Breaking News

দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড । পর্ব -০৩



আকাশ ব্যাংকে গিয়ে ২ লাখ টাকা তুললো।রিসিপশনে একটি খাতায় সিগনেচার করতে বললো আকাশ’কে একটি লোক।আকাশ সিগনেচার করে টাকার ব্যাগ নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেলো।তারপর গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।আকাশ গাড়ি স্টার্ট করে সামনে আগাতেই!আকাশের গাড়ির পিছে আরও একটি লাল গাড়ি গেলো।

আকাশ আজ বেশ মেঘলা।বৃষ্টি হবে-হবে ভাব।আকাশ হাল্কা কালো মেঘে ঢেকে গেছে।খুব জোরে বাতাস বয়ে চলেছে।ঠান্ডা ঘন বাতাস।রাস্তায় শুধু গাড়ি আসছে যাচ্ছে।এছাড়া মানুষ রাস্তায় নেই বললেই চলে।

ঈশা আনমনে ফাঁকা রাস্তায় নিজের মতো হাঁটছে।ঈশার মন একটুও ভালো না।ঘন ঠান্ডা বাতাস ঈশার শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে।বাতাসে ঈশার খোলা চুলগুলো খুব বিরক্ত করছিলো ঈশা’কে।শেষে ঈশা ব্যাগ থেকে একটা কলম বের করলো।কলম ঠোঁটে চেঁপে ধরে চুলগুলো খোঁপা করলো।তারপর খোঁপার মাঝে কলম ঢুকিয়ে দিলো।আবার নিজের মতো ফাঁকা রাস্তায় হাঁটছে।ঈশা একা একাই আকাশের দিকে তাকিয়ে বকবক করতে লাগলো।

ঈশাঃ আল্লাহ্ কাল রাতে তোমায় এত করে বললাম!টাকার একটা ব্যবস্থা করে দাও তুমি।আমিই ভুল ছিলাম।কারন তুমি তো কখনোই আমার দিকে ফিরে তাকাবে না।তবুও তোমার কাছে চেয়েছি।আমি আর কখনো তোমার কাছে কিছুই চাইবো না।

ঈশা কথাটা বলে রাস্তায় নিচের দিকে তাকিয়ে একটা ইট লাথি দিলো পাঁ দিয়ে।তখনি খুব জোরে বাতাস এলো।ঈশার সিল্ক ওড়না উড়ে পাশের গাছের ডালে গিয়ে আটকে গেলো।ঈশার একটু খারাপ লাগলো ওড়না শরীর থেকে সরে যাওয়াতে।ঈশা গাছের কাছে যাচ্ছিলো নিজের ওড়না নিয়ে আসতে!তখনি ঈশার সামনে একটা গাড়ি চলে এলো।ঈশা দাঁড়িয়ে গেলো।ঈশার সামনে যে গাড়ি এলো তার সামনে আরও একটি গাড়ি ব্রেক করলো লাল রঙের।তাই‌ ঈশার সামনে যে গাড়ি প্রথমে এসেছিলো সেই গাড়ি আগে যেতে পারলো না।
ঈশা কিছু বলতে যাবে তখনি আকাশ গাড়ির ডোর খুলে বের হলো।ঈশা আকাশ’কে গাড়ি থেকে বের হতে দেখে দ্রুত নিজের চুলের কলম খুলে ফেললো।এতগুলো ছেলেকে নিজের সামনে দেখে।সাথে-সাথে ঈশার ঘন-কালো-সিল্কি লম্বা চুলগুলো ওর বুকের দু পাশে আঁছড়ে পরলো।রীতিমতো বাতাসে ঈশার চুলগুলো উড়ছে।আকাশ গাড়ি থেকে বের হতেই ঈশার চুলের মাঝে হারিয়ে গেলো।আকাশ এক ধ্যানে ঈশার চুলের দিকে তাকিয়ে আছে।

ওদিকে লাল গাড়িতে থাকা ৩ টা ছেলে আকাশের গাড়ির ডোর খুলে ওর টাকার ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।ঈশা তাড়াতাড়ি রাস্তা থেকে একটা ইট তুলে ১টি ছেলের ঘাড় বরাবর মারলো।ছেলেটির ঘাড়ে ইট লাগতেই ছেলেটি “আহহহ্” বলে চিল্লিয়ে টাকার ব্যাগটি উপুর করে ছুঁড়ে মারলো।সেই ব্যাগটি অন্য একটি ছেলে ক্যাঁচ ধরেই দৌড়ে চলে যেতে নিলে!ঈশা দৌড়ে গিয়ে নিজের পাঁ দিয়ে ওই ছেলেটির পাঁয়ে জোরে ল্যাং মারলো।তারপর ঈশা জোরে-জোরে চেঁচিয়ে উঠলো “চোর” বলে।আর লাফাতে লাগলো।আকাশ শুধু ঈশার কাহিনী দেখছে আর অবাক হচ্ছে।আকাশ কিছু বলতেই পারছে না।
ঈশাঃ সবাই দেখুন! চোর,ভোর,তোর,মোর,পোর,চোর,চোর,চোর।ভাইয়া-আপু আশেপাশের সবাই এদিকে আসুন প্লিজ।চোর,চোর,চোর…!

সাথে-সাথে আশেপাশের রাস্তায় থাকা সবাই দৌড়ে এদিকে এলো ঈশার কাছে।ওই ৩টা ছেলে ভয়ে দৌড়ে চলে যেতে নিলে!রাস্তার সমস্ত মহিলা’রা ছেলে ৩টা কে পাঁয়ের স্যানডেল-জুতা খুলে মারে।অনেক মার খাওয়ার পর ছেলে ৩টা দৌড়ে পালিয়ে যায়।রাস্তার ভীড়ও কমে যায়।
ঈশা টাকার ব্যাগ উল্টে-পাল্টে দেখলো।তারপর আকাশের দিকে তাকালো।আকাশ তো এখনো হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে।ঈশা নিজের হাত দিয়ে আকাশের সামনে হাত নাড়লো।তাতে আকাশ নড়ে-চড়ে দাঁড়ালো।

আকাশঃ তুমি কি বাঁচাল? নাকি গুন্ডি?
ঈশাঃ দুটো’ই!ওয়েট…ওয়েট…ওয়েট একে আমি আপনাকে বাঁচালাম।তার উপর আপনি আমাকেই বাঁচাল,গুন্ডি বলছেন?
আকাশঃ তুমি না বাঁচালেও আমি নিজেকে বাঁচাতে পারতাম।মেরে তক্তা বানিয়ে দিতাম ওদের।
ঈশাঃ এহ্ নিজেকে তামিল মুভির হিরো মনে করে। [আনমনে মুখ ভেঙিয়ে]
আকাশঃ হুয়াট ডু ইউ সে?
ঈশাঃ নাথিং।
আকাশঃ বাই দ্যা ওয়ে!ট্যালেন্ট আছে তোমার।অভিনয়ও খুব ভালোই করো দেখছি।
ঈশাঃ অভিনয় না করলে স্যানডেল আর জুতোর বারি খাওতাম কিভাবে চোর গুলোকে।
আকাশঃ সিট ভরা মাথা।
ঈশাঃ কিহ্?
আকাশঃ কিছু না।
ঈশাঃ আমার নাম ঈশা ওকেহ্।সবকিছু তেই এক্সপার্ট আমি।এনিওয়ে এই ব্যাগে কি আছে?
আকাশঃ বলবো কেনো তোমাকে?
ঈশাঃ আমি একাই খুলে দেখে নিচ্ছি।
আকাশঃ আরেহ্! [পাগল নাকি মেয়েটা]
আকাশ ব্যাগ নেওয়ার আগেই ঈশা ব্যাগের চেন খুলে অবাক হয়ে গেলো এত টাকা দেখে।ঈশা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো!
ঈশাঃ ওহ্ আচ্ছা!এই কারনে তোমার পেছনে গুন্ডা এসেছিলো।
আকাশঃ হয়তো।
ঈশাঃ ১০-২০…! [গুনগুনিয়ে]
আকাশঃ মানে?
ঈশাঃ এই নাও তোমার ব্যাগ।

ঈশা ওই ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকার দুটো বান্ডিল নিলো।তারপর আকাশের হাতে ব্যাগ দিয়ে দিলো।আকাশ কিছুক্ষন ড্যাব-ড্যাব করে ঈশার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর ঈশার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে বললো!

আকাশঃ এটা কি হলো?
ঈশাঃ কি হলো মানে?
আকাশঃ আমার টাকা নিলে কেনো তুমি?
ঈশাঃ তোমার ব্যাগে ১০ হাজার টাকার ২০টা বান্ডিল।দ্যাট’স মিন তোমার কাছে ২ লাখ টাকা আছে।তাই আমি সেখান থেকে…!

আকাশঃ তাই তুমি জোর করে ২০ হাজার টাকা নিয়ে নিলে? এনিওয়ে আমার কাছে চাইলেই আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দিতাম।গুন্ডিদের মতো জোরে করে নেওয়ার কি আছে?
ঈশাঃ ও হ্যালো মিস্টার.বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া পঁচা ছেলে।আমাকে দেখে কি ভিক্ষুক মনে হয় তোমার?

আকাশঃ হোয়াটএভার!
ঈশাঃ এটা আমার ইনাম ওকে।আমি ওই একটা ছেলের ঘাড়ে ইট মেরেছি।আমিই দ্বিতীয় ছেলের পাঁয়ে ল্যাং মেরেছি।আর তোমার টাকা তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি।তাই এই ২০ হাজার টাকা আমার পাওনা হুহ্।
আকাশঃ সো কল্ড ভাষণ।
ঈশাঃ তোমাদের মতো টাকা হয়তো নেই।কিন্তু কারো কাছে চেয়ে কিছু নেই না।নিজের পাওনা নিজেই আদায় করে নেই।

আকাশঃ মে আই গো নাউ?
ঈশাঃ বায়।
ঈশা মুখ ভেঙিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে ওই ২০ হাজার টাকা নিয়ে।আকাশ রেগে বম হয়ে রইলো ঈশার কাহিনী দেখে।

আকাশঃ গুন্ডি,পাগল মেয়ে একটা।মাথার সবগুলো তাঁড় মনে হয় ছেঁড়া মেয়েটার।
আকাশ গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করে বাসার দিকে গেলো।এদিকে ঈশা সোজা কলেজে চলে গেলো।গিয়ে নিজের বেতন পরিশোধ করলো।তারপর কলেজ থেকে বের হতেই ঈশার ফোন বেজে উঠলো।ঈশা ফোন রিসিভ করলো।

ঈশাঃ হ্যাঁ আহির ভাইয়া বল?
আহিরঃ তোর কলেজের বেতন দিতে হবে।আমি তোর কলেজে আসছি।তুইও কলেজে আয় রাজিৎ স্যারের কচিং থেকে।
ঈশাঃ তুমি কোথায় এত টাকা পেলে ভাইয়া?
আহিরঃ আমি তোকে বলেছিলাম না? আজ সন্ধ্যার আগে তোর কলেজের বেতন দিব আমি।
ঈশাঃ আহির ভাইয়া বেতন দিয়ে দিয়েছি আমি।আর পরীক্ষার এডমিট কার্ডও দিয়েছে আমায়।
আহিরঃ এত টাকা তুই কোথায় পেলি?
ঈশাঃ লম্বা কাহিনী।আমি তোকে বাসায় এসে সব বলছি।
আহিরঃ আচ্ছা তাহলে সাবধানে বাসায় চলে আয় তুই।
ঈশাঃ ওকে বায়।

ঈশা ফোন কেটে যেই সামনে তাকালো।অমনি ঈশার চোখগুলো ভয় পেতে শুরু করলো।ঈশার সামনে কতগুলো ছেলে এসে দাঁড়ালো।ঈশা ভয়ে রীতিমতো কেঁপে উঠলো।ছেলেগুলো ঈশার দিকে এক-পাঁ আগাচ্ছে আর ঈশা এক-পাঁ পিছিয়ে যাচ্ছে।ভরা দুপুর রাস্তা একদম ফাঁকা।ঈশা ছেলেগুলোর ভয়ে জোরে-জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো।ঈশা ভালো করেই চিনতে পারলো ছেলেগুলো “কে বা কারা”
.
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com