Breaking News

তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি । পর্ব – ১৪



রাগ করে না সোনা,চলো না একটু যাই ওদিকে…।” কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ইমান মিমকে জিজ্ঞেস করলো,
– “আলু চাট খাবে…?” মিম বললো,
– “হুমম…! শুনেই তো আমার জিভে জল চলে আসছে…।” ইমান মিমের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
– “তাহলে চলো ওদিকে…।” অতঃপর ইমান মিমকে আলু চাট কিনে দিলো,মিম খেতে ইমান কে জিজ্ঞেস করলো,
– “খাবে…?” ইমান কিছুটা এগিয়ে এসে হা করলো,মিম চামচ টা ইমানের মুখের কাছ থেকে ফিরিয়ে এনে নিজের মুখে পুরে বললো,
– “দেবো না তোমাকে…?” ইমান হাসতে হাসতে মিমের মাথায় হাত বুলতে বুলতে বলল,
– “আমি যেন খেতে চেয়েছি ওনার কাছে…?” মিম তৎক্ষনাৎ ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বললো,
– “হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে…।” ইমান মিম কে নিজের বাহুডোর আবদ্ধ করে নিলো জিজ্ঞেস করলো,
– “আরো কি কি খাবে?” মিম মিটিমিটি হেসে ইমানকে খোঁচা মেরে বলল,
– “এই মাএ খেলাম না? চুমু খেলাম না তোমাকে…?” মিমের দুষ্টুমি দেখে ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “সে তো চুমু খেয়েছ,বলো আর কি খাবে? ফুসকা,চটপটি না এগ পরোটা কোন টা দিতে বলবো সরোয়ার মামাকে…?” মিম ইমানের হাত দু’টো নিজের পেটের ওপরে রেখে বলল,
– “আমার পেটে হাজার রাক্ষসের খিদে আছে কি করে বোঝাবো তোমাকে…?” ইমান মিমের পেটে হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “তুমি বেশি খাওয়া-দাওয়া করলে আমাদের’ই লাভ,তাহলে আমাদের বাচ্চা সুস্থ-সবল হবে…।” মিম মন খারাপ করে বললো,
– “বাচ্চাদের স্বার্থপরোর মতো বাবা-মায়ের ভরসায় রেখে ঘুরতে চলে এসেছি।জানেন…? আমার মন মানছে না কিছুতে,যাওয়ার সময় আজিনের জন্য চকলেট’স আর জাবিনের জন্য চিকেন ফ্রাই আর প্রমি এবং ইমার জন্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নিয়ে যাবো ঠিক আছে…?” ইমান হাসতে মিমকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল,
– “আচ্ছা ‘সুন্দরী’ এবার চুপচাপ খেয়ে নাও! খাবার গুলো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।” বাসায় ফিরে আসার পথে মিম পেয়ারা দেখে ইমান কে বললো,
– “ভালো হলে দু’চার কেজি পেয়ারা নিয়ে চলো বাবা-মা খাবে।” ইমান মিমের কথা মতোই চার কেজি পেয়ারা নিয়ে নিলো,বাড়িতে আসার পর ইতি এতো পেয়ারা দেখে মিম কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “মা এতো পেয়ারা কে খাবে?”
– “কেন তুমি আর বাবা? দু’জনের পেয়ারা বেশ ভালো লাগে।” তখন ইমা এসে মিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ইতিকে বললো,
.
– “মা দু’চার দিনের ছুটিতে তোমার জামাই দেশে আসছে কিন্তু আর এর মধ্যেই আমার ভাবির ‘সাধ’ দিতে হবে…।” মিম হাসতে হাসতে ইমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “আমার নয় ‘সাধ’ খেলে,তুমি নিজে কবে খুশির খবর টা শোনাবে…?” ইমা লজ্জায় মুখ লাল করে ফেললো জাবিন এবং আজিন বলল,
– “সত্যি’ই তো ফুফি,তুমি কবে আমাদের খুশির খবর দেবে…?” ইমা লজ্জ পেয়ে দৌড় সবাই হাসছে ওর চেহারা দেখে,সকালে মিমের হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো,সে দেখলো আজিন কবিতা আবৃত্তি করছে ওর পেটের ওপরে মাথা রেখে।মিম ছেলের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “কি হয়েছে বাবা? কবিতা আবৃত্তি করছে শোনাচ্ছ আপুকে…?” আজিন হাসতে হাসতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
– “আম্মু মণি,এই কবিতা আমি আগেও আপুকে শুনিয়েছি এতোদিনে ওর বোধহয় মুখস্থ হয়ে গেছে…।” পাশে বসে জাবিন মায়ের চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে আজিনকে বলল,
– “তুমি মাথামোটা একটা ভাইয়া বোনু কি এতোকিছু বোঝে…?” মিম জাবিনের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “আব্বু,তুমি যে তোমার ভাইয়াকে মাথামোটা বললে ও কি তোমার মতো এতোকিছু বোঝে..?” জাবিন বোকাসোকা মুখ করে আজিনকে বলল,
– “সরি…!” ইমান নিচ থেকে নাস্তা নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি হয়েছে…?” মিম বললো,
– “কিছু না,যাও তৈরি হয়ে এলো তারপর আমি খাইয়ে দিচ্ছি তিনজন কে একসাথে…।” তখন জাবিন এবং আজিন ভালো করে হাত ধুয়ে এসে ইমানকে বলল,
– “ড্যাড! আমরা একটু খাইয়ে দেই আম্মুকে…?” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “দাও,রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে কলিজা ভুনার সাথে ঠিক আছে…?” জাবিন বলল,
– “হুমম…! ড্যাড,তবে ডক্টর বেশি করে কলিজা খেতে কেন বলেছে আম্মুকে…?” তখন ইমা এসে মিমের পাশে বসে বললো,
– “তোমার আম্মুর হিমোগ্লোবিন খুব কম বাবা…! তাই ডক্টর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি কলিজা ভুনা খেতে বলেছে তোমার আম্মুকে…।” মিম বাচ্চাদের খাইয়ে দিলো,ইমান নিজে রেডি হয়ে স্কুলের জন্য তৈরি করলো দুই ছেলেকে…। মিম বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে তিনজনকে বিদায় জানালো,তবে হঠাৎ ওর কৌতূহল জাগলো ইমা কেন ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে সকাল থেকে..?
.
পরক্ষণেই ইমার জামাই ফাহাদ এসে মিমের ঘরের দরজা টা নক করলো,মিম ফাহাদ কে বললো দেখে বলল,
– “আরে ভাইয়া আপনি কখন এলেন? ইমা তো কিছুই জানালো না আমাকে…!” ফাহাদ হাসতে হাসতে বলল,
– “আরে ভাবি আপনার ননদ এসে থেকেই আমাকে দেখে পালাই পালাই করছে…। বোধহয় আমার বউ টা খুব লজ্জা পাচ্ছে আমার কাছে ঘেষতে আসলে ওর কোনো দোষ নেই,
বিয়ের পরেরদিন অর্থাৎ রিসেপশনের দিন বিকেলে আমাকে পাঁচ বছরের মিশনের জন্য বিলেতে পারি জমাতে হয়েছে…।” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “ও এই ব্যাপার…? চিন্তা করবেন না,আমি ওকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে পাঠিয়ে দেবো আপনার কাছে….।” ফাহাদ হাসতে হাসতে বলল,
– “এমনিতেই সে ভিডিও কলে খুব কথা বলে,গল্প করে আর দেখার পর থেকেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।” প্রমী ফাহাদের জন্য মিমের ঘরে নাস্তা নিয়ে এসে বলে,
– “আসলে ভাইয়া আমার বোনের কিন্তু দোষ না,নতুন বউয়ের গন্ধ টা এখনো ওর গায়ে রয়ে গেছে।” ফাহাদ চুপচাপ নাস্তা করতে করতে বললো,
– “আপনারা একটু ওকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আমার কাছে পাঠান না আমার ওর ছাড়া আর কেই বা আছে…? বিয়ের আগে,বাবা-মা নেই তেমন কোনো বিষয়আশয় সম্পত্তি নেই আর চেহারা সুন্দর নয় বলে কত মেয়ে রিজেক্ট করেছে আমাকে…। কিন্তু আপনাদের মেয়ে টা খাঁটি সোনা আমার রূপ,গুণ,টাকা-পয়সা দিয়ে সে বিচার করেনি আমাকে…।” মিম ফাহাদকে বলল,
– “ভাইয়া আপনি জান,রেস্ট করুন…! আমি এখুনি ঘাড় ধরে আপনার বউকে পাঠাচ্ছি আপনার কাছে…।” ফাহাদ খাবার শেষ করে হাসতে হাসতে উঠে গেলো,যেতে যেতে ফিসফিস করে মিমকে বললো,
– “ভাবি আমি জানি,আমার বউ আপনার ঘরেই আছে…।” মিম মুচকি হেসে বলল,
– “তাহলে ভালোই,এতো লজ্জা কিসের…? নিজের বউকে কোলে করে নিয়ে জান এখান থেকে…।” মিমের কথা মতো সত্যি ফাহাদ ইমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো,মিম আর প্রমী হাসতে হাসতে লাগলো ইমার ছটফট করা দেখে…। ইমা যেতে যেতে মিমকে বলল,
– “ভাবিচুন্নি আমি তোমাকে দেখে নেবো…। তুমি কি করে এমন বদবুদ্ধি দিতে পারলে আমার জামাই টা কে…?” মিম হাসতে হাসতে বলল,
.
– “নতুন নতুন বিয়ের আমি ও তোমার ঘরে এসে লুকিয়েছিলাম,তারপর কি করে ছিলে তুমি? মনে আছে…?” প্রমী বললো,
– “সেটাই….। ভাইয়া তো ভাবি কে নিয়ে নিজের ঘরে ও আসেনি,উল্টো তোকেই বের করে তোর ঘর থেকে…আর একেই বোধহয় রিভেঞ্জ অব নেচার হে হে হে…।” মিম বলল,
– “ছোটো ননদিনী তুমি ও তৈরি হও,তোমার ও দিন আসছে।” প্রমী হাতজোড় করে মিমকে বললো,
– “আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাবি…! দয়া করো ভাবি,আমি কিছু জানি না ঠিক আছে…?” তখন ফুলমতি এসে মিমের পাশে বসে বলল,
– “আম্মাজান আম্মের লইগা তেঁতুলের আচার বানাইয়া আনছি বাড়ি থেকে…।” মিম বললো,
– “কোই দাও দাও,শুনেই জিভ লক লক করছে।” মিম তেঁতুলের আচার খেলো আর প্রমীকে ও বলল খেতে,কিন্তু প্রমী সে তার হবু বরের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত মিম বলল,
– “এই মেয়ে টা গেছে…।” ইতি এগিয়ে এসে মিমের কথায় সায় দিতে দিতে বললেন,
– “ঠিক বলেছিস মা,সারাক্ষণ ফোনের ভিতরে ঢুকে থাকে,কি জানি ওটার মধ্যে কি আছে? মন চায় আছাড় মেরে ভেঙে ফেলি ওটাকে…।” প্রমী কথা শেষ করে এসে মা কে বলল,
– “প্লিজ মা অভিশাপ দিয়ো না,হ্যাঁ প্লিজ অভিশাপ দিয়ো না আমার এই ফোন টা কে….।” প্রমীর কথা শুনে মিম আর ইতি হাসতে হাসতে শেষ,ওরা বললো,
.
– “আচ্ছা…! তুমি এখন যেতে পারো এখান থেকে…।” প্রমী চলে গেলো,ইতি বলল,
– “মা,আমি তোর ‘সাধ’ এর ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলাম তোর সাথে…।” মিম চিন্তিত হয়ে বললো,
– “তুমি আমাকে’ই ডেকে নিতে পারতে মা এতো কষ্ট করতে কে বলেছে তোমাকে…?” ইতি মিমের চুলে তেল দিয়ে দিতে দিতে বললেন,
– “কষ্ট আর কোই করলাম…? সব সন্তান সমান হয় বাবা-মায়ের কাছে…।” তখন ইফতি সাহেব নোটবুক আর কলম নিয়ে এসে লিস্ট করতে বসলেন মিমের পাশে…। মিম বললো,
– “মা আমাকে জিজ্ঞেস করার কি প্রয়োজন…? তোমাদের যেভাবে ভালো লাগে আয়োজন টা সেরে ফেল সেভাবে…।” ইফতি সাহেব বললেন,
– “সে নয় বুঝলাম,কিন্তু অনুষ্ঠান টা যখন তোকে নিয়ে তোর একটা ইচ্ছা-অনিচ্ছের ব্যাপার-স্যাপার আছে।” মিম বললো,
– “তাহলে বাবা আমি বলি কি এই রোজার মধ্যে এতো ঝামেলা করে কাজ নেই…। তোমরা বরং গরীব,অসহায়,পথশিশুদের একবেলার খাবারের আয়োজন করো তাতেই ভালো হবে আর যদি বাড়িতে দাওয়াত করেই পাড়া-প্রতিবেশিকে খাওয়াতে চাও…? তাহলে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারো বাড়িতে আর সাথে না হয় আশেপাশের মসজিদ গুলোতে ইফতারি পাঠিয়ে দিলে সাথে কিছু কোরআন শরিফ আর হাদিস ও হাদিয়া দিলে কিংবা উপহার স্বরুপ পাঠিয়ে দিলে মসজিদে…।” মিমের কথা শুনে ইফতি সাহেব হাসতে হাসতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
– “এর জন্যেই তোর মতামত টা নিতান্ত এসেছি তোর কাছে।” ইতি মিমের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
– “সেটাই আমরা কোনো ‘সাধ’ করবো না বরং ইফতার পার্টির জন্য দাওয়াত কার্ড পাঠাবো সবাইকে…।” ইফতি সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “শুধু পার্টি হবে না বরং আমরা মেয়ের ইচ্ছে মতো গরীব,অসহায়,পথশিশুদের একবেলা খাবারাও দেবো ঠিক আছে…?” ইতি বললেন,
.
– “হুমম,আচ্ছা মা! যাই এখন ঔষধ টা খাইয়ে আসি তোর বাবাকে…।”
রাতে আজিন স্কুলের পড়া শেষ করে মিমকে বললো,
– “আম্মু,আমি কি রোজা রাখতে পারবো ড্যাডের সাথে?” মিম ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
– “পারবে বাবা! তবে আমি এখন রোজা রাখতে দিতে চাইছি না তোমাকে এবং তোমার ভাইয়াকে…।” জাবিন পড়ার টেবল ছেড়ে উঠে এসে মায়ের বুকের ওপরে মাথা রেখে বলে,
– “মা প্রথম রোজা টা রাখতে দাও না প্লিজ…! রোজা টা রাখতে দাও না আমাদের দু’জন কে…।” মিম ছেলেদের আদর করতে করতে বলল,
– “আচ্ছা দিলাম! তবে এক শর্তে..। খিদে পেলে খিদে চেপে রাখা যাবে না সাথে সাথেই খেয়ে নিতে হবে।” তারা দু’জনেই খুশি হয়ে চিৎকার করে মা কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
– “আচ্ছা মা মনে থাকবে…।” ছেলেদের এতো খুশি দেখে ইমান তাদের জিজ্ঞেস করলো,
– “কি ব্যাপার বাবা কি হয়েছে…?” জাবিন বললো,
– “ড্যাড…! তুমি তো কোনোই খোঁজ রাখো না,আম্মু আমাদের রোজা রাখার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে…।” ইমান হাসতে হাসতে ছেলেদের কোলে তুলে নিয়ে বলল,
– “ওহ তাহলে এই ব্যাপার…? এই খুশিতে তো বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমার মিষ্টি বিলোতে ইচ্ছে করছে…।” ইফতি শুনে বললেন,
.
– “বিলোনোই উচিত আফটার অল আমার দুই নাতি প্রথম রোজা রাখছে…।” সেহেরির সময় মিমকে খাবার টেবিলে দেখে ইফতি সাহেব ওকে বললেন,
– “মা তুই উঠে এলি কেন…? কোনো রোজা কিন্তু আজ আমি রাখতে দিচ্ছি না তোকে…।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “বাবা! আমি সেহেরি খেতে উঠিনি আমি উঠেছি তোমার নাতিদের খাইয়ে দিতে…। কিন্তু এখন ভাবছি আমি ও রোজা রাখবো ছোটোবেলায় যেভাবে রোজা রাখতাম ঠিক সেভাবে।” ইফতি সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “তিন বেলা খেয়ে খেয়ে রোজা রাখবি না কি মা…? অবশ্য মন্দ হয় না তাতে…!” মিম তারপর বাচ্চাদের মাংস ভাত মেখে খাইয়ে দিলো আর ইমান খাওয়ার সময় মিমকে খাইয়ে দিলো নিজের হাতে।
সকালে মিম ঘুম থেকে উঠে দেখে ইফতার পার্টির সমস্ত আয়োজন শুরু হয়ে গেছে বাড়িতে…। কিন্তু আজিন এবং জাবিন কে বাড়িতে না দেখতে না পেয়ে মিম অস্থির হয়ে ইমা কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আচ্ছা আমার ছেলে দু’টো কোথায়? দেখতে পেলাম না কেন সকালে ঘুম থেকে উঠে তাদের কে…?” প্রমী এসে মিম কে বলল,
– “ভাবি ব্যস্ত হচ্ছ কেন তুমি? ওরা রাতের ইফতার পার্টির জন্য দাওয়াত দিতে গেছে ভাইয়া এবং আব্বুর সাথে…। মিম যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো,এবার তার শরীর মন টা বেশ ভালো লাগছে।তারমধ্যে রিকিয়া অনিকের সাথে বাড়িতে এসে পৌঁছাল,মিম আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ” বড় ভাবি তোমার সংসার জীবন কেমন চলছে…?” রিকিয়া নির্লিপ্তভাবে হাসিমুখে মিমের পেটের ওপরে হাত রেখে বলল,
.
– “খুব ভালো মিম…! তবে সত্যি বলতে আমার তোমাকে দেখে খুব হিংসে হচ্ছে…। তোমার যে আটমাস রানিং বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে…?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “আলহামদুলিল্লাহ ভাবি,দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন? কতদিন পর বেড়াতে এলেন নিজের বাপের বাড়িতে…।” রিকিয়া অনিকের হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে মিমকে দিয়ে বলল,
– “তোমার আর তোমার পুচকে সোনার জন্য কিছু গিফট আজিন এবং জাবিনের জন্যও আছে।” মিম তারপর রিকিয়াকে ফ্রেশ হতে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো,রিকিয়া ফ্রেশ হতেই মিম ওকে একটা কাশ্মীরি শাল দিয়ে বলল,
– “এটা আপনার জন্য নিয়ে ছিলাম সুপারশপ থেকে কিছুদিন আগে…।” রিকিয়া বন্ধুর মতো গল্প করতে করতে মিমের হাত ধরে বললো,
– “দেরিতে হলেও বুঝলাম মিম…! আমার ইমান কেন এতো পছন্দ করে তোমাকে…।” মিম ফিসফিস করে রিকিয়াকে বলল,
– “হবু সন্তানের জন্য শুভকামনা…! কিন্তু আপনি কেন এখনো এই ব্যাপারে জানাচ্ছে না কারো কাছে…?” রিকিয়া বলল,
– “সময় হলেই জানবো,ততদিন সারপ্রাইজ হিসেবে খবর টা লুকনো থাক ঠিক আছে? শুনলাম,মা আসবেন আজ।প্লিজ মিম,তুমি একটু সাবধানে থেকো আমার মায়ের কাছ থেকে…।” মিম রিকিয়ার কথা শুনে হাসলো,তবে সন্ধ্যায় ইফতার করার পূবে মিথিলা রিকিয়াকে একটা ছোটো ঔষধের বোতল দিয়ে বলল,
– “এই ঔষধ গুলো মিমের খাবারে মিশিয়েদে মা…। ও যে গুলো খাবে…।” রিকিয় রাগে কাঁপতে কাঁপতে চেঁচামেচি করে সবাই কে ডেকে মিথিলা কে বললো,
.
– “মা তুমি কি বুঝতে পারো না একটা সন্তান কতো টা ইম্পরট্যান্ট তার বাবা-মায়ের কাছে…? তুমি কি করে এমন একটা নোংরা কাজ আমাকে দিয়ে করাতে পারো? কোনো দয়া মায়া বেঁচে নেই তোমার মাঝে?
তোমার জন্য আমি আবারও আমার সন্তান নষ্ট করতে গিয়েছিলাম কিন্তু সেদিন ভাগ্যক্রমে হাসপাতালে দেখা হয় যায় আমার মিমের সাথে…। আর ও আমাকে বোঝালো একটা সন্তান বাবা-মায়ের জন্য কতটা জরুরী,কত আবেগ,ভালোবাসা এবং মায়া মমতা জড়িয়ে থাকে তার সাথে…। আজ আমার আফসোস হচ্ছে তোমার কথা শুনে আমি আমার ইমামোর শেষ চিহ্ন টা কে পৃথিবীর মুখ টা দেখতে দেই,আমি আসতে দেইনি আমার সন্তান টা কে…।
জানো মাঝেমধ্যে মনে হয় যেন আমি খুনি,হ্যাঁ,আমিই খুন করেছি আমার বাচ্চা টা কে…আমি ওকে সুস্থ ভাবে বাঁচতে দেইনি আর আসতে দেইনি এই অপরাধ বোধ আমি যতদিন বাঁচবো,ততদিন আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে।
ভাগ্যিস,এতো কিছুর পরেও আল্লাহ তাআ’লা আমাকে সন্তানহীন করে রাখেননি,তার আমার ওপরে বিশেষ রহমত আছে।” মিম ধীর পায়ে এগিয়ে এসে রিকিয়ার চোখের জল মুছে দিতে লাগলো,রিকিয়া মিমের হাত চেপে ধরে বললো,
– “মিম,আমার দারা যে মস্ত বড় অপরাধ হয়ে গেছে…। সন্তান যে কি…? সেটা আমি বুঝি মিম আর আমি কিছুতেই পারবোনা তোমার সন্তানের কোনো ক্ষতি হতে দিতে…।” তখন মিথিলা এগিয়ে এসে বললেন,
– “যার জন্য চুরি করি,সেই কি করে চোর বলতে পারলো আমাকে…?” রিকিয়া মা কে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
– “একদম দূরে থাকো তুমি আর একটু ও আসার চেষ্টা করবে না আমার কাছে…। তুমি আমাকে সারাজীবন ভুল বুঝিয়ে এসেছ,তুমিই বারবার প্রতি হিংসার পরায়ণ করে তুলেছ আমাকে…। হ্যাঁ,সত্যিই তো,ইমান তো কখনো’ই বলেনি যে ও ভালোবাসে আমাকে…।
.
ইমান আমাকে কখনো’ই আশ্বাস দেয়নি বরং ফর্মাল সম্পর্ক বজায় রেখেছে আমার সাথে আর মিমের কোনো দোষ নেই মা ওর গুণের জন্যে’ই এ বাড়িতে সবাই এতো ভালোবাসে ওকে..। কিন্তু তুমি…? তুমি এমন বাজে আর স্বার্থপর মহিলা যে নিজের স্বার্থই সব তোমার কাছে,তুমি নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে আমাকে ইমানের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে ছিলে না?
আর কোনো লাভ হয়নি তাতে…। ইমান হঠাৎ মিম কে এ বাড়িতে নিয়ে এলো তারপর ধীরে ধীরে গভীর ভালোবাসায় জড়িয়ে গেলো তার সাথে…। ওদের বিয়ে টা হয়ে গেলো,তোমার মামার সম্পত্তিতে ভাগ পাওয়ার ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে গেছে…। কিভবো মা তুমি? আমি অবুঝ?
আমার কিন্তু সব বোঝার ক্ষমতা আছে,নেহাৎ বোকা ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি তোমার উদ্দেশ্য টা কে,,,
কিন্তু এবার আমার কাছে সবটা জলের মতো পরিষ্কার আর ঠিক এই কারণে তোমার সহ্য হচ্ছে না মেয়ে (মিম) টা কে…?
তুমিই তো আমার বিয়ে টাও অনিকের সাথে হতে দিতে চাওনি,কিন্তু ওই যে আল্লাহ তাআ’লা আমার ওপর বিশেষ রহমত আছে…?” মিম রিকিয়ার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “এবার শান্ত হও প্লিজ…! বাড়িতে অনেক মেহমান আসতে শুরু করেছে,এমন ভাবে চেঁচামেচি করো না রিকিয়া,
আমি চাইছিনা বাবার ফেইস লস হোক সবার কাছে…।” রিকিয়া মিমের কথা শুনে কিঞ্চিৎ শান্ত হয়ে ইফতি সাহেবকে বললো,
.
– “মামা প্লিজ,পুলিশে ফোন করো আর ধরিয়ে দাও এই মহিলাকে…।” মিথিলা অবাক চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইফতি সাহেব বললেন,
– “তার কোনো প্রয়োজন আমি এখুনি ওকে বের করে দিচ্ছি এই বাড়ি থেকে…। আমি আর ওর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না…। ও কি করে আমার ক্ষতি করার দুঃসাহস দেখাতে পারে?” মিম বললো,
– “বুঝলাম বাবা…। কিন্তু তুমি এবার ফুফিকে যেতে দাও আর মন খারাপ করে থেকো না ঠিক আছে…?” ইফতি সাহেব মন খারাপ করে মিমের হাত ধরে বললেন,
– “তোকে অনেকবার বিনা কারণে অনেক কথা শুনিয়েছিলাম মা…! পারলে ক্ষমা করে দিস আমাকে…?” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “আচ্ছা দিলাম, সন্তান ভুল করতেই পারে,তাই বলে কি আর বাবা-মা রাগ পুষে বসে থাকে…।” ইফতি সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “বুঝেছি মা…! এখানে কেউ কথায় পারবেনা তোর সাথে…।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “বুঝেছ বাবা তুমি ঠিকই,তবে তোমার বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেছে…।” ইমানের কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করলো,তখন ইতি এসে বলল,
– “আরে নিচে চলো,ইফতারের সময় হয়ে গেছে।”
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com