমাকে আমার কাছে থাকতে হবে!(মেয়েটি)
!
:- আপনি কে আমার সামনে আসুন আমাকে কেন এখানে এনেছেন? আমি বাড়ি যাব। আমার বাবা হাটের পেসেন্ট, আমি বাড়ি না পৌছালে বাবা ভীষন চিন্তা করবে। তার থেকে বলুন আপনি কি চান আমি সব কিছু দিতে রাজি কিন্তু আমাকে প্লিজ যেতে দিন(আকাশ)
!
:- সত্যি বলছো আকাশ? যা চাইবো তাই দেবে? (মেয়েটি)
!
:-এরপর একটি মেয়ের তার সামনে আসে! মেয়েটি হেলমেট পরা ছিল ভালো ভাবে মুখ দেখা যাচ্ছে না,
!
:- আকাশ আমি তোমাকে চাই! আমি তোমাকে চাই! ভালোবাসি তোমাকে(মেয়েটি)
!
এরপর মেয়েটি তার হেলমেট খুলে তার সামনে এলো। আকাশ যেন আকাশ থেকে পড়লো। এ কাকে দেখছে এ যে তিথি, তারই ছাত্রী।
!
:-কি স্যার আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন না আপনি। আপনি জানেন আমার জন্য কত ছেলে পাগল, কিন্তু আমি আমার জীবনে আপনাকে প্রথম চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনি( তিথি এগিয়ে যায় আকাশের কাছে থুতনিটা শক্ত করে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসে। আকাশের ঘন ঘন গরম নিশ্বাস তিথির মুখে পড়ছে আর তিথিও আকাশের এত কাছে চলে এসেছে যে একটু বেসামাল হলে তিথির ঠোঁট ছুঁয়ে যাবে আকাশের ঠোটে….কোনো মেয়ের যে কোনো ছেলের জন্য এত ডেসপ্যারেট হতে পারে সেটা আকাশের জানা ছিল না।
!
:-জানেন স্যার আজ অব্দি আমি যা চেয়েছি সব পেয়েছি। তাহলে আপনাকে পাব না কেন? আপনাকেও আমার হতে হবে( তিথি কাঁদতে থাকে কয়েক ফোঁটা জলের ফোঁটা আকাশের উপর পড়ে) আমি ভালোবাসি আপনাকে চেঁচিয়ে ওঠে তিথি।
!
:- তিথি তুমি আমার থেকে অনেক ছোট, তোমার আর আমার সম্পর্ক কখনো সম্ভব নয়,
ছেলেমানুষি করো না। আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ (আকাশ)
!
:-তিথি তীরের বেগে ছুটে যায় আকাশের কাছে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল আকাশ,
কিন্তু তিথি তার আগেই আকাশের ঠোটে কামড়ে ধরলো।
ক্রমশ থাকল ঠোঁটদুটো যন্ত্রণায় কেঁপে কেঁপে উঠছিল আকাশের সম্পূর্ণ দেহ।
প্রায় দশমিনিট একভাবে এভাবে থাকার পর তিথি বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
দরজাটা আটকে দিল বাইরে থেকে বিষম জোড়ে।
তখনও ঠোঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে আকাশের।
ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে আকাশের, আকাশ আর কিছু ভাবতে পারছে না তবে
কিভাবে এখান থেকে পালাতে পারবে সেই কথা ভাবতে থাকে।
কিন্তু ওর হাত পা বাঁধা পালাবেই বা কি করে।
আর তিথি কে আকাশ যতটুকু বুঝলো যে কোন কিছু করতে পারে।
!
:-তিথি যখন প্রথম প্রথম তার ক্লাসে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে
থাকত আকাশ তখনই বুঝতে পেরেছিল মেয়েটি তার প্রতি দুর্বল…..
সবারই কলেজে প্রথম প্রথম এই ধরনের একটা হ্যাংওভার আসে। কোনো কোনো শিক্ষক বা
শিক্ষিকার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে কিছু কিছু ছেলে মেয়ে।
তখনও আকাশ ভেবেছিল অন্যদের মতো ওরও হ্যাংওভার কেটে যাবে কিছুদিন পর।
!
:-কিন্তু তিথি এসবের বাইরে। কলেজে অ্যাডিশনাল এ্যসকারশনে
গিয়েও আকাশ তিথির মধ্যে একটু অন্যরকম কিছু লক্ষ্য করছিল।
তখন ভেবেছিল এটা তিথির ছেলেমানুষি। কিন্তু সেদিন কলেজের সবার সামনে নিজে
থেকে 7 বছরের বড় আকাশকে প্রপোজ করেছিল তিথি। তখন আকাশ আর স্থির থাকতে পারেনি।
সজোরে এক চড় কষিয়ে মারে তিথির গালে। অনেক অপমান করে সেদিন আকাশ তিথিকে।
সেদিনও মেয়েটি পাগলের মত একটা করে হাসছিল আকাশের দিকে তাকিয়ে।
আকাশ এতকিছু করার পরও পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
আকাশ ওকে এক ধাক্কায় মাটিতে ফেলে অফিস রুমে চলে আসে।
!
:- না তিথি সুস্থ নয়!ও একটা সাইকো। যেকোনো কিছু করতে পারে। তারই একটা ছোট মহরা হয়ে গেল কিছুক্ষণ আগে এইসব ভাবতে থাকে আকাশ একা একা বসে।
!
তার কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে আসে তিথি।
!
:- কি স্যার খিদে পেয়েছে নাকি???(তিথি)
!
:- না আমার খাওয়ার কোন ইচ্ছা বা কোনো আগ্রহ নেই। তুমি আমাকে ছেড়ে দাও তিথি আমাকে বাড়ি যেতে দাও। আমার বাবা অসুস্থ আমার স্ত্রী রয়েছে। আমাকে যেতে দাও (আকাশ)
!
:- কি বললেন আপনাকে ছেড়ে দেব হাসালেন আপনি আমাকে। আমি মরে গেলেও আপনাকে এখান থেকে যেতে দেব না।
:-tithi you are a mad you are a psycho……(আকাশ)
!
:- আপনি আমাকে যাই বলুন আমি আপনাকে এখান থেকে বের হয়ে ওই মেয়েটার কাছে যেতে দেবো না! আমি আপনাকে ভালোবাসি নাটক করছি না আপনার সাথে! আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি এখন আপনি আমার সামনে বসে খাবেন আর আমি দেখব, খেয়ে নিন তারাতারি নয়তো আমি অন্য কিছু করতে বাধ্য হবো।
!
:-আমি খাব না (আকাশ)
!
:- রাগে অপমানে অভিমানের দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলল আকাশ। তবে তিথিও ছাড়ার পাত্রী নয়। আকাশের পাশে বসে বারবার করে আকাশকে খাবার মুখে তুলে দিতে যায় কিন্তু আকাশ ও ভীষণ জেদি। খাবার খাবে না তো খাবেই না। তবে তিথির এই পদক্ষেপের জন্য আকাশ মোটেও তৈরি ছিল না। দেখে তিথি নিজের পেটের কাছ থেকে একটা রিভলবার বের করে সোজা সেটা প্রথমে আকাশের মাথায় টাক করে। তারপর আস্তে আস্তে নিজের মাথার কাছে নিয়ে আসে।
:- আপনি খাবেন? (তিথি)
:- এটা আবার নতুন কি নাটক শুরু করলে?( আকাশ)
:- আপনি খাবেন!?( তিথি)
:- তিথি ওঠা রেখে দাও যে কোন একটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে গেলে কি হবে বুঝতে পারছ( আকাশ)
:- one(তিথি)
:-drop the gun tithi(আকাশ)
:-two(তিথি)
:-তিথি আমি বন্দুকটা নিচে নামাতে বলেছি। তিথি বন্দুকটা ফেলে দাও।(আকাশ)
:- three good bye sir (তিথি)
:-আমি খাবো তিথি প্লিজ বন্দুকটা ফেলে দেও(আকাশ)
:-that’s like a good boy(তিথি)
:- কিন্তু তিথি আমি খাব কি করে? আমার তো হাত বাধা রয়েছে পা বাঁধা রয়েছে! আমি খাব কি করে?( আকাশ)
:- হ্যাঁ সেটাই তো তুমি খাবে কি করে? দাড়াও আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
এরপর পরম স্নেহে এবং ভালোবাসার সাথে তিথি আকাশকে খাইয়ে দিচ্ছে। এখন যেন আকাশ অন্য এক তিথিকে দেখছে। এতক্ষন আকাশ তিথি কে ভালোভাবে লক্ষ্য করেনি। হালকা নীল আলোয় আকাশ এবার তিথির মুখের দিকে তাকাল, একটা অদ্ভুত সুন্দর মায়া একটা অদ্ভুত সুন্দর আবেদন রয়েছে মেয়েটির চোখে মুখে। সাদা রঙের সালোয়ার-কামিজ যেন আরও সুন্দর এবং লাস্যময়ী করে তুলছে।
:- আমি খুব জেদী জানেন স্যার! আমি ছোট থেকে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি! কিন্তু যখন আমি আমার মনের কথা আপনাকে বললাম আপনি আমাকে প্রত্যাখ্যান করলেন…. আমি মেনে নিতে পারেনি ভেবেছিলাম আপনাকে পেলে আমি জীবনে একটা ভালবাসার মানুষ পাব। কিন্তু আপনি তো আমাকে ভালবাসলেন না। আমার মা আমার বাবাকে কখনো ভালোবাসিনি। সব সময় মদ, নাইট ক্লাব, নতুন নতুন শয্যাসঙ্গী নিয়ে ব্যস্ত থাকত। আর বাবা সারাক্ষণ বিজনেস বিজনেস আর বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত থাকত।
জানেন আমি রাতের রাত একা একা কেঁদেছি কেউ এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন স্যার( তিথি)
!
:-আমি পানি খাবো ””'(আকাশ)
!
:- এই নিন স্যার(তিথি)
!
:- আকাশ এতক্ষণ তিথির কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল! সত্যিই আজকের আমাদের এই সমাজ বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছে। কেউ কারোর কথা চিন্তা করে না। কেউ কাউকে ভালোবাসে না। একটা বাচ্চা মেয়েকে তারা যদি ছোট থেকে একটু সময় দিত তাহলে আজ তিথি এমন হতো না। অনেক ভালো সুস্থ একটা জীবন পেত। কিন্তু আমি ওকে তো কোন ভাবে সাহায্য করতে পারব না।
আমার জীবনের সঙ্গে মেঘা জড়িয়ে গেছে আমি কিভাবে ওকে সাহায্য করবো?
:- তিথি আমি ওয়াসরুমে যাব!( আকাশ)
:- হ্যাঁ চলুন!( তিথি)
:- তুমি কেন আমার সাথে যাবে? (আকাশ)
:- আমি আপনাকে ভালোবাসি তাই আমি যাব | আর আপনাকে আমি ভালোবাসি তাই আপনার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আমার, আমি ছাড়া আপনার দিকে আর কোন মেয়ে চোখ তুলে তাকানোর ক্ষমতাও যেনো না রাখে সে ব্যবস্থাও আমি করব (তিথি)
জনি বাইরে থেকে দরজা টা বন্ধ করে দাও এইরুমের নিচে যে সিকিউরিটি সার্ভিস কর্মীরা আছে। তাদেরকে রেডি হতে বল (তিথি)
:-“ওকে ম্যাম(জনি)
তিথি এবার আকাশকে সমস্ত বাঁধন খুলে দেয়।
:-যাও ওই দিকে বাথরুম আর এই কাবার্ডে তোমার জন্য আমি অনেক নতুন ড্রেস কিনে রেখেছি ফ্রেশ হয়ে পড়ে নাও।(তিথি)
:-আকাশ কথা বাড়ায় না, ও জানে তিথিকে এভাবে রাগ দেখিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়।
কাজেই তর্ক করলে নিজেরই বিপদ। আকাশ চুপচাপ ওয়াশ রুমে চলে যায়।
সাওয়ারটা অন করে চুপচাপ নিজেকে ভিজিয়ে দেয় সাওয়ারের জলে।
অনেকটা রাগ হচ্ছে আজ নিজের উপর। কেন সেদিন তিথিকে ওভাবে অপমান করতে গিয়েছিলাম।
নিজের ঠোঁট টাতো অনেক ব্যথা অনুভব করে আকাশ।
তার পরক্ষণেই তিথির সেই ডেসপ্যারেট আকাশের চোখের সামনে ফুটে ওঠে।
আকাশ আর কিছু ভাবতে পারে না,বেরিয়ে আসে। তিথি ঘরে নেই, তাহলে কি একবারও চেষ্টা করে দেখবে।
চেষ্টা করে দেখবে। জানালার কাছে এগিয়ে নিচে যা দেখলো তাতে অবাক, নিচে অনেকগুলো মানুষ কথার আওয়াজ পাচ্ছে। না পালাতে পারবে না আকাশ ভেজা পোশাক পড়ে ঘরের একটা কোনায় বসে পড়ে। ভীষণ পরিমাণে ওর মাথা ব্যাথা ধরেছে। মাথা সোজা রাখতে পারছেনা। কোনায় বসে মাথাটা দেওয়ালে হেলিয়ে দেয়।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com