হঠাৎ বসন্ত । পর্ব -০৬
আমার মা একদিন তোমার বাবাকে যখন এসে জানিয়ে ছিল —
“তাঁর অফিসের বস তাঁর দিকে সুনজরে দেখে না। তাঁর চোখের দৃষ্টিতে বিষ আছে।
তাঁর শরীরের যত্রতত্র ছুঁয়ে যায় তাঁর অশ্লীল দৃষ্টি । অস্বস্তি হয় খুব ।
একদিন এমন ও হয়েছিল শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের অনাবৃত অংশ টুকু ঢেকে ফেলেও মুক্তি পায়নি মা।
বরং পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে শ্বাপদসম বস অরুনাভ রায় বলেছিল
—” তুমি এমন জড়োসড়ো হয়ে যাও কেন রায়মা আমাকে দেখলে?
এটা অফিস। সবাই কতো সুন্দর আধুনিক বেশভূষা পরে আসে আর তুমি সেকেলে শাড়ি নয়তো সালোয়ার ।
একটু সাজগোজ করো। তোমার ও ভালো লাগবে আমারও ভালো লাগবে।” সেদিন অরুণাভ রায়কে ভয় পেয়েছিল মা খুব ভয়। । অফিস থেকে ফিরে তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করে কথাগুলি বলতেই সেই মুহূর্তে তোমার বাবা কী করেছিলেন জানো হেসে ছিলেন হা হা করে তারপর রসিকতার সুরে বলে উঠেছিলেন
–” রায়মা তুমি একটু আধুনিকা হও। তাতে তোমারই মঙ্গল ।
সংসারে তোমার খুব অভাব। আর সেই অভাব দূর করতে গেলে তোমাকে এমন সাজই সাজতে হবে যা দেখে তোমাদের অফিসের বসের ঘুম ছুটে যায় । আর তোমার রাতারাতি প্রমোশন হয়। “
—” কী বলছো তুমি বুলবুল ? আমি প্রমোশনের জন্য নিজেকে বিক্রি করবো আর তুমি সেটা মেনে নেবে ? তুমি আমাকে ভালোবাসো না ? তোমার প্রেমিকা একজন বসের মনোরঞ্জনের পাত্রী হোক তা তুমি কী করে মেনে নেবে ? আমি ভাবতেই পারছি না।”
—” না ভাবার কী আছে রায়মা? কিছু ছোটখাটো বেশভূষা যদি তুমি পরে বসের সামনে যাও তাতে কার কী বলার আছে উনি তো তোমাকে কিছু করবেন না। শুধু দেখে তৃপ্ত হবেন ।
ছোটখাটো বেশভূষা পরলেই কারো সতীত্ব চলে যায় না রায়মা ।
এই তো আমাদের অফিসের বস আকাশে একটু ওই রকম দোষ আছে।
মেয়ে দেখলেই হল। কিন্তু নিজেকে সংযত রাখেন।
তাতে কী ওর স্পর্শ পাওয়ার জন্য কতো মেয়েই বসে আছে।
খোলামেলা পোশাক এখন সবাই পরে।
তুমিও পরবে। বেশ কালই তোমার জন্য একটা ভালো ড্রেস আমি কিনে আনবো।
তুমি সেটা পরেই অফিসে যেও।
আমি কী ভাবছি বা ভাববো সে চিন্তা করোনা আমি সেইসব পুরুষের দলে পরিনা।
এখনকার দিনের মেয়ে হয়ে তুমি কী করে এমন আদ্দিকালের মানসিকতার হলে কে জানে ?
ভাবতেই অবাক লাগছে।
” সেদিন সব শুনেছিল রায়মা তাঁর প্রেমিক বুলবুলের কথাগুলি ।
অবাক ও কম হয়নি। বুলবুল তাঁকে বসের দিকে এগিয়ে দিতেও এতটুকু লজ্জা বোধ করলো না।
এতটাই নির্লজ্জ । ভাবতে গিয়ে কেমন যেন নিজেকে দোষী মনে করেছিল মা।
প্রশ্ন জেগেছিল বুলবুল তাঁকে ভালোবাসে তো?
না না ও সত্যিই হয়তো ভালোবাসে । নইলে ওর আমার জন্য এতো চিন্তা কেন?
বেশ তাহলে ওর এনে দেওয়া পোশাক পরেই একদিন না হয় সে অফিসে যাবে।
” তাতে ও সত্যিই কতো টা মেনে নিতে পারে তা ও তাঁকে দেখতে
হবে । ” পরের দিন বুলবুল যিনি মার্কেট থেকে পছন্দ করে সেই যুগে একটি আধুনিক ধাঁচের পোশাক তাঁর রায়মার জন্য কিনে এনে দেন। তাঁর দুদিন পরেই সেই পোশাকটা পরেই রায়মা গিয়েছিল অফিসে। বস অরুণাভ রায় হতবাক । যে মেয়েটাকে দীর্ঘ দু মাস ধরে শাড়ি বা সালোয়ার পরে আসতে দেখেছে তাঁর পোশাকে এমন আমূল পরিবর্তন তিনি নিজেই মা কে বলে বসলেন আজ তোমাকে বাসে ট্রামে চেপে বাড়ি ফিরতে হবে না। আমি গাড়ি করে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব। রাস্তায় সন্ধ্যার পর এমন পোশাক পরে যাওয়া উচিত হবে না।।
মা প্রথমটা রাজী হয়নি ঢাকার রাস্তা ভয় কিসের?
কিন্তু বসের নির্দেশ তার ওপর চাকরিটা বাঁচানোর তাগিদ সব মিলিয়ে রাজী হয়ে গিয়েছিল ।
বাড়ি যাওয়ার পথে বসের গাড়িতে যে টুকু রাস্তা অতিক্রম করতে হত মা কে ততটুকু রাস্তা অতিক্রম করতে গিয়ে কোনো অসভ্য আচরণ অরুণাভ রায় করেননি।
বরং যথারীতি বাড়ীর সামনে অরুণাভ রায়ের গাড়িটা আসতেই মা যেই মুহূর্তে গাড়ি থেকে নামতে যাবে তৎক্ষণাৎ এলাকার কিছু বখাটে ছেলে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষাতে মাকে টোন টিটকিরি করে তা কানে ভেসে আসে। গাড়ি চলে যায় । কিন্তু বড় রাস্তা থেকে পাঁচ মিনিটের গলিপথ মাকে একভাবে শুনতে হয় ছেলে গুলোর উচ্চস্বরে নানা কুরুচিকর বাক্য বিশেষ করে মায়ের পোশাক নিয়ে ।
পরের দিন সকাল হতেই আমার মা যখন পুরনো সাজে নিজেকে সাজিয়ে অফিসে বের হতে যাবে তোমার বাবা বুলবুল চৌধুরী এসে উপস্থিত হন। মা ওই সময়ে কখনো আসতে দেখেনি তাকর বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে উঠেছিল-
-” এ কী তুমি? এতো সকালে ?”
–” মানে তুমি জানো না? লোকে ছি ছি করছে তোমাকে নিয়ে ।
—” লোকে ছি ছি করছে ? কিন্তু কেন ? আমি কী করেছি?। ” আমার ভিতু স্বভাবের মা আরো ভিত হয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে উঠেছিল
—‘ —“কেন বুলবুল বলো । আমাকে নিয়ে লোকে ছি ছি করছে কেন লোকে?”
—” করবে না গতকাল রাতে ওমন একটা খোলামেলা পোশাকে বসের পাশে বসে অফিস থেকে রাতের বেলা বাড়ি ফিরলে কোন এলাকার অধিবাসীরা মেনে নেবে বলতে পারো?এটা একটা ভদ্রলোকের এলাকা। আর তুমি কী না আমি ভাবতেই পারছিনা। ছি ছি।
সেই মুহূর্তে কিছুক্ষণের জন্য মা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেছিল তোমার বাবা বুলবুল চৌধুরীর দিকে। কী বলছে এসব বুলবুল?
পোশাকটা তো তাঁরই কিনে দেওয়া । তবে ?
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com