ভালোবাসার পরী | পর্ব -১৪

পরদিন ক্যাম্পাসে”
সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আকাশ সবাইকে নীরের কাহিনী সব খুলে বললো। সেদিন বানিজ্য মেলায় একটি মেয়েকে দেখে নীরের রিয়্যাকশন কেমন ছিলো। তারপর নীর আর ও মেয়েটাকে ফলো করে মেয়েটির বাসা পর্যন্ত গিয়েছিলো। তারপর বাসা চিনে ফিরে আসার সময় মেয়েটি কিভাবে হাত নেড়ে হেসেছিলো ওদের দিকে তাকিয়ে। নীর মেয়েটির কলেজে কিভাবে ফলো করলো মেয়েটিকে। এভরিথিং বললো আকাশ সবাইকে। মেয়েটি ওর ছোটো বোন আরণির ফ্রেন্ড সেটাও বললো। মেয়েটির নাম অনিসা তাও বললো। নীহাল , রাহাত , সিহাদ আর নাফিসা শুনে তো অবাক। কারন ওদের বন্ধু নীর একটা মেয়ের জন্য এতকিছু করতে পারে ? সেটা তো ওদের সবার কল্পনার বাহিরে।কারন নীর মেয়েদের দেখতেই পারে না। ওরা সবাই এটাই জানতো এতদিন।
আকাশঃ তো বল কি বুঝলি তোরা ?
নীহালঃ বিশ্বাস করা মুশকিল।
রাহাতঃ আমাদের নীরের মনে কোনো মেয়ে ধরেছে ?
সিহাদঃ সিরিয়াসলি বিশ্বাস করা যাচ্ছে না ব্যাপার’টা।
নাফিসাঃ গাইজ আমার না ব্যাপার’টা ঠিক হজম হচ্ছে না।
আকাশঃ আজকে তো মেয়েটি মানে অনিসার সাথে মিট করার কথা আছে।
সবাইঃ কিহ্ ? সিরিয়াসলি !
আকাশঃ হ্যাঁ !
নীহালঃ মামা মিস করা যাবে না।
রাহাতঃ কোথায় দেখা করবে মেয়েটির সাথে ?
আকাশঃ এখনো আরণি জানায়’নি। আরণি অনিসা’কে বলবে। দ্যান অনিসা যদি হ্যাঁ বলে ! তাহলে আরণি ফোন করে জানাবে আর জায়গা ম্যাসেজ করে দিবে।
সিহাদঃ আমরা সবাই যাবো। আমাদের নীর কোনো মেয়ের প্রেমে পরেছে ? মেয়েটি নিশ্চই আলাদা অন্য মেয়েদের থেকে।
আকাশঃ তা বলতে পারিস।
নাফিসাঃ তুই তো দেখেছিস। কেমন দেখতে মেয়েটা ?
আকাশঃ খুবই মায়াবী মেয়েটি। আর মেয়েটির মুখেই ওর বাচ্চামি ফুঁটে ওঠে। কিউট বাচ্চা টাইপের মেয়েটি দেখতে। শ্যাম বর্ণের মধ্যে মায়াবী আর সুন্দরী দেখতে খুব।
নীহালঃ দেখতে হবে মেয়েটিকে। আফটার-অল নীরের চয়েজ বলে কথা।
আকাশঃ হুমম ! আজ অনিসার পারমিশন পেলেই যাবে নীর দেখা করতে।
রাহাতঃ আমরা সবাই যাবো।
নীর ক্যান্টিনে এসে চেয়ার টেনে বসলো। সবাই নীরের দিকে রাগি চোখে তাকালো। নীর তো বোকা বনে গেলো সবার ফেস রিয়্যাকশন দেখে। সিহাদ নীরের ঘাড়ে হাত রেখে বললো !
সিহাদঃ দোস্ত তলে তলে ট্যাম্পু চালাও ? আর আমরা বললেই হরতাল শুরু করো ?
নীরঃ মানে ? [চোখ উল্টে তাকিয়ে]
নাফিসাঃ বলেছিলাম যেদিন প্রেমে পরবি ? সেদিন বুঝবি ভালোবাসা কি জিনিস। কি ! হলো তো। আমার কথা মিললো তো। সেই প্রেমে পরলি তো ?
নীরঃ তোদের কে বললো ?
নীহালঃ বোকা মনে হয় আমাদের ? “ছোটো বেলায় খেয়েছি সুজি। তাই একটু হলেও কেউ প্রেমে পরলে বুঝি”।
নীরঃ গাইজ সত্যি বলতে এখনো মেয়েটির সাথে কোনোদিন কথাই বলতে পারিনি আমি। গতকাল ১২ দিন পর মেয়েটির শুধু নাম জানতে পেরেছি।
রাহাতঃ তাই বলে আমাদের কিছুই বলবি না ?
নীরঃ রিলেশন হলে তো বলবো ?
সিহাদঃ আজ না’কি দেখা করবি মেয়েটির সাথে।
নীরঃ এখনো কোনো ফোন আসে’নি। মানে এখনো মেয়েটি হয়তো পারমিশন দেয়’নি। [মন খারাপ করে]
নাফিসাঃ দেখবি এখনি ফোন চলে আসবে আরণির।আর বলবে ! মেয়েটা তোর সাথে দেখা করতে চায়।
নীরঃ আই হোপ সো ! [ঠোঁট কামড়ে ধরে]
ওদিকে আরণি আর সুমাইয়া বসে গল্প করছে , চকলেট খাচ্ছে। আরণি সবকিছু খুলে , সব ঘটনা বলেছে সুমাইয়া’কে ! ইনফ্যাক্ট নীরের ছবিও দেখিয়েছে আরণি নিজের ফোনে।
সুমাইয়াঃ দোস্ত তোর নীর ভাইয়া কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম।
আরণিঃ নজর দিস না। অনিসা তোকে আস্ত রাখবে না।
সুমাইয়াঃ অনিসা যে পরিমাণে বাঁকা। যদি তোর নীর ভাইয়ার সাথে দেখা করতে না চায় ?
আরণিঃ করবে-করবে। ইনফ্যাক্ট মনে মনে খুশিতে নাচবে।
সুমাইয়াঃ হতেও পারে। কারন অনিসার কথায় বোঝা যায়। অনিসা প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলেছে তোর নীর ভাইয়া কে।
আরণিঃ আসছে আমাদের “মিস.বকবকানী”।
সুমাইয়াঃ দেখিস এসেই‌ চকলেট নিয়ে বসবে।
অনিসা এসেই ব্যাগ’টা রেখে একটা কিটক্যাট চকলেটের প্যাকেট খুলে খেতে লাগলো চুপচাপ। কোনো কথা বলছে না।
আরণিঃ আজকে বকবক করছিস না-যে ?
অনিসাঃ কি বকবক করবো ?
সুমাইয়াঃ কিছু হয়েছে ?
অনিসাঃ এমনি-এমনি মুড অফ হয়ে আছে।
আরণিঃ এটা তো তোর রোগ। অযথা মুড অফ হয়ে যায়।
অনিসাঃ এই রোগের মেডিসিন প্রয়োজন আমার।
সুমাইয়াঃ আছে একটা মেডিসিন। কিউট একটা বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নে। দেখবি মুড অফ হলেও তোর মুড ঠিক করে দিবে।
অনিসাঃ আমার এই রূপে আর রূব্বানে বাঁশি বাজাস না’তো।
আরণিঃ এই রূপেই আমার ভাই’কে পাগল করে দিয়েছিস। বাকি ছেলেদের কি হবে কে জানে। [আনমনে]
অনিসাঃ কি বললি তুই ? [ভ্রুঁ কুঁচকে]
সুমাইয়াঃ পাগলে কি’না বলে ছাগলে কি’না খায়। ওর কথা কানে নিস না।
আরণিঃ আমি একটা বয়ফ্রেন্ড অফার করতে পারি তোকে।
অনিসাঃ আমাকে দূর থেকে দেখেই চিতা-বাঘের মতো দৌড় দিবে উল্টো পথে। এই রূপে কঁপালে বয়ফ্রেন্ডও জুটবে না।
সুমাইয়াঃ এসে থেকে চকলেট খেয়েই যাচ্ছিস।
অনিসাঃ ক্যান তোর জামাই রে চকলেট পার্সেল করবি ?
আরণিঃ ইম্পর্ট্যান্ট কথায় আসি ?
অনিসাঃ তোর আবার ইম্পর্ট্যান্ট কথা ?
সুমাইয়াঃ সত্যিই জরুরি কথা আছে।
অনিসাঃ কি কথা বল।
আরণিঃ ওই মেলায় যে ছেলেটাকে দেখেছিলি। ওর সাথে কথা হয়েছে তোর আর ?
অনিসা বসে চকলেট খাচ্ছিলো। আরণির কথা শুনে অনিসার গলায় চকলেট আটকে গেলো। রীতিমতো কাঁশতে লাগলো অনিসা।বোতল খুলে পানি খেয়ে নিলো ও। জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো। অনিসার অনুভব হচ্ছে ! আরণি মেলার সেই ছেলেটার কথা বলতেই “অনিসার বুকে কেমন বিদ্যুৎ চমকে উঠলো” অনিসা শুকনো ঢোক গিললো।
অনিসাঃ আমাকে খুন‌ করবি না’কি ?
আরণিঃ ক্যান কি হলো ?
অনিসাঃ মেলার সেই ছেলেটার সাথে কথা হয়েছে মানে ? ওই ছেলেকে সেদিনের পর আর দেখিই’নি। কথা হবে কিভাবে ?
সুমাইয়াঃ ইচ্ছে আছে না’কি কথা বলার ?
অনিসাঃ বাজে কথা বলিস না’তো। আমার বয়েই গেছে ওই ছেলের সাথে কথা বলতে।
আরণিঃ ওয়েট এ মিনিট !
আরণি নিজের ফোনের লক খুলে গ্যালারিতে গিয়ে নীরের ছবি বের করলো। তারপর অনিসার মুখের সামনে আরণি নিজের ফোন’টা ধরলো। অনিসা চকলেট খেতে-খেতে আরণির ফোনের স্কিনে তাকাতেই অনিসার চোখগুলো কঁপালে উঠে গেলো।
অনিসাঃ [এটা তো সেই মেলার ছেলেটি। এই ছেলেটির উপর’ই তো আমি ক্রাশ খেয়েছি প্রথম দেখায়।]
সুমাইয়াঃ দেখ তো ছেলেটাকে চিনিস নাকি তুই ?
অনিসাঃ কে ছেলেটা ?
আরণিঃ আমার বয়ফ্রেন্ড।
আরণির মুখে “আমার বয়ফ্রেন্ড” কথাটা শুনেই অনিসার মুখ’টা কালো হয়ে গেলো। আরণি আর সুমাইয়ার চোখ এড়ায়’নি যে অনিসার মন খারাপ হয়েছে কথাটা শুনে।
সুমাইয়াঃ কিরে কংগ্রাচুলেশন দিবি না আরণি’কে ?
অনিসাঃ আমাদের তো বললি’ই না। রিলেশনে গেলি কবে তুই ? [আরণি’কে উদ্দেশ্য করে]
আরণিঃ হঠাৎ করেই সবকিছু হয়ে গেলো। ক্যান তুই খুশি হস’নি ?
অনিসাঃ [লুচু , অভদ্র , দুষ্টু , পঁচা ছেলে কোথাকার। মেলায় আমার দিকে ‘হা’ হয়ে তাকিয়ে ছিলো। যেনো আমাকে দেখেই প্রেমে পরে গেছে। আর দেখো ? এদিকে আমার বেস্টুর সাথে রিলেশনেও চলে গেছে]
সুমাইয়াঃ এই অনিসা কি ভাবছিস ? [অনিসা’কে কাঁধে ধাক্কা দিয়ে]
আরণিঃ মনে হচ্ছে তুই চিনিস ছেলেটাকে ? মানে আমার বয়ফ্রেন্ড কে।
অনিসাঃ না’তো ! আমি চিনি না ছেলেটাকে। বাট কংগ্রাচুলেশন দোস্ত। ট্রিট দিবি না ? আর দেখা করাবি না জিজুর সাথে ?
সুমাইয়াঃ অনিসা তুই আর আমি একসাথে ট্রিট নিবো। আরণির কাছ থেকে।
অনিসার ফোন বেজে উঠলো। অনিসা ফোন রিসিভ করে ক্লাসের বাহিরে গেলো কথা বলতে। এদিকে আরণি আর সুমাইয়া যে অনিসার ভালোবাসার পরীক্ষা নিলো। আর অনিসার মনের খবর বুঝেও নিলো। সেই খুশিতে আরণি আর সুমাইয়া দু’জনে একসাথে হাই-ফাইভ দিলো।
আরণিঃ দেখেছিস অনিসার চেহারা ?
সুমাইয়াঃ সিয়র আমি ! তোর নীর ভাইয়াকে শুধু পছন্দ না ভালোবাসে অনিসা।
আরণিঃ কিন্তু সেটা মনে মনে। আমাদের সাথেও শেয়ার করে না।
সুমাইয়াঃ এবার অনিসার পেটের কথা বের করেই ছাড়বো।
আরণিঃ আসতে দে অনিসা’কে।
আরণি আর সুমাইয়া দুষ্টু হাসলো। অনিসা যে নীরের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। সেটা অনিসার চেহারা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। আরণি আর সুমাইয়ার বুঝতে সময় লাগে’নি একটুও। অনিসা ক্লাসে ঢুকে বললো !
অনিসাঃ দোস্ত আমি একটু বাহিরে ঘুরে আসি।
আরণিঃ তুই আমাদের মিথ্যে ক্যান বললি ?
অনিসাঃ কি মিথ্যে ?
সুমাইয়াঃ এই যে বললি ছেলেটাকে চিনিস না তুই।
অনিসাঃ মিথ্যে ক্যান বলবো ?
আরণিঃ এই ছেলেটাকে তুই মেলায় দেখিস’নি ? এটাই মেলার সেই ছেলেটা না ?
অনিসাঃ [এই রে ধরা পরে গেলাম]
সুমাইয়াঃ তোর সাথে মজা করছিলাম আমরা। আরণির সাথে কোনো রিলেশন নেই ছেলেটার। আর ছেলেটা আরণির বয়ফ্রেন্ডও না।
অনিসাঃ আমাকেও তো তোরা মিথ্যেই বললি।
আরণিঃ টেস্ট করছিলাম তোকে। আর সেই পরীক্ষার ফল। তুই উঠে চলে যাচ্ছিলি।
অনিসাঃ কি বলতে চাচ্ছিস তোরা ?
আরণিঃ এই ছেলেটা আমার ভাই। আমার নীর ভাইয়া এটা। আর তোকে ভালোবাসে নীর ভাইয়া। এ্যান্ড আজকে তোর সাথে দেখা করতে চায়।এটাই বলতে চাচ্ছি। [সোজাসোজি বলে দিলো]
অনিসাঃ কিহ্ ?
সুমাইয়াঃ তুইও যে ভালোবাসিস নীর ভাইয়া’কে। সেটা তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
অনিসা চুপ করে কিছুক্ষন বসে রইলো। কত চেষ্টা করলো লুকিয়ে রাখারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা পরে গেলো ? ইশশশ কি লজ্জার ব্যাপার। অনিসা এসব ভাবেই লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।
আরণিঃ দেখা করবি না।নীর ভাইয়ার সাথে ? [দুষ্টুমি করে]
অনিসাঃ একটা কন্ডিশনে দেখা করবো।
সুমাইয়াঃ বলে ফেলো কি কন্ডিশন ?
অনিসাঃ তোরা কেউ কিন্তু ওই ছেলেটাকে বলবি না-যে “আমি ওকে ভালোবাসি”। না মানে আমার ক্রাশ ও। [ঠোঁট উল্টে]
আরণিঃ ফাইন বলবো না। এতদিন লুকিয়ে রাখলি আমাদের কাছে ? তোর সাথে কথা নেই।
অনিসাঃ স্যরি গাইজ। [লজ্জা পেয়ে]
আরণি ফোন দিলো নীর’কে। নীরের ফোন বাজতেই নীর ফোন রিসিভ করলো দ্রুত।
নীরঃ বল আরণি !
আরণিঃ প্লেস ম্যাসেজ করে দিচ্ছি চলে এসো।
নীরঃ মানে পারমিশন পেয়েছি ? [মৃদু হেসে]
আরণিঃ ইয়েস স্যার।
নীর ফোন কেটে দিলো।আর আকাশ সহ ওরা ফুল ফ্রেন্ড সার্কেল বেরিয়ে গেলো। আরণি জায়গা ম্যাসেজ করে দিলো নীরের ফোনে।ওরা সেই‌ জায়গা মতো চলে গেলো। নীর তো খুশিতে কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না। শুধু তার সারা পরীর চেহারা কল্পনা করে মৃদু হাসলো।
চলবে…
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url