Breaking News

হঠাৎ বসন্ত । পর্ব -০৪



বুলবুলদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ি পরে রায়মা ভাড়া ঘরে আসে, ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবা 
আর মা কে নিয়ে ।রায়মক তখন বারো ক্লাসের আর্টসের ছাত্রী। 
এক দিন কথায় কথায় তোর ছোট কাকা বাবলু কে বাংলা পড়ানোর জন্য ভালো একজন
 টিচটদার খুঁজে দেওয়ার কথা উঠলে রায়মাদের বাড়িওলা সমর বাবু বুলবুল 
কে বলে রায়মাকে বলে তাঁদের ভাড়াটিয়া মেয়েটি বাংলায় খুব ভালো । 
যদি বাবলু র জন্য রাখা হয় তাতে মেয়েটার অর্থ নৈতিক উপকার তো হবেই 
সেই সঙ্গে বাবলুও ভালো একজন বাংলার শিক্ষিকা পাবে।

রাজী হয়ে গিয়েছিল বুলবুল সহ বাড়ির সকলে আর তখন থেকেই বাবলুর বাংলার টিচার 
হিসেবে বুলবুল দের বাড়ী আসা যাওয়া শুরু হয় রায়মার। 
আর তাঁর থেকেই বুলবুলের সঙ্গে রায়মার পরিচয় ও ধীরে ধীরে পরিচিত হওয়া । 
আর পরবর্তীতে একে অপরকে ভালোবাসা। 
দুজনে দুজনের সময় বার করে কখনো কলেজ ক্যান্টিনে বা কখনো কোনো 
রেস্তরাঁতে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে যাওয়া । 
এইভাবে বছর পাঁচেকের মতো সময় ও পার হয়ে যায়।

কয়েকটা টিউশনি আর বুলবুলদের দেওয়া কিছু মাইনের টাকাতেই রায়মা উপার্জন করে
 নিজের ও অসুস্থ বাবা মা র খরচা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। 
কিন্তু তা আর কতদিন চলতে পারে রায়মারই এক আত্মীয়ের ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায় রায়মা । 
এদিকে বুলবুলের বাড়ি থেকে সকলেই চাপ দিতে থাকে বিয়েটা এবার করে নেওয়ার জন্য । 
বুলবুল তা রায়মাকে একদিন সময় সুযোগ বুঝে জানাতে গেলে রায়মা সরাসরি বলে দেয় আর কিছুটা সময় যাক।
তারপর না হয় বিয়ের কথা ভাবা যাবে।
রায়মাকে সেদিন লক্ষ্য করেছিল বুলবুল।
অদ্ভুত শান্ত, স্নিগ্ধ রূপের যে রায়মাকে সে এতদিন ভালোবেসে আসছিল ,
যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল সংসার গড়ে তোলার সে রায়মা যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ।
পোশাক ,সাজসজ্জা সবেতেই যেন বিস্তর ফারাক।
এক সময় যে রায়মার সলজ্জ হাসি বুলবুল কে আকৃষ্ট করতো 
সেই হাসি কোথায় হারিয়ে গেণো ঠোঁটের প্রান্তে ।
রায়মা যেন হারিয়ে যাচ্ছে । বুলবুলকে যেন তাঁকে আর কাছে চাইলে কাছে পায় না ।
ছুঁতে চাইলে ছুঁতেও পারে না। তাদের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে।
.
প্রথম প্রথম বুলবুলনঅবাক হয়েছিল রায়মার হঠাৎ এমন পরিবর্তনের কারণ দেখে
কিন্তু কিছু দিন বাদে ব্যাপারটা সহজ ও পরিস্কার হয়ে গেল বুলবুলের কাছে ।
রাতারাতি রায়মান বাবা আর মা কে নিয়ে পূর্বের ভাড়া বাড়ি ত্যাগ করে আরো
কিছুটা দূরে বেশী টাকা ভাড়া দিয়ে থাকার জন্য ভালো বাড়ি ভাড়া করলো।
বাবার চিকিৎসা করানোর জন্য নামী নার্সিংহোম অ্যাডমিট ও করালো।
সেই সঙ্গে বুলবুলের সঙ্গে সম্পর্ক ও এক প্রকার ত্যাগ করলো।
লোকের মুখে শুনতে থাকলো নানা কথা যেমন রায়মা নাকী তাঁর বসের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ।
তিনিই নাকী রায়মা ও তাঁর পরিবারের সব দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে।
সব শুনে বুলবুল একদিন উপস্থিত হল রায়মার ভাড়া করা নতুন বাড়িতে।
প্রশ্ন করলো রায়মা কে। প্রত্যুত্তরে প্রথম টা কিছু বলতে না চাইলেও পরে রায়মা
স্পষ্ট করে বুলবুল কে জানিয়ে দিয়েছিল

তুমি কী জেনেছ আমি জানি না তবে আমি এখন বিয়ের কথা ভাবছি না। 
এখন আমার অনেক দায়িত্ব আছে। অসুস্থ বাবা মা কে দেখা সেইসঙ্গে নিজের 
কেরিয়ার সম্পর্কে চিন্তা করা। একটা চাকরি পেয়েছি তাতে যথাযথ ভাবে কাজ করে 
উঁচু পোস্টে যাওয়া । তাই তুমি বরং অন্য কাওকে বিয়ে করো আমি এখন 
তোমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী নই। 
আর তাছাড়া ছাপোষা মধ্যবিত্ত জীবন কাটাতে আমি প্রস্তুত নই।”

বুলবুল তার সব শুনে ফিরে এসেছিল ।
আশা রেখেছিল রায়মান তাঁর ভুল হয়তো বুঝবে এবং তাঁর কাছে ফিরে আসবে একদিন।
কিন্তু না এর দুমাস বাদে রায়ার বাবা মারা যান ।
আর রায়মা ওর মা কে নিয়ে কোথায় যেন চলে যায় ।
আর তারপর দীর্ঘ সাত বছর রায়মার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকে না বুলবুলেন।
আমার সঙ্গে বুলবুলেন বিয়ে হয়ে যায় এরপর। তারপর সাত বছরের মতো পার হয়ে গেলে।
কয়েক মাসের মধ্যে বদলি হয় ঢাকার বাহিরে।
সেখানেই বুলবুলের অফিসের বস আকাশের আমন্ত্রণে একটি অনুষ্ঠানে 
আবার নতুন করে দেখে রায়মা কে ।

অবাক হয় বুলবুল। কোলিগদের কাছে জানতে পারে আকাশের স্ত্রী পঙ্গু ।
ছেলে মেয়ে সব বিদেশে পড়াশুনা করছে।
তাই নিজের অবসর কাটাতেই রায়মা নামে মেয়েটিকে তাঁর রক্ষিতা হিসেবে রেখেছে।
.
আগে মেয়েটি আরো একটি কোম্পানিতে কাজ করতো। সেখানকার বসের সঙ্গে বেশ প্রেম পিরিতিও ছিল।
তারপর হঠাৎ ওই কোম্পানি ছেড়ে আমাদের কোম্পানির ব্রাঞ্চে যুক্ত হয়।
আর এখানেই মধ্য বয়সি আকাশের মনোরঞ্জনের পাত্রী হয়। একটি মেয়ে ও হয়েছে।
আকাশের পূর্বের স্ত্রী এসব জেনে প্রতিবাদ করলে আকাশ বাড়ি ছেড়ে রায়মা ম্যাডামের কাছে চলে আসেন ও তাঁকে নিয়েই থাকেন। এত কিছু শুনে বুলবুল আর সহ্য করতে পারেনি ।
সেই মুহূর্তে নিজের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে ছিল এই ভেবে যে নিজে এক সময় কাকে 
ভালোবেসেছিল সে? তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর বাদে তোর বিয়ের পাকা কথা বলতে
গিয়ে রিনির মায়ের পরিচয়ে আবার তার রায়মার মুখোমুখি হতে হয় তোর বাবাকে। 
রিনি আর কেউ নয় তার অফিসের বস আকাশ রক্ষিতা রায়মার মেয়ে । “


চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com