Breaking News

Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ১১



এটা কি করে সম্ভব? কে এতো সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে চাইবে ছায়া আপু’কে? তাহলে এই লোক টাই কি সেই লোক? স্যার,যে সেদিন আপনার ওপর হামলা করেছে এবং আমাকেও মে’রে ফেলার চেষ্টা করেছে?” মিম’কে এতো টা প্যানিক হতে দেখে ইমান জেনারেল ইমাদ সাহেব’কে বলে,
– “স্যার! এখন অরক্ষিত অবস্থায় ছাড়া যাবে না মিম’কে।”
– “ঠিক বলছ তুমি ইমান,আমি নীরব’কে বলছি ওকে অফিসারদের কোয়ার্টারে থাকার জন্য ব্যবস্থা করে দিতে।” তেভভিদ বললেন,
– “আমি আমার সব বিশ্বস্ত লোকদের পাহারা দেওয়ার জন্য বলে দেবো ওকে।” তখন ইমান জোর দিয়ে বললো,
– “স্যার! আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দেবে ওকে।” রাতে ইমান মিমের জন্য খাবার নিয়ে এলে,মিম তাকে বলল,
– “একটা জিনিস খেয়াল করেছেন স্যার?”
– “কি?”
– “জেনারেল তেভভিদের কপালে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।” ইমান এগিয়ে এসে তখন মিমের কানে ফিসফিস করে বললো,
– “তার মানে তুমি বলছ আমার সাকসেসফুল হয়েছি আমাদের প্ল্যান টা পুরোপুরি এক্সিকিউট করতে?” মিম বললো,
– “সে সব তো বুঝতে পারছিনা,তবে সারা আমায় বললো বিথী এবং মিথিলা আপু কোনো কারণে খুব ভয় পেয়ে আছে এবং বেশ কয়েকবার বাথরুমে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে কারো সাথে কথা বলতে দেখা গেছে তাদের দু’জন কে আর তাছাড়া একশো দশ এবং দুইশো বারো নম্বর রুমের মেয়েরা খুব আতংকের মধ্যে আছে।” তখন ইমান মিমের দিকে খাবারের প্লেট টা এগিয়ে দিয়ে বলে,
.
– “তাহলে ট্যাটু’র ব্যাপার টা? তুমি কেন সেটা গোপন করেছ আমার কাছে?”
– “বলবো কেন? খুঁজে বের করুণ? যদি এলেম থাকে?” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আমার এলেম নেই বলছ? তোমার আমার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে?” মিম বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
– “মোটও না স্যার! একদিন না হয় গিয়ে সময় করে শরীর চর্চা করে আসুন জেনারেল তেভভিদের সাথে?” ইমান চমকালো যেতে যেতে বললো,
– “আচ্ছা ঠিক আছে।” তার কিছুক্ষণ পর ইমান ফোন করে স্পর্শীয়ার কাছে,ও ফোন রিসিভ করে বলে,
– “কি ব্যাপার? ফোন করে চুপ কেন আজ? কোনো কারণে মন টা খারাপ হয়ে আছে?” ইমান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– “জানো আমার গার্লফ্রেন্ডের কাল বিয়ে হয়ে গেছে?” মেয়েটি বলল,
– “এর দ্বারা প্রমাণিত জনাব,মেয়ে টি কখনো ভালোবাসেনি আপনাকে।” ইমান বললো,
– “তুমি আমাকে বিয়ে করবে? তোমার বাড়ির ঠিকানা দাও,আমি নিজে গিয়ে কথা বলবো আঙ্কেল আন্টির সাথে।” স্পর্শীয়া বললো,
– “দেখুন জনাব,আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না।কারণ আমার কিছু সমস্যা আছে।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “বাহ রে! মজা করছিলাম আর তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছ পুরো বিষয় টা কে?”
– “না মানে?”
.
– “ব্যাপার না হতেই পারে,ইট’স ওকে,তবে জানো কি? তোমার হাতের রান্না খুব মিস করছি এখনো ইলিশ পোলাও এর স্বাদ টুকু মুখে লেগে আছে।তারপর তুমি যে পিঠে পাঠিয়েছিলে না এখনো তার স্বাদ আমি ভুলিনি,আবার কবে পিঠে বানিয়ে খাওয়াবে আমাকে?” স্পর্শীয়া হাসতে হাসতে বললো,
– “আপনার বর্তমান ঠিকানা দিন! মা’কে বলবো পাঠিয়ে দিতে।”
– “কেন মা’কে কেন? আসলে আমি বাসায় নেই পাগলি,আসলে তখন পাঠিয়ে দিয়ো।”
– “ঠিক আছে।” তারপর ইমান ফোন টা রেখে মিম’কে দেখতে চলে এলো,এসে দেখলো মেয়ে টা গালে হাত দিয়ে বারান্দায় বসে আছে।মিম হঠাৎ ইমান’কে দেখে চমকালো,ইমান শাসনের ভঙ্গিতে বলল,
– “কি ব্যাপার? এতক্ষণ ধরে তুমি কথা বলছিলে কার সাথে?” মিম বলল,
– “আমার জাস্ট ফ্রেন্ড আর কিছু?”
– “নাঃ! শুয়ে পরো অনেক রাত হয়ে গেছে।” মিম মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পরলো,ইমান চেয়ার টেনে বসে রইলো মিমের পায়ের কাছে।
সকালে ইমান জেনারেল তেভভিদের সাথে জগিং করে ফিরে এলো,তখন খেয়াল করে দেখতে পেলো তার বাম পায়ে অদ্ভুত দু’মুখো সাপের ট্যাটু করা আছে।ইমান সেটা দেখে মৃদু মৃদু হাসলো,মনে মনে বললো,
– “এবার মনে হচ্ছে বিথী’কে তুলতে হবে?” মিম সুযোগ বুঝে কোয়ার্টারে ফিরে এসে বিথী’কে বললো,
– “আপু তুমি চাইলে সবটা গিয়ে খুলে বলতে পারো ইমান স্যারের কাছে।”
– “দেখ মিম,আমি কিছু বলতে চাইনা কারো কাছে।”
.
– “তাহলে আর কি? অঘোরে প্রাণে মারা যাবে আর মাঝখান থেকে ওই রাঘববোয়াল এসে মেয়েদের মধু খেয়ে যাবে?
দেখ,বিথী আপু আর মিথিলা আপু! তুমি কেন সব কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছ আড়াল থেকে?”
– “আসলে মিম আমি!”
– “আমি কিন্তু তোমাদের খারাপ চাই না আর তাই ইমান স্যার বারণ করা স্বত্বেও আমি বারবার ছুটে এসেছি তোমাদের কাছে,কেন জানো? কারণ আমি চাই না ওই লোকটা ছায়া আপুর মতো তোমাদের গায়েব করে ফেলুক কিংবা মে’রে ফেলুক তোমাদের দু’জন কে।” মিমের কথা শুনে বিথী ভয় পেয়ে বললো,
– “প্লিজ মিম! এখন যাও এখান থেকে।” কিছুক্ষণ পর,
সারা প্রশাসনিক ভবন থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে ওদের সবাই’কে বলে,
– “তোমরা জানো? কেউ একজন এই কেস টা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ইমাদ স্যার’কে ছায়া আপুর একটা কাটা আঙুল গিফট বক্সে পাঠিয়েছে?” সারার কথা টা শুনেই মিথিলা বিথীর মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।মিম যেতে যেতে বলল,
.
– “একবার ভেবে দেখো আপু! সরকারি সাক্ষী হলে কিন্তু তোমরা দু’জন শাস্তি পাওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবে।” নীলাসা এসে মিমের কথায় সায় দিয়ে বললো,
– “আমি হলে নিজের প্রাণ বাঁচানো ফরজ বলে মনে করতাম সবার আগে।” তখন লেইলা বলল,
– “আর তাছাড়া,’আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ বাংলা প্রবাদে’ই আছে।” মিম বললো,
– “চুপ করো তোমরা! কথা বলে লাভ নেই ওদের সাথে আর কিই বা বলবো? নিজের ভালো পাগলেও বোঝে।” সাথে সাথে ল শহীদ স্টাফ এসে মিম’কে বলে,
– “নিচে চলেন আম্মাজান! ইমান স্যার আপনা’কে ডাকে।” মিম যেতেই ইমান বলল,
– “বলো,কোনো খবর আছে?” মিম বললো,
– “টনিক দিয়ে এসেছি,এবার দেখা যাক! কত ইফেক্টিভ?”
– “ঠিক আছে।” তারপর ইমান সবার অগোচরে মিম’কে একটা নির্জর জায়গায় নিয়ে এলো,যেখানে ওরা ছায়া’কে বেঁধে রেখেছে।ছায়া’র জ্ঞান ফিরতেই ও মিম’কে দেখে চমকালো,মিম বললো,
– “মুখ খুলবে? না কি থার্ড ডিগ্রির ব্যবস্থা করতে হবে?”
– “যদি না খুলি?”
.
– “তোমার সাগরেদ’রা মুখ খুলে ফেলেছে অলরেডি ইমান স্যারের কাছে আর যদি নাই খোলো? তাহলে আর কি? শুধু শুধু শাস্তি পাবে! রইল বিথী,মিথিলা,রইমা এবং আশা আপুর কথা? ওরা সরকারি সাক্ষী হয়ে বেঁচে যাবে আর মাঝখানে তুমি বেচারি আমের আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খাবে?” ছায়া কি ভেবে বললো,
– “আমি কি ভাবে বিশ্বাস করবো? ওরা সব খুলে বলেছে তোমাদের কাছে?” মিম এ.এস.পি সাদমান’কে বললে,
– “স্যার! ওই ভিডিও ফুটেজ টা আপনি দেখাতে পারবেন ছায়া আপু’কে?”
– “হ্যাঁ! ডেফিনিটলি,সেটআপ রেডি করাই আছে।”
– “তাহলে প্লে করুণ,ছায়া আপু’র জানা উচিৎ মেয়ে গুলো ওই নোংরা লোকটার খপ্পরে কত আতংকে আছে?” তারপর ল্যাপটপের স্ক্রিনে এক এক করে বিথী,রাইমা,মিথীলা সহ আরো অনেকের ভয়ার্ত মুখ গুলো ফুটে উঠেছে।ছায়া হঠাৎ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
.
– “ওই লোকটা আমাদের সবাই’কে খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।” মিম মৃদু হেসে ছায়া’র হাতের বাঁধন খুলে দিতে দিতে বললো,
– “তিন বছর মেয়াদি মানে দীর্ঘ মেয়াদি লং-টার্ম বি.এম.এ কোর্স ছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়া একেবারে অসম্ভব ছায়া আপু।”
– “ঠিক আছে,কিন্তু! ওই লোকটা যে বললো….?”
– “সে তোমাকে মিথ্যে কথা বলেছে আর মাএ আটমাস পর তুমি লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পেতে ছায়া আপু এটা তুমি কি করলে?” ছায়া’র মুখ থেকে ইমান সবটা শুনে মিম’কে বলে,
– “মানুষ এতো টাও বোকা হয় মিম? একটু বুঝিয়ে বলো আমাকে?” মিম বললো,
– “কি বলবো স্যার? আমার মাথা অলরেডি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে,না মানে সিরিয়াসলি? আপনি ভাবতে পারছেন ওই একটা লোক পঁচিশ টা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে?” ইমান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– “ইচ্ছে করছে,এই মুহূর্তে ছুটে গিয়ে ওই লোকটা কে গরম তেলের মধ্যে ফেলে দিতে! মানুষ দেখেছি,তবে এমনতরো নোংরা লোক দেখিনি আগে।”
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com