Breaking News

Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ৩৪



করিনি তো…! শুধু মাএ মা-বাবাকে বলেছি আর আপুরা এমনি জেনে গেছে এবং আমার বড় ভায়েরাভাইয়েরা গাঁধা না একটুআধটু সবাই বোঝে।” মিম রেগে গিয়ে বলল,
– “তাই বলে আমার বাবার কাছে গিয়ে আমার শরীর খারাপের কথা বলতে হবে?” ইমান বলল,
– “আশ্চর্য! রাগ করছ কেন তুমি? লুকোনোর কি আছে? বাবা নিজেই বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন,’যে আমার মেয়ে কেমন আছে? তার শরীর খারাপ করেছে নাকি?
কেন এখনো সে ওঠেনি ঘুম থেকে…! আর তাই আমি তোমার পিরিয়ডের ব্যাপার টা বাবা’কে খুলে বললাম বাবা অবশ্য কিছু মনে করেননি তাতে।
তিনি উল্টো আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন তোমার জন্য দেশি মুরগির ডিম আর কোয়েল পাখির ডিম কিনতে।
তারপর আবার কাকে দিয়ে যেন গরুর দুধ আনালেন তোমার নাকি গরুর দুধ খেতে ভালো লাগে?” মিম রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
– “বুঝেছি আপনার বদৌলতে পুরো এলাকার সবাই আমার শরীর খারাপের বিষয় টি জেনে গেছে।” ইমান মন খারাপ করে বলল,
.
– “এটা তো লজ্জিত হওয়ার কোনো বিষয় না! তবুও তুমি রাগ করলে আর কথা শোনালে আমাকে?” মিম ইমানের গালে চুমু খেয়ে বললো,
– “না,আসলে এই মুখ নিয়ে আমি কি করে গিয়ে দাঁড়াবো আমার বাবা-মায়ের মুখের সামনে?” কিছুক্ষণ পর নাফিম সাহেব মেয়ের ঘরে এসে মেয়ে’কে বললেন,
– “আম্মু! তুমি দুধ টুকু খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।” ইমান বলল,
– “বাবা! আপনি আপনার মেয়ে’কে দয়া করে বোঝান…। ও অযথাই এসব নিয়ে ভেবে ভেবে কষ্ট পাচ্ছে।” তখন নাফিম সাহেব মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
– “এই স্বাভাবিক বিষয় টি নিয়ে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আচ্ছা আম্মু শোনো,আমি আজ গ্রামে ফিরে যাচ্ছি আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আর কিছু বিষয়ের শালিসি করার আছে তাই তোমার আম্মু’কে রেখে গেলাম আমাদের ঢাকার বাসায় তোমার কাছে।” ইমান বললো,
– “বলছিলাম বাবা…! আমরা সবাই মিলে যদি আজ গ্রামে ফিরে যাই তাহলে কেমন হবে?” নাফিম সাহেব ইমানের প্রস্তাব শুনে খুশি হয়ে বললেন,
– “মন্দ হয় না বাবা! ভালো’ই হবে আর তাছাড়া আমাদের গ্রামের সবাই তোমাদের দু’জন কে দেখার জন্য উৎসুক কাজেই তোমরা দু’জন গেলে ভালোই হবে।” মিম বলল,
– “তাহলে বাবা! যাওয়া যাক আজ? আমি গিয়ে সমস্ত গোছগাছ করে ফেলছি মায়ের সাথে।” ইমান দুধের গ্লাস টা মিমের হাতে দিয়ে বলল,
– “ঝটপট খেয়ে নাও,নয়তো বাবা আমার হয়ে বকে দেবে তোমাকে।” মিম মুখ বেঁকিয়ে বললো,
– “বাহ! ভালো’ই তো…! আমাকে বিয়ে করে আমার বাপ-মা বোন সবাই’কে জনাব হাত করে নিয়েছে।” নাফিন সাহেব হাসতে হাসতে মেয়ে’কে বললেন,
.
– “আম্মু অন্তত সিদ্ধ ডিম টা খেয়ে নাও,সিদ্ধ ডিম খেতে তোমার যে খুব ভালো লাগে।” মিম মিটিমিটি হেসে ইমানের মুখের দেশি মুরগির সিদ্ধ ডিম টা ঠুসে দিয়ে বললো,
– “তুমি আমার হয়ে খেয়ে নাও বাবু! তুমি খেলে আমার খাওয়া হয়ে যাবে।” মেয়ের কাণ্ডকারখানা দেখে নাফিম সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “ফাঁকিবাজি একদম চলবে না আম্মু! আগে তুমি এই সিদ্ধ ডিম গুলো খাও…!
তারপর আমি গ্রামে নিয়ে যাবো তোমাকে আর না হলে কাও’কে যেতে হবে না।আমি এখুনি ফোন করে গ্রামে জানিয়ে দিচ্ছি মেম্বার সাহেবের কাছে।” মিম সাথে সাথেই বাবার কথা মতো কোয়েল পাখির ডিম গুলো খেয়ে নিলে এরপর নেয়না ওকে তৈরি করে দিলো নিজের হাতে।
অতঃপর সবাই মিলে চারটে মাইক্রো নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হল এবং গ্রামে এসে পৌঁছালো দিন শেষে।
বাড়িতে পৌঁছাতে না পৌঁছাইতে মিম পেটে ব্যাথায় অস্থির ইমান হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে ছেঁকা দিয়ে দিচ্ছে ওর তল পেটে।মিম লজ্জায় বারবার ইমানের হাত পেটের ওপর থেকে সরিয়ে দিচ্ছে,তবে ইমান গ্রাহ্য করছে না তাকে।শেষমেশ মিম লজ্জা পেয়ে বলেই ফেললো,
– “কি অবস্থা আপনার? সবার সামনে এভাবে কেন হাত দিচ্ছেন আমার পেটে।” ইমান একটু কড়া গলায় মিম’কে বলল,
.
– “আমি আমার বউ’কে স্পর্শ করবো না তো কে করবে তাকে? ভাড়াটে লোক ভাড়া করে আনবো আমার বউয়ের পেটে হাত দিতে।” মিম লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেলো,সাবিহা জিহাদ’কে বললো,
– “কিছু শিখো ভাইয়ার কাছ থেকে।” জিহাদ বললো,
– “ক’বছর যাক! তারপর আর কোনো কিছু তুমি শেখার কথা বলবে না আমাকে আর তাছাড়া নতুন নতুন বিয়ের পর প্রথম প্রথম আঙুর ফল খেতে খুব মিষ্টি লাগে,
এরপর আঙুর ফল যে টক হয় সেটা ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় বোঝা গেছে?” জিহাদের কথা শুনে সাবিহা হাসলো,মেয়ে অসুস্থ হয়ে পরেছে শুনে গ্রামের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবচেয়ে ভালো ডাক্তার মাহির এরদোয়ান’কে নাফিম সাহেব বাড়িতে ডেকে পাঠালো,ডক্টর মাহির মিম’কে দেখে নাফিম সাহেব’কে বলল,
– “চেয়ারম্যান সাহেব! আপনার মেয়ে এতো চিকন কেন?” তার উওরে ইমান বললো,
– “আসলে ডাক্তার সাহেব..! আমার বউ খুব খায় তাই হয়তো?” মাহির বিস্মিত হয়ে মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি কবে বিয়ে করেছ?” ইমান বললো,
– “সাড়ে নয় বছর আগে,যখন ও ক্লাস সেভেন এর ছাত্রী ছিল।” মাহির হঠাৎ মুখ গোমড়া করে বললো,
– “ওহ! তাই বলো,আমি ও ভাবছি মিম তো কখনো অপরিচিত ছেলেদের সাথে কথা বলতো না আপনার সাথে এতো ভাব কি করে হলো?” ইমান মুখ বাঁকিয়ে বললো,
.
– “অপরিচিত কেউ ম্যাটার করে না জনাব,এখানে ভালোবাসা টাই আসল বুঝতে হবে।তাই না বউ? তাই তো?” মিম ইমান রেগে যাচ্ছে দেখে মিটিমিটি হেসে ওর গায়ে,গলায়,কপালে হাত ছুঁয়ে দিয়ে মাহির’কে বললো,
– “মাহির ভাইয়া! আমি ওনার শরীর ভালো ঠেকছি নাঃ…! একটু ওনাকে দেখে দিন তো?” ইমান অবাক হয়ে মিমের দিকে তাকালো,মিম ইমানের গায়ে কম্বল দিতে দিতে বলল,
– “দেখেছ? তোমার হাত,পা কত ঠাণ্ডা…। এভাবে থাকলে জ্বর আসবে তো?” ইমান চুপচাপ,নাফিম সাহেব দু’জন কে রাতের খাবার খেতে নিচে নিয়ে এলো।
কিছুক্ষণ পর,কোনো একটা কাজে তিনি মেয়ের ঘরে এসে লেপ দেখে নাছিমা’কে বললেন,
– “আরে মেয়েটির আমার লেপ গায়ে দিলে হাত-পা গরম হয় না,তুমি কেন ওর ঘরে লেপ রেখেছ?” নাছিমা বললেন,
– “আশ্চর্য! আমি কেন আমার মেয়ের ঘরে ও সব রাখবো?” তখন নাফিম সাহেবের চাচাতো বোন সামিনা এসে বললেন,
– “বুঝলেন ভাই! আমি রাখিয়েছি নতুন লেপ,আমাদের নতুন জামাই তো…!” নাফিম সাহেব রেগে গিয়ে বললেন,
– “হ্যাঁ তো? আপনি এতো বেশি বোঝেন কেন? আমার মেয়ে জামাই যখন,তখন তাদের ভালো টা আমি’ই বুঝবো।” সাথে সাথে’ই মিম নিচ থেকে ওপরে এসে নাফিম সাহেব’কে বলে,
– “বাবা তুমি সামিনা ফুপির সাথে এভাবে কেন কথা বলছ?” নাফিম সাহেব মেয়ে’কে বললেন,
– “আম্মু তুমি খেতে নিচে যাও! বড়দের কথার মধ্যে এসো না তো।” সামিনা বলল,
– “ভাই আপনি রাগ কেন করছেন বলুন তো?” মিম ভ্রু কুঁচকে বললো,
– “ফুপি আমার বাবা যখন আপনাকে পছন্দ করেননা,তখন এ বাড়িতে কেন এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করেন বলুত তো…?
.
না মানে,আমার বাবাকে বিয়ে করার শখ আপনার এখনো যায়নি তাই তো? বারবার আমার মায়ের জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করে কি প্রমাণ করতে চান আপনি? কি চান? খোলসা করে বলুন তো?” সামিনা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
– “বেয়াদব মেয়ে! এতো লেখাপড়া করে শহরে থেকে শুধু বেয়াদবি শিখেছ?” তারপর হঠাৎ সামিনা মিম’কে থাপ্পড় মারতে গেলো,নাফিম সাহেব সামিনার হাত ধরে বললো,
– “সাহস তো কম না তোর? তুই আমার সামনে কোন সাহসে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলছ?” নাছিমা বললেন,
– “এতোদিন আপনা’কে আমি কিছু বলিনি,তার মানে এই নয় যে আমি আপনার সব অসভ্যতামি গুলো সহ্য করবো।
আজকের পর আমি আর আমার বাড়িতে আপনাকে আর দেখতে চাই না,প্লিজ এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে জান তো…!
আর আমার মেয়ে জামাই কম্বল গায়ে দিবে না কি লেপ গায়ে দেবে সেটা না হয় আমি বুঝবো?” নাফিম সাহেব মেয়ের হাত ধরে রাগে হুংকার ছেড়ে বললেন,
.
– “আমার মেয়ের গায়ে হাত দেবে? সাহস কতো?” ইমান চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে মিম’কে বলল,
– “কি হয়েছে? তোমার ওই ফুপি কেন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো?” মিম বললো,
– “আরে তোমাকে লজ্জার কথা আর কি বলবো? উনি এমনই,আমার বাবা-মায়ের সুখ ওনার কখনোই সহ্য হয় না বুঝেছ?” ইমান কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করলো,
– “কেন? কেন? উনি কি বাবাকে পছন্দ করতো?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “আরে আরে নাটক করে বিষ খায়,মূর্ছা যায় আরো কত কিছু?
নেহাৎ আমার বাবা ছিলেন শক্ত মনের অধিকারী,তাই তার নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত’ই ছিল তার কাছে সবকিছু…!
আর আমার দাদুভাই ছিলেন একজন খাঁটি মানুষ,তাই নিজের স্ত্রীর থেকে তার ছেলের খুশিই ছিলো তার কাছে সবকিছু।” ইমান বললো,
– “তাহলে তো ভালোই,আমি বাবার মুখেই তার প্রেম কাহিনী শুনবো।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “এতো এনার্জি কোথায় পাও? ঘুমতে চলো।” ইমান মিটিমিটি হেসে বলল,
– “ভেবেছিলাম আমার এনার্জি সব তোমার ওপরে প্রয়োগ করবো?” মিম লজ্জা পেয়ে বললো,
– “কি?”
– “না মানে ভাবছি,কাল বাবার মুখে তোমার ছোটো বেলার গল্প শুনবো?” মিম বললো,
– “হুমম! এখন চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পরো তো লক্ষী ছেলের মতো।” সকাল হতে না হতেই ইমান নাফিম সাহেব কে এসে বলল,
.
– “বাবা! মিমের কিছু ছোটোবেলার দুষ্টুমিষ্টি গল্প বলো তো?” নাফিম সাহেব কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে হঠাৎ উচ্চশব্দে হাসতে হাসতে বললেন,
– “ভাবছি আমি কোন টা ছেড়ে কোন মজার গল্পটা শোনাবো তোমাকে? তবু বলছি যখন ওর চার বছর বয়স ছিলো,তখন আমার এক ভাইয়ের বিয়েতে নিয়ে গিয়েছিলাম ওকে,মেয়ে আমার সেই বিয়ে থেকে ফিরে এসে একদিন লোকলস্কর দিয়ে আমাকে বাগানের গাছ কাটতে দেখে বললো,
– “বাবা তুমি বাগানের সব গাছ গুলো কেটে ফেলছ কেন এভাবে? আমার বিয়ের সময় সুন্দর একটা বক্সখাট বানিয়ে দেবে না ওই গাছ গুলো দিয়ে আমাকে?” মিমের কাহিনী শুনে ইমান হাসতে হাসতে শেষ,বেচারার পেট ব্যাথা হয়ে গেছে তখন নেয়না বলল,
– “বোন! আমার খুব চালাক…! পাঁচ টাকা দিয়ে দশটাকার চকলেট খেয়ে আসতো দোকান থেকে আর দোকানদার চাচার ছেলে ছিল ওকে খুব পছন্দ করতো,বিয়ে করতে চাইত ওকে,তখন বোন বলতো,
– ” আগে আমাকে চকলেট দাও! তারপর আমি বিয়ের কথা ভেবে দেখবো তোমার সাথে আর এখন সেই ছেলে বড় হয়ে গেছে অথচ আমার পুঁচকির বিয়ে হয়েছে তোমার সাথে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আপু! আমি ভাবছি অন্য কথা…। ভাবছি আমার বউয়ের আশায় আর কে কে বসে আছে?” মিম সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে ইমানের কথা শুনে হাসলো,ইমান বলল,
– “আর কে কে আমার “পুতিন” হওয়ার আশায় বসে আছে?” মিম বললো,
– “পুতিন কি?” ইমান বলল,
– “মেয়ে-মেয়ে ‘সতীন’ হলে পতি-পতি ‘পুতিন” হবে।” মিম নিজের হাসি সামলে রাখতে না পেরে বললো,
– “বুঝতে পারছি তোমার মাথা টা গেছে।”
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com