Breaking News

তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি । পর্ব - ১০



বাচ্চাদের ডেকে নিয়ে আসি…?
তারপর না হয় আপনাদের তিন জন কে খেতে দিলাম এক সাথে।
” পেছন থেকে আজিন এসে মিম কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “কখন খেতে দেবে আম্মু মণি? আমার যে খুব খিদে লেগে গেছে।
” মিম আজিনের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “যাও গিয়ে ভাইয়া কে ডেকে নিয়ে আসো আব্বু..।
বলো আম্মু খেতে ডেকেছে।” তখন জাবিন দৌড়ে এসে মিম কে বলল,
– “আম্মু খেতে দিবে না আমাকে…?” মিম হাসিমুখে বললো,
– “জ্বি,আব্বু! একটু অপেক্ষা করো,তোমার দাদুভাইদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে…।
” জয়নাল সাহেব খাবার শেষ করে উঠে,মিমের কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
– “আম্মু! তোমার হাত টা বাড়াও এদিকে।
” মিম একটু কৌতূহলী হয়ে নিজের হাত টা জয়নাল সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিলো,
জয়নাল সাহেব ওর হাতে একটা ব্রেসলেট পরিয়ে দিয়ে বললেন,
– “বলতো মা কেমন হয়েছে?” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “অসম্ভব সুন্দর আঙ্কেল,তবে আপনি তো বললেন না আমার হাতের রান্না কেমন হয়েছে?
” জয়নাল সাহেব বললেন,
– “অসম্ভব! এক কথায় অসাধারণ মা,বলে বোঝাতে পারবো না তোমাকে…।
তুমি অনেক টাই আমার মেয়ে নেত্রার মতো,মানে অনেক মিল আছে তোমার ওর চেহারার সাথে।
” মিম মৃদু হেসে বললো,
.
– “আন্টি কে আমার সালাম দিবেন আর তাকে নিয়ে সময় করে পারলে বেড়াতে আসবেন এ বাড়িতে…।
” জয়নাল সাহেব বললেন,
– “অবশ্যই মা! তুমি ও কিন্তু ইমানের সাথে বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে যাবে আমাদের বাড়িতে…।
” মিম বললো,
– “যাবো আঙ্কেল,আপনার ছেলে সময় করতে পারলেই একদিন বেড়িয়ে আসবো আপনাদের বাসা থেকে…।
” জয়নাল সাহেব বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
– তুই কি করো এখনো ঠুনকো রাগ নিয়ে আছিস এতো মিষ্টি মেয়েটির সাথে…?
মিম দুষ্টু হেসে বলল,
– “আঙ্কেল ও তুমি চিন্তা করো না,আমি ঠিক সামলে নেবো আমার এই বুড়ো বাচ্চা টা কে…।
” ইফতি সাহেব চোখ রাঙিয়ে মিজ কে বললেন,
– “তুমি বুড়ো বললে কেন আমাকে…?”
– “নয়তো কি? ইয়াং বলবো তোমাকে…? তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না?
তোমার মাথার অর্ধেক চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে…।
ইতি হাসতে হাসতে বললো,
– “না না তা দেখবে কেন? কানে কালা হওয়ার সাথে সাথে চোখ থাকতেও লোকটা অন্ধ হয়ে গেছে।
” মিম শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে হাসতে লাগলো,
ইফতি সাহেব রেগে উঠে গেলেন খাওয়ার টেবিল থেকে।
তবে সে মিমের সাথে কিছুতেই পেরে উঠলো না,কারণ মিম গিয়ে ফিসফিস করে তার কানে বললো,
– “বাবা! তোমার জন্য কিন্তু স্পেশাল ফালুদা আছে…।
” এবার ইফতি সাহেব এসে বাকি খাওয়া টুকু শেষ করলেন,মিম কান ধরে বলল,
– “সরি বাবা,ভুল হয়ে গেছে।” ইফতি সাহেব মিটিমিটি হাসলেন,
তারপর পকেট থেকে গিফটের বক্স টা বের করে দিলেন মিমের হাতে…।
মিম অবাক হয়ে শশুরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো,উনি ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বললো,
– “খুলে দেখো কেমন হয়েছে…?
মিম বক্স টা খুলে দেখলো,একজোড়া সোনার বালা…।
তা দেখে রিকিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
– “মামা,তুমি মেনে নিয়েছ না কি ওকে?” মিম একটু বিরক্ত হয়ে রিকিয়া কে বলল,
– “প্লিজ,এখন সিনক্রিয়েট করবেননা বড় ভাবি…!
বাবা এখন খেতে বসেছে।” রিকিয়া হঠাৎ ইফতি সাহেবের হাত থেকে ফালুদার বাটি টা
নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিলো,ইফতি সাহেব খুব রেগে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে
একটা সাঁটিয়ে চড় মারলেন ওকে…। মিথিলা হতবাক,রিকিয়া অবাক চোখে
তার মামার দিকে তাকিয়ে আছে,ইফতি সাহেব নিজেকে সামলে নিয়ে রিকিয়া কে বললেন,
.
– “তোমার সাহস তো কম না? তুমি কোন সাহসে খাবারের বাটি টা
আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলে নিচে…?” রিকিয়া বললো,
– “মামা..?”
– “কে তোমার মামা? তুমি এখনো পরে আছো কেন এ বাড়িতে…?
কি পরিচয় কি তোমার? তোমার বাবা কে? তার নাম ঠিকানা জানা আছে?”
মিথিলা এগিয়ে এসে বললেন,
– “ভাই! আমার কথা শোনেন?”
– “কি শুনবো কি? তোর এই জারজ সন্তান কে আমি নিজের সন্তানের মতো বড়
করেছি ছোটো বেলা থেকে আর আজ তার এই পরিনতি? সে এই দিন দেখাচ্ছে আমাকে?
ভাগ্যিস আমার ছেলেটির বিয়ে ওর সাথে হয়নি,ভাগ্যিস হয়নি ওর মতো একটা ফালতু মেয়ের সাথে।
” রিকিয়া ছুটে গিয়ে মামা কে জড়িয়ে ধরতে গেলো,ইফতি সাহেব দূরে সরে গিয়ে বলল,
– “এখুনি তুমি বেড়িয়ে যাও এ বাড়ি থেকে…। তোমার জন্য অনেক
করেছি,তবে সামান্যতম কৃতজ্ঞতা দেখলাম না তোমাদের দু’ই মা মেয়ের মাঝে।
” তখন আবেদ সাহেব বললেন,
– “ইমান নিজের পছন্দে মিম মামণি কে বিয়ে করে এনে কোনো ভুল
করেনি ইফতি বন্ধু আমার প্রমাণ হয়ে গেছে।” মিথিলা মিমের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
– “শোনো মেয়ে! আমি ও দেখি,তোমার এই ভালো মানুষির মুখোশ টা ক’দিন থাকে…!
” ইমান মাথা চুলকোতে চুলকোতে এসে মিথিলার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
– “নিজের মতো মনে হয় না কি ফুফু সবাই কে…?”
মিথিলা আর মেয়ে কে নিয়ে দাঁড়ালেন না,ক’দিনের জন্য নিজের বাড়িতে
নিয়ে গেলেন নিজের সাথে।” ইফতি সাহেব মন খারাপ করে
কিছু খেলেন না,তবে মিম কে বললেন,
– “ওদের দু’জন কে খাইয়ে দাও…। কখন থেকে ঘুরঘুর করছে
তোমার আগেপিছে।” মিম ছেলেদের খাবার দিয়ে ইফতি সাহেবের ঘরে এলো,ইতি ওকে বলল,
– “যা মা…! এখন না,পরে খাইয়ে দিস তোর বাবা কে…। তবে তাই বলে নিজে না খেয়ে থাকিস না,তোর বাবা শুনলে কিন্তু সত্যি খুব কষ্ট পাবে।” মিম তারপর নিচে চলে এলো,তারপর সবাই কে এটা-সেটা এগিয়ে দিতে লাগলো হাতে হাতে।” মিম কে চুপচাপ দেখে আজিন এবং জাবিন জড়িয়ে ধরে বলল,
– “তুমি মন খারাপ করে থেকো না সোনা আম্মু প্লিজ,জানো আমাদের কাছে কিন্তু তোমার জন্য সারপ্রাইজ গিফট আছে।” মিম অবাক হয়ে বললো
– “কি..?” ইমান মিটিমিটি হেসে বলল,
.
– “হুমম! তবে তার আগে আপনাকে পেট পুরে খাবার খেতে হবে।মিম চুপচাপ একটা প্লেট নিয়ে এসে ইমানের পাশে বসলো,ইমান সেটা রেখে নিজের প্লেট থেকে গ্রাস তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো ওকে…। জাবিন মিমের দু’ই গালে চুমু খেয়ে বলল,
– ” মন খারাপ করে না লক্ষী আম্মু…! রাতেই দাদু ভাইয়ের মন ভালো হয়ে যাবে।” মিম কাঁদো কাঁদো গলায় ইমান কে বলল,
– “ফালুদা হোক আর যাই হোক…! বড় ভাবি বাবার হাত থেকে সেটা কেড়ে নিয়ে কি করে ছুড়ে ফেলে দিলো মেঝেতে…? আমি কখনো আমার শত্রুর সাথে ও এমন করবো না,আমি বুঝতে পারছি বাবার মন ভেঙে গেছে।” তখন ইতি এসে নিজের গলায় চেইন খুলে মিম কে বললেন,
– “মোটেও না,তোর বাবা ভালোই আছে। এখন ঘুমচ্ছে,রাতে দেখবি বেমালুম সব খুলে গেছে।” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “বাবা ভুলবে না মা,কারণ এটা সে কখনোই আশা করেনি বড় ভাবির কাছ থেকে…।” ইমা রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
.
– “ওই অসভ্য টার কথা তোমাকে ভাবতে হবে না,তুমি চুপচাপ খেয়ে নাও
তোমার ছাও পোনা সহ জামাইয়ের সাথে…।” মিমের খাওয়া শেষ হতে
না হতেই জাবিন এবং আজিন এসে ওর হাত ধরে ওকে নিয়ে এলো
একটা বিশাল বড় গিফট বক্সের কাছে।মিম অবাক হয়ে সেটা খুলে দেখলো,
সেটার মধ্যে বিশাল বড় সাইজের একটা পান্ডা আছে।তবে এবার মিমের
হাসি কে দেখে? ইমান হাসতে লাগলো,মিম কে ধরে নিজের পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “কেমন লেগেছে?” মিম দুইনছেলে কে আদর করতে করতে বলল,
– “খুব সুন্দর…! কিন্তু কে এই বুদ্ধি বার করেছে…?”
জাবিন চোখের চশমা ঠিক করতে করতে বললো,
– “এটা নাম্বার ওয়ান জাবিন খান এর বুদ্ধি ‘মা’ তোমার ভালো লেগেছে…?”
মিন ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “ভালো বাবা…! আমাদের দুই ছেলের খুব বুদ্ধি আছে..।”
আজিন মিমের কোলের উপরে মাথা রেখে বললে,
– “সোনা আম্মু খুশি হয়েছ তুমি? তোমার ভালো লেগেছে?” মিম বলল,
– “হ্যাঁ, বাবা…! অনেক সুন্দর,সারাজীবন এমনই মায়ের লক্ষী ছেলে হয়ে থেকো বাবা।”
– “ঠিক আছে।” জাবিন এসে মিমের গলা জড়িয়ে ধরলো,ছেলেদের ঘুম
পেয়েছে বুঝতে পেরে মিম ওদের ঘুম পারাতে নিয়ে এলো নিজের সাথে..।
তখন ইফতি সাহেব এসে নাতিদের বললেন,
– “চলো দাদুভাই ক্যারাম খেলবে না কি আমার সাথে?” ওরা দু’জনেই মা কে আহ্লাদী কণ্ঠে বললো,
– “মা যাই..?” মিম বললো,
.
– “আচ্ছা,তবে বেশি দুষ্টুমি করা যাবে না দাদা ভাইয়ের সাথে।” জাবিন বলল,
– “ওকে আম্মু! আমি দেখে রাখবো ছোটো ভাইয়া কে…!”
মিম ছেলেদের গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে বললো,
– “বেশি দুষ্টুমি করবে না বাবা…। লেগেটেগে যাবে।” আজিন বলল,
– “আমরা বেশি দুষ্টুমি করবো না মা..। আমি ও খুব দেখে রাখবো ভাইয়া কে…।”
মিম হাসতে হাসতে দু’ই ছেলে কে অনুমতি দিলো,তারপর ইতি মিম
কে ডেকে পাঠালো নিজের কাছে।মিম কে চুপচাপ দেখে ইতি বললেন,
– “এই নিয়ে মন খারাপ করিস মা,তোর মন খারাপ দেখে
আমার ছেলে টাও চুপচাপ হয়ে গেছে।” মিম মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “উনি কোথায় মা…?” ইমান এসে হঠাৎ করেই শুয়ে পরলো মায়ের কোলে মাথা রেখে,
মিম কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে উঠে চলে যেতে চাইলো…।
কিন্তু পরক্ষণেই খেয়াল করে দেখলো ইমান নিজের পায়ের সাথে ওর পা বাঁধিয়ে রেখেছে…।
ইতি ছেলের কাণ্ড দেখে মিটিমিটি হাসলো তারপর
খোশগল্প শুরু করে দিলো ছেলে এবং ছেলের বউয়ের সাথে।মিম গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে
গেলো,ইমান বলল,
– “মা…! আজ দেখতে খুব ক্লান্ত লাগছে ওকে…।” ইতি মিমের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “স্বাভাবিক আব্বু! সারাদিন কত ধকল গেছে মেয়েটির ওপর থেকে…।
” রাতে যখন মিমের চোখ খুললো,দেখলো ওর দুই পাশে বসে জাবিন এবং আজিন
লক্ষী ছেলের মতো বসে পড়াশোনা করছে…। মিম দুই ছেলে কে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “আমাকে কেন ডেকে ওঠালে না বাবাই? ড্যাড কি বারণ করেছে…?”
জাবিন এবং আজিন উভয়েই মাথা নেড়ে বলল,
– “হুমম!” তারপর হঠাৎ জাবিন ওর নোটবুক টা মিমের হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “মা ড্রইং টা কেমন হয়েছে?” মিম ছবি টা দেখে বলল,
.
– “অনেক সুন্দর বাবা! আমার লক্ষী ছেলে টা ফ্যাম-লি ফটো এঁকেছে?”
জাবিন মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
– “হুমম! ইয়েস আম্মু জানো? আমার কতদিনের একটা ইচ্ছে পূরণ হয়েছে?” মিম বলল,
– “না বাবা! জানতাম না,তবে আজ জেনে গেলাম আমার ছেলের কাছ থেকে।”
আজিন হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
– “আম্মু তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে না তো…?” মিম ছেলেদের বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “না বাবা,কোথায় যাবো আমার এই ছোটো ছোটো জান বাচ্চা গুলো কে রেখে?”
এদিকে অনিরের বিয়ে টা নির্বিঘ্নে সম্পূর্ণ হলো তার প্রিয় মানুষের সাথে…
কিন্তু রুদ্রর মনে শান্তি নেই বাড়িতে এসেই সে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার অতি আদরের
ছোটো বোন টা কে…। ছেলে কে এতো অস্থির হতে দেখে হাবিব সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,
– “বুঝতে পারছি বাবা! তুমি মিম কে খুঁজে বেড়াচ্ছ কিন্তু প্রায় দেড় মাস
আগে আমি ওকে বের করে দিয়েছি বাড়ি থেকে…।” তখন রহিমা ছেলে কে বললেন,
– “মানুষ মাএ ভুল হয় তাই,বলে ও কি করে আমাদের কথা না
শুনে ডিভোর্স দিতে পারলো আরিশ কে…?” রুদ্র রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– “আমি কি জানতে পারি? ওই শুয়োরের বাচ্চা টা আবার কি করেছে?
দেখলাম,সাথে নতুন একটা মেয়ে মানে কি? তোমরাই আবার নতুন করে বিয়ে
দিয়েছ ওকে?” রহিমা বললেন,
– “নিজেদের মেয়েই যখন চরিএহীন,তখন পরের ছেলে কে বলে কি হবে?”
রুদ্র কথা টা শুনেই ঝাঁঝালো কণ্ঠে মা কে ঝাড়ি মেরে বললো,
– “তোমরা আর দয়া করে আমার বোন কে চেনাতে এসো না আমাকে…।
লজ্জা করে না তোমাদের নিজেদের মেয়ে এবং তার চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা বলতে…?
নিজেরা কি করেছ তোমরা? জেনেশুনে একটা ফালতু ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছ মেয়ে টা কে…।
এখন নিজেরা যেমন অর্ধ শিক্ষিত,সেই শিক্ষা নিয়ে তোমরা বোঝাতে এসেছ আমাকে?” জাবেদ বললো,
– “বাবা-মায়ের সাথে এভাবে কথা বলো না ভাইয়া…।
তাছাড়া বাড়িতে এখন আমাদের ছোটো বোনের বিয়ে হচ্ছে।” রুদ্র চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
– “ছোটো বোন হবে তোদের ইউজলেস আমার নয় ঠিক আছে?
আমার বাপ মা রাস্তা থেকে মেয়ে তুলে এনে লালনপালন করছে অথচ নিজেদের মেয়ের
কষ্ট পরছে না তাদের চোখে।ইউজলেস এক একটা দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
রহিমা ছেলে কে বললেন,
– “কিন্তু বাবা,আমাদের বাড়িতে কখনো ডিভোর্স হায়নি…এর আগে।”
– “ওহ! তাই বলে আমার বোন মুখে কুলুপ এঁটে সব কিছু সহ্য করে যাবে?
তোমরা কি মনে কি করো ওকে…?” তখন আরিশ এসে বলল,
– “ভাইয়া মিমের একটা লোকের সাথে সম্পর্ক আছে মামা-মামী
.
দেখেছে ওকে সেই লোকটার সাথে।” রুদ্র তখন আরিশ কে মারতে মারতে বললো,
– “ছোটো লোকের বাচ্চা…তুই আমাকে চেনাবি আমার বোন কে?” আদ্রিকা ছুটে এসে রুদ্র কে বলল,
– “ভাইয়া আপনি ওকে মারবেন না প্লিজ!” রুদ্র তখন ঠাস করে দু’টো চড় মারলো ওকে…।” হাবিব সাহেব বড় ছেলে কে থামাতে গেলেন কিন্তু রুদ্র তাকে ধাক্কা মেরে বললো,
– “খবরদার! একদম আসার চেষ্টা করবে না আমার কাছে…। বাবা-মা বলে কিন্তু আমি কাওকে ছেড়ে দেবো না দেখে নেবো আমি এ বাড়ির সবাই কে…। রুদ্রর চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে অনির অনুষ্ঠান ছেড়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে এসে জিজ্ঞেস করে,
.
– ” কি হয়েছে?” রুদ্র তখন বলল,
– “বিয়ে হচ্ছে না তোর? যা,বিয়ে কর,করে সারাজীবনের জন্য চলে যা এ বাড়ি থেকে…।” অনির ছলছল চোখে এগিয়ে এসে বলল,
– “আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম ভাইয়া বাবা মা কে…।” রুদ্র অনির কে চড় মেরে বলল,
তুই যে সবকিছু একাই ভোগ করতে চাও সে আটকে রাখবে ওকে? তুই তো মিমের
বিয়ের দিন ওর পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বলে দিয়েছিলি বাবার কাছে।
তুই আমার বোনের ভালো চাও আর সেটা আমায় বিশ্বাস করতে হবে?
রাস্তার মেয়ে একটা,থাক তোরা আমি আমার বউ বাচ্চা নিয়ে চলে যাচ্ছি এখান থেকে…।
হাবিব সাহেব এবং রহিমা ছেলে কে আটকানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু তারা ব্যার্থ
হলেন ছেলে কে আটকাতে…। রুদ্র যেতে যেতে বললো,
– “মায়ের থেকে যখন মাসির দরদ এতোই বেশি তখন সারাজীবন পরে থাকো তাদের
সাথে।তোমাদের সাথে আমাদের সব সম্পর্ক শেষ,আমি শুধু সম্পর্ক টা টিকিয়ে
রেখেছিলাম আমার বোনের কথা ভেবে,ওর একটা সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আমি
দেখেছিলাম,সারাজীবন আফসোস থেকে যাবে আমি একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে
পারিনি ও কে…। ও কে ঠিকি তোমরা একজন কে পছন্দ করার দোষে শাস্তি দিলে
আর এই রাস্তার মেয়ে টা কে ধুমধাম করে বিয়ে দিচ্ছ তার পছন্দের মানুষের সাথে?
তোমাদের জীবনে ও ভালো হবে না।বাবা-মা হলেও তোমরা ফেরেশতা না কিন্তু
তোমরা এক একজন সেটাই মনে করো নিজেকে….।” ছেলের কথা শুনে হাবিব
সাহেবের চোখ লাল হয়ে গেলো রহিমা যেন সর্বশান্ত হয়ে গেছে। খুলনা থেকে
ঢাকায় ফিরে নেহা রুদ্র কে চুপচাপ দেখে বলল,
.
– “দুশ্চিন্তা করো না,আমরা ঠিক খুঁজে বের করবো ওকে।” রুদ্র চোখ মুছতে মুছতে বলল,
– “ওরা কেউ বাঁচতে দিলো না বাচ্চা টা কে…। আমি কি করে জানবো ও কোথায় আছে? কি করে খুঁজে বের করবো ওকে।” তখন রুদ্রের ক্লাস টেন পড়ুয়া ছেলে রেহান এসে বলে,
– “বাবা! আমরা এতো বছর দেশে না থাকলেও তোমার স্ট্রং কানেকশন নিশ্চয়ই আছে? তাদের সাথে কথা বলো,নিশ্চয়ই আমরা খুঁজে পাবো ফুপি কে…?” ছেলের কথা শুনে নেহা বলল,
– “বাবু কিন্তু একদম ঠিক বলেছে…।” রুদ্র বললো,
– “আমি ও তাই করবো,তারপর বোন কে সিডনি তে নিয়ে যাবো নিজের সাথে…। ওকে আর কষ্ট পেতে দেবো না ওকে খুব যত্ন করে রাখবো নিজের কাছে।” রুদ্র কে কাঁদতে দেখে নেহা বলল,
– “আর কেঁদো না প্লিজ,বোনের (মিম) কথা ভেবে আমারো খুব কষ্ট হচ্ছে।” রাতে মিম ইফতি সাহেবের জন্য ফালুদা বানিয়ে আনলো,উনি দেখেই বলল,
– “এগুলো কে খাবে…?” মিম বলল,
– “কেন আমার ছেলে? আমার ছেলেই খাবে…!” ইফতি সাহেব একটু ভাব নিয়ে বললেন,
– “যদি না খাই…?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “সমস্যা নেই, আপনার মায়ের পেটে মানে আর কি আমার পেটে চালান হয়ে যাবে।” ইফতি সাহেব আর চালান হতে দিলেন না চুপচাপ খেয়ে নিলেন সাথে সাথে,ইতি ইমান আড়ালে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলো,আজিন এসে বলল,
– “আম্মু আজ স্কুলের পড়া করিয়ে দেবে না আমাকে?” মিম বলল,
– “দেবো লক্ষী বাচ্চা,তার আগে ভাইয়া কে গিয়ে বলো আম্মু ডাকে।” জাবিন তখন এসে মিমের কোলের ওপরে শুয়ে পড়লো,মিম মিম ওর চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি হলো বাবা? মন খারাপ কেন? কি হয়েছে?” জাবিন বলল,
– “মন খারাপ না আম্মু, আমার খুব কানে ব্যথা করছে সকল থেকে…।”
.
চলবে,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com