Breaking News

ভালোবাসার পরী | পর্ব -১৩

আরণি শাওয়ার নিয়ে বের হলো। তারপর চুল হাত দিয়ে ঝাড়তে-ঝাড়তে আকাশের রুমে এলো। আরণি ওর ভাইয়ের রুমে ঢুকতেই ওর চোখগুলো গোল-গোল হয়ে গেলো। কারন আকাশ বসে ওর আইসক্রিম খাচ্ছে। আর নীর বসে ওর মাউনটেন ডিও খাচ্ছে। আরণি মাজায় দু হাত রেখে রেগে বললো !
আরণিঃ নীর ভাইয়া তুমি আমাকে “ছুঁচি বিল্লি” বলো তাই না ? আমার কোল্ড ড্রিংক্স আমি এখনো খেতে পারলাম না। তুমি বসে বসে খাচ্ছো ? তুমি তো “ছুঁচো বিল্লু”।
নীরঃ আমার জিনিস আমি খাচ্ছি। তোর কি তাতে ?

আরণিঃ তোমার জিনিস মানে কি ? সব চকলেট , আইসক্রিম , চিপস্ আর কোল্ড ড্রিংক্স আমার।
নীরঃ তোর মানেই তো আমার।
আরণিঃ কিছু বলাই বেকার। আর এই রাক্ষস তুই আমার আইসক্রিম গিলছিস ক্যান বসে বসে।
আরণির কথা শুনে আকাশ আইসক্রিম’টা ভালো করে দেখলো। কিন্তু কোথাও কিছু লেখা পেলো না।
আরণিঃ কি দেখছিস তুই ? আইসক্রিমের লাঠিও গিলে খাঁ চোখ দিয়ে।
আকাশঃ আইসক্রিমে তোর নাম কোথায় লেখা আছে। সেটাই দেখছিলাম আমি।
আরণিঃ একে তো আমার আইসক্রিম চুরি করে ছুঁচো বিল্লুর মতো লুকিয়ে-লুকিয়ে খাচ্ছিস। আবার কথা বলছিস ? এই তোর লজ্জা করে না ?
আকাশঃ আইসক্রিমে তোর নাম লেখা আছে ? আমি গরমে বাহির থেকে এসেছি। ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম পেয়েছি। তাই সেটা খাচ্ছি।
আরণিঃ সবগুলো আমার ঘুস। আমার জিনিস। তুই খাচ্ছিস ক্যান ?
নীরঃ এ্যাট লাস্ট শিকার করলি ? তুই ঘুস নিস আমার কাছ থেকে অলওয়েজ ?
আরণিঃ তোরা দুটো জলহস্থী।

নীরঃ তোর ফোন নিয়ে আয়।
আরণিঃ ক্যান চেক করবা ? আমি প্রেম করি না’কি ?
আকাশঃ তোর বান্ধুবী’দের দেখবো।
আরণিঃ দাঁড়া তুই। আমি ঈশা ভাবী’কে বলছি। তুই আমার বান্ধুবী’দের দিকে নজর দিচ্ছিস।
নীরঃ আমি চেয়েছি তোর ফোন। আকাশ চায়’নি।
আরণিঃ আনছি দাঁড়াও। [ভেংচি দিয়ে]
আরণি দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে ওর ফোন’টা নিয়ে এলো। তারপর নীরের হাতে ফোনের লক খুলে দিলো। নীর আরণির ফোনের গ্যালারিতে গেলো। আরণির ফ্রেন্ড সার্কেল গ্রুপের যে ফোল্ডার আছে। সেই ফোল্ডারে ক্লিক করলো। ওই ফোল্ডারে প্রায় এক-হাজার ছবি আছে। নীর আরণির দিকে তাকিয়ে বললো !

নীরঃ কলেজে গিয়ে কি করিস তুই ?
আরণিঃ কলেজে গিয়ে স্টুডেন্ট’রা কি করে ? কাবাডি-কাবাডি খেলে ?
আকাশঃ তোর মতো মেয়ে কাবাডি-কাবাডি ক্যান ? “চাঁপাটি-পাঁপাটি” ও খেলতে পারিস।
আরণিঃ তোর মাথায় “গরুর জুতা” দিয়ে বাইরানো উচিৎ।
আকাশঃ গরু জুতাও পরে ?
আরণিঃ তো পরে না ?
নীরঃ একটা নরমাল ফোল্ডারে এক-হাজার ছবি। কলেজে পড়াশোনা না ছবি তুলতে যাস মনে হয়।
আরণিঃ বুঝতে হবে আমি আরণি।
নীরঃ কিছু ছবি তো রাস্তার কুকুর , বিড়াল , ভেড়া আর গরুর সাথেও তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করতে পারিস। দেখবি তোকে সবাই বাসায় এসে ঘাস খাওয়াবে।
আরণিঃ নীর ভাইয়া ! [রেগে]
আকাশঃ তুই গরু না’তো বোন।
আরণিঃ লাভ ইউ ভাইয়ু ! [আকাশ’কে উদ্দেশ্য করে]
আকাশঃ তুই তো গাভী বোন আমার।
আকাশের কথা শুনে নীর আর আকাশ জোরে জোরে হেসে উঠলো। আরণি রাগে সাপের মতো ফুঁসতে লাগলো।

এদিকে নীর ছবি খুঁজতে-খুঁজতে হঠাৎ একটি ছবি পাস করে গেলো। নীরের কিছু একটা মনে হতেই নীর আবার ব্যাকে গেলো। তখনি নীরের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুঁটে উঠলো।সেটা দেখে আকাশ নিজের একটি ভ্রুঁ উঁচু করে তাকালো নীরের দিকে। আরণি একটি স্ট্রবেরি ললিপপ খেতে-খেতে ঠোঁট দুটো পাউট করে নীরের দিকে তাকালো। নীর নিজের আনমনে’ই বললো !
নীরঃ আমার সাদা থ্রি-পিস !
আরণিঃ এ্যা !

আকাশঃ কোথায় দেখি তো ?
আকাশ টান দিয়ে নীরের হাত থেকে আরণির ফোন’টা নিয়ে ফোনের স্কিনে তাকালো। দেখলো সেই মেয়েটির সাথে আরণির ক্লোজ পিক।”নীর মনে মনে খুশিতে ব্রেক ডান্স দিচ্ছে”। আকাশ আরণির ফোন’টা আরণির মুখের সামনে ধরলো। আরণি ললিপপ মুখে নিয়ে মাথা নাড়ালো “কি হয়েছে” ?
আকাশঃ এই মেয়েটা কে ?
আরণিঃ কোন মেয়েটা ?
আকাশঃ এই ছবিতে ?
আরণি নিজের ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো ! অনিসার সাথে ওর ছবি। আরণি ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো !
আরণিঃ আমার বেস্টফ্রেন্ড অনিসা।
আকাশঃ ওর নাম অনিসা ?
আরণিঃ হ্যাঁ !

আকাশঃ তোর সাথেই পড়ে ?
আরণিঃ আমার বেস্টফ্রেন্ড তো আমার সাথেই পড়বে স্বাভাবিক। [ললিপপ চুঁষে]
নীরঃ আমার সাদা পরীর নাম অনিসা ? [মৃদু হেসে]
আরণিঃ তোমার সাদা পরী মানে ? [ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে]
আকাশঃ বলছি তোকে সব।
আকাশ সেদিন বানিজ্য মেলায় ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বললো। তারপর মেয়েটিকে ফলো করেছিলো সেটাও বললো।
আকাশঃ জানিস যখন মেয়েটির বাসা চিনে আমি আর নীর ফিরে আসছিলাম…!
আরণিঃ তখন অনিসা তোদের দু’জনকে হাত নেড়ে হেসে ! বাড়ির ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো।
নীরঃ তুই কিভাবে জানলি এই কথা ?
আরণিঃ অনিসা আমাকে মেলার সব ঘটনা বলেছে। ইনফ্যাক্ট আমাকে আর সুমাইয়া’কে সব ঘটনা বলেছে। কিন্তু তখন আমি জানতাম না সেই ছেলেটা আমার নীর ভাইয়া। [দুষ্টু হেসে]
আকাশঃ তাহলে তো হয়েই গেলো।

আরণিঃ দাঁড়া কাল কলেজে গিয়ে অনিসা’কে বলবো সব।
আকাশঃ মেয়েটা…আই মিন অনিসা ! তোর বান্ধুবী কি বিরক্ত হয়ে বলেছে কথাগুলো ?
আরণিঃ আরে না না। অনিসা তো পুরো ব্লাশিং হয়ে অনেক’টা লজ্জা পেয়ে কথাগুলো বলেছে। আই থিংক ! নীর ভাইয়া’কে ভালো লেগেছে অনিসার।
নীরঃ কিহ্ ? সত্যি বলছিস তুই ? [উত্তেজিত হয়ে]
আরণিঃ হুমম সত্যি বলছি। অনিসা’কে আমি খুব ভালো ভাবেই চিনি। অনিসার এ্যাক্সপ্রেশন দেখেই বুঝেছিলাম আমি। ছেলেটিকে ভালো লেগেছে অনিসার। কিন্তু সেই ছেলেটি নীর ভাইয়া ? সেটা আজ জানতে পারলাম।
নীরঃ নীর+অনিসা ! আহ্ কি মিল। [ব্লাশিং হয়ে]
আকাশঃ তুই কি কল্পনার জগৎ থেকে ফিরে আসবি ? [নীর’কে উদ্দেশ্য করে]
নীরঃ আরণি !

আরণিঃ বলো ?
নীরঃ মেয়েটির সাথে একবার দেখা করিয়ে দিতে পারবি ?
আরণিঃ হুমম অবশ্যই ! বাট আমার এ্যাক্সট্রা ঘুস চাই।
নীরঃ তুই‌ যা চাইবি সেটাই দিব। জাস্ট একবার মিট করিয়ে দে ! আমার সাদা পরীর সাথে প্লিজ।
আরণিঃ নীর ভাইয়া ! তুই যে প্রেমে এমন পাগল হয়ে যাবি। সেটা তো আমি জেগেও কল্পনা করতে পানি না।

নীরঃ শুধু প্রেম না। আমার “ভালোবাসার পরী” ও।
আরণিঃ তাহলে কাল আমি কলেজে গিয়ে অনিসার সাথে কথা বলবো। দ্যান অনিসা যদি বলে যে হ্যাঁ ! মিট করবে ও তোমার সাথে। তাহলে আমি তোমাকে ফোন দিয়ে বলবো।
নীরঃ আমি তোর ফোনের অপেক্ষায় থাকবো।
আকাশঃ কাল ক্যাম্পাসে গিয়ে সবাইকে খবর দিতে হবে।
আরণিঃ নীর ভাইয়া ! একবার যদি অনিসার সাথে তোমার রিলেশন হয়ে যায় ? তাহলে ধরে নাও তোমার ঘাড় ভেঙে সবাই ট্রিট নিবে।
নীরঃ আমার সাদা পরীর জন্য সবকিছু করতে রাজি আমি। সেখানে ট্রিট দেয়া কোনো ম্যাটার না আমার কাছে।

আকাশঃ এত কষ্ট করেছি তোর জন্য আমি। ভোর বেলা ঘুম নষ্ট করেছি পর্যন্ত। এত কিছুর পরও যদি অনিসা’কে পটাতে না পারিস নীর ! তোর কি একদিন আর আমার যে ক’দিন লাগে। তোকে মেরে আমি তেতুল গাছে উল্টো ঝুঁলিয়ে রাখবো।
নীরঃ সাদা পরী’কে আমি নিজের করবোই। তোরা দেখে নিস।
আরণিঃ দেখবো কি করো হাহ্ !
আকাশঃ চল এবার বাহিরে যাবি তো ?
নীরঃ হ্যাঁ চল।
আরণিঃ আমার এ্যাক্সট্রা ঘুসের কথা যেনো মনে থাকে।
আকাশঃ তুই তো আরেক শালী ! চকলেট আর আইসক্রিম দিয়ে ফ্রিজ পুজো করবি না’কি ?
আরণিঃ দরকার পরলে তাই করবো। লজ্জা লাগে না ? সেই তো আমার চকলেট , আইসক্রিম’ই সুযোগ পেলে গিলে খাস !

আকাশঃ চুপ কর।
নীরঃ কাল আমাকে জানাবি কিন্তু ?
আরণিঃ ডান !
নীর আর আকাশ বাহিরে গেলো। আরণি তো খুশিতে গদগদ। অনিসা তাহলে নীর ভাইয়ার কথাই বলেছে ? এসব ভাবতে লাগলো আরণি। তখনি আরণির ফোন বেজে উঠলো। সুমাইয়া ফোন করেছে। আরণি ফোন রিসিভ করলো।
আরণিঃ বল বল !
সুমাইয়াঃ এত খুশি ক্যান ?
আরণিঃ চকলেট কয়টা খাবি বল ? আমি কাল কলেজে নিয়ে আসবো’নি।
সুমাইয়াঃ কারন ?
আরণিঃ মনে আছে ! অনিসা মেলার এক ছেলের কথা খুব আগ্রহ্ করে বলেছিলো ?
সুমাইয়াঃ হুমম তো ?
আরণিঃ সেই ছেলেটা কে জানিস ?
সুমাইয়াঃ কে ? [চিন্তিত হয়ে]
আরণিঃ আমার নীর ভাইয়া সেটা।
সুমাইয়াঃ কাহিনী কি ? সেটা বল তো আমাকে।
আরণিঃ কাল কলেজে অনিসা আসার আগে আসবি। সব বলবো তোকে।
সুমাইয়াঃ ওকে।

আরণিঃ রাখছি আমি।
সুমাইয়াঃ বেশি করে ব্যাগে চকলেট নিয়ে আসবি। আমি চকলেট খাবো।
আরণিঃ আচ্ছা নিয়ে আসবো।অনেক গুলো চকলেট।
সুমাইয়াঃ বায় দোস্তো।
আরণিঃ টাটা।
আরণি ফোন কেটে ! অনেক গুলো চকলেট বিছানায় ছড়িয়ে নিয়ে বসলো খাবে বলে।ওদিকে নীর ভাবছে ; কাল আরণি কখন ফোন দিবে ওকে।

চলবে…..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com