Breaking News

হঠাৎ বসন্ত । পর্ব -০২



খোলা ছাদে পায়চারি করতে করতে নানা প্রশ্ন যখন মনকে তোলপাড় করে তুলছিল তখনই ঠান্ডা বাতাসের মতো রিনির সঙ্গে প্রথম আলাপ,
তারপর ধীরে ধীরে কখন পরিচয় গড়ে ওঠা, 
তারপর আরো কিছু মাস বাদে একে অপরকে প্রেম নিবেদন করা সব সব 
মনে পড়তে লাগল নীলের। আঙুলের ফাঁকে ধরা জ্বলন্ত সিগারেটের অন্তিম অংশটুকু দূরে 
নিক্ষেপ করে পাঁচিলের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে 
গিয়ে কতক্ষণ সময় কেটেও যে গিয়েছিল তা কে জানে।
সম্বিত ফিরেছিল বড় ভাবি নীপার চেনা নুপুরের শব্দে। 
পিছন ফিরে তাকিয়ে নীপার দিকে চোখ যেতেই একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে নীল বলে উঠেছিল–
–” ভাবি তুমি?

ঘুম আসছে না বলে ছাদে উঠে এলে না কী ?”
—” না নীলসে জন্য নয় । প্রয়োজনে উঠে এলাম। তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলার জন্য । 
জানো নীল তোমার মতো প্রশ্নটা যে আমার মনেও দেখা দিয়েছে । 
বাবা কেন রিনির মতো অমন সুন্দরী, শিক্ষিতা, স্মার্ট মেয়েকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছেন ? 
অথচ তোমার বিয়ের ব্যাপারে নানা বিষয় কথা বলে দিন রাত্রি আমাকে 
আর মা কে অতিষ্ঠ করে তোলেন বাবা ই। একই কথা বার বার বলে চলেন
.
নীল যখন মেয়েটিকে পছন্দ করেছে তাহলে আর দেরি কেন 
বিয়ের দিন শীঘ্রই ঠিক করে ফেলা হোক। অথচ দেখো রিনিকে দেখার পর থেকেই কেমন
 যেন বেঁকে বসেছেন । কিন্তু বাবা তো ভালো করেই জানেন তোমার সঙ্গে রিনির সম্পর্ক 
আজকের নয়। বিয়ে তোমাদের হবে তা ও নিশ্চিত হয়ে আছে। 
এখন হঠাৎ রিনির সঙ্গে বিশেষ করে রিনির মা কে দেখে হঠাৎ মত বদল এ সবের তো মানেই হয় না।
.
তুমি বরং কাল ই বাবা কে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাও । 
কেন উনি এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ?
তুমি রিনিকে ভালোবাসো এখন রিনিকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়া তোমার পক্ষে
কখনোই সম্ভব নয় তা নিশ্চিত জানাও। তারপর দেখ বাবা কী বলেন।
নয়তো নিজেরাই কোডে গিয়ে বিয়ে করে নাও। 
বাবার কথায় তো নিজের ভালোবাসার বলিদান দেবে তা
তো আর সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে দেখবে বাবাও রিনিকে মেনে নেবেন একদিন।
(” কথাগুলি প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে নীপা একটু থামতেই নীল একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে শান্ত কন্ঠস্বরে বলে উঠলো)
–” কিন্তু ভাবব বাবার মনে কষ্ট দিয়ে বৈবাহিক জীবন শুরু করবো এ তো আমি ভাবতেই পারি না।
তাছাড়া রিনি শুনলে কী ভাববে ? কী ধারণা নেবে বাবা সম্পর্কে?
ও তো তোমাদের কতোটা ভালোবাসে তা তো তুমি জানো ভাবি ।
এখন যদি বলি তোমাকে বাবার পছন্দ নয় রিনি। ,
আমাকে বিয়ে করতে গেলে বাবার অজান্তে করতে হবে তখন কী ও কথাগুলি মেনে নিতে পারবে ?
কেন? কী জন্য ?
এমন অনেক প্রশ্ন সামনে আনবে যার উত্তর দেওয়ার আমি অপারগ। 
তখন কী হবে ?

” নীপা বুঝলো সবই। নীলের বলে যাওয়া কথাগুলি যে যুক্তিযুক্ত তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই।
বাবার হঠাৎ মনে উদয় হওয়া সিন্ধান্তকে মর্যাদা দিতে গিয়ে নীল বা রিনি তাঁদের দীর্ঘ পাঁচ বছরের
ভালোবাসা কে তো দূরে সরিয়ে দিতে পারে না । তাই এখন একটাই পথ খোলা
আছে নীলকেই বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতে হবে
 তাঁর এমনতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কী ?
তবে যদি সমস্যার সমাধান হয় ।
কিন্তু নীল কী আদোও বাবার সামনে গিয়ে এমন প্রশ্ন করতে পারবে ?
না কী এ ক্ষেত্রে শ্বাশুড়ি মা ই সমাধান করতে পারবেন ?
এরূপ নানা প্রশ্ন যখন নীপার মনে দেখা দিয়ে যাচ্ছে নীল বলে ওঠে
—” আমি জানি ভাবি তুমি কি ভাবছো? আমি কেমন করে বাবা কে এই প্রশ্ন করবো ?
কিন্তু আমাকে যে করতেই হবে।
আমার ভবিষ্যত যাঁকে নিয়ে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর দিকে যখন আঙুল উঠেছে তখন সমাধানের চেষ্টা আমাকেই করতে হবে। এবং তা কাল সকালেই বাবার সঙ্গে কথা বলব ।
” নীপা আর কথা বাড়ানোর চেষ্টা করে নি। 
নীরব থেকেই নীলরের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে ধীরে পায়ে চলে গিয়েছিল।

হঠাৎ এক বসন্তের সন্ধ্যেতে নীলের সঙ্গে রিনির আলাপ হয়েছিল অফিস কলিগ রিমার বিয়ে তে।
রুমারই বান্ধবী রিনি। কক্সবাজার এথাকে মায়ের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া করে।
কাকতালীয় ভাবে আলাপটা রুমানাই করিয়ে দিতে গিয়ে বলেছিল।
বলা যায় প্রথম নজরেই ভালো লেগে গিয়েছিল রিনিকে নীলের।
শান্ত, ভদ্র, স্মার্ট ঝকঝকে চেহারার রিনিকে ভালো না লাগার কোনো কারণ ও ছিল না।
এরপর প্রথম আলাপের দু সপ্তাহ বাদে হঠাৎই অফিস পাড়ায় দেখা হয়ে যেতে দুজনে একটি রেস্তোরেন্ট খাবার খেতে খেতে নিজেদের একে অপরের কাছে পরিচিতও হয়েছিল।
নীল তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে তাঁর ভাবি ,

ভাই,বাবা মা সকলকে নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার ঢাকুরিয়া অঞ্চলে তা জানাতেই রিনিও তাঁর পরিচয়
দিয়েছিল। তবে পরিচয় দিতে গিয়ে রিনি তাঁর মায়ের কথাই বার বার বলে গিয়েছিল।
কেমন করে মা ঢাকা থেকে কক্সবাজারে এসে তাঁকে একা মানুষ করে বড় করে তুলেছে। কত পরিশ্রম করেছে সব সব কিছু ।
কিন্তু বাবার কথা একবার ও উল্লেখ করেনি। এমন কী এই পাঁচ বছরের সম্পর্কে নীল যেমন কোনোদিন কৌতূহল প্রকাশ করেনি রিনির বাবা কে ? কী নাম ? তিনি বেঁচে আছেন কী না ?
তেমনি রিনিও সে বিষয়ে কোনো কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেনি।
বরং সুস্থ ও সুন্দর ভাবেই তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল ধীরে ধীরে । আজ পাঁচ বছর বাদে হঠাত্ যা প্রশ্নের মুখে।

মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে কথা ভেবে হঠাৎই নীলের মনে প্রশ্ন জেগেছিলো—” রিনির মা কে দেখেই বাবার এমন সিদ্ধান্ত কেন? তবে কী বাবা রিনির মা কে আগে থেকেই চেনেন ? কিন্তু কী ভাবে ? “
কিন্তু প্রশ্ন গুলির উত্তর পেতে নতুন সকালের জন্য অপেক্ষাতে থাকতেই হল নীলের


চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com