Breaking News

তুমি যদি জানতে | পর্ব -০১



হঠাৎ কারো গভীর নিঃশ্বাস আঁচড়ে পরলো সদ্য বিবাহিত মেয়েটির মুখে,মেয়েটি ভয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো,ও গুটিশুটি মেরে বসে রইলো বিছানার এক পাশে বসে,ইমান হঠাৎ চুমু খেলো ওর কাঁধে,না চাইতেও মেয়েটি নিজেকে সঁপে দিলো এই মানুষটির কাছে।খুব লজ্জা করছিল তার,যখন এই মানুষ টা স্পর্শ করছিল তাকে,তবুও সে নিজেকে উজাড় করে দিলো,নিজেকে সমার্পন করে দিলো তার স্বামী নামক মানুষটির কাছে।

সকালে তার খুব লজ্জা করছিল,নিজেকে এলোমেলো অবস্থায় দেখে।
ইমান মৃদু হেসে বললো,
চলো ফরজ গোসল টা করে নেই এক সাথে?” মিম রাজি হলো না,ইমান মনেমনে বলল,
তুমি কি বুঝতে পারো না,আমি কতটা ভালোবাসি তোমাকে?” 
মিম চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে পরলো,খুব কান্না পেলো তার গত রাতের কথা ভেবে,
ভালোবাসা রং বদলায় আর তাই হয়তো ইয়াসিন সহজে ভুলে গেছে ওকে? 
নাহলে সে কি করে নাদিরার সাথে সংসার করছে? 
কি করে এতো সহজে ভুলে গেলো ওকে?
মিম ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে,
ওর শশুর মশাই ফাহিম সাহেব পেপার পড়ছেন সোফায় বসে।
ও ঝটপট তার জন্য চা করে নিয়ে এলো,ইমান এসে বলল,

আমাকে একটু কফি করে দেবে?” মিম কফি করে নিয়ে এলো,নাদিরা না বুঝেই বলল,
বাবা’কে কফি দিস না,চা খেতে পছন্দ করে সে।” ইমান হাসিমুখে বলল,
– “সম্পর্কে মিম তোমার বড় জা নাদিরা,আশা করছি তুমি আজ থেকে ওকে ভাবি বলে ডাকবে আর রইলো কফির কথা ও সেটা আমার জন্য করে এনেছে।” মিম মিটিমিটি হেসে ইমান’কে বলল,
– “খেতে চলুন! আপনার না সকালে মিটিং আছে?” ফাহিম সাহেব হালকা কেশে বললেন,
– “সব ক্যান্সেল করে দিয়েছি বউ মা! চা টা খেতে দারুণ হয়েছে।” মিম হাসলো,বলল,
– “বাবা একটু ডালপুরি ভেঁজে দেই আপনা’কে?” নাদিরা বলল,
– “বাবার ভাজাপোড়া খাওয়া বারণ।” ফাহিম সাহেব একটু অবাক হয়ে বললেন,
– “তোমাকে কে বলেছে? যাও বউ মা ডালপুরি ভেঁজে নিয়ে আসো,খেয়েছি প্রায় এক মাস আগে।” মিম ঝটপট কোমর বেঁধে রান্নাঘরে ঢুকে পরলো,নাদিরা এসে বলল,
– “মনে হচ্ছে ভাই তোকে খুব ভালোবাসে?”
– “কেন? আমার সুখ কি সহ্য হচ্ছে না নাদিরা তোমার কাছে? তুমি প্লিজ আমাকে ভাবি ভাবি বলে ডাকা শুরু করে দাও,তোমার জন্য সেটাই ভালো হবে।” ইয়াসিন এসে তখন নাদিরায় গা ঘেঁষে দাঁড়ালো,ওকে বলল,
– “একটু নাস্তা বানিয়ে দেবে?” নাদিরা ধূর্ত হেসে বলল,
– “তা সম্ভব না,দেখতেই পাচ্ছে বড় ভাবি রান্নাঘর দখল করে আছে?”
– “কোথায়? ফোরবার্নার গ্যাসের চুলোয় তিনটে চুলোই দেখছি ফাঁকা পরে আছে?” শাশুড়ির এমন কথায় নাদিরা চমকালো,বলল,
– “মা আমি আসলে খেয়াল করিনি আগে।”
– “কেন খেয়াল করোনি ছোটো বউ মা? চোখ কোথায় থাকে? মিম হাসলো,বলল,
– “মা আপনার জন্য অপরাজিতা ফুলের চা করেছি আজকে।”
– “মা চা খায় না।”
.
– “কে বলেছে তোমাকে? মনে হয় না ছোটো বউ মা তুমি একটু বেশিই বলছ?”
– “না মানে মা।”
– “ঠিক আছে,ঠিক আছে বাদদেও,ওই পাশে গিয়ে স্বামী’র জন্য খাবার বানাও দেখ সে কি খেতে চাইছে?” কিছুক্ষণ পর,
মিম গরম গরম ডালপুরি ভেঁজে ফাইজা’কে বলল,
– “মা বাবা’কে দিয়ে আসি? গরম গরম খেতে ভালো লাগবে।” ফাইজা মিমের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– “দেখি দেখি বড় বউ মা,গরম তেল কি করে পরলো তোমার হাতে?” মিম বলল,
– “তেমন কিছু হয়নি মা! আমি পুরি টা দিয়ে আসি? আপনার ছেলে আর বাবা দু’জনেই অপেক্ষা করে আছে।” তখন হঠাৎ ইমান রান্নাঘরে চলে এলো,মিমের হাত ধরে বলল,
– “কি হয়েছে?” মিম বলল,
– “আরে বাদদিন, ওই একটু তেল ছিটে হাতে পরেছে।” ফাহিম সাহেব এসে মিম’কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “বউ মা হাতে কি বেশি লেগেছে”
– “এটা তেমন কিছুই না বাবা,ডালপুরি গুলো গরম গরম খেয়ে নিন ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।” তবে ইমান মিমের কথা শুনলো না,সে ওর হাতে বার্নল এনে লাগিয়ে দিচ্ছে।ইয়াসিন চুপচাপ দু’জনেই দিকে তাকিয়ে আছে।নাদিরা এসে ফিসফিস করে বললো,
.
– “বাড়িতে আসতে পারলো না এর মধ্যেই বড় ভাইয়ের মাথাটা চিবিয়ে খাচ্ছে?” ইয়াসিন হাসলো বলল,
– “বাদদেও,তুমি কেন ঢুকতে যাও ওদের দু’জনের মাঝে?” নাদিরা কিছু বলতে পারলো না,চুপচাপ বরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ইয়াসিন এক ভাবে মিমের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,মনেমনে ভাবছে,
– “কত হাসিখুশি আর নিষ্পাপ লাগছে মেয়েটা কে? অথচ ও নাকি আমাকে ঠকাচ্ছিল? কে বিশ্বাস করবে আমাকে? ভাগ্যিস নাদিরা ছিলো? তাই আমাকে বাঁচিয়ে দিলো ওর হাত থেকে আর আমি ভাই’কে কত বোঝালাম কিন্তু সে পাত্তাই দিলো না আমাকে? বোধহয় মায়াবীনি কোনো মায়া,জাদু করেছিলো ভাই’কে?” ইমান মিম’কে ঘরে নিয়ে এলো,রাগী রাগী চেহারা নিয়ে বলল,
– “একটু খেয়াল রাখতে পারো না নিজের দিকে?” মিম আমতা আমতা করে বলল,
– “সামান্য তেল ছিটেছে,এই নিয়ে এতো টেনশন করার কি আছে?”
– “অবশ্যই আছে,বউ টা আমার,তাই কষ্ট টাও আমার’ই হবে।” মিম মেকি হাসলো,তবে মনেমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,ওর প্রতি ইমানের স্নেহ ভালোবাসা দেখে।ইমান এসে মিমের পাশে বসলো,বললো,
– “কাল’কে রিসেপশনের পরেই কি বাবার বাসায় চলে যাবে?” মিম হঠাৎ দরজার আড়ালে নাদিয়া আর ইয়াসিন’কে দেখে ইমান’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
.
– “হ্যাঁ অবশ্যই,আপনি কি যাবেন না আমার সাথে?”
– “যাবো,তবে তোমার কষ্ট হচ্ছে চলাফেরা করতে সকাল থেকে?” মিম লজ্জা পেলো,আমতা আমতা করে বললো,
– “ওই প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হবে,তবে সমস্যা নেই।আপনি আছেন,দেখে রাখবেন না আমাকে?” ইমান মিমের মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরলো,বলল,
– “আমি কথা দিয়েছি নিজেকে এবং তোমার বাবা’কে।‌যাগগে নাস্তা টা করে নাও তোমার জন্য ঔষধ নিয়ে এসেছি ফার্মেসি থেকে।” মিম লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বললো,
– “লাগবে না,ইটস ওকে।” ইমান মিমের কথা শুনলো না,এক রকম জোর করে খাইয়ে দিলো ওকে।আড়াল থেকে তা দেখে নাদিরা বললো,
– “দেখলে? তোমাকে ভুলে গেছে।” পেছন থেকে ফাইজা ছোটো ছেলের বউয়ের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন,
– “তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে তাতে? এক বছর হলো এই বাড়িতে এসেছ অথচ দেখছি গাঁইয়া লোকেদের মতো অন্যের ঘরে আড়িপাতা স্বভাব আছে?”
– “না মানে মা?” ইমান হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে।মিম ইমানের জন্য একটা ফাইল নিয়ে এলো,ইমান মিমের হাত ধরে হাসতে হাসতে বললো,
– “স্টাডিতে চলো কথা আছে।”
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com