Breaking News

গল্পঃ ভিলেন । পর্ব ০১



দু’হাতে মুখ চেপে,প্রচন্ড ভয়ে নিষ্পাপ দু’টি চোখে মেয়েটি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে।ভদ্রলোক কিছুক্ষণ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে তার সঙ্গে থাকা লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন,
– “তোমরা এখন যেতে পারো আর মিসস আপনি কিছু কি জিজ্ঞেস করতে চান আমার কাছে…?” মেয়েটি একটু শক্তি সঞ্চয় করে বললো,
– “স্যার! আমি শুনেছি আপনি জীবন্ত মানুষের ওপর অবৈধ ভাবে এক্সপেরিমেন্ট করছেন আপনার এই সুপার হাইটেক ল্যাবে…?” ভদ্রলোক হঠাৎ রেগে গিয়ে ও নিজেকে শান্ত রেখে হাসিমুখে বললো,
– “আর ইউ ক্রেইজি? আপনার মাথা ঠিক আছে…?” মেয়েটি মৃদু হেসে বলল,
– “আমি প্রমাণ ছাড়া কোনো কাজ করিনা স্যার…। আমার কাছে এই ব্যাপারে কিছু তথ্য এবং প্রমাণ আছে।” ভদ্রলোক হঠাৎ খুব রেগে গিয়ে গার্ডসদের ডেকে বললেন,
– “তারাতাড়ি এই মেয়ে টি কে আমার ফাউন্ডেশন থেকে বের করে দাও এসে থেকেই ভুলভাল বকছে আমার সাথে…।” মেয়ে টি কে যখন কয়েকজন গার্ডস মিলে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো,তখন মেয়েটি চিৎকার করে বলে উঠলো,
– “স্যার! আপনাদের মতো আস্থাভাজন মানুষ গুলো কি করে টাকার লোভে পরে অমানুষ হয়ে যেতে পারে এভাবে…?” ভদ্রলোক লিফটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে মেয়ে টি কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– “মাথার ডক্টর দেখান মিসস,ডেফিনিটলি আপনার মাথার তার নড়বড়ে হয়ে গেছে।” মেয়েটি দ্বিতীয়বার মুখ ফুটে কিছু বলার সুযোগ পেলো না,তার আগেই বেশ কয়েকজন বডিগার্ড’স মিলে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিলো তাকে।
বেশ কিছুক্ষণ পর,মেয়েটির সহকর্মী স্বাধীন এসে তাকে ধরে অফিসে নিয়ে এসে বললো,
– “মিম পাগল না কি তুমি…? ইমান খানের লাইফ স্টাইল সম্পর্কে জানতে গিয়ে কি সব আবোলতাবোল জিজ্ঞেস করছিলে তুমি তার কাছে…?” পাশ থেকে রুবেল বললো,
– “সেটাই দোস্ত…! নিজেকে একটু কন্ট্রোল কর, নয়তো এভাবে চলতে থাকলে তোর চাকরি টাই চলে যাবে।” মিম ভেংচি কেটে বলল,
– “চুপ কর তোরা,
.
এই মিম কখনো সত্যি কথা বলতে ভয় পায় না ঠিক আছে…?” তখন রাফিয়া এগিয়ে এসে বললো,
– “হুমম,বুঝতে পারছি বোন আজ একচোট হবে তোর আর বসের মাঝে…।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “হোক! আমি না এমনি এমনি সাংবাদিক হইনি ঠিক আছে…?” তখন আফজাল হোসেন সাহেব এসে মিমকে বললেন,
– “এই যে কেবিনে এসো একটু কথা আছে তোমার সাথে…।” মিম মাথা ঠান্ডা রেখে কেবিনে প্রবেশ করলো,আফজাল সাহেব রেগে গিয়ে বললো,
– “কি সমস্যা কি তোমার…? তুমি কি চাও,যে আমার নিউজ চ্যানেল টা বন্ধ হয়ে যাক আর এর জন্যই উঠেপড়ে লেগেছ তুমি লাইফ ফাউন্ডেশনের সাথে…?” মিম বললো,
– “স্যার,প্লিজ আমার কথা শুনুন স্যার! আমার কাছে কিছু প্রমাণ আছে।” আফজাল সাথে সাথে রেগে গিয়ে মিমকে বলল,
– “আজ এই কিন্তু শেষবার…? প্লিজ তুমি এখন চলে যাও এখান থেকে…। দেখ! মিম,লাইফ ফাউন্ডেশনের কর্নধার ইমান খান স্যার কিন্তু লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে পাঠিয়েছে তোমাকে…।
– “তাই বলে স্যার?”
.
– “এবার চুপ করো প্লিজ আর এখন বেড়িয়ে যাও আমার কেবিন থেকে…।” মিম চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে বসের কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো,তার মন খারাপ হয়ে গেছে বকা খেয়ে বসের কাছে…। আর তাই ও সেই মুহুর্তে অফিস থেকে বেড়িয়ে এলো, রাস্তার ধারে দেখতে পেলো,একটা ছোটো বাচ্চা ছেলে ময়লার স্তুপের মধ্য থেকে পচাগলা খাবার খুঁজে বের করে খাচ্ছে আর তাই দেখে খুব মায়া হলো ওর,ও এগিয়ে এসে বললো,
– “চলো ভাইয়া আমার সাথে আর বলো কি খাবে…?” বাচ্চা ছেলে টা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তখন আরো কিছু বাচ্চা ছেলে এসে মিমকে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপা মণি আপনি কি কি খাওয়াবেন ওকে…?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “তোদের ও খিদে লেগেছে?” ওরা সাথে সাথেই মাথা দোলাতে দোলাতে বলল,
– “হুমম!” মিম বললো,
– “তাহলে চল,দেখি আল্লাহ তাআ’লা আজ আমাদের সকলের রিজিকে কি লিখেছে…?” মিম বাচ্চাদের সাথে নিয়ে হাসিমুখে ফাইফ স্টার হোটেলে চলে এলো।তখন মন্টু কৌতূহল বশত মিমকে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপা মণি এখানে কি ডালভাত হবে…?” মিম মিটিমিটি হেসে বললো,
– “কেন হবে না? তবে আমি আজ মাংস ভাত খাওয়াবো তোদের সবাইকে…।” রাজু মাংস ভাত খাওয়ার কথা শুনে বলল,
.
– “আহ! কতদিন মাংস ভাত খাই না,মা চলে যাওয়ার পর আব্বায় আর দেখেনা আর ইস্কুলে ও পড়ায় না আমাকে…।” মিম কিছু বললো না,দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ওয়েটারকে ডেকে বললো,
– “ফ্রাইড রাইস সহ স্পেশাল রোজি চিলি চিকেন আর ক্যাশোনেট চিকেন সালাত দিবেন তবে ঝাল কম দিবেন কারণ বাচ্চারা খাবে…।” ওয়েটার বললো,
– “ডেফিনিটলি ম্যাম,কোনো সফট ড্রিংকস দিবো না কি মিনারেল ওয়াটার দেবো? যদি এটাও কাইন্ডলি একটু একটু ম্যানশন করে দিতেন অর্ডারের সাথে…?” মিম মৃদু হেসে বলল,
– “দু’টোই দিন তবে খাবারে ঝাল কম দিতে হবে।”
– “শিওর ম্যাম…! আর কিছু?”
– “না না ইট’স ওকে…।” ইমান নিজের নতুন প্রোজেক্টের মিটিং শেষ করে লাঞ্চ করতে চলে এলো তার অন্যান্য ইনভাইটেড গেস্টদের সাথে…। লাঞ্চ করে উঠে ইমান ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ অপজিটে তাকিয়ে দেখে সকালে ওর সেই ইন্টারভিউ নেওয়া মেয়েটি হেসেখেলে সময় কাটাচ্ছে কিছু পথশিশুদের সাথে…।
বাচ্চাদের খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছে আর তারা আবার সবাই মিলে বিভিন্ন এঙ্গেলে সেলফি তুলছে মেয়েটির সাথে আর তখন হঠাৎ ইমানের এসিস্ট্যান্ট প্রিশা এসে ওকে জিজ্ঞেস করলো,
.
– “এনি প্রবলেম স্যার…? আপনার কি কোনো অসুবিধে হচ্ছে এখানে অ্যাডজাস্ট করতে সবার সাথে…?” ইমান কিছুক্ষণ এক ভাবে মিমের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রিশা কে বললো,
– ” নো নো,নট অ্যাট অল বরং তুমি খোঁজ নাও সেই সাংবাদিক মেয়েটির ব্যাপারে এবং জানো তার বংশপরিচয় কি আর সে কোথায় থাকে…?” প্রিশা হঠাৎ চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “কেন স্যার…? হঠাৎ আবার ওই মেয়েটি কেন? না মানে কি হয়েছে…?” ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “ঝড়ের বেগে এসে আমার এথিক’স এবং মরাল’স দিকে প্রশ্ন চিহ্ন ছুড়ে চলে গেলো আর আমি এমনি এমনি তো ছেড়ে দেবে না তাকে…। আমি ও এর শেষ দেখে ছাড়বো,আমি জানতে চাই এনার এতো কনফিডেন্স এলো কোথা থেকে…?” প্রিশা মৃদু হেসে বললো,
– “বাদ দিন না স্যার…! যার কোনো অস্তিত্ব নেই তা নিয়ে ভেবে কি হবে?
আপনি এক কাজ করুণ না স্যার,বরং নিচে চলুন। কারণ অবন্তী ম্যাম প্রায় আধঘন্টা আগে থেকে এসে বসে আছে।” প্রিশার কথা শুনে ইমান নিচে চলে এলো,এসে দেখতে পেলো তার হবু স্ত্রী গাল ফুলিয়ে বসে আছে।ইমান তার মন ভালো করতে জিজ্ঞেস করলো,
.
– “কি ব্যাপার? মন খারাপ কেন? আচ্ছা অবন্তী,তুমি জানো কি আমি ব্যস্ত ছিলাম সকাল থেকে?” অবন্তী বললো,
– “জানি…! তবে তুমি কেন এমনি এমনি ছেড়ে দিলে ওই সাংবাদিক মেয়েটি কে…? লাইট সিরিয়াসলি? আমার মনে হচ্ছে কেউ ওকে আমাদের লাইফ ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে ভুলভাল তথ্য দিয়ে আমাদের বদনাম করতে চাইছে…।” ইমান হাসতে হাসতে অবন্তীর নাক টেনে ধরে বলল,
– “ডোন্ট ওয়ারি,হানি! এবার বলো কি খাবে…?” অবন্তী মৃদু হেসে বললো,
– “কিছু না,চলো না…। টি.এস.সি তে যাবে আমার সাথে…?” ইমান হাসিমুখে বলল,
– “আচ্ছা চলো,তবে তার আগে ফাইভ স্টার হোটেলের বিলটা মিটিয়ে যেতে হবে।” ইমান কাউন্টারে বিল পে করতে এলো,মিম এবং ইমান দু’জনেই যারযার ক্রেডিট টা এগিয়ে দিলো ক্যাশইয়ারের কাছে…।” ক্যাশইয়ার ভদ্রলোক বোকাসোকা মুখ করে দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো ইমান তা দেখে হাসতে হাসতে বললো,
– “আচ্ছা লেডিস ফাস্ট,আপনি কাইন্ডলি ম্যামের বিল টা নিয়ে নিন আগে।” ক্যাশইয়ার ভদ্রলোক মেশিনে মিমের কার্ড টি সোয়াইপ করলো,অতঃপর মৃদু হেসে বললো,
.
– “সরি ম্যাম! জিরো ব্যালেন্স দেখাচ্ছে আপনার এই কার্ডটিতে…।” মিমের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিলো,ইমান মৃদু হেসে নিজের কার্ড টি ক্যাশইয়ার কে দিয়ে বলল,
– “ম্যামের বিল টা ও পে করে দিন আমার কার্ডটি থেকে…।” মিম কিছু বলার আগেই ভালো করে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ইমান,ইমান মৃদু হেসে নিজের কার্ডটি নিলো লোকটির হাত থেকে…। এরপর ফিসফিস করে বললো,
– “মানুষখেকো লোকজন যতসব,সকালে ফেলে দিলো আর এখন এসে ভালো মানুষি দেখাচ্ছে আমার সাথে…?” পরক্ষণেই সে হাসিমুখে ইমানকে বললো,
– “আপনাকে এতো কষ্ট করতে কে বলেছে স্যার…? এখানে বিকাশ পেমেন্টসের ব্যবস্থা আছে।” ইমান মিমকে চমকে দিয়ে বললো,
– “মুখে মধু অথচ অন্তরে বিষ…? নিয়ে আপনি এতো সুন্দর করে কথা বলছেন আমার সাথে…? মানতেই হচ্ছে মিসস,অনেক কিছু শেখার আছে আপনার মতো একটা বাচ্চা মেয়ের কাছ থেকে।” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “জ্বি,স্যার! আমি না কারো ঋণ রাখি না,সময় মতো টাকার একটা খাম পৌঁছে যাবে আপনার কাছে…।” ইমান হোটেল থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বললো,
.
– “মিসস,টাকার খাম না পৌঁছালেও সমস্যা নেই।তবে আমি একটু একান্তে বসে কথা বলতে চাই আপনার সাথে…।” তখন একজন কনস্টেবল এসে মিমকে বললো,
– “আম্মু তুমি এখুনি গিয়ে গাড়িতে বসো।কারণ ম্যাম! আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে বলেছেন তোমাকে…।” মিম মনেমনে বললো,
– “ধুরর,এই আম্মু ও না। এতো বড় হয়েছি আমি,তাহলে এখন কেন সর্বদা চোখেচোখে রাখতে হবে…? ধুর ধুর ভাল্লাগে না,এই মা টাও না খুব জ্বালিয়ে খাচ্ছে আজকাল আমাকে….।” ইমান শান্ত ভাবে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,সে কনস্টেবল মতিউর রহমানের সাহেবের সাথে গিয়ে উঠে বসলো তার গাড়িতে।
.
চলবে,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com