Breaking News

তুমি যদি জানতে | পর্ব -০৪



তবে আমার ভালোবাসা যে ধীরে ধীরে পূর্ণতা পাচ্ছে সেটাই অনেক আমার কাছে।” রাতে নাদিরা এসে ইয়াসিন’কে বলল,
– “কি ব্যাপার? আজ তোমার বড় ভাই আর বড় ভাবি বেরুচ্ছে না কেন ঘর থেকে?” ইমা হাসতে হাসতে বললো,
– “তোমার কি সমস্যা ভাবি? তুমি ও গিয়ে ঘরে দরজা দও তোমার স্বামী’র সাথে।না মানে তারা নবদম্পতি,তারা ঘরে দরজা দেবে না তো কি তুমি-আমি দেবে বলো আমাকে?”
.
– “না আসলে এখনো কফি টা পাইনি তাই শরীর টা কেমন যেন ম্যাজম্যাজ করছে?” ইস্পা হাসতে হাসতে বলল,
– “তোমাকে কফি করে খাওয়ানোর ঠেকা কি বড় ভাবি নিয়ে রেখেছে? নিজের টা নিজে করে খাও আর নয়তো কাজের লোক’কে বলে দাও,কাজের লোক আছে এ বাড়িতে।” ইয়াসিন ইস্পা’কে শাসনের ভঙ্গিতে বলল,
– “এভাবে কেন কথা বলছিস? ভদ্রভাবে কথা বল তোর ছোটো ভাবির সাথে।”
– “কিছু মনে করো না ভাইয়া,তোমার বউ নিজের দোষেই নিজের জায়গা টা হারাচ্ছে আর ভাইয়ার বিয়ের দিন সে কি কান্না? বড় ভাবি এলে তোমরা আর ভালোবাসবে না আমাকে অথচ এখন মনে হচ্ছে পুরো টাই নাটক ছিল তার,নাটক করছিল ভালো সাজতে।” তখন ফাইজা এসে মেয়েদের’কে বললো,
– “আচ্ছা মা তোরা এমন করো কেন তোদের ছোটো ভাবির সাথে?” ইমা বলল,
.
– “মা তুমি তো ওর কোনো দোষ দেখতেই পাও না! তুমি কত ভালোবাসো ওকে? অথচ বড় ভাবি এতোকিছু করেও তোমার মন পায় না কারণ তুমি নিজেই তার নামে বদনাম করে বেড়াচ্ছ এরও ওর কাছে।” ফাইজা সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলেন তার দুই মেয়েদের হাবভাব দেখে,মিম কিছুক্ষণ পর নিচে আসতেই ফাইজা বিরক্তির ভাব নিয়ে বলে,
– “তুমি কেন রাতে চা করে খাওয়ালে না সবাই’কে?” ইমান বলল,
– “বাড়িতে কি চা করে খাওয়ানোর লোক নেই মা? তুমি এমন আচরণ করছ কেন ওর সাথে?”
– “না মানে বাবা বলছিলাম যে কাল’কে তোর মামা আর খালামণিরা বউ দেখতে আসবে বাড়িতে আর তাই আমি চেয়েছিলাম যে কালকের রান্না গুলো বড় বউ মা করুক নিজের হাতে।” মিম বলল,
– “মা আপনা’কে এসে বললাম যে কালকে আমার বেশ কয়েকজন পেসেন্ট’র অপারেশন আছে?” ফাইজা রেগে গিয়ে বলল,
.
– “শুধু পেসেন্ট পেসেন্ট করলে হবে? বড় বউ মা তোমাকে তো সংসার টাও আমার ছেলের সাথে মন দিয়ে করতে হবে।” পাশ থেকে ফাহিম সাহেব বলে উঠলেন,
– “বড় বউ মা তার জায়গায় ঠিক আছে,তুমি অহেতুক ঝামেলা করছ ফাইজা,কালকে রান্না গুলো না হয় ছোটো বউ মা করবে?”
– “আমি কেন করতে যাবো বাবা? আমার কি দ্বায় পরেছে?”
– “তাহলে তুমি কোন আক্কেল বড় ভাবি’র হাতে তৈরি কফির অপেক্ষায় থাকো ছোটো ভাবি? তোমার মনে হয় না একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে?” ফাহিম সাহেব রেগে গিয়ে বললেন,
– “ডিসিশন ফাইনাল কালকে মেহমান আসলে রান্না গুলো তোমাদের মা’ই করবে।” মিম বলল,
– “সমস্যা নেই বাবা! আমি রান্না গুলো করে রেখে যাবো,কোনো সমস্যা হবে না তাতে।” ফাইজা বললো,
– “তাহলে আগে বলতে পারলে না? নাটক কেন শুরু করলে একটু আগে?” ইমা বললো,
– “আশ্চর্য! মা তুমি এমন ব্যবহার করছ কেন বড় ভাবির সাথে?” ফাইজা বললো,
– “কারণ আমার মনে হচ্ছে ও আমার ছেলে’কে কেড়ে নিতে চাইছে আমার কাছ থেকে।” মিম বলল,
– “মা আপনি ভুল করছেন,আমি কেন আপনার ছেলে’কে কেড়ে নিতে চাইবো আপনার কাছ থেকে?”
– “চুপ নষ্টা মেয়ে একদম মুখেমুখে তর্ক করবে না আমার সাথে।” ফাহিম সাহেব ফাইজা’কে ঝাড়ি মেরে বলল,
– “ঘরে যাও,এখুনি চলে যাও এখান থেকে।গতকাল রাতেও তোমাকে বুঝিয়ে ছিলাম,
কিন্তু তুমি সেই অশিক্ষিত গাঁইয়া’র মতো আচরণ করছ মেয়েটার সাথে আর ছোটো বউ মা,নিজের কাজ গুলো,নিজেই করতে শেখো এখানে কেউ তোমার কূটনামি দেখতে কিংবা তোমার কাজ করে দিতে বসে নেই ঠিক আছে?” ইমান এতক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো,তাকিয়ে রইলো ফাইজার দিকে,ফাইজা ইমান’কে বলল,
– “বাবা আমার কথা শোন?” ইমান কথা না শুনে মিমের হাত ধরে ঘরে চলে এলো সাথে সাথে আর যেতে যেতে দৃঢ় গলায় বলল,
.
– “বাড়িতে কোনো গেস্ট আসবেনা,আমার বউ এ বাড়িতে কাজের লোক না।” তারপর সারা রাত ইমান মিম’কে বুকে জড়িয়ে শুয়ে রইলো,ওর কেন যেন ঘুম এলো না,মনেমনে বললো,
– “খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় সিডনিতে ফিরে যাবো,এদেশে আর থাকবো না।” সকালে ফাইজা ইমানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো,কিন্তু ইমান কথা বললো না,সে সরাসরি ফাহিম সাহেব’কে বলল,
– “বাবা আমি খুব তাড়াতাড়ি মিম’কে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবো,এ দেশে থাকবো না।” ফাইজা হঠাৎ মিম’কে মারতে তেড়ে গেলো,ইয়াসিন ফাইজা’কে বাঁধা বলল,
– “মা তুমি এটা করতে পারো না।” ইয়াসিনের বাঁধা দেওয়ায় নাদিরার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো,মনেমনে বললো,
– “প্রিয় কাজ টা তুমি ঠিক করলে না।” ইমান মিম’কে নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে চাইলো কিন্তু মিম ইমান’কে বুঝিয়ে বলল,
– “প্লিজ এটা করো না।”
দেখতে দেখতে ওদের বিয়ের আড়াই মাস কেটে গেলো,মিম একদিন সকালে লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে এসে ফাইজা’কে বললো,
– “আপনি দাদু মা হতে চলেছেন মা।” ফাইজা বিস্ফোরিত চোখে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ মিমের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
.
– “তুমি বলতে চাও আমার ছেলে এই বাচ্চার বাবা?” ইমান সেন্টার টেবিলে একটা লাথি মেরে বলে,
– “তোমার মনে হয় না তুমি অনেক বেশি বাজে কথা বলছ মা? কি হয়েছে তোমার? তোমার মাথা কি খেয়ে ফেলেছে এই নাদিরা মেয়ে টা?” ইয়াসিন বললো,
– “ভাইয়া প্লিজ তুমি নাদিরা’কে নিয়ে এ ধরনের কথা বলবে না আর তাছাড়া হাসপাতালে আমি দেখেছি মিম সিনিয়র ডক্টরদের সাথে গায়ে পরে পরে কথা বলে যেটা ঠিক না।” ইমান ঠাস করে ইয়াসিন’কে দু’টো চড় মেরে বলে,
– “কাওয়ার্ড,আমার বউ সম্পর্কে একটা ও বাজে কথা বলবি না।কারণ আমি ওর সাথে সংসার করছি তুই না আর রইল গায়ে পরে কথা বলার কথা আমার বউ টা এমন মানুষি না।
আরে যে মানুষ নিজের বড় ভাই’কে বলে প্রেমিকা’র (মিম) লয়ালিটি টেস্ট করতে দেখতে,সে যে কেমনতরো পুরুষ মানুষ তা কি আমি জানি না?” ফাইজা ইমানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন,তবে ইমান বললো না,শুধু এই টুকু বললো,
– “তুমি আমাদের ব্যাপারে আর কখনো নাক গলাবে না আর আমার বউ বাচ্চাকাচ্চার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে ওদের খেয়াল তোমাকে রাখতে হবে না।” নাদিরা ফাইজা’কে বলল,
– “মা এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছে না,ভাইয়া কি পাগল? আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলে,ওই বাচ্চার বাবা ভাইয়া না।
আপনার ছোটো ছেলে’কে যেভাবে বশ করেছিল,ঠিক সেভাবেই ভাইয়া’কে বশ করেছে ওই মেয়ে টা।” ফাইজা হাসতে হাসতে বললো,
.
– “চিন্তা করো না! ওই বাচ্চা পৃথিবীর মুখ দেখবে না।”
বেশ ভালোই চলছিল,মিম এবং ইমানের দিনকাল কিন্তু তা বোধহয় কিছু মানুষের সহ্য হলো না।মিম তিন মাসের ভরা পেট নিয়ে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নামছিল আর তখন হঠাৎ তেলে স্লিপ করে সিঁড়ি থেকে পরে যেতে লাগলো মেয়ে টা তবে ইমান এসে সাথে সাথে ওকে ধরে ফেললো,হাসপাতালে নিয়ে এলো,ডক্টর চেকআপ করে বলল,
– “ভয়ের কোনো কারণ নেই একদম ঠিক আছে মা এবং বাচ্চা।” কিছুক্ষণ পর, ফাইজা কাঁদতে কাঁদতে মিমের কাছে এলো,বলল,
– “কষ্ট পেয়ো না মা! আমি বুঝি প্রথম সন্তান হারানোর বেদনা।” ইমান এসে মিমের কপালে চুমু খেয়ে ফাইজা কে বলল,
– “আমার সন্তানের কিছু হয়নি সে একদম ঠিক আছে মা।” তখন ইমা এসে ইমান’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “বাহিরে পুলিশ কেন এসেছে ভাইয়া?” ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “বাহ রে! আমার অনাগত সন্তান’কে তার মা সহ মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে অথচ এর শাস্তি কি অপরাধীরা পাবে না?
আমি আমার স্ত্রী এবং সন্তান’কে খুব ভালোবাসি,তাদের ক্ষতি তো কোনো ভাবে হতে দিতে পারি না।” ফাইজা বললেন,
– “তাই বলে বাড়িতে পুলিশ আসবে বাবা? এটা তো ঠিক না?” তখন সাব ইন্সপেক্টর শরাফত রোহান এসে ইমান’কে জিজ্ঞেস করে,
– “আপনি কি বাড়িতে কাওকে সন্দেহ করছেন মিঃ খান?”
– “হ্যাঁ অফিসার,আমার ভাইয়ের বউ এবং আমার মা।” ফাইজা অবাক হয়ে ইমানের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান মিম’কে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “আমি তোমাদের কিছু হতে দেবো না।”
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com