Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ৩২



আশ্চর্য! আমি ব্যাচেলর ছিলাম কবে? আমি গত সাড়ে নয় বছর ধরে শুধু তোমার ছিলাম,শুধু তুমিই চিনতে পারোনি আমাকে।” মিম তখন হাসতে হাসতে বলল,
– “পৌঁছে কিন্তু ফোন করবেন আমাকে।” ইমান মিটিমিটি হেসে বলল,
– “যো হুকুম মেরে দিলকা রানী,একটুও ভুল হবে না।”
– “ঠিক আছে আর ব্যাচেলর পার্টি?”
– “সেখানে তো আগেই যেতাম না! মানা করে দিয়েছিলাম রায়হান এবং কিয়ান ওদের’কে…!” মিম বলল,
– “হুমম! গেলে আপনার খবর ছিলো,মজা বুঝিয়ে দিতাম কালকে…!” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “রাগ হচ্ছে খুব?”
– “শাস্তি পেতে হবে আপনাকে।” ইমান মিমের কথা শুনে হাসতে লাগলো,মিনিট পাঁচেক পরে বলল,
– “আমি কিন্তু বাড়ির গেইটে…!” মিম বলল,
– “রহমত চাচা কিংবা মোমেনা খালার কাছে আপনার ফোন টা দিন কিছু কথা আছে তাদের সাথে।” ইমান ফোন টা মোমেনা খালার কাছে দিলো,মিম বলল,
– “খালা রাতে হালকা খাবার খেতে দিয়েন আপনার ছেলে’কে…!” মোমেনা হাসিমুখে ফোন টা ইমানের হাতে দিয়ে বলল,
.
– “বাবা! আমাদের বউ মা কিন্তু অনেক লক্ষী।”
– “হুমম! খালা,এর জন্যই আমি এতো ভালোবাসি আপনার বউ মা’কে…!” রাত গড়িয়ে সকাল হয়ে গেলো,সবাই মিম’কে সাজাতে পার্লারে নিয়ে এসেছে।মিম মেকআপ আর্টিস্ট মেহেজাবিন নূর কে বললো,
– “ন্যাচারাল মেকআপ লুক করে করে দেবেন,ভারী সাজ একদম ভালো লাগে না আমার কাছে আর আমি কোনো পেত্নী সাজতে চাইনা,
তাই দয়া করে আমার স্কিনের সাথে যায় না এমন প্রসাধনী দিয়ে সাজাবেন না আমাকে…!” নূর মিমের কথা শুনে মিটিমিটি হাসতে লাগলো,বলল,
– “আচ্ছা ম্যাম! একদম ঠিক আছে,আসলে আমার খুব ভালো লেগেছে আপনার এই ভাবনা দেখে,না মানে আসলে ম্যাম,
.
এখানে যেমন ব্রাইড আসুক না কেন তারা অলওয়েজ ঝাকানাকা বা চোখ বাঁধানো সাজ খোঁজে।
মাঝেমধ্যে তাদের চেহারা বোঝার উপায় থাকে না।এতো টা ভারী মেকআপ তারা এক্সপেক্ট করে আমাদের কাছ থেকে আর আপনি বোধহয় আমার প্রথম কোনো ক্লাইন্ট,
যে ন্যাচরাল লুক এক্সপেক্ট করেছে আমার কাছ থেকে।সত্যি বলতে আমার ক্যারিয়ারে কখনো আমি ন্যাচরাল লুক ট্রাই করে দেখিনি,তবে আপনি চাইলে আমি আমার বেস্ট টা দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করবো আপনাকে।” মিম নূরের কথায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করলো,তারপর বলল,
– “আমি কিন্তু হিজাব পরবো শাড়ির সাথে।” নূর বলল,
– “একদম ভাববেন না ম্যাম! আপনি যেমন চাইছেন,আমি ঠিক তেমন করেই সাজিয়ে তুলবো আপনাকে…!”
এদিকে,ইমানের উৎকণ্ঠার শেষ নেই,এই নিয়ে বিশবার ফোন করলো শাশুড়ি মায়ের কাছে।নাছিমা ইমান’কে আশ্বস্ত করে বললেন,
– “চিন্তা করো না বাবা! পার্লারে সাজতে গেছে আর মোবাইল ফোন টা বোধহয় সাইলেন্ট অবস্থায় ব্যাগের মধ্যেই রয়ে গেছে।”
.
– “সে নয় বুঝালাম মা! কিন্তু আপুদের ফোন টা কেন অফ আছে?” পাশ থেকে সাবিহা বলল,
– “দুশ্চিন্তা করছ কেন ভাইয়া? আপুরা বোধহয় আপু’কে নিয়ে এতোক্ষণে কমিউনিটি সেন্টারের পৌঁছে গেছে।
কারণ মিনিট দশেক আগে আমার কথা হয়েছিল মেঝো আপুর সাথে আর আমরা ও বেরুচ্ছি।তুমি এতো দুশ্চিন্তা করো না।”
– “ঠিক আছে।” প্রায় দেড় ঘন্টা পর মিম’কে নিয়ে সবাই কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছেছে,এরপর ইমান এসে পৌঁছায় বরযাত্রী’র সাথে।
তবে গেইটে সবাই মিলে ইমান’কে আটকে দেয়,ইমান তখন একটা প্লাকার্ড তুলে ধরে ওপরে দিকে।সবাই তখন খেয়াল করে দেখে তাতে স্পষ্ট বাংলা ভাষায় লেখা,”আমার বউ আমি নিব,গেইটে কেন চাঁদা দেবো?” নীলাসা হাসতে হাসতে বললো
– “চাঁদার দাবী মানতে হবে,মেয়ে দিমু না আপনার লগে…! কিয়ান বলল,
– ” আরে বিয়াইন ফাঁফর বাজি বাদ দেন,ট্যাকার হিসাব ছাইড়া দেন।” সাবিহা চিৎকার করে বললে,
– “ট্যাকার হিসাব ছাড়ুম না,মাইয়া আমরা দিমু না।” দু’পক্ষের মিছিলে মিম অস্থির হয়ে মামাতো ভাই নিহান’কে বলল,
– “ভাইয়া,বাহিরে কি হচ্ছে? প্লিজ গিয়ে একবার দেখে আসো না?” তখন নিহান সারা’কে ভিডিও কল করে মিম’কে সবটা দেখালো,দু’পক্ষের যুক্তি শুনে মিমের হাসি কিছুতেই থামছে।
অতঃপর ইমান দু’টো দশ হাজার টাকার বান্ডিল সাবিহা এবং নীলাসার হাতে গুঁজে দিয়ে বরযাত্রী নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকলো,মিম’কে দেখে তার চোখের পলক কিছুতেই পরছে না।ন্যাচরাল মেকআপ লুকে ওকে দেখতে এতো টাই স্নিগ্ধ এবং সুন্দর লাগছে যে কেউ প্রশংসা না করে পারছে’ই না।নাফিম সাহেব নিজে এসে জামাই’কে মেয়ের কাছে নিয়ে এলেন।ইমান মিম’কে জড়িয়ে ধরে অভিমানের সুরে বললো,
– “এতো বার করে ফোন করলাম! ফোন কেন রিসিভ করলে না?” মিম বলল,
.
– “আসলে ফোন টা পার্সের মধ্যে ছিল তাই খেয়াল ছিল না।” ইমান মিমের দু’চোখের ওপরে চুমু খেয়ে বলল,
– “আমার রাগ হয়েছে খুব! কাজ টা একদম ঠিক করলে না।” মিম লজ্জা পেয়ে বলল,
– “আচ্ছা সরি! আর কখনো এমন হবে না।” ইমান মিমের গালে চুমু খেলো,মিম ইমানের বুকে কিল,ঘুষি মেরে বলল,
– “আচ্ছা এতোশত মানুষের সামনে আপনার কি কিছুতেই বাঁধছে না?” ইমান হাসতে হাসতে ফিসফিস করে বলল,
– “না,কারণ আজ রাতে তুমি আমার সাথে মুখ উজ্জ্বল করবে তা এখানে উপস্থিত সবার জানা।” লজ্জায় মিমের মুখ টা লাল হয়ে গেলো,পেছনে থেকে ইমাদ সাহেব বলল,
– “বাবা কেমন আছো তোমরা?” মিম এবং ইমান ইমাদ সাহেব এবং মিসেস লামিসা’কে সালাম করতে গেলো,তারা বাঁধা দিয়ে বলল,
– “থাক না মা,বসো তোমরা।” কিছুক্ষণ পর ফিদান সাহেব তার ফ্যাম-লি নিয়ে চলে এলেন,তারপর শুরু হয়ে গেলো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
এরপর সুষ্ঠু ভাবে দু’জনের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো,তারপর ইমান এবং মিম’কে নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন নাছিমা এবং লামিসা।
অতঃপর বিদায়ের সময় চলে এলো,নাফিম সাহেব ইমান’কে বললেন,
– “বাবা! অনেক সৌখিন কিন্তু আমার মেয়ে টা,কোনো ভুল করলে বুঝিয়ে বলো কিন্তু কখনো ওর গায়ে হাত তুলো না।” ইমান বলল,
.
– “চিন্তা করবেন না,আমার কাছে বাবা অনেক যত্নে থাকবে আপনার মেয়ে টা আর আমি কখনো ওর গায়ে হাত তুলবো নাঃ! কথা দিচ্ছি,চিৎকার চেঁচামেচি করে কথা বলা তো অনেক দূরের কথা।” নিহান ও জয় মিম’কে কোলে করে গাড়িতে তুলতে গেলো কিন্তু ইমান মিম’কে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
– “আরে ভাই আমি আছি তো? আমার বউ’কে আমি কোলে তুলে নিব স্বাভাবিক তাই না?” সবাই ইমানের কথা শুনে মিটিমিটি হাসতে লাগলো,ইমান মিম’কে গাড়িতে বসিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “কাঁদছ কেন? আমি আছি না? আমরা সপ্তাহে দু’দিন বাসায় থাকবো আর পাঁচদিন বাবা-মায়ের কাছে বেড়াবো ভালো হবে না?” মিম মাথা দুলিয়ে ইমানের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো,ইমান ওকে ডেকে তুললো না। এিশ মিনিটের পথ পারি দিয়ে ইমান মিম’কে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো,বরণ শেষে মিষ্টি মুখ করে মিম নিয়ে এসে বাসর ঘরে বসিয়ে দিলো রায়হানের স্ত্রী সৃজিতা।
কেন যেন এরপর আস্তে আস্তে ওর খুব ভয় করতে লাগলো,ইমান ঘরে আসতেই কেন যেন পালাই পালাই করতে লাগলো মেয়েটা।ইমান ওর হালচাল দেখে মৃদু হেসে এগিয়ে এসে ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “অনেক সুন্দর দেখতে লাগছে আমার পরী টা কে…! একদম চাঁদের মতো দেখতে আমার পরী টা…!” মিম সাথে সাথেই ইমান’কে সালাম করতে ঝুঁকলো,তবে ইমান বলল,
– “আশ্চর্য! তুমি কি বোকা? শোনো আর কখনো আমার সামনে মাথা ঝোঁকাবে না।” মিম লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান জড়িয়ে ধরে বলল,
.
– “কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই? জামা-কাপড় বদলাবে না?” মিম চুপচাপ ইমানের বুকের সাথে মিশে রইলো,ইমান বললো,
– “কি ব্যাপার? কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।” মিম বলল,
– “হুমম! তবে আপনি নামাজ পড়বেন না?” ইমান বললো,
– “পড়বো,তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আগে?” মিম ফ্রেশ হতে বাথরুমে গেলো,বেড়িয়ে এসে দেখলো,ইমান ফ্রেশ হয়ে ক্যান্ডেল হাতে ক্যান্ডেল স্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
তখন হঠাৎ ইমানের মিমের দিকে নজর পরতেই ও তাকিয়ে দেখে,মিম একটা কোটা জামদানী শাড়ির সাথে অফ সোলডার ব্লাউজ পরে দরজার এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।ইমান এগিয়ে এসে দু’হাত দিয়ে মিমের গাল চেপে ধরে চুমু খেলো তারপর বলল,
– “চলো এশার সালাত টা পরে ফেলি…! এখনো সময় আছে।” দু’জনে ঝটপট নামাজ টা পড়ে ফেললো,
এরপর ইমান মিম’কে কোলে করে এনে শুইয়ে দিলো বিছানাতে…! মিম লজ্জায় ইমানের বুকে মুখ লুকোলো,ইমান দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি ব্যাপার? কি হয়েছে?” মিম বললো,
– “কিছুনা!” ইমান সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো ওকে,তারপর ওর গালে,কপালে কয়েকবার চুমু খেলো,কিছুক্ষণ পর,
লাইট টা অফ করে দিলো নিজের হাতে।সকালে যখন ইমানের চোখ খুললো,দেখলো,মিম তখন ও ওর বুকের সাথে লেপ্টে আছে।
.
ও মিমের গালে চুমু খেলো,তারপর ঠোঁটের ওপরে চুমু খেয়ে বললো,
– “এখন উঠে পরো,জানো? বেলা বারোটা বাজে।” মিম সাথে সাথেই উঠে পরলো,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো,
সবে সাত টা বাজে…! ও তখন ইমান’কে কিছু একটা বলতে চাইল,পরক্ষণেই লজ্জা পেতে লাগলো গতরাতের কথা ভেবে।ইমান মিটিমিটি হেসে ওর গায়ে কাঁথা জড়িয়ে গোসল করতে বাথরুমে নিয়ে এলো,মিম বলল,
– “আপনি জান! আমি গোসল করবো আগে।” ইমান ওকে লজ্জায় না ফেলে হাসতে হাসতে বাথরুমের বাহিরে চলে এলো,
তারপর ফ্রেশ হয়ে সাথে মিম’কে ও নিচে নিয়ে এলো নিজের সাথে।মিম ইমানের জন্য সকালের নাশতা বানালো,ইমান রান্নাঘরে এসে বললো,
– “এতো কষ্ট করতে কে বলেছে তোমাকে?” মিম বললো,
– “আমি থাকতেও যদি আপনি হোটেল দিয়ে খাবার আনিয়ে খান! সেটা একদম সুখকর হবে না আমার কাছে।” ইমান হাসলো,বলল,
– “আচ্ছা! চলো পার্লারে সাজতে যাবে না? চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে।” মিম ইমানের সাথে পার্লারে রিসেপশনের জন্য সাজতে চলে এলো,রিসেশনে সবাই বেশ অবাক হয়েছে মিম’কে দেখে।
মিম বিয়ের দিনের মতোই সিম্পল সাজে আজ ও সেজেছে আর ইমান খুব যত্ন করে মুষ্টিবদ্ধ করে মিমের হাত ধরে আছে,এমন ভাবে যত্ন করছে যেন কত কিছুর বিনিময় নিজের মানুষ টা’কে পেয়েছে।মিমের সিম্পল সাজ দেখে,নাজনীন ব্যাঙ্গ করে মিম’কে বললো,
– “তোমাকে একদম মানাচ্ছে না এই সাজে ইমান স্যারের পাশে,চুল গুলো খুলে রাখলো দেখতে ভালোই লাগতো,এতো টাও বাজে দেখতে লাগতো না তোমাকে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আপনি জানেন কি নাজনীন? আমাদের ইসলামি শরীয়তে নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য,যা পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করা হারাম।নারীদের চুলে বেণি বা ঝুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধা উত্তম।যাতে চুল বেশি বা লম্বার আন্দাজ যেন পরপুরুষ না করতে পারে,সেদিকে লক্ষ রাখা নারীর কর্তব্য।
.
“চুল বেশি দেখানোর উদ্দেশ্যে কৃত্রিম চুল বা পরচুলা ব্যবহার করা হারাম। স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না।হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,”রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন ওই সব নারীর ওপর, যারা পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে।” (বুখারি, হাদিস : ৫৯৩৭)”
এছাড়াও আপনার মতো টাইটফিট বা মিহি জামা পরে বাইরে বেরোনো কোনো মুসলিম নারীর পক্ষে শোভা পায় না।কারণ অন্যের সামনে নারীর সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা ফরজ আর এসব জামায় পর্দা লঙ্ঘিত হয়।হজরত আলকামা ইবনে আবু আলকামা তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন,”একবার হাফসা বিনতে আবদুর রহমানের ফুফু উম্মুল মোমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে এলেন।তখন তাঁর পরনে ছিল একটি পাতলা ওড়না।উম্মুল মোমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) তা ছিঁড়ে ফেলেন এবং একটি মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন।” (মুয়াত্তা মালেক : ২/৯১৩)”)
.
আবু ইয়াজিদ মুজানি (রহ.) বলেন, “হজরত ওমর (রা.) নারীদের কাবাতি (মিসরে প্রস্তুত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা বলল, এ কাপড়ে তার ত্বক দেখা যায় না। তিনি বলেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ২৫২৮৮)
.
“তবে টাইট ও মিহি পোশাক নারীরা একান্তভাবে স্বামীর সামনে পরতে পারবে।নিউ মডেল বা ফ্যাশনের জামাকাপড় পরিধান করা তখনই বৈধ হবে,যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোনো কাফিরের অনুকরণ না হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন,”নবী করিম (সা.) আমাকে ‘উসফুর’ (ছোট ধরনের লাল বর্ণের ফুল) দ্বারা রাঙানো দুটি কাপড় পরতে দেখে বলেন, ‘এগুলো হচ্ছে কাফিরদের পোশাক; অতএব তুমি তা পরিধান করবে না।” (মুসলিম, হাদিস : ২০৭৭)
.
অতিরিক্ত উঁচু সরু হিল তোলা জুতা ব্যবহার নিষিদ্ধ। কারণ এগুলো পরে চলাচল করলে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় ও তাদের কুরিপুকে প্রলুব্ধ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,”তারা যেন নিজেদের ভূষণ প্রকাশ না করে”
(সুরা নুর, আয়াত : ৩১)
.
স্বামী চাইলেও কপালের পশম চাঁছা ও ভ্রু প্লাক করা জায়েজ নেই।কেননা এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়,যার অনুমতি ইসলামে নেই। এভাবে মুখে বা হাতে সুই ফুটিয়ে নকশা আঁকা বা ট্যাটু করা বৈধ নয়।হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন,”আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক ওই নারীদের ওপর,যারা দেহাঙ্গে উল্কি উত্কীর্ণ করে এবং যারা করায়,যারা ভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে ও যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির মানসে দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।তবে পুরুষের দাড়ি-গোঁফের মতো নারীর গালে বা ঠোঁটের ওপর পশম থাকলে তা তুলতে দোষ নেই।” (বুখারি, হাদিস : ৪৮৮৬)
.
মহিলার নাক বা কান ফুঁড়িয়ে তাতে অলংকার ব্যবহারের ব্যাপারে ইসলামে বৈধতা রয়েছে।এভাবে গলায় হার বা পায়ে নূপুর পরাও বৈধ।তবে যদি নূপুরে বাজনা থাকে,তাহলে ঘরের বাইরে পরপুরুষের সামনে তা পরে হাঁটাচলা করা জায়েজ নেই ইসলামে আর হ্যাঁ…!
.
প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে ও হারাম বস্তু ও ক্ষতিকর পদার্থমুক্ত লিপস্টিক,মেকআপ,স্নো,পাউডার প্রভৃতি অঙ্গরাজ ব্যবহার বৈধ।নিজেকে সর্বদা সুরভিত করে রাখায় নারীত্বের এক আনন্দ আছে।মেয়েদের হাত-পা ও নখ সর্বদা মেহেদি দিয়ে রাঙিয়ে রাখা উত্তম। কেননা এতে একজন নারীর সৌন্দর্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে আর অজু-গোসলের সময় তা কষ্ট করে তুলে ফেলার ঝামেলাও নেই।কারণ নেইলপলিশের মতো এতে কোনো আবরণ নেই।
“মনে রাখতে হবে,সৌন্দর্যবর্ধনে যেসব উপকরণের ব্যবহার ইসলামে বৈধ,তা অপচয় করা কিংবা তা নিয়ে পরস্পর গর্ব করা জায়েজ নেই।কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,”তোমরা যা ইচ্ছা খাও,পান করো ও পরিধান করো।তবে যেন তাতে দুটি জিনিস না থাকে—অপচয় ও গর্ব।’ (বুখারি : ১০/১৫২)।”
ইমানের মুখে এমন কথা শুনে নাজনীন একদম চুপ হয়ে গেছে,মিম ইমানের কথা শুনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে হাসিমুখে বললো,
– “আরে ওদিকে চলুন…! আরো কত মেহমান আমাদের রিসেশনের অনুষ্ঠানে এসেছে।” ইমান বললো,
– “হুমম! চলো খারাপ লাগছে না কি তোমার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে?”
– “কোই না তো? কেন? কি হয়েছে?” ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
– “না ভাবলাম,হয়তো রাতে তোমার খুব কষ্ট হয়ে গেছে?” মিম চোখ পাকিয়ে ইমানের মুখের দিকে তাকালো,ইমান হাসতে হাসতে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “আচ্ছা বাবা! সরি,ময়না পাখিটা আমার ভুল হয়ে গেছে।”
.
চলবে…
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url