Breaking News

হঠাৎ বসন্ত । পর্ব -০৩



পরের দিন সকাল থাকতেই নীল হাজির হয়েছিল তার বাবার ঘরে বুলবুল হোসেন। 
ঘরের মাঝ বরাবর রাখা কাঠের চেয়ারটাতে বসে
ইংরেজি দৈনিক পত্রের ওপর চোখ বোলাচ্ছিল বুলবুল । 
নীল কে ঘরে ঢুকতে দেখে কাগজ থেকে ঈষৎ মুখটা তুলে বলে উঠলেন
–” তা ছোটবাবু আজ তোমার হঠাৎ বাবার ঘরে আসার প্রয়োজন পরলো কেন? 
কিছু বলবে ?”
–” হ্যাঁ বাবা ঠিকই ধরেছ আমি কিছু বলার জন্যই এসেছি।
(” কোনো ভনিতা না করেই নীল কথাগুলি বলে উঠতেই বুলবুল 
কিছু সময় নীলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠেছিল)
—” হুমম্ বুঝেছি তুমি কী কথা বলার জন্য সকাল সকাল আমার কাছে এসেছ। 
আর যদি তুমি না ও আসতে আমি নিজেই তোমার ঘরে যেতাম। 
তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল। “

” বাবা আমি তো বুঝেই উঠতে পারছি না যে তুমি আমার আর রিনির পাঁচ বছরের 
সম্পর্ক শেষ করে দিতে চাইছ কেন ? 
তুমি তো ভালো করেই জানো আমার আর রিনির বিয়ে হতে যাচ্ছে। 
আর আমাদের বিয়েতে তো তোমার কোনো আপত্তি ছিলনা। 
শুধু রিনিকে তুমি চাক্ষুষ দেখনি বলে দেখতে গিয়েছিলে আর সেইসঙ্গে 
দিনক্ষণ টুকু ঠিক করার জন্য । কিন্তু রিনি কে দেখতে গিয়ে তোমার হঠাৎ এমন মনোভাবের 
কারণ কী যে এই বিয়ের সম্পূর্ণ ভাবে বিরোধিতা করে বলছ যে এই বিয়ে হতে পারে না। 
তা তো আমি কেন বাড়ির কেউই তো বুঝে উঠতে পারছি না।
” বুলবুল কথাগুলি শেষ হওয়া র পূর্বেই নীল বেশ রূঢ কন্ঠস্বরে কথাগুলি বলে উঠতেই বুলবুলের 
বুঝতে অসুবিধা হল না নীল কেন ক্ষিপ্ত ।
নীল যে মনে মনে তাঁর সিদ্ধান্তে আশাহত এবং বিরক্ত তা বুঝতে অসুবিধাও হল না। 
মৃদু হেসে ইংরেজি পত্রিকাটিকে সেন্টার টেবিলে রেখে শান্ত কন্ঠস্বরে বুলবুল বলে উঠলো–
—” তোমার মা তোমাদের বা তোমাকে কিছু বলেনি ?”

—” কই না তো । ভাবব বা ভাইয়ক দুজনের কাছেই তো শুনলাম মায়ের নাকি রিনি কে ভালো লেগেছে। শুধু তুমিই না কী রিনি কে পছন্দ করোনি? কিন্তু কেন বাবা ?
রিনির মতো স্মার্ট, সুন্দরী মার্জিত স্বভাবের মেয়েকে তোমার পছন্দ হল না কেন ?” 
পুনরায় রূঢতা প্রকাশ পেল নীলের কন্ঠস্বরে।
–” ওঁকে পছন্দ হয় নি তোমাকে কে বলেছে নীল। 
ওঁর মতো মেয়েকে তোমার বৌ করে আনবো এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আমার বা 
তোমার মায়ের কাছে আর কী ছিল ? কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। 
এই বাড়ির মান সম্মান বলেও একটা ব্যাপার তো আছে । 
আর ও যে পরিবারের মেয়ে সেখান থেকে এ বাড়িতে এলে তাতে এই বাড়ির চরম বদনাম হবে। 
তোমাকে আঙুল দেখিয়ে লোকে বলবে তুমি একটি বেশ্যার মেয়ে কে বৌ করে এ বাড়িতে এনেছ।
তাতে কী তোমার বা এই বাড়ির সম্মান থাকবে ?”

—” বাবা ! “
–” হ্যাঁ হ্যাঁ । যে মহিলা কোনো একজন পুরুষের বিবাহিতা 
স্ত্রী না হয়েও সেই পুরুষের জীবনে থেকে সেই পুরুষের সংসার জীবন ছাড়খার করে দেয় 
তাঁকে রক্ষিতা বলে। সাদা বাংলায় যা বেশ্যাবৃত্তি। এরচেয়ে বেশী কিছু আমি তোমাকে বলতে 
পারবোনা নীল । গতকাল রাতে তোমার মাও আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন এই প্রসঙ্গে । 
তাঁর ও প্রশ্ন ছিল রিনির সঙ্গে তোমার বিয়ে দিতে আমার আপত্তি কেন ? 
তখন আমি তাঁকে সবটুকু বলেছি। 
তাই আমার কাছে তোমার সবটুকু না জানলেও তোমার মা ই তোমাকে সবটুকু জানাবে।
.
আমি বাবা হয়ে এ ব্যাপারে তোমার সঙ্গে আলোচনা করতে সত্যিই অপারগ । 
এখন তুমি আসতে পারো। ”
বিষাদের কন্ঠস্বরে কথাগুলি বলে ওঠে বুলবুল যার ফলে নীল 
আর অতিরিক্ত কথা বাড়ানোর চেষ্টা করেনি। 
সে যতটুকু তাঁর বাবা কে চেনে তাতে এ বিষয়ে বাবা তাঁর সাথে আর 
একটি কথাও বলবে না তাতে নিশ্চিত। অগত্যা ধীরে ধীরে নীল ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিল ।
.
মা অনিলা নীলের প্রশ্নের সকল উত্তরই দিয়েছিল নীল অফিস থেকে ফিরলে।
সারা দিন অফিসে নানা কাজের মধ্যেও বাবার বলা রিনির মা সম্পর্কে বেশ্যা শব্দটি ভীষণ ভাবে মনকে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল নীলের মনটাকে। 
কিছুই বুঝতে পারে না বাবা কোন ব্যক্তির রক্ষিতা হয়ে রিনির মা
 একটি সংসার ভাঙিয়ে দিয়েছিলেন ? তবে কী সেই ব্যক্তি বাবার খুব চেনা ? 
নইলে বাবা জানলেন কী করে। তবে কী রিনির মা বাবার পূর্ব পরিচিত ? 
এইরূপ নানা প্রশ্নই মনটাকে ভীষণ ভাবে অশান্ত করে রাখে । কিন্তু উপায় কী ? 
বাবা যখন নিজে বলতে না চেয়ে মায়ের কাছ থেকে জেনে নিতে বলছেন। 
তখন মায়ের কাছ থেকেই জানতে হবে বিষয় টাকে।
বলা যায় অফিস থেকে ফেরা মাত্রই নীল আর অপেক্ষা করেনি।
 চলে গিয়েছিল মা অনিলার ঘরে। ঘরে অনিলা একাই থাকে বড় ছেলে আয়ানের 
মেয়ে আয়না কে নিয়ে।

ঘর অন্ধকার। টিউব লাইটের জোড়ালো আলো জ্বালাতেই দ্রুত ঘর আলোকিত হয়ে উঠতেই নীল দেখেছিল মাকে বিছানাতে শুয়ে থাকতে। সচরচার এমন সন্ধ্যার সময়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে কোনোদিন নীল অনিলাকে দেখেনি। তাই বেশ অবাক হয়েই প্রশ্ন করে উঠেছিল
–‘ মা তুমি এখন শুয়ে আছ ? শরীর কী খারাপ?’
—” না শরীর আমার ঠিক আছে কিন্তু তুই অফিস থেকে ফিরে আমার ঘরে চলে এলি কেন ? অফিসের জামাকাপড় ও ছাড়িসনি দেখছি। কিছু কী বলবি?
” বিছানা থেকে ধীরে ধীরে উঠে বসতে বসতে কথাগুলি বলে ওঠে অনিলা । নীল ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না কোথা থেকে শুরু করবে । কিছু সময় মাটির দিকে তাকিয়ে থাকলো।
অনিলা বোধকরি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে উঠেছিল
—” বুঝেছি তুই কী জন্য এসেছিস । কিন্তু সে সব কথা কী তোর একান্তই শোনা দরকার নীল ? যদি তোর বাবা রিনি কে এ বাড়িতে তোর বৌ করে নিয়ে আসতে রাজী না থাকেন তাহলে রিনির সঙ্গে সম্পর্ক পরিত্যাগ করাই তো ভালো। ওঁকে বুঝিয়ে বলেদে যে তোর পক্ষে এ বিয়ে করা সম্ভব নয়। “
—” কিন্তু মা তুমি তো জানো রিনি কতোটা ভালো মেয়ে । শুধু ওঁর মায়ের জন্য ওঁকে আমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেবো ? ওঁর কী দোষ ? আমি ওঁকে ভালোবাসি মা।”
—” তুই জানিস তাহলে ওঁর মা সম্পর্কে? নীলের কথাগুলি শেষ হওয়ার পূর্বেই অনিলা বেশ আশ্চর্য হয়েই প্রশ্ন টা করে উঠেছিল ।

—” না মা আমি সঠিক কিছুই জানিনা । জানার জন্য ই তোমার কাছে এসেছি।
আমি চাই আমাদের বৈবাহিক জীবন তোমার আর বাবার তোমাদের দুজনের দোয়া প্রাপ্ত হয়েই শুরু হোক।
আমাদের মধ্যে এমন কিছুই যেন বিষয় না থাকে যাঁর জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন কোনো প্রশ্নের মুখে পড়ুক।
তুমি আমাকে বলো মা রিনির সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে বাবা কেন রাজী হচ্ছে না ?
আমি বাবাকে প্রশ্ন টা করেছিলাম কিন্তু বাবা তাঁর উত্তরে বলেছেন তোমার কাছ থেকে সবটুকু জেনে নিতে ।

কারণ তিনি আমার সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনা করতে চান না ।”
কথাগুলি বলতে বলতে নীল ধীরে ধীরে খাটের কাছে এগিয়ে এসে অনিলার
পাশটিতে বসে পরতেই অনিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠছিল
—“দেখ নীল সে সব কথা কারো কাছে বলার মতো নয় তবু যেখানে তোর আর রিনির ভবিষ্যতের
প্রশ্ন জড়িত সেখানে সবটুকু তোর জানা দরকার পরেছে তোর। অগত্যা তা তোকে বলবোও আমি ।
তারপর সিদ্ধান্ত তোর। তবে তুই বাবা কে ভুল বুঝিস না । রিনিকে নিয়ে ওনার কোনো বিরোধিতা নেই ।
ওনার বিরোধিতা রিনির মা রায়মা কে নিয়ে। কারণ রায়মা হল
তোর বাবার এক সময়ের অফিসের বস আকাশের রক্ষিতা। এ বিষয়ে সবটুকু বলতে গেলে অনেক বড় কাহিনী।

যাঁর সবটুকু তোর বাবা আগে কোনোদিন আমাকে বলিনি। বলেছে গতকাল রাতে।
একান্ত বাধ্য হয়ে। তারপর,,,,
” ” নীল নিরুত্তর থেকে শুনতে থাকল অনিলা। বলে যাওয়া বুলবুল ও রায়মা এক সময়ের প্রেম এবং তৎপরবর্তী ঘটনা ।
–“তোর বাবার সঙ্গে আমার বিয়ের দের বছর বাদে আমি জানতে পেরেছিলাম কোনো এক
আত্মীয়ের মাধ্যমে যে তোর বাবা আমার সঙ্গে বিয়ের আগে ভালোবাসতো একটি মেয়েকে।
কোনো একটি কারণ বশত বিয়েটা হয়ে ওঠেনি। আমি জানার চেষ্টা ও যে করিনি
মেয়েটি সম্পর্কে তোর বাবার কাছ থেকে তা নয় কিন্তু তোর বাবা কোনোদিন ও বলেনি।
শুধু আশ্বাস দিয়ে বলে যেত
–” তোমাকে ছাড়া আমি কাওকে ভালোবাসি না।
যাঁর সম্পর্কে তুমি আমার কাছে জানতে চাইছ সে আমার অতীত।
আর অতীত সুন্দর হলে মনে রাখার প্রয়োজন আছে তিক্ত অতীতকে ভুলে যাওয়াই শ্রেয়।
তাই সেই তিক্ত অতীত নিয়ে আমার কাছে কোনো প্রসঙ্গ আনবে না।

” আমি তারপর থেকে আর কোনোদিন ও তোর বাবার পূর্ব প্রেম নিয়ে বা তাঁর
অতীত নিয়ে কোনো আলোচনা ও করিনি। বলতে পারিস করার প্রয়োজন ও
পরেনি কারণ তোর বাবা আমার ক্ষেত্রে বা
তোরা দুই ভাই অর্থাৎ তাঁর দুই সন্তানের ক্ষেত্রে কোনো কর্তব্যের অবহেলা তো দূর বরং
স্বামী হিসেবে আমার ওপর বা পিতা হিসেবে যতোটা কর্তব্য করা দরকার তোদের
ওপর তাঁর চাইতে একটু বেশীই করেছেন বা এখনো করে আসছেন।
যাইহোক হয়তো কোনোদিন ও আর তাঁর অতীত সম্পর্কে কোনো আলোচনাই আমি আনতাম না যদি না
রিনির প্রসঙ্গ এসে পরতো। এবং রিনির মা ই হচ্ছে তোর বাবার এক সময়ের প্রেমিকা রায়মা
তা জানতে পারতাম । যাঁর হঠাৎ বাড়ি থেকে অন্তর্ধানই তোর বাবার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে উঠতে পারেনি। বা সব সম্পর্কের সমাপ্তি । “


চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com